somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আট বছর ধরে পৃথিবী ঘুরে বেড়িয়ে যে উনত্রিশটি শিক্ষা আমি পেয়েছি - শেষ পর্ব

২৪ শে অক্টোবর, ২০১১ সকাল ৮:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

[পাঠকদের কাছে ক্ষমা চাচ্ছি এই পর্বটি লিখতে এতো দেরী হওয়ার কারণে। ব্যক্তিগত আলস্য এবং পারিবারিক ব্যস্ততা দেরী হওয়ার মূল কারণ]

১ম পর্ব, ২য় পর্ব

২০। সানস্ক্রীন ব্যবহার করুন

বেশি রোদ পড়লে ত্বকের ক্ষতি হয়, সানস্ক্রীন ব্যবহার করে ত্বকের যত্ন নিন। এবং নিচের ভিডিওটিতে যতো উপদেশ দেওয়া আছে সেগুলো সব অনুসরণ করার চেষ্টা করুনঃ




বাংলা অনুবাদ

২১। বেশি ভাবাভাবি বন্ধ করে কাজ করুন

বেশি ভাবতে যেয়ে জীবনের দরকারী কাজগুলো প্রায়ই করা হয়ে উঠেনা। আমি আমার জীবনে বেশি ভেবেচিন্তে একটা কাজও করতে পারেনি।

বেশি চিন্তা না করে কাজে নেমে পড়ুন। নাহলে কিছুই আর করা হয়ে উঠবেনা।

২২। সুযোগ পেলেই গান গাইতে, নাচতে চেষ্টা করুন

গান এবং নাচ চমৎকার আর্ট এবং মনকে খুব হালকা করে। নাচানাচি কিংবা গান গাওয়া/শুনার পড় মন ভালো না হতে উপায় নেই!

২৩। নতুন বন্ধু বানানো কঠিন কিছু না, এবং বর্তমান বন্ধুদের সাথে সুসম্পর্ক রাখাও জরুরী

আমি আমার গতো আট বছরের ভ্রমণ করে আসছি পুরোপুরি একা। প্রায়ই আমি একটা নতুন দেশে যে পা রাখি যেখানে আমাকে নিতে আসার কেউ থাকেনা। আমার তেমন কোনো কানেকশন নাই, কিন্তু আমি যেভাবেই হোক নতুন কানেকশন তৈরি করি। ইন্টারনেটে কোথাও কোনো পার্টি হচ্ছে দেখলে আমি সোজা যেয়ে সবাইকে "হ্যালো" বলি। এবং একটু লেগে থাকলে আমি কিছু মানুষকে পেয়ে যাই যাদের সাথে আমি গল্প-গুজব-আড্ডা দিতে পারি।

আপনি যদি বন্ধুত্বপরায়ন, অকপট, এবং মোটামুটি মানুষকে আকর্ষণ করার ক্ষমতা রাখেন তাহলে পৃথিবীর যেকোনো জায়গার যেকোনো মানুষের সাথে আপনি বন্ধুত্ব করতে পারবেন।

২৪। আপনার যা যা আছে তা হারিয়ে যাবার আগে সেগুলোর মূল্য বুঝবেন না

কোনো কিছুকেই খুব সহজপ্রাপ্য হিসেবে ধরে নিবেন না। একদিন রাতে আমার হোটেলে থাকার টাকা ছিলোনা এবং আমাকে বাইরে পাথরের উপর ঘুমাতে হয়েছিলো। সেই থেকে আমি আমার ঘুমানোর জন্যে যে একটা বিছানা এবং বাসা আছে সেটা নিয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি। কারণ আমি জানি পৃথিবীর অনেক মানুষের এই মৌলিক জিনিসগুলোও নাই। কেবল এক রাতের বাইরে ঘুমানোর কষ্ট থেকে আমি এখন প্রতিদিন রাতে আমার বিছানায় ঘুমাতে যাবার আগে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলি!

একবার আমার কানের ইনফেকশনের কারনে আমি প্রায় দুই সপ্তাহ কানে কিছু শুনতে পারতামনা। এরপর থেকে আমি আমার শ্রবণশক্তির জন্যে সবসময় কৃতজ্ঞ থাকি। সুস্থ কান থাকার কারণে আমি চারদিকের এতো সব চমৎকার শব্দ শুনতে পাই!

আমি কখনো আমার খুব কাছের কাউকে মারা যেতে দেখিনি এখনো, কিন্তু আমি আমার পরিবারের কারো সাথে দেখা হলে তাদেরকে জড়িয়ে ধরে বলি আমি তাদের কতোটা ভালোবাসি। বন্ধু-বান্ধব, পরিচিতজনদের সাথে আমি কোনো মনোমালিন্য পুষে রাখিনা, এবং আমার মনের কথাটি আমি সবসময় খোলাখুলিভাবে বলে ফেলি।

২৫। অযাচিত অহম ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে নিজের ভুলের জন্যে ক্ষমা চেয়ে ফেলুন

কারো প্রতি মনে ক্ষোভ পুষে রাখবেননা, এবং সবসময় অন্যের সাথে বিতর্কে জেতার জন্যে মরিয়া হয়ে থাকবেননা। মাঝেমধ্যে নিজের অহমকে ছোট করে মানুষের সাথে মনোমালিন্য এড়ানো যায়। অপরজনের আগে আপনি নিজেই বলে ফেলুন আপনি দুঃখিত। কখনোই যার সাথে সমস্যা হচ্ছে তার ভুল বুঝার জন্যে অপেক্ষা করে থাকবেন না। নিজে থেকেই আগ বাড়িয়ে ভুল বুঝাবুঝির সমাধান করে ফেলুন।

২৬। শুধুমাত্র অন্যদের মুগ্ধ করার জন্যে কিছু করা গাধামি

মানুষকে মুগ্ধ করার জন্যে যা-ই করেন না কেনো মানুষ আপনাকে সেই স্বীকৃতিটুকে দিবেনা। মানুষকে যদি বলে বেড়ান যে আপনি কতোগুলো ভাষা জানেন, কিংবা আপনি কতো ধনী, কতো উঁচু লেভেলের মানুষের সাথে আপনার সম্পর্ক আছে, আপনি কতো ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেছেন, আপনি কতো ভালো কাজ করেন, কোনো কিছুতেই আসলে মানুষের থেকে সেই স্বীকৃতিটুকু আপনি পাবেননা যেটা আপনি চাচ্ছেন। মানুষকে চমকিত করে আপনি নিজে গৌরবান্বিত হতে পারবেননা।

মানুষ তাদের দ্বারাই মুগ্ধ হয় যাদের কাছে গেলে তারা মন খুলে কথা বলতে পারে, এবং যাদের কথা এবং কাজ তাদের কাছে ইন্টারেস্টিং লাগে। মোটামুটিভাবে বলা যায় আপনি মানুষ হিসেবে ইন্টারেস্টিং হতে পারলেই মানুষ আপনাকে পছন্দ করবে, আপনার দ্বারা মুগ্ধ হবে।

২৭। পৃথিবীতে অসংখ্য মানুষ একাকীত্বে ভোগে

একা একা ভ্রমণ করার কারণে যে প্রশ্নটি আমাকে প্রায়ই শুনতে হয় তা হচ্ছে আমার নিজেকে একা লাগে কিনা। এক কথার হচ্ছে - না। আর লম্বা করে উত্তর দিতে গেলে একটা আলাদা পোস্ট লিখতে হবে।

সত্যি কথা বলতে কি পৃথিবীর অসংখ্য মানুষ একাকীত্বে ভোগে। আর আমি আসলে আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে অনেক বেশি একা ছিলাম। এখন আমি এমন অনেক মানুষের সাথে মিশি যাদের অসংখ্য বন্ধু-বান্ধব, সামাজিক-পেশাগত নেটওয়ার্ক আছে। কিন্তু এদের অনেকেই নিজেকে একা ভাবেন কারণ তাদের ধারণা মানুষ তাদেরকে বুঝেনা।

আবার অনেকে পেশাগত কিংবা পারিবারিক কারনে বন্ধু-বান্ধব, পরিচিতজনদের থেকে দূরে সরে গিয়েছেন এবং এখন নিজেকে একা লাগে।

অনেকেই আমাকে বলেন যে পৃথিবীতে তাদের মতো একা আর কেউ নেই। বিশ্বাস করুন আর নাই করুন, আমার আসলে আমার নিজ বাড়ি থেকে হাজার হাজার মাইল দূরে যেখানে কেউ আমার নাম পর্যন্ত জানেনা সেখানে বরং আমার অনেক ভালো লাগে। আমি নিশ্চিত এই মুহুর্তে পৃথিবীতে অসংখ্য মানুষ আমার মতো অবস্থায় আছে যেখানে তারা তাদের প্রিয়জন থেকে অনেক দূরে আছেন।

নিজেকে একা লাগলে ভাববেন না আপনিই একমাত্র এই অবস্থায় আছেন। চারদিকের অনেকেই আপনার মতো একা আছেন এবং তারা নিশ্চিতভাবেই আপনার অবস্থা বুঝতে পারে।

২৮। ভালোবাসা-ই জীবনে সব নয়, তবে কিছু ভালোবাসার মানুষ ছাড়া জীবনটা শূন্য মনে হতে পারে

ভালোবাসা ছাড়াও আপনি বেঁচে থাকতে পারবেন, কিন্তু ভালোবাসা ছাড়া জীবনের একটা অংশ খালি মনে হবে। আপনার জীবনে কিছু মানুষ থাকা দরকার যারা আপনাকে ভালোবাসে - বন্ধুবান্ধব, পরিবার, অথবা আপনার প্রেমিক/প্রেমিকা।

২৯। জীবনের সবচেয়ে বড় শিক্ষাগুলি কেউ আপনাকে কাগজে লিখে দিতে পারবেনা, আপনাকে অবশ্যই বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে

বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় মনে হতো আমি প্রায় সবকিছু জেনে গিয়েছি - এবং জীবনের গুরুত্মপূর্ণ প্রায় সবকিছুই বইয়ে লেখা আছে। কিন্তু সত্য হচ্ছে জীবনের সবচেয়ে গুরুত্মপূর্ণ জিনিসগুলো নির্ভুলভাবে কাগজে লেখা প্রায় অসম্ভব, এবং সেটা আমার এই পোস্ট সম্পর্কেও সত্যি।

যখন সারা পৃথিবীর প্রায় সব জ্ঞান যখন একটা কীবোর্ড এবং মাউস দিয়ে পাওয়া যায়, তখন এটা মনে হতে পারে বাইরের পৃথিবীতে যেয়ে সেই জ্ঞান নিজে অর্জন করার কোনো দরকার নেই। সিনেমা, বই, খবরের কাগজ ইত্যাদির মাধ্যমে এখন মনে হতে পারে আমরা প্রায় সব কিছু সম্পর্কে জেনে যেতে পারি।

এটা একটা ভুল ধারণা। পৃথিবীতে সবচেয়ে বড় শিক্ষক হচ্ছে মানুষের জীবনের বাস্তব অভিজ্ঞতা।

ঘরে বসে বসে নাটক, সিনেমা, কম্পিউটার এর মাধ্যমে পৃথিবী সম্পর্কে জানা বন্ধ করে বাইরে যেয়ে নিজের জীবন থেকে সেই অভিজ্ঞতা লাভ করুন।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে অক্টোবর, ২০১১ সকাল ৮:৪১
৩৪টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।

লিখেছেন আহা রুবন, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫০





ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×