কলম্বিয়া সুপার মার্কেটের পাশে বসে তিতুমীর কলেজের এক কপোত-কপোতী ছুটিয়ে প্রেম করতেছে। এটা যে একটা সুপার মার্কেটের পাশের জায়গা, এটা যে জনবহুল বাংলাদেশের অতি জনবহুল একটা এলাকা এইটা ওদের মনে নাই। ওরা ধইরা নিচে দুনিয়াতে ওরা ছাড়া আর কেউই নাই। প্রেম করলে মানুষ এমনই হয়। মানুষজন চোখে লাগে না।
একটু আগে এরা দুজন গলার রগ ফুলিয়ে ঝগড়া করছিল। আমি পাশে দাঁড়িয়ে একটা ঠান্ডা রঙ চা খাইতে খাইতে শুনছিলাম। ছেলেটা মেয়েটাকে একটা ফুল দিয়েছে। গোলাপফুল। ফুলটা চিমসানো। এই নিয়ে ঝগড়া।
এইটা কোত্থেকে কুড়ায়া আনছিস?
কুড়ায়া আনবো ক্যান। নগদ টাকা দিয়ে কিনছি। বিশটাকা।
১৪ দিনের বাসি ফুল এইটা বিশটাকা! আমারে ফুল চিনাস?
সেই ঝগড়া। হাতাহাতিটা হয় নাই খালি। অথবা হইলেও সেইটা আমি দেখি নাই।
পরে তাদের মিলমিশ কিভাবে হইল সেই সিনটাও মিস করেছি।
এখন আবার দুজনে লদকালদকি প্রেম। আশ্বিন মাসের মত এই মেঘ এই রৌদ্র।
চারপাশের মানুষজন তাদের এই প্রেম করা দেইখা খুবই বিরক্ত। প্রেম জিনিসটা এমন নিজে করলে খুব ভালো লাগে, কিন্তু অন্য কাউকে করতে দেখলে আর ভালো লাগে না। তখন চটকনা দিতে ইচ্ছা হয়। সুতরাং কলম্বিয়া মার্কেটের পাশে যারা রেগুলার আড্ডা দেয় তাদেরও সেই ইচ্ছা হইল। তারা সবাই মিলে এই জুটিকে চটকনা দিতে ছুটে আসল। ইচ্ছেমত অকথা-কুকথা বলে বলে টিজ করছে
আমি আবার তাদের কাছে ছুটে গেলাম। ইচ্ছা ছেলে-মেয়ে দুটিকে উৎসাহী জনতার রোষ থেকে আড়াল করা।
ছেলেটা মেয়েটার চেয়ে বয়সে বড় হবে। হাতে একটা পেপসির বোতল। মেয়েটার হাতে একটা বিরিয়ানীর প্যাকেট।
আমি গিয়া নিচু স্বরে বললাম, আমাকে যদি বিরিয়ানীর প্যাকেটা দিয়া দাও তাহলে তোমাদেরকে সাপোর্ট দেব।
কি! কি বললেন?
আমাকে প্যাকেট টা দিয়া দাও, তাহলে তোমাদেরকে সাপোর্ট দিব। তখন ওরা আর ঝামেলা করতে পারবে না। বিরানিটা দিলেই হবে। পেপসিটা তোমরা দুজন ভাগ করে খেয়ে নিও।
ওরা আমার দিকে যে দৃষ্টিতে তাকাইল, মানুষ কেবল পাগল-ছাগলের দিকে ওভাবে তাকায়।
সমবেত উৎসুক জনতাকে যত না ভয় পাইছিল, আমারে তার তিন ডাবল ডর খাইয়া সাথে পালাইয়া গেল।
বুঝলাম না, একটা ফেয়ার ডিলই তো করতে গেলাম, ওরা এমন ভয় পাইল কেন?
প্রেমের চেয়ে কি বিরানীর প্যাকেট বড় হইল!
আসলে মানুষের উপকার করতে নাই কখনো।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:১৯