শৈশবে অবধারিত ভাবেই নতুন টেক্সট বই হাতে পেতাম জানুয়ারী মাসে। তারপরের নতুন বইয়ের সাজসজ্জার ব্যাবস্থাতেই ব্যস্ত থাকতাম কয়েকটা দিন । বড় বোনটির সাথে তুমুল মারামারি হত বই মলাটের জন্য সুন্দর ক্যালেন্ডারটির মালিকানার দখল নিয়ে, আব্বার অফিসের কাজের জন্য রাখা লাল, সবুজ কলমও একদিন সুযোগ বুঝে ড্রয়ার থেকে বের করে আনতাম; সমস্ত মনপ্রাণ ঢেলে অতি মনোযোগ দিয়ে বইয়ের মলাটে নাম ক্লাস, রোল , বিষয় লিখতাম ।নাম যদিবা লিখতাম সবুজ কালিতে- স্কুলের নাম, রোল লিখতাম লাল আর নীল কালিতে ।বইয়ের মলাট রংধনু বানিয়ে দিতে চাইতাম যেন! এরপরও বাকি থাকত কিছু ; গত বছরের মোল্লা সল্টের সাথে ফ্রী পাওয়া মীনা কার্টুন আর প্রান অরেঞ্জ জুসের সাথে পাওয়া রোবোকপের জমানো স্টিকারগুলো বের হত কোন এক গুপ্ত কুঠুরি থেকে। একচোখ বন্ধ করে বইয়ের একদম ঠিক মধ্যবিন্দুনির্ণয় করে সযত্নে সেখানে বসিয়ে দিতাম স্টিকারটা ।বাংলা আর ইসলাম শিক্ষা বইয়ে সবচেয়ে সুন্দর স্টিকার দুইটি স্থান পেত । জানুয়ারীর কনকনে শীতে বাংলা বইটা নিয়ে ঢুকে যেতাম লেপের নিচে । নতুন বইয়ের মদিরতাময় গন্ধ আর লেপের নিচের আরামদায়ক ওমটুকু ভাসিয়ে নিয়ে যেত সুদূর কল্পরাজ্যে ।
২০১৫ এর আধখানি পড়া বেশ কিছু উপন্যাস, শেষ না করা কয়েকটি গল্প সংকলন হাতের কাছেই আছে । তারপরও নতুন বছর নতুন বই দিয়ে শুরু করতে ইচ্ছা হল । নাইবা হল সেসব পাঠ্যবই, নাইবা হল মলাট-স্টিকারের জমজমাট ছেলেমানুষী; তবুও নতুন বইয়ের চিরন্তন নেশা ধরানো গন্ধে শামসুর রহমানের ট্রেনে চেপে মাঠ পেরিয়ে বন পেরিয়ে , ঝনঝনাঝন শব্দ তুলে ঠিক পোছে যাব মহাবন আমজন বা গ্যাব্রভোবাসীদের কাছে , শ্রীকান্তর নৌকায় গিয়ে দেখা করব ভয়ঙ্কর বাবু নতুনদার সাথে, নন্দলাল ঘরে বসে বসে দ্বিগুন লিখে আর দশগুন খেয়ে এখনো বেঁচে আছে কিনা সে খোঁজটাও নেওয়া দরকার ।
“কাহার শড়ির আঁচল সহসা উঠিল ভাসি?
আমিনারে মোর নিল কি টানিয়া মেঘনা সর্বনাশী!”
কোন ক্লাসে এই কবিতাটা পড়ছিলাম মনে নাই, শেষ লাইনদুটোই মনে আছে শুধু।
শোলক বলা কাজলা দিদি আর মেঘনা সর্বনাশীর বুকে হারিয়ে যাওয়া সেই আমিনা আর ছিন্নমুকুলের সেই হারিয়ে যাওয়া ছোট্ট মেয়েটার জন্য প্রাণে এখনো খানিকটা দুঃখ উথলে ওঠে ।
।শৈশব দীর্ঘজীবি হোক।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ৯:৩১