
দয়া করে জামাত-ছাগু, ক্যাচালকারিরা দূরে থাকুন।
আজকে আমার এক বন্ধুর ছোট ভাইকে কি মনে করে যেন জিজ্ঞেস করলাম, বলতো ভাইয়া, আমাদের স্বাধীনতা দিবস কবে ? সে কিচুক্ষন চুপ করে থেকে আমাকে বললো, ভাইয়া স্বাধীনতা দিবস কোনটা যেন ? এটা কি ভিক্টরি ডে নাকি ইন্ডিপেন্ডেন্ট ডে ? আমি অবাক হয়ে অক্সফোর্ড ইন্টারন্যাশনালে পড়া ইংলিশ মিডিয়ামে পড়া বাঙালি ছেলেটির দিকে চেয়ে রইলাম।
এটা কোন আনকমন ঘটনা নয়। আমরা কবে স্বাধীনতা অর্জন করেছি আর আমাদের স্বাধীনতা দিবস কবে, এ নিয়ে কচি জেনারেশনের ছেলেমেয়েদের প্রায়ই কনফিউজিং অবস্থায় পড়তে দেখা যায়। প্রশ্ন হচ্ছে, এ দায়ভার কার ?? এটা কি ইংলিশ মিডিয়ামের দোষ নাকি আমাদের সচেতনতার ঘাটতি ? স্বাধীনতার ৪০ বছর পর আমাদের পরের জেনারেশনের তথ্য বিভ্রাটের দায় কি আমাদের সকলেরই নেয়া উচিত নয় ?
আসলে আমরা নিজেরাই বা কতটুকু জানি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস। আমাদের পড়ালেখা সীমিত, আমাদের জানার ইচ্ছা সীমিত, আমদের তথ্য জানানোর গুরুদায়িত্ব যাদের তাদের দায়িত্ববোধ সীমিত। আমাদের রাজনীতির পট পরিবর্তনের সাথে সাথে বদলে যায় স্বাধীনতার ঘোষকের নাম। আমরা আজো পাইনি পূর্ন ও সঠিক মুক্তিযোদ্ধার তালিকা। বরং আমরা পড়ে আছি শেখ মুজিব আর শহীদ জিয়ার অবদান কত বেশি তাই পরিমাপ করা নিয়ে ব্যাস্ত। আসলে এদের কার অবদান আমরা অস্বীকার করতে পারি ? যেভাবে পারিনা সকল মুক্তিযোদ্ধাদের অবদানের কথা। আমরা একবারো ভেবে দেখিনা এই কামড়াকামড়ির মাঝে পড়ে সেই ছোট ভাইটির মত হাজারো শিশুর মন থেকে মুছে যাচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা।
আমার নিজের অনুভূতির কথা প্রায় শেষ। এবার আপনাদের শোনাই কিছু সত্যিকার কাহিনী। একটু মনোযোগ দিয়ে পড়ে ফেলুন নিচের তিনটি ঘটনা।

ঘটনা ১-
জুলাই মাসের ঘটনা, ১৯৭১। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের একটি অসাধারন বিজয়ের ঘটনা বলি। ঢাকার পার্শবর্তী অঞ্চল আর কুমিল্লা ছিল ২ নং সেক্টরের অধীনে। রফিক নামে এক নতুন মুক্তিযদ্ধার আগমন ঘটে হটাৎ করেই। সে ছিল একজন ভবঘুরে। কিন্ত যুদ্ধে যোগদানের পরপরি সে হয়ে ওঠে অসাধারন সাহসী এক মানুষ। রাইফেলের পাশাপাশি এস,এম,জি আর এল,এম,জি চালান শিখে নেয় অনেক তাড়াতাড়ি। গ্রেনেড চালনায় তার জুড়ি মেলা দায়। কাচপুর অপারেশনে গুলিবিদ্ধ হবার পর থেকে জীবনের শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত সে গুলিবর্ষন করেছিল বলে সেক্টর কমান্ডার আব্দুস সালেক সহ গোটা দল সফল অপারেশন করে নিরাপদে ফিরে আসতে পেরেছিল।
একই ধরনের বিরত্ব দেখিয়েছিলেন আরেজন মুক্তিযোদ্ধা। তিনি বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান। ধলই বর্ডারে তিনি আমৃত্যু গুলিবর্ষন করায় তার গোটা দল রক্ষা পায়।
সিপাহি হামিদুর রহমানকে বীরশ্রেষ্ঠ উপাধিতে ভুষিত করা হয়।রফিকের নাম মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকাতেই নেই। (তথ্যসুত্রঃমুক্তিযুদ্ধের দলিল,৫ম খন্ড)
বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিক কে আমাদের শ্রদ্ধা।
ঘটনা ২-
আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রান হারিয়েছেন অনেক বিদেশী মানুষ। তাদের একজন হলেন ফ্রান্সের আদ্রে পল। তিনি ছিলেন জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থার একজন কর্মকর্তা। সে সময় জাতিসংঘের মহাসচিব ছিলেন উ থান্ট। তিনি আমাদের মুক্তিযুদ্ধকে মানব ইতিহাসের এক বিষাদময় ঘটনা বলে অভিহিত করেন। যাই হোক, আদ্রে পলের দায়িত্ব ছিল যুদ্ধের সমস্ত ঘটনা জাতিসংঘের মাধ্যমে বিশ্ববাসির কাছে তুলে ধরা। তার এই মহান দায়িত্ব পালন করতে গিয়েই তিনি ৭১ এর ডিসেম্বরে মারা পড়েন পক হানাদার বাহিনীর হাতে। তার নাম অনেক মুক্তি্যোদ্ধাও জানে না।(তথ্যসুত্রঃমুক্তিযুদ্ধ ও প্রবাসী বাঙ্গালী সমাজ,সাহিত্য প্রকাশ)
আদ্রে পল,আপনাকে আমাদের অসীম শ্রদ্ধা জানাচ্ছি।
ঘটনা ৩-
উত্তরাঞ্চলের করিমন বেওয়ার নাম সবাই শুনেছেন। কিন্ত রোকেয়া বেগমের কথা কি শুনেছেন? তিনি পঞ্চগড়ের বাসিন্দা। ৭১ এ ভারতে যাবার সময়ে তার সাথে পরিচয় হয় ইয়াসীন নামের এক পুলিশ সদস্যের। ইয়াসীন সাহেব তাকে নিয়ে যায় ডঃ আতীয়ার রহমানের কাছে। ডঃ আতীয়ারের সহযোগীতায় রোকেয়া বেগম প্রথমে শরনার্থী ক্যাম্পে এবং পরে অস্থায়ী হাসপাতালে যোগ দেন। দীর্ঘ সাত মাস তিনি বিনিদ্রভাবে সেবা করে যান আহত মুক্তিযোদ্ধাদের, আহত বাঙ্গালীদের। এর মাঝে তিনি হাতে তুলে নেন রাইফেলও। আমরা কি করে ভুলে যাই তাদের কথা? (তথ্যসূত্রঃআমি নারী,আমি মুক্তিযোদ্ধা।সম্পাদনা-সেলিনা হোসেন,অন্যপ্রকাশ)
রোকেয়া বেগম,আপ্নাকে আমাদের বিনম্র শ্রদ্ধা।।

এবার একটা দাবিঃ
আমাকে যদি বলা হয়,তোমার জীবনের সবচেয়ে বড় আক্ষেপ কি? আমি বলব মুক্তিযুদ্ধের সমকালীন না হয়ে এই সময়ে জন্মানো। সেই আক্ষেপটুকু ঢাকতে আমার এই ক্ষুদ্র প্রয়াস।সামুকে প্লাটফর্ম করে আমার দাবি -
"সমস্ত বেসামরিক,বিদেশী ও নারী মুক্তিযোদ্ধাদের পুর্নাঙ্গ তালিকা প্রকাশ করা হোক এবং তাদের যথাযথ সন্মান প্রদর্শন করা হোক।"
সামুর প্রিয় ব্লগারদের প্রতি আমার আবেদন, আপনারা এই দাবিটির সাথে একাত্মতা প্রকাশ করুন।