somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কী ফুল ঝরিল বিপুল অন্ধকারে

২৭ শে নভেম্বর, ২০১১ রাত ৯:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



উত্তর কলকাতার নিমতলা শ্মশান ঘাটে সন্ধ্যা-বিগত রাতে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রজ্জ্বলিত মরদেহের সামনে দাঁড়িয়ে বেদনাহত তরুণ কবি সুধীন্দ্রনাথ দত্ত শোককাতর হয়ে বলে উঠেছিলেন, আজ থেকে সবকিছু পাল্টে যাবে; আর তাই হয়, এই একজন মাত্র মানুষের প্রয়াণে এখানে সবকিছু পাল্টে যায়। বাংলাদেশের মানুষ তার পরের দিন সকালে ঘুম থেকে জেঠে ওঠে রবীন্দ্রনাথকে ছাড়া। শুরু হয় বাঙালির রবীন্দ্রনাথবিহীন জীবন যাপন। মৃত্যু কেবল একজন ব্যক্তিকেই ছিনিয়ে নেয় জীবন থেকে এবং তখন যে শূন্যতা নেমে আসে সেই শূন্যতা হয়তো কখনো কখনো ব্যক্তি ছাড়িয়ে পরিবারে বিস্তৃত হয়। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শুধু একজন ব্যক্তি মাত্র নন, তাই তাঁর মৃত্যু কেবল একজন ব্যক্তি বা একটি পরিবারকে শোকগ্রস্ত করে রাখে না, তাঁর মৃত্যু সমগ্র বাঙালি-জীবনকেই শূন্যতায় ভাসায়। এর কারণ যে, ব্যক্তি রবীন্দ্রনাথ, তাঁর সকল কীর্তি ও গৌরব নিয়ে দূরবর্তী একজন হয়ে যান নি। জীবনকালের আশি বছরে সৃষ্টি ও কীর্তিতে রবীন্দ্রনাথ হয়ে উঠেছেন আমাদের নিবিড় আপনজন। জন্মেছিলেন কলকাতার নাগরিক কোলাহলে, সেখানে বেড়ে উঠেছেন, কিন্তু ভালবেসেছিলেন পল্লি বাংলাকে। কখনো পদ্মা বোটে, কখনো শিলাইদহের কুঠিবাড়িতে, কখনো শাহজাদপুরের কাছারি বাড়িতে কখনো পতিসরে বসবাস করে তিনি যে আনন্দ ও স্বস্তি পেয়েছেন, কলকাতা নগর কখনো তাঁকে সেরকম আনন্দ ও স্বস্তি দিতে পারে নি। তারই টানে তিনি বারবার ছুটে গেছেন নগর থেকে দূরে, নিভৃত পল্লিতে। তাঁর সুদীর্ঘ জীবনের প্রায় অর্ধেকটা তিনি কাটিয়ে দিয়েছেন বীরভূমের শুষ্ক, রু পোড়োজমিতে প্রকৃত অর্থেই একটি ছায়াসুশীতল শান্তিনিকেতন প্রতিষ্ঠা করতে। তাঁর কবিতা ’দুই বিঘা জমি’র ভিটেমাটি হারানো উপেনের চোখে নিভৃত এই পল্লি বাংলাকেই আমরা নতুন করে দেখি। পল্লি প্রকৃতির এই শান্ত শীতল রূপ উপেনের চোখ দিয়ে মূলত রবীন্দ্রনাথই আমাদের দেখান। উপেন যা দেখে আর হৃদয় দিয়ে অনুভব করে, একসময় আমরা অবাক হয়ে বুঝতে পারি, এই দেখা ও অনুভব করা আসলে সমগ্র বাঙালিরÑ
নমোনমো নম, সুন্দরী মম জননী জন্মভূমি!
গঙ্গার তীর, স্নিগ্ধ সমীর জীবন জুড়ালে তুমি।
অবারিত মাঠ গগনললাট চুমে তব পদধূলি-
ছায়াসুনিবিড় শান্তির নীড় ছোট ছোট গ্রামগুলি।
পল্লবঘন আম্রকানন, রাখালের খেলাগেহ-
স্তব্ধ অতল দিঘি কালোজল নিশীথশীতলস্নেহ।
বুক-ভরা-মধু বঙ্গের বধূ জল লয়ে যায় ঘরে
মা বলিতে প্রাণ করে আনচান, চোখে আসে জল ভরে।

বৃহৎ বিশ্বের পথে জীবনে বহুবার পা বাড়িয়েছেন রবীন্দ্রনাথ, কিন্তু বারবার ফিরে ফিরে আমাদের কাছেই এসেছেন, স্বস্তি খুঁজেছেন বাংলার মাটিতে পা রেখে। আর যখন বিশ্বভ্রমণে দূরে গেছেন তখনও হৃদয়ে ধারণ করে রেখেছেন বাংলাদেশের নদী, মাঠ, ঘাট, নৈসর্গ। পিতার আদেশে জমিদারি দেখাশুনা করতে এসে পল্লি বাংলাকে তিনি আরও ভাল করে অনুভব করতে পেরেছিলেন বলেই একসময় আমরা তাঁর সৃষ্টিতে, বিশেষ করে ছোটগল্পের বিষয়বস্তু বদলে যেতে দেখি; বলা বাহুল্য, এই বদলে যাওয়া রবীন্দ্রসাহিত্যের ক্ষেত্রে বিপুল বৈচিত্র্য নিয়ে হাজির হয়েছিল বলেই রবীন্দ্রনাথ সমগ্র বাঙালি জীবনের মর্মমূলে ঠাঁই করে নিতে পেরেছেন। তাই নিমতলা শ্মশান ঘাটে, ১৩৪৮ সালের ২২শে শ্রাবণের রাতে, তখন আকাশে শ্রাবণের য়া চাঁদের পূর্ণিমা ছিল কিনা কে জানে; একদিকে যখন রবীন্দ্রনাথের পার্থিব দেহখানা উজ্জ্বল আগুনে পুড়ে যাচ্ছিল তখন, ‘নিমতলা ঘাটের বাইরে উদ্ভ্রান্ত কবি সুধীন্দ্রনাথ দত্ত হিরণকুমার সান্যালকে বলেছিলেন, হাবুল, It makes going to a defference. And what a defference. আর আজও আমার মনে হয়, ’ সত্যি সত্যি সুধীন্দ্রনাথ দত্তের এই সুদূরদর্শী উচ্চারণ ১৩৪৮ সালের ২২শে শ্রাবণ রাতের পর থেকে যত দিন গেছে সমগ্র বাঙালি-জীবন আরও বেশি করে অনুভব করেছে। তবে এটাও ঠিক, রবীন্দ্রনাথবিহীন বিগত প্রতিটি দিনরাতে রবীন্দ্রনাথ আমাদের প্রাত্যহিক জীবন যাপনার সঙ্গে আরও বেশিভাবে অনুভববেদ্য হয়ে ওঠেছেন।

২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

১. ২৭ শে নভেম্বর, ২০১১ রাত ৯:৫৬

মঈনউদ্দিন বলেছেন: :)

২. ২৭ শে নভেম্বর, ২০১১ রাত ১০:২৪

হমপগ্র বলেছেন: বড় আশা করে, এসেছি গো কাছে ডেকে নাও...ফিরায়েও না গো জননী।



বিদেশ থেকে ফিরতে সময় এমনটাই লিখেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর!

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমরা যদি পুড়ি, তবে তোমরাও আমাদের সঙ্গে পুড়বে !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৮ শে মার্চ, ২০২৫ বিকাল ৫:০১


২২ বছর ধরে একচ্ছত্র ক্ষমতা, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান দখল, বিরোধীদের দমন—এরদোয়ানের শাসনযন্ত্র এতদিন অপ্রতিরোধ্য মনে হতো। কিন্তু এবার রাজপথের তরুণরা সেই ধারণাকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে। তুরস্ক এখন বিদ্রোহের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে। ইস্তাম্বুলের জনপ্রিয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

চেংগিস খান: ব্লগের এক আত্মম্ভরী, অহংকারী জঞ্জাল

লিখেছেন আমিই সাইফুল, ২৮ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ৯:৪৪

ব্লগ জগতে অনেক ধরনের মানুষের দেখা মেলে—কেউ লেখে আনন্দের জন্য, কেউ লেখে ভাবনা শেয়ার করতে, আর কেউ লেখে শুধু নিজের অস্তিত্ব জানান দিতে। কিন্তু তারপর আছে চেংগিস খানের মতো একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

পাকিস্তান প্রেমে হাবুডুবু খাওয়া নষ্ট প্রজন্ম

লিখেছেন Sujon Mahmud, ২৮ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ১১:৩৬

৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পর ধর্ষিতা বাঙালি নারীদের চিকিৎসায় নিয়োজিত অস্ট্রেলীয় ডাক্তার জেফ্রি ডেভিস গণধর্ষণের ভয়াবহ মাত্রা দেখে হতবাক হয়ে কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টে আটক পাক অফিসারকে জেরা করেছিলেন যে, তারা কীভাবে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে যৌন মিলনকে ধর্ষণ বলা হবে, না প্রতারণা বলা হবে?

লিখেছেন সাড়ে চুয়াত্তর, ২৯ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ১:৪১

আমাদের দেশে এবং ভারতের আইনে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে যৌন মিলনকে ধর্ষণ হিসাবে গণ্য করা হয়। পৃথিবীর অন্য কোন দেশে এই ধরণের বিধান আছে বলে আমার মনে হয় না।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশ, চীন ও ভারত: বিনিয়োগ, কূটনীতি ও ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ

লিখেছেন শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু, ২৯ শে মার্চ, ২০২৫ ভোর ৫:১০


প্রতিকী ছবি

বাংলাদেশের বর্তমান আন্তর্জাতিক সম্পর্কের সমীকরণ নতুন মাত্রা পেয়েছে। চীন সফরে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ ও আর্থিক প্রতিশ্রুতি নিয়ে ফিরছেন, যা দেশের অর্থনীতির জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

×