বাংলাদেশে জনসংখ্যার কতো পারসেন্ট কম্পিউটার ব্যবহার করেন ?
কম্পিউটার ব্যবহারকারীদের কতো পারসেন্ট ইন্টারনেট ব্যবহার করেন ?
ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের কতো পারসেন্ট ইউটিউব দেখতে পারেন ?
ইউটিউব বন্ধ করায় তাদের কতোজন ক্ষতিগ্রস্ত ?
উপরের প্রশ্নগুলির উত্তর আমার জানা নেই। তবে এটুকু জানি প্রথম প্রশ্ন থেকে শেষ প্রশ্ন পর্যন্ত উত্তরগুলি হবে ক্রমান্বয়ে ছোট। ইউটিউব বন্ধ করায় সত্যিকার অর্থে ক্ষতিগ্রস্ত বাংলাদেশীদের সংখ্যা মোট জনসংখ্যার অনুপাতে হয়তোবা বালুকণা মাত্র। কিন্তু তারপরও আমি চাই সরকারী এই সিদ্ধান্ত আদালতে চ্যালেঞ্জ করা হোক।
ইউটিউব বন্ধ কেন ? কারণ ইউটিউবে "দ্য ইনোসেন্স অফ মুসলিমস" নামে একটা চলচ্চিত্র রাখা হয়েছে যাতে ইসলামের প্রবর্তক মোহাম্মদ (দঃ) কে নিয়ে কটুক্তি বা কুরুচিপূর্ণ কিছু আছে। কি আছে সেটা কিন্তু আমি জানি না। আমার আশেপাশে যারা ধার্মিক মুসলিম হিসাবে যারা আছেন এবং এই চলচ্চিত্রের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন - তারাও দেখলাম কিছু জানেন না। অন্যের কাছে শুনেছেন। হয়তো বিটিআরসি'র যারা ইউটিউব বন্ধের সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত তারাও হয়তো শুনেছেন, দেখেন নাই। আমার ব্যক্তিগত ধারণা পাকিস্থানে পিটিএ ইউটিউব বন্ধ করেছে এটাই বিটিআরসি'র সিদ্ধান্তের মূল ভিত্তি।
যাই হোক। ইসলামের অবমাননা করা হয়েছে সরকার এই যুক্তিতে শুধূমাত্র এই চলচ্চিত্রের লিংকগুলি বন্ধ করতে পারতেন, সেটা না করে তারা পূরো ইউটিউব বন্ধ করে দিয়েছেন। অনেকটা মাথা ব্যথার জন্য মাথা কেটে ফেলে দেয়া আর কি।
এখন জানা যাচ্ছে শুধূ ইউটিউব না, গুগলের আরো কিছু সার্ভিস থেকেও আমাদের বঞ্চিত করা হচ্ছে, যেমন গুগলডকস, ট্রান্সলেটর ইত্যাদি। সেদিন ফেসবুকে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া এক ছাত্র তার ষ্ট্যাটাসে জানালো তাদের বিভাগ/পড়াশুনা সম্পর্কিত গুগল গ্রপটিও এক্সেস করা যাচ্ছে না।
এর মানে কি ? মানে হলো বিটিআরসি'তে আসলে কোন যোগ্য লোক নেই। খেয়াল খুশী মতো যা ইচ্ছে তাই করতে পারেন তারা।
অল্প শিক্ষিতদের এই দেশে এই জাতীয় সিদ্ধান্ত যে মৌলবাদী ধর্মান্ধদের উসকে দিতে পারে তার নজির কিন্তু আমরা পেয়ে গেছি এর মধ্যে। রামুর ঘটনা ঘটনা এর প্রত্যক্ষ প্রমাণ। ফেসবুকে একটা ছবিকে কেন্দ্র করে যা ঘটলো তাতে একজন বাংলাদেশী হিসেবে আমি দারুণ লজ্জিত। অথচ কথিত সেই ছবি'তে উদ্দেশ্যমূলকভাবেই বৌদ্ধ ধর্মালম্বী একজনকে ট্যাগ করা হয়েছিলো। যে কোন সরকারী সিদ্ধান্তই জনগণকে প্রভাবিত করে - রামুর ঘটনার শুরুতে আওয়ামী মৎস্যজীবি সমিতির নেতারা মিছিল করেছিলেন বলে সংবাদপত্রে এসেছে। এখন আমি যদি প্রশ্ন করি মঃস্যজীবিদের জ্ঞান কতটুকু তাহলে কি বড় অন্যায় হবে ? আমি যেমন মাছ ধরা বিষয়ে কিছু জানি না, তারাও নিশ্চয়ই ইন্টারনেট বিষয়ে ব্যাপক কিছু জানে না। সরকার ইউটিউব বন্ধ করে দিয়েছে, তার ক্ষমতা এতোটুকুই ছিলো, কিন্তু মঃসজীবিরা ভেবেছে এবার বৌদ্ধ ব্যাটাতো আমাদের নাগালের মধ্যেই আছে - জ্বালাও, পোড়াও, ভাঙ্গচুর কর।
ইউটিউব এ কি আছে ? ইনোসেন্স অফ মুসলিমস ছাড়াও এখানে অজস্র কোরআন তেলাওয়াৎ, বিভিন্ন ভাষায় তরজমা এবং তাফসীর আছে, আছে আরো নানা রকম ইসলামিক কনটেন্ট। আমি আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে যদি প্রশ্ন করি - এক চলচ্চিত্রের জন্য এতোসব ইসলামিক কনটেন্ট যারা অবলীলায় রোধ করে দেয় তারা কতো বড় মুসলমান - তাহলে কি খূব অন্যায় হবে ? ইসলামিক কনটেন্ট ছাড়াও এখানে হাজার হাজার টিউটোরিয়াল আছে বিভিন্ন বিষয়ের উপর। আমার নিজের ফটোগ্রাফী জ্ঞানের ৯০% আমি আহরণ করেছি এই ইউটিউব থেকে।
তবে শেষ কথা হলো - ইউটিউব বন্ধের এই সিদ্ধান্ত বিনা বাধায় চলতে দেয়া যায় না। আমি প্রতিবাদ-জ্বালাও-পোড়াও এর কথা বলছি না। সরকারী নানা সিদ্ধান্ত জনস্বার্থে আদালতে চ্যালেঞ্জ করা করা হয় - আমি সেরকম কিছুর করার কথা বলছি। আমার নিজের আইনগত-টেকনিক্যাল জ্ঞান অপ্রতুল, সাথে অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতাও আছে। সবাই মিলে যদি একটা উদ্যোগ নেয়া হয়, বিটিআরসি'র এই অপসিদ্ধান্ত আদালতে চ্যালেঞ্জ করার - ভবিষ্যতে সিদ্ধান্ত গ্রহনের ক্ষেত্রে তারা আরো যত্নবান হবে।
নাহলে সেদিন হয়তো আর দূরে নয় যখন রাগীব হাসানের কল্পিত এই ঘটনাটাই ঘটবে।