আগের পর্ব
বিকেল থেকেই রাঘবদের দিঘীর পাড়ের মাঠে চরে বেড়াচ্ছিল মালা।
সন্ধ্যাবেলা মাঠে এসে মনোয়ার দেখল মাঠটা ধু ধু করছে, মালাকে কোথাও দেখা যাচ্ছে না। মনোয়ারের বুকটা ধরাস করে উঠল। এ কী! মালা গেল কোথায়? মালাকে দেখছি না কেন? মালাকে কেউ কি ছেড়ে দিল ? তিতা-কটূ নয়তো? তা হলেই তো সর্বনাশ! এখন তা হলে কোথায় খুঁজব মালাকে ? সালমার কাছে যাব?
এইসব ভাবতে-ভাবতে কী মনে করে খাল পাড়ে চলে এল মনোয়ার। তারপর খালের উপর বাঁশের সাঁকেটা পার হয়ে ঝিলিমিলি নদীর পাড়ে অশথ গাছের তলায় এসে দাঁড়ল । সন্ধ্যার পর গ্রামের লোকজন সচরাচর এখানে আসে না। এই স্থানটা সম্পর্কে নানা ধরনের কথা প্রচলিত আছে। এখন কিন্তু নিরুপায় হয়েই মনোয়ারকে আসতে হল। মালাকে খুঁজে না-পেলে যে সর্বনাশ হয়ে যাবে। ও ভাবছিল এদিকটা দেখে তারপর সালমাদের আমবাগানটা দেখবে। তারপর না হয় সালমার সঙ্গে বিলাইমারির জঙ্গল যাওয়া যেতে পারে।
কিছুই করার নেই বলে অশথ গাছের ডালে বসে ঝিমাচ্ছিল পিদিম। এখন একবার কী মনে করে চোখটা খুলতেই গাছের তলায় মনোয়ারকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেই সুড়–ত করে গাছ থেকে নেমে এসে একেবারে মনোয়ারের সামনে এসে পিদিম বলল, কী ব্যাপার মনোয়ার, তুমি এই ভর সন্ধ্যেবেলা এখানে কী করছ? জান না সন্ধ্যের পর অশথতলায় কত রকম ভুতপ্রেত দৈত্যিদানো বেরোয়? যদি তারা তোমার ঘাড় মটকে দেয় আর তারপর চো চো করে তোমার রক্ত পান করে?
পিদিমের কথা শুনে সাংঘাতিক ভয় পেয়ে গেল মনোয়ার । ও ঠকঠক করে কাঁপতে-কাঁপতে বলল, আমি ইচ্ছে করে এখানে আসিনি ভাই। মালা হারিয়ে গেল বলে খুঁজতে বেরিয়েছি ।
পিদিমের নাকের ওপর একটা মশা ঘুরঘুর করছিল। ওটাকে হাতের ঝাপটায় তাড়িয়ে দিয়ে বলল, ও এই কথা, দাঁড়াও আমিই মালাকে খুঁজে বার করছি। তার আগে চল তোমায় বাড়ি পৌঁছে দিই। বলেই চোখের পলকে বড় একটা ধবধবে রাজহাঁস হয়ে গেল পিদিম। সেই রাজহাঁসটা বলল, নাও, এবার লক্ষ্মীছেলের মতন আমার পিঠে উঠে পড় তো ।
পিদিমকে রাজহাঁস হয়ে যেতে দেখে মনোয়ার মোটেও অবাক হল না। ও ভালো করেই জানে পিদিম একটা সাদা ভূত। আর পিদিম ভূত হলেও ভালো। সেদিন রসগোল্লা খাওয়ার পর বৃষ্টির মধ্যে পিদিম আবার ফিরে এসেছিল। বসে কত গল্প করল। এখানে খাওয়ার কষ্ট। গ্রামের লোকেরা পান্তা খায়। শহরের থাকার সময় কেক-পেষ্ট্রি দিয়ে ব্রেকফাস্ট করত নাকি পিদিম। মনোয়ারের ছোটবোন ফরিদা আবার কেক-পেষ্ট্রি, ব্রেকফাস্ট - এসব শব্দের মানে জানে না। পিদিম বুঝিয়ে দিল। এভাবেই কেমন করে সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়ে গেল পিদিমের। মনোয়ারের মা জমিলা বলল, খাওয়ার যখন এতই কষ্ট তুমি মাঝে আমাদের এখানে আসবা, খাবা।
ফরিদা বলল, জান পিদিম মার রান্না না খুব ভালো। জলপাই দিয়ে পুঁটিমাছের টক খেলে জীবনে ভুলতে পারবে না।
পিদিম আবদার করে বলল, আমি জলপাই দিয়ে পুঁটিমাছের টক খাব জমিলা খালা।
জমিলা হেসে বলল, আচ্ছা, এদিন আমি রেঁধে খাওয়াব।
মনোয়ার রাজহাঁসের পিঠে চরে বসতে বসতে সেসব কথাই ভাবছিল।
রাজহাঁসটা আকাশে উড়ল।
তখন সন্ধ্যেবেলা বলেই অশথ গাছের বাশিন্দার জেগেই ছিল। কেউই ঘুমায়নি। পিদিম একটা বড় রাজহাঁস হয়ে মনোয়ারকে পিঠে নিয়ে উড়ে যেতে দেখে দাঁড়কাক গড়ান গম্ভীর গলায় বলল, পিদিমের কেরামতি দেখলে চিরি?
চিরি হাততালি দিয়ে বলল, হ্যাঁ, দেখলাম বৈ কী। ছেলেটাকে আমি চিনি। ওর নাম মনোয়ার।
কুটুস বলল, ভারি সুন্দর তো। কী সুন্দর কালো-কোঁকড়া চুল। কী সুন্দর শ্যামলা গায়ের রং। দাঁতগুলিও ঝকঝকে, নিশ্চয়ই খুব গাজর খেতে ভালোবাসে।
পিঁপড়ের দল লালসারি বলল, হ্যাঁ, ছেলেটা বেশ সুন্দর দেখতে। মনে হয় রোজ দু কাপ করে চিনি খায়।
ভূতুম চিন্তিত হয়ে বলল, আমি ভাবছি পিদিম কী করে ছেলেটা কে চিনল।
চিরি বলল, চিনিতেই পারে। সেটা আর এমন কী। কেন তুমি আমবাগানের সালমাকে চেন না?
ভূতুম বলল, ভালোই চিনি। আমায় রোজ চিংড়ি খেতে দেয়। তা পিদিম ভূতটা খুব ভালো।
চিরি কেন যেন অহেতুক ফুঁসে উঠে বলল, আমি কী বলেছি খারাপ!
কুটুস মাথা নেড়ে মন্তব্য করল, কীসের মধ্যে কী।
ভূতুম বলল, আমি কি বলেছি তুমি পিদিমকে খারাপ বলেছ?
লালসারি প্রায়ই ভূতুমের পিঠে চড়ে বেড়ায় বলে ভুতুমের পক্ষ নিয়ে বলল, বললেই তো।
কখন বললাম?
এই তো এখন বললে
বলিনি
বলেছ।
বলিনি।
বলেছ।
গড়ান ধমক দিয়ে বলল, এই তোমরা সামান্য ব্যাপার নিয়ে কী শুরু করেছ?
চিরি রেগে উড়ে বলল, সামান্য ব্যাপার না গড়ানদা। আমি জানি আমি দ্রুত উড়তে পারি বলে ভূতুম আমায় ইর্ষা করে।
বাজে কথা। লালসারি প্রতিবাদ করে বলল।
ভূতুম বলল, আর আমার শক্ত খোলের জন্য তুমি আমায় ইর্ষা কর না চিরি। কতদিন সেকথা আমায় আভাসে ইঙ্গিতে বুঝিয়েও দিয়েছ। আমার এই শক্ত খোলের জন্য তোমার লোভ। জান, শহরের পন্ডিতেরা কাছিমের খোলকে বলে,“ কূর্মপৃষ্ঠ”। বলে ভূতুম কত কত করে হাসল।
চিরি বলল, দেখলে দেখলে কেমন অসভ্যের মতন হাসছে।
লালসারি ভূতুমের ন্যাওটা বলেই চিরিকে থ্রেট দিল, এই চিরি, মুখ সামলে কথা বল। নৈলে?
নইলে কী করবে শুনি? নাহ্, তোমার অনেক বার বেড়েছে ভূতুম। আমার বিরুদ্ধে লালসারিকে লেলিয়ে দিলে। এবার ভাবছি আমি তোমায় একট গালি দেব ভূতুম।
গাল দেবে? দাও তো দেখি।
তুমি একটা কচ্ছপ।
ভূতুম হো হো করে হেসে উঠে বলল, যা বাবা। এটা কোনও গালি হল নাকি। কচ্ছপ হল আমার বাপের দেওয়া নাম। আর কাছিম হল আমার মায়ের দেওয়া নাম।
চিরি রাগ ভুলে জিগ্যেস করল, আর ভূতুম?
ভূতুম খানিকটা স্মৃতি রোমন্থন করে বলল, আমার ভূতুম নামটা গড়ানের দেওয়া । গড়ানের পর আমিই কিনা প্রথম আসি অশথগাছে থাকার জন্য। এর আগে আমি ছিলাম কালিগঙ্গা নদীর পাড়ে। তো, ওখানে ছিল ভারি বদমাস একটা ভোঁদর। সে আমায় ভারি জ্বালাত বলেই পালিয়ে এলাম।
চিরি কৌতূহলী হয়ে জিগ্যেস করল, কী করে জ্বালাত?
ভূতুম বলল, এই ধরো আমার মাছগুলি খেয়ে ফেলত কি আমি মাছ ধরব তখন জল ঘোলা করে দিত। এইসব।
চিরি অবাক হয়ে বলল, সত্যি ভূতুম?
হ্যাঁ। ভূতুম হেসে বলল।
এভাবে ওদের মধ্যে যখন আবার মিলমিশ হয়ে গেল তখন পিদিম গড়পাড়া গ্রামের আকাশে উড়ছিল। ওর পিঠে শক্ত করে পালক আঁকড়ে বসে রয়েছে মনোয়ার। অত উঁচুতে উঠে মনোয়ারের বুকের ভিতরটা কেমন যেন করছে। এর আগে এত উচুঁতে কখনও ওঠেনি ও । বড়জোর নীপা সাহাদের নাগপুকুরের পাড়ের তালগাছের মাথা আর চৈত্রসংক্রান্তির মেলায় সেগুনবাড়ির মাঠের নাগরদোলা। ও নীচে চেয়ে দেখল অনেক নীচে ঝিলিমিলি নদীর জল ঝিকমিক করছে। ফুটফুটে জোছনায় গড়পাড়া গ্রামটা ছড়িয়ে রয়েছ । ইশকুল ঘরের টিনের চালটা চকচক করছে। রাঘবদের দিঘীতে মস্ত একটা চাঁদ। দূরে বিলাইমারির জঙ্গলে শেয়াল ডাকছে।
মিনিট দুই পরে রাজহাঁসরুপী পিদিম মনোয়ারদের উঠানে ল্যান্ড করল।
মনোয়ার ধীরেসুস্থে নামল। দাওয়ায় বসে ছিল ফরিদা। বড় ভাইকে বিশাল একটা রাজহাঁস থেকে নামতে দেখে ওর চোখদুটো ছানাবড়া হয়ে যাওয়ারই কথা।
পিদিম বলল, তুমি অপেক্ষা কর। আমি দেখছি মালা কোথায়।
আচ্ছা। মনোয়ার মাথা নেড়ে জানাল।
পিদিম বিদ্যুতের সালমাতের আমবাগানে এল। তন্ন তন্ন করে ...না কোথাও নেই। গেল কোথায়? চোখ কপালে তুলে ভাবতে লাগল পিদিম। পিদিমের হঠাৎই মনে হল ইস, বিলাইমারী জঙ্গলটা তো দেখা হল না। মালা ওখানে যায় নি তো? ভাবতেই পিদিম বিলাইমারি জঙ্গলের দিকে যেতে লাগল । বিলাইমারির জঙ্গলটা খাল পেরিয়ে, ঘন বাঁশের ঝাড় পেরিয়ে আর গ্রামের শ্মশানটা পেরিয়ে গড়পাড়া গ্রামের একেবারে শেষ প্রান্তে । জায়গাটা ভাল না। সাপখোপ আর দৈত্যদানোর ভয়ে লোকে সচরাচর এদিকে রাতের বেলা আসে না দিনের বেলাতেও আসে না। বিলাইমারি জঙ্গলভরতি পুরনো দিনের উঁচু উঁচু গাছ। ঝিলিমিলি নদীটা জঙ্গলের একপাশ দিয়ে বয়ে যাচ্ছে।
ভয়ঙ্কর এই বিলাইমারির জঙ্গলের একটা বহুদিনের পুরনো হরীতকি গাছের নীচে থামল পিদিম । রাত বাড়ছিল বলে পাতলা জোছনা ঘন হয়ে উঠছিল। জঙ্গলটা শুনশান হয়ে আছে। ঝিঁঝি ডাকছে। মাঝে মাঝে শেয়াল। শনশন করে নদীর দিক থেকে হাওয়া বয়ে গেল। পিদিম চারিদিকে চেয়ে দেখল। আরেকটু ভালো করে তাকাতেই পিদিম দেখল দূরে আর তিনটে ছায়ামূর্তি ওরা কী নিয়ে কথা বলছিল। আসলে ওরা হল তিতা-কটূ আর সার্কাসের মালিক রাব্বানীর ডানহাত গাবু। পিদিমের তো তা জানার কথা নয়। আরেকটু ভালো করে তাকাতেই পিদিম দেখল একটু দূরে একটা কামরাঙা গাছের গুঁড়িতে মালাকে বেঁধে রেখেছে। মনে হচ্ছে ওরাই কান্ডটা করেছে। ওই তিনজন কী বলে তা শোনার জন্য পিদিম কান পাতল।
গাবু বলছিল, না না কুড়ি হাজার বেশি হয়ে যায়। আমি সাতশ টাকা দেব। তোমরা বেশি দাম হাঁকলে পির ছাহেব নারাজ হবেন।
কটূ কী বলতে যাবে। পির সাহেবের কথায় বলল না। আসলে হয়েছে কী, কাল ধলেশ্বরী নদীর পাড়ে নাইওরিগঞ্জের লবেযান পিরের বার্ষিক ওরস মোবারক। গাবু আবার বহুবছর ধরে নাইওরিগঞ্জের লবেযান পিরের মুরিদ। গরু কিনে পিরের থানে গেলে সম্মান বাড়বে গাবুর। অন্যরাও ইর্ষা করবে। তিতে-কটূকে আজ বিকেলে দেখে শস্তায় একটা গরুর কথা বলে রেখেছিল গাবু। তিতে-কটূ মালার কথাই ভেবেছিল।
মালাকে সবই ঠিকঠাক মত চলেছিল। তিতা-কটূ সন্ধ্যের মুখে মালাকে রাঘবদের দিঘীর ...তুলে এনেছে বিলাইমারীর জঙ্গলে। এখন গোল বেঁধেছে দরদাম নিয়ে। কটূ বলল, এত বড় গরু মাত্র সাতশ টাকা দেবেন। না, না, আমরা পয়ত্রিশ হাজারের নীচে ছাড়ব না।
পয়ত্রিশ হাজার! বল কী। ইয়ারকী নাকি। চুরির গরুর অত দাম হয় নাকি?
হয় না আবার। কুরবানী ঈদ পর্যন্ত এটাকে রাখতে পারলে বিয়ালি¬শ হাজার পাব জানেন।
ঠিক আছে সাতশ টাকা সাড়ে আটশ টাকা দেব।
এই তিতা চল। মালাকে কোথায় রেখে বাড়ি যাই। খিদে পেয়েছে। বিকেলবেলা মাকে বলতে শুনলাম,“ রাতে ধনেপাতা দিয়ে কই রাঁধিস মল্লি¬কা।”
তাই চল।
আরে দাঁড়াও দাঁড়াও তোমরা দেখছি বড্ড রেসিক আদমী হ্যায়। মুলোমুলির ধার ধারও না। আসলে মুলোমুলি মানে বারগেনিংটা হচ্ছে একটা কালচার। আমি একবার হাতির বাচ্চার দরদাম করতে থাইল্যান্ড মানে তাইল্যান্ড গেলাম। হাতির বাগারে আগুন। একজ
কত চাইল?
কত চাইল?
হ্যাঁ।
বিয়াল্লিশ হাজার আমি সাড়ে সাতশ বলতেই রাজী হয়ে যায় আর কী ...
পিদিম বেশ বুঝতে পারল দুটি দুষ্টু ছেলে মালাকে চুরি করে এনে একটাবেঁটে মতন পাজী লোকের কাছে বিক্রি করে দিতে চাইছে। তাই নিয়েই দর কষাকষি চলছে। পিদিম সময় নষ্ট করল না। চোখের নিমিষে ও একটা প্রকান্ড ডোরাকাটা বাঘ হয়ে গেল। যে সে বাঘ নয়। একেবারে সুন্দরবনের ডাকসাইটে রয়্যাল বেঙল টাইগার। বাঘ হয়েই গর্জে উঠল পিদিম, হালুম।
বাঘ! ওরে বাবারে ... বাঘ ...। কথাটা কে বলল বোঝা গেল না। তবে গলা শুনে মনে হল গাবুই বলল।
পালা কটূ।
কথাটা বলামাত্র তিনজনই ছুট লাগাল ঘুরে।
গভীর বনের মধ্যে দিয়ে ছুটতে ছুটতে গাবু ভাবল, সর্বনাশ! সার্কাসের বাঘটা ছুটল কী করে। এখন গ্রামে লোকজন ধরে ধরে খাবে। তা হলেই সর্বনাশ। লোকে তাহলে সার্কাসের তাবুতে আগুন দেবে। কিন্তু এ কী! তিতা-কটূ গেল কই।
আসলে তিতাকটূ ততক্ষনে উর্ধশ্বাসে দৌড়ে শ্মশানটা পেরিয়ে ঘন বাঁশের ঝাড় পেরিয়ে খাল পেরিয়ে তালপুকুরের পাশে ময়নার মাঠে এসে হাঁপাতে লাগল। কী আজব এন্ড কোং সার্কাসের তাবু এই ময়নার মাঠের এককোণে পড়েছে। এখান থেকে ওদের মন্ডলবাড়ি খুব একটা দূরে না। কিন্তু ওদের বাঘের ভয়ে বাড়ি যাওয়ার হিম্মত হল না। ময়নার মাঠে অনেক গাছ। সেদিকে চেয়ে কটূ বলল, এই তিতা বাঘে কি গাছে চরতে পারে?
জানি না। পারে মনে হয়। এখন মনে আসছে না।
বকুল গাছ?
মনে হয় না।
তাহলে চল ওই বকুলগাছে উঠে আজ রাতটা কাটিয়ে দিই।
হ্যাঁ। সেই ভালো।
ওরা তরতর করে একটা বকুল গাছের ডালে চরে বসল। ওদের ঠকঠকানি কাঁপুনি তখনও কমেনি।
ওদের তিনজনকে অমন ভাবে পালাতে দেখে পিদিম তো হেসেই খুন। ও মুহূর্তেই বাঘের রুপটা বদলে নিল। নইলে মালা ভয় পাবে যে। রুপ বদলে মনের আনন্দে কয়েকবার ডিগবাজী খেল পিদিম। তারপর পরম আনন্দে মালার দড়িটা কামরাঙ্গা গাছ থেকে খুলে নিয়ে মনোয়ারদের বাড়ির দিকে হাঁটা দিল।
মালা পিদিমকে ঠিকই চিনেছে। ও তাই কয়েকবার খুশির চোটে হাম্বা হাম্বা করে ডেকে উঠল। আরেকটু হলেই ভন্ড পিরের আস্তানায় প্রাণটা জবাই হয়ে যাচ্ছিল।
এত কান্ড করে করে বড্ড ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল পিদিম। এখন তাই হাত পা ছড়িয়ে গভীর ঘুমে পড়ে ছিল ঘাসের বনের ভিতরে। রাতের খাওয়াটা পিদিম মনোয়াদের বাড়িতেই সেরেছিল। বেলে মাছের ঝোল দিয়ে পেটপুরে ভাত খেয়ে নিয়েছিল। জমিলা খালা এখন অনেকটাই সুস্থ। মাছ তিনিই রেঁেধছিলেন। খালার হাতের রান্না খেয়ে রাতে নাকি ভালো ঘুম হয়।
ফরিদা তো তাইই বলল।