হাজারো মানুষের পদচারনায় মুখর এই ফুটপাতে গত ২৫ বছর ধরে জীবন সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন হেদায়েত ভাই।পেশায় একজন টাইপিস্ট।সম্বল একটি টাইপ মেশিন।
অনেক আগেই কম্পিউটারের যুগে প্রবেশ বাংলাদেশের।আর তাই এক সময়ের অতি প্রয়োজনীয় যন্ত্র টাইপ মেশিনটি আজ কাল অনেকটাই দুর্লভ।এর স্থান দাপটের সাথেই দখল করে ফেলেছে কম্পিউটার কম্পোজ।তার পরেও ২৫ বছরের সেই পুরাতন পেশা ছাড়তে পারেননি তিনি...হয়ত খানিকটা মায়া...হয়ত...
আমার মুল আগ্রহ ছিল,আজকের দিনে যেখানে কম্পিটার এত সহজ লভ্য সেখানে কারা আসে এই সকল টাইপিস্টের কাছে?
যা জানলাম ও দেখলাম তাতে বয়সে প্রবীন যারা তারাই এর গ্রাহক।
দিনের অধিকাংশ সময় বেকার বসে থাকা এই টাইপিস্ট আজ কাল আর তেমন কাজ পান না,সারা দিনে গড়ে হয়ত ১০ পৃষ্ঠার কাজ জুটে,আর ১০ থেকে ১৫ টাকা হারে যা কাছে যেমন পায় তাই দিয়ে চলে ২ মেয়ে আর এক ছেলের সংসার।
এই টাইপিং এর টাকা দিয়ে পড়া লেখা করিয়েছেন ২ ভাই ও এক বোন কে!!
অনেকটা অহংকার করেই বল্লেন,"ভাই কম্পিউটারে কাচঁ এর ভিতর কি টাইপ হয় তার ঠিক নাই,আর ভুল হইলেও তো ঠিক করতে পারে না(!!) তাই মানুষ আমাগো কাছে আসে...আমদের এইখানে ভুল হইলেও ঠিক করা যায়"
হয়ত নিজের কাজের প্রতি অসীম ভালোবাসায় এই মিথ্যা অহংকারের কারন...সালাম সেই ভালোবাসাকে...
"এরশাদের আমল থেইকা কাম করি,আর তহন সারাদিন খাওনের টাইম পাইতাম না...আর এহন..."...-------অনেকটা আক্ষেপের সুরেই বলে গেলেন হেদায়েত ভাই।
উনার পাশেই কাজ করেন আরেকজন, দেলোয়ার ভাই।মোটা দাগে একই জীবন।
জানি না আর কত দিন টিকে থাকতে পারবেন তিনি এই পেশায়।কারন দিন দিন সংকোচিত হয়ে যাচ্ছে উনার পরিধি।হয়ত একদিন গ্রাস করে নিবে এই যন্ত্রটিকে চিরতরে।
প্রযুক্তির হয়ত এটাই চরিত্র প্রতিদিন বদলে গিয়ে সামনে এগিয়ে চলা।কিন্তু এই প্রযুক্তির দিন বদলের যাত্রায় কি এভাবেই হারিয়ে যাবে একসময়ের সহযাত্রীরা? সমাজের কি কোন দায় নেই নতুন প্রযুক্তির সাথে এদের পরিচিত করে সেই যাত্রায় তাদের শামিল করানোর ক্ষেত্রে?