somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভিন্‌গ্রহে মিলল প্রাণের অস্তিত্ব! ১২৪ আলোকবর্ষ দূরের গ্রহে কি প্রাণের স্পন্দন?

১৯ শে এপ্রিল, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন যে, তাঁরা পৃথিবীর বাইরে কে২-১৮ বি গ্রহে জীবনের সবচেয়ে জোরালো প্রমাণ খুঁজে পেয়েছেন। ১২৪ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত একটি গ্রহের বায়ুমণ্ডলে দু’টি রাসায়নিকের অস্তিত্বের প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে যেগুলি প্রাণী বা উদ্ভিদ থেকেই জন্ম নেয়। আমাদের সৌরমণ্ডলের বাইরে হাজার হাজার ভিন্‌গ্রহ এখনও পর্যন্ত আবিষ্কৃত হয়েছে। অন্য কোথাও প্রাণের সম্ভাবনা রয়েছে কি না, তা খুঁজতে গিয়েই এই ভিন্‌গ্রহগুলির সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। পৃথিবী ছাড়া মহাবিশ্বের অন্য কোনও গ্রহে প্রাণের অস্তিত্ব রয়েছে কি না, সেই প্রশ্নের সমাধান করতে কয়েক দশক ধরে গবেষণা চালিয়ে আসছেন মহাকাশবিজ্ঞানীরা।আবিষ্কৃত গ্রহগুলির বেশির ভাগেই প্রাণের অস্তিত্ব থাকা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। যে গ্রহগুলি তাদের নক্ষত্রের খুব কাছে রয়েছে, প্রচণ্ড তাপমাত্রার জন্য সেই সব গ্রহে প্রাণের অস্তিত্ব থাকা কার্যত অসম্ভব। তুলনামূলক ভাবে দূরের গ্রহগুলির তাপমাত্রা কম হওয়ায় সেখানে প্রাণের সঞ্চার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।







সৌরজগতের বাইরে প্রাণ থাকার একটি সম্ভাব্য শক্তিশালী প্রমাণ সম্প্রতি বিজ্ঞানীদের হাতে এসেছে। এমনটাই দাবি করেছেন মহাকাশবিজ্ঞানীরা। পৃথিবীর বাইরেও প্রাণের শক্তিশালী লক্ষণ ধরা পড়েছে আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার টেলিস্কোপে। এই আবিষ্কারকে যুগান্তকারী বলে মনে করছেন নাসার গবেষকেরা।

জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের সাহায্য়ে একটি ভিন্‌গ্রহের বায়ুমণ্ডলে পৃথিবীর মতোই জৈবিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উৎপাদিত গ্যাসের রাসায়নিক অস্তিত্ব শনাক্ত হয়েছে। পৃথিবী থেকে ১২৪ আলোকবর্ষ দূরে ‘কে২-১৮বি’ নামের একটি গ্রহের বায়ুমণ্ডলে প্রাণের সম্ভাব্য রাসায়নিক চিহ্ন পাওয়া গিয়েছে। মনে করা হচ্ছে এই গ্রহে সমুদ্র থাকতে পারে, থাকতে পারে অণুজীব।
পৃথিবী থেকে প্রায় ১২০ আলোকবর্ষ দূরে কে২-১৮ বি গ্রহে মহাসাগর ও হাইড্রোজেন ভর্তি বায়ুমণ্ডল থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। নাসার জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের মাধ্যমে গবেষণায় এ কথা জানা গিয়েছে। ওই গ্রহে মিথেন ও কার্বন ডাই অক্সাইডের মতো কার্বন-সহ কণার সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। ফলে সেই গ্রহে প্রাণের অস্তিত্ব থাকতে পারে বলে ধারণা বিজ্ঞানীদের।এই দলের অন্যতম সদস্য ও অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল জার্নাল লেটার্সে প্রকাশিত গবেষণার প্রধান লেখক কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোর্তিবিদ নিক্কু মধুসূদন। তাঁর মতে, ‘‘পৃথিবীর বাইরে বিভিন্ন পরিবেশে প্রাণের সন্ধান করা যে অত্যন্ত প্রয়োজন তা এই গবেষণা থেকেই প্রমাণ হয়েছে। পৃথিবীর অধিবাসীরা এখন এমন একটি সময়ে পৌঁছেছে, যেখানে বর্তমান প্রযুক্তি দিয়েই বহির্বিশ্বে প্রাণের সম্ভাব্য চিহ্ন খুঁজে পাওয়া সম্ভব।’’

মধুসূদন উল্লেখ করেছেন যে, সৌরজগতে জীবনের লক্ষণ অনুসন্ধানের জন্য বিভিন্ন প্রচেষ্টা ইতিমধ্যেই চলমান। এর মধ্যে মঙ্গল, শুক্র এবং চাঁদের মতো স্থানে জীবনের জন্য অনুকূল পরিবেশ রয়েছে বলে দাবি ওঠা শুরু হয়ে গিয়েছে। গবেষকদলের প্রধান জানিয়েছেন, শীঘ্রই চূড়ান্ত প্রমাণ পাওয়ার আশা করছেন তাঁরা।গবেষকেরা বলেছেন, জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপে যে ছবি ধরা পড়েছে তাতে তাঁদের মনে হয়েছে গ্রহটি অণুজীবে ভরে থাকতে পারে। তবে এর অর্থ এই নয় যে, সেখানে প্রকৃত জীবন্ত প্রাণী আবিষ্কার করেছেন তাঁরা। বরং তাঁরা জোর দিয়ে বলেছেন, সেখানে একটি সম্ভাব্য জৈবের উপস্থিতির প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। সেটি একটি জৈবিক প্রক্রিয়ার সূচক বলে অভিহিত করেছেন বিজ্ঞানীরা।ওই গ্রহের বায়ুমণ্ডলে প্রচুর পরিমাণে মিথেন ও কার্বন ডাই অক্সাইড থাকা এবং অ্যামোনিয়া কম থাকায় সেখানে মহাসাগর থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। নাসার জেমস ওয়েব টেলিস্কোপের প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে ডিমিথাইল সালফাইড নামে একটি কণার সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল।সেই কণা পৃথিবীতে কেবল প্রাণী বা উদ্ভিদ থেকেই জন্ম নেয়। মূলত সাগরে ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন নামক এককোষী প্রাণী থেকে এই কণা জন্ম নেয়। তবে গবেষকদলটি জানিয়েছে, এই নিয়ে আরও বিশদ ও পুঙ্খানুপুঙ্খ গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে।



২০১৫ সালে প্রথম কে২-১৮বি গ্রহের সন্ধান পাওয়া যায়। জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের উন্নত প্রযুক্তির সাহায্যে বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি এই গ্রহ সম্পর্কে আরও বিশদ গবেষণা করতে পেরেছেন।পৃথিবীর চেয়ে ৮.৬ গুণ বড় এই গ্রহ লিয়ো নক্ষত্রপুঞ্জে অবস্থিত। এর ব্যাস আমাদের গ্রহের ব্যাসের প্রায় ২.৬ গুণ। কে২-১৮ নক্ষত্রের কাছে অবস্থিত এই গ্রহ ‘এক্সোপ্ল্যানেট’ শ্রেণির। আয়তনে এই ‘এক্সোপ্ল্যানেট’গুলি পৃথিবীর সমান বা বড় এবং নেপচুনের থেকে ছোট হতে পারে বলে জানিয়েছেন জোতির্বিজ্ঞানীরা।১৯৯০ সাল থেকে আমাদের সৌরজগতের বাইরে প্রায় ৫,৮০০ গ্রহ আবিষ্কৃত হয়েছে, যাদের ‘এক্সোপ্ল্যানেট’ বলা হয়। ‘এক্সোপ্ল্যানেট’ হল সৌরজগতের বাইরে থাকা কোনও গ্রহ, যা পৃথিবীর মতো কোনও এক নক্ষত্রকে প্রদক্ষিণ করছে। এমনই একটি ভিন্‌গ্রহে অণুজীবের বসবাসযোগ্য সমুদ্র রয়েছে এবং সেখানে হাইড্রোজেন সমৃদ্ধ বায়ুমণ্ডল রয়েছে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। একে ‘হাইসিন’ বলেন বিজ্ঞানীরা।

পূর্ববর্তী এই গবেষণায় ইতিমধ্যেই কে২-১৮বিকে একটি ‘হাইসিন’ হিসাবে স্থান দেওয়া হয়েছিল। সেখানে হাইড্রোজেন সমৃদ্ধ বায়ুমণ্ডল এবং প্রাণের সঞ্চার ঘটাতে পারে এমন একটি সমুদ্র রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।কে২-১৮ বি গ্রহের বায়ুমণ্ডলে মিথেন এবং কার্বন ডাই-অক্সাইড শনাক্ত করেছিলেন বিজ্ঞানীরা। গ্রহটির বায়ুমণ্ডল হাইড্রোজেনে সমৃদ্ধ। সেখানে ডাইমিথাইল সালফাইডের অণুও রয়েছে বলে ইঙ্গিত মিলেছে, যা বিজ্ঞানীদের কৌতূহল আরও বাড়িয়ে তুলেছে।সূর্যের চেয়ে ছোট এবং কম আলোকিত একটি লাল বামন নক্ষত্রের চারপাশে ঘোরে কে২-১৮ বি। গ্রহটি এমন একটি দূরত্বে তার নক্ষত্রটিকে প্রদক্ষিণ করে, যেখানে গ্রহের পৃষ্ঠে তরল জল থাকার অনুকূল পরিবেশ তৈরি হতে পারে। এই সমুদ্রই হল জীবনের মূল উপাদান। এই গ্রহটি আমাদের থেকে ১২৪ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত।
মধূসুদন জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ থেকে প্রাপ্ত পুরোনো ও নতুন সব তথ্য বিশ্লেষণ করে একমাত্র যে ব্যাখ্যাটি যুক্তিযুক্ত মনে হচ্ছে, তা হল কে২-১৮ বি একটি হাইসিয়ান জগৎ। সেটি সরল অণুজীবে পরিপূর্ণ হতে পারে। তবে তিনি মনে করেন, এর সঙ্গে অন্যান্য সম্ভাবনার অনুসন্ধানও চালিয়ে যাওয়া প্রয়োজন।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৪২
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

"মা বড় নাকি বউ বড়", প্রসঙ্গ এএসপি পলাশ সাহার মৃত্যু

লিখেছেন সোহানী, ১০ ই মে, ২০২৫ সকাল ৭:৫৮



এএসপি পলাশ সাহার আত্মহত্যা নিয়ে অনলাইন গরম। কেউ মা'কে দোষারোপ করছে কেউ বউকে। আর কেউ অভাগা পলাশকে দোষ দিচ্ছে। অনেকটা শাবানা জসিমের বাংলা ছবির মতো, "মা বড়... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সেই এফ-১৬

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১০ ই মে, ২০২৫ সকাল ১০:১৪





শর্ত ছিল, আফগানিস্তান সীমান্তবর্তী এলাকায় সন্ত্রাসবাদীদের বিরুদ্ধে অভিযানের জন্যই ব্যবহার করা যাবে। পাক বাহিনীর এফ-১৬ যুদ্ধবিমানগুলির উপর নিয়মিত নজরদারির বন্দোবস্তও ছিল চুক্তিতে। কিন্তু তা ফাঁকি দিয়েই ভারতের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেন আমি আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ চাই....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ১০ ই মে, ২০২৫ দুপুর ১:৪৮


কেন আমি আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ চাই....


ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার বিগত ১৬ বছরে কয়েক হাজার মানুষকে গুম-খুন করেছে, লাখ লাখ মানুষকে নিপীড়ন করেছে। সারাদেশে তুমুল বেগে লুটপাট চালিয়েছে এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

অদৃষ্ট (ছোটগল্প)

লিখেছেন বোকা মানুষ বলতে চায়, ১০ ই মে, ২০২৫ দুপুর ২:১৯



বাসা থেকে বের হওয়ার সময়ই আব্বার সাথে দেখা। আমাদের পুরাতন ঢাকার এই জীর্ণ পুরাতন বাড়ির একটাই ভালো দিক, মাঝখানে একটা পেয়ারা গাছ নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা বিশাল উঠান। পেয়ারা গাছের নীচে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপির রাজনৈতিক ভবিষ্যত কি?

লিখেছেন মেঠোপথ২৩, ১০ ই মে, ২০২৫ বিকাল ৩:৪৯

শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বিএনপি নামে যে দল গঠন করেছিলেন, তা থেকে বিএনপির অবস্থান যোজন যোজন দুরত্বে। তবে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি ক্ষমতায় গিয়ে সুশাষন প্রতিষ্ঠিত না করলেও বিএনপির বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×