somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

পথিকরাজপুত্র
আমি মনোযোগী পাঠক। পড়তে ভালবাসি। পড়ে কোথাও কিছু একটা অসঙ্গতি আছে মনে হলে সেটা আলোচনা করি। ভাল লাগলেও আলোচনা করি, খারাপ লাগলেও আলোচনা করি। কেননা আমি বিশ্বাস করি, পাঠকই লেখক তৈরী করে।

চিঠি- ১

২১ শে অক্টোবর, ২০০৯ সকাল ৯:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভালো আছিস শিশির বিন্দু?
আখতার মাহমুদ

ভালো আছিস শিশির বিন্দু? অবশ্যই তুই ভালো থাকবি না তো কে থাকবে। বোহেমিয়ান স্বভাবের মানুষগুলো এমনিতেই বেশ ভালো থাকে। আমিও ভাল থাকার চেষ্টা করি, সেই যে তুই শিখিয়েছিলি- পাওয়া না পাওয়ার হিসেবটা কি মস্ত কিছু? থাক না পড়ে যত বেতাল হিসেব, রঙিন ছবি। ফেলে আসা পথে ছেড়ে আসা স্বর্গ খুঁজিস না কখনোই। মিথ্যে করে হলেও ভালো থাকিস আকাশলীনা। ভালো থাকতে হয় বলে ভাল থাকিস।
তুই আমাকে সমুদ্র দেখাবি বলেছিলি। সত্যি দেখাবি? কতদিন সমুদ্রের ঘ্রাণ নিই না! ভীড়-ভাট্টার সমুদ্র না, একেবারে নির্জন সমুদ্র। কোলাহলে কি সমুদ্রের রুপ বোঝা যায়? সমুদ্রের বিশালতার কাছে আমাদের আত্মম্ভরিতা-অহংবোধের অসারতা কি নির্জনতা ছাড়া উপলব্দি সম্ভব? কতবার ভেবেছি একটু সময় পেলে সমুদ্র দেখে আসব। জীবন বড় ব্যস্তরে। সময়ই হয় না আজকাল নিশ্চিন্তে নিঃশ্বাস ফেলার। ভোরে চোখ খুলেই ছুটোছুটি। কেন আমরা এত ছুটি বলতে পারিস? নিয়মে বেঁধে নিয়ে নিজেদের ক্রমেই অচেনা করে তুলছি এ আমরা কি নিজেরাই টের পাই কখনো? ইচ্ছে করে সমস্ত নিয়ম-হিসেব পায়ে ঠেলে বেশ একা হব। খুব একা। একটু আলাদা হয়ে বাঁচব... নিশু আপু, আমার রুমমেট। সাহিত্যিক মানুষ। সুযোগ পেলেই আমার উপর তার সুপার ডুপার সব ডায়ালগ ঝাড়ে। বলে- মানুষের চাওয়া-পাওয়াগুলি আহামরি মহৎ কিছু নয়। হোমোসেপিয়ানসদের চাওয়া, ইচ্ছে, আকাঙ্খা যাই বলি না কেন সবই জৈবিক তাড়নার বহিঃপ্রকাশ। মানুষ চায় অন্যের চেয়ে একটু আলাদা হয়ে বাঁচতে। অন্যের চেয়ে একটু ব্যতিক্্রম হতে। মজাটা এই যে, অন্যের চেয়ে আলাদা কিছু একটা হয়ে ওঠার যে স্বীকৃতি তার প্রয়োজন, সেটা কিন্তু সে তাদের কাছেই আশা করে যাদের থেকে সে নিজেকে আলাদা ভাবে। মানুষ শালার এক জটিল প্রাণী।
নিশু আপুর সাথে আমার মেলে না । নিশু আপু সবকিছুকেই একটা সংজ্ঞার মধ্যে বেঁধে রাখতে চায়। সব কিছুর কি সংজ্ঞা হয়, ব্যাখ্যা হয়?
আমাদের হোস্টেলের পেছনে একটা মরণফুল গাছ আছে। শুনেছিস কখনো এইগাছের নাম? সারাজীবনে মাত্র একবার এই গাছে ফুল ফোটে। ফুল ফোটার কিছুদিনের মধ্যেই গাছটা মারা যায়। আমাদের হোস্টেলের গাছটিতে গতকাল ফুল এসেছে। আমরা নিশ্চিত জানি সে মারা যাবে। যখন জানা হয়ে যায় মৃত্যু খুব দূরে নয় তখন কি যে বিশাল শূন্যতা! তোকে আমার অসুখের কথাটা জানিয়েছি না? অসুখটা মাথা চাড়া দিয়ে উঠলে ভীষণ ভয় পাই। ভয়ে শরীরের রোম খাড়া হয়ে যায়। কতটা কষ্ট তখন কাউকে বোঝাতে পারিনা। বোঝাতে ভালও লাগে না। যতটা না শারীরিক কষ্ট তার চেয়ে বেশি কষ্ট দেয় মৃত্যু চিন্তা। একটা মানুষ মূহুর্তেই নেই হয়ে যাবে, কেউ জানবে না কতটা অতৃপ্তি তার ছিল। কতটা শূন্যতা, কতটা প্রাপ্তি নিয়ে সে চলে গেছে। এটা কি খুব বড় ট্রাজেডি নয়? ওরকম নীরব মৃত্যু আমি চাই না। আমি সবাইকে জানিয়ে যাবো, ‘শোনো সবাই, আমি যাচ্ছি!’
মৃত্যুকে মস্ত এক রসিকতা ছাড়া আর কিছুই মনে হয় না। কত কত কল্পনা-স্বপ্ন আমাদের। পাওয়া না পাওয়ার হিসেব কষে জীবনকে আমরা বানিয়ে রাখি যান্ত্রিক । কখনোই ভাবিনা এক ফুৎকারে নিভে যেতে পারে সকল আলো। থেমে যেতে পারে হাসি-গান। নিশু আপু বলে- মানুষের প্রতিদিনের বেঁচে থাকার যে আপ্রাণ চেষ্টা সেটা মৃত্যুকে ভুলে থাকার জন্যেই।
আমি বোধহয় বুড়িয়ে যাচ্ছি। নইলে মৃত্যু নিয়ে এত ভাবব কেন? জানি জীবনবোধ কল্পনায় মেলে না। হাজারো ভীড়
ব্যস্ততায় আমাদের বেঁচে থাকা। এই যে ছুটোছুটি এই যে গতির সাথে তাল মিলিয়ে সামনে আরো সামনে এগিয়ে যাওয়া, কল্পনা-স্বপ্ন ভুলে বাস্তববাদী হওয়া এসবই এখন আধুনিক সভ্যতায় টিকে থাকার প্রধান শর্ত। এভাবেই এখন আমরা যান্ত্রিক। আমাদের (যারা নিজেদের সভ্য বলে দাবি করি) ভেতরের সুকোমল অনুভূতিগুলি এখন ভোঁতা হয়ে গেছে। আজকাল কলেজ-ভার্সিটিতে শিকরা আমাদের শেখান, কি করে সভ্য জগতে টিকে থাকতে হয় নিজের স্বার্থ বাঁচিয়ে। কি করে স্বল্প ব্যয়ে উৎপাদনের পরিমান বাড়ানো যায়, তাঁরা শেখান পুঁজিবাদের যৌক্তিকতা। শেখান কিভাবে শ্রমিকদের মাথায় হাত বুলিয়ে নামমাত্র মজুরিতে কাজ আদায় করা যায়। শেখান চাহিদা-যোগানের তারতম্য হলে কি হবে। আমরা বেশ আগ্রহ নিয়ে শিখি এসব। না শিখলে যে আমাদের পিছিয়ে পড়তে হবে জীবনের দৌঁড়ে। অথচ আমাদের শেখা প্রয়োজন ছিল মনুষ্যত্ব কি। কি করে মানবতায় বিশ্বাসী হয়ে আমরা এগিয়ে যাব সোনালী ভবিষ্যতের পথে। আমরা সব জানি বুঝি। কিন্তু তবু আমরা বেরুতে পারিনা নিজ স্বার্থের ঘেরাটোপ থেকে। আমাদের ব্যস্ততা, আমাদের যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলার আপ্রাণ চেষ্টা আমাদের এতদূর নিয়ে গেছে যে চাইলেও আর ফেরা হবে না আমাদের সেইসব হিরন্ময় দিনগুলির কাছে।
খুব ইচ্ছে করে ব্যস্ততা ফেলে তোদের কাছে ছুটে আসি। নির্ভাবনায় নির্বিঘ অন্তত একটি বিকেল সব না বলা কথা নিয়ে বসি। ইচ্ছে করে একটি সুন্দর বিকেল একাকি উপভোগ করি, ইচ্ছে করে পিছুটানহীন আনমনে হাঁটতে নিশুতি রাতে কিংবা খুব ভোরে। কিছুই পারি নারে । ওই যে ব্যস্ততা! এ নিয়ে রবার্ট ফ্রস্টের বিখ্যাত কিছু লাইন আছে না-
The woods are lovely, dark and deep.
But I have promises to keep.
And miles to go before I sleep,
And miles to go before I sleep.
এত সুন্দর করে অল্প কথায় আর কেউ ব্যস্ততার কাছে মানুষের বন্দীত্ব ব্যাখ্যা করতে পেরেছে বলে আমার মনে হয় না।
এই দেখ আমি শুধু আমার কথাই বলে যাচ্ছি। তোর কথা কিছুই জানতে চাইছি না। মানুষ এমনই। সে যখন নিজেকে নিয়ে ভাবে তখন অন্য কিছু তার মনেই থাকে না। তার এ-ও মনে হয় না যে আরো মানুষ আছে তার চারপাশে তাদেরও কিছু কথা আছে, মত আছে। এরকম হয়, কারণ মানুষ নিজের আমিত্ব থেকে কখনোই বেরুতে পারে না। নিশু আপু প্রায়ই বলে- আমরা মন দিয়ে শুনতে না বলতে ভালবাসি নিজের কথা, নিজস্ব মত।
তারপর তোর মহাপুরুষ হবার কি হল? আচ্ছা তুই কি খুব বেশি হিমু পড়িস নাকি, নাহলে মহাপুরুষ হবার মত বিদঘুটে চিন্তা তোর মাথায় ঢুকল কি করে? তোকে আমার শিশির বিন্দু ছাড়া কিছুই মনে হয় না জানিস? যারা খুব বেশি খেয়ালি তারা শিশির বিন্দুর মতন মিলিয়ে যায় খুব সহজে। যাইহোক যেদিন তোর মনে হবে মহাপুরুষ হয়ে গেছিস সেদিন সবার আগে আমাকে জানাস। তাহলে আমি সবাইকে বলতে পারব দেখো তোমরা, যেখানে আমরা পড়াশুনা-কেরিয়ার নিয়ে ব্যস্ত সেখানে আমার একটি বন্ধু অন্তত হেঁটে গেছে বিপরীত স্রোতে। সে দেখিয়েছে মানুষ নিয়মে বাঁধা কোন প্রাণী নয়। তবে একটা কথা কি জানিস, যারা স্রোতের বিপরীতে হেঁটে যায় তাদের সাধারণের চেয়ে অনেক বেশি কষ্ট সইতে হয়। যখন তোর খুব কষ্ট হবে তখন ইচ্ছে করলেও তুই কারুকে বলতে পারবি না, ‘আমার খুব কষ্ট!’ এক্সেপশনাল হতে চাওয়ার এটাই ট্রাজেডি, বুঝলেন ভবিষ্যৎ মহাপুরুষ?
এবারের ছুটিতে বাড়ি যাব। আমাকে একটু সময় দিস ভাই। তুই তো আবার মহাব্যস্ত। আমাদের দেশে বেকারের ব্যস্ততা বেশি! আমাকে সমুদ্র দেখানোর কথা ভুলিস না যেন। মনে রাখিস, আমি গিয়ে যদি তোকে না পাই তবে তোর মহাপুরুষগিরি ছুটিয়ে দেব। ভাল থাকিস।

ইতি-
আকাশলীনা

বিঃদ্রঃ বাড়ি গেলে বন্ধুদের সবাইকে একসাথে পাবতো?





আখতার মাহমুদ
যুব উন্নয়ন ট্রেনিং কমপ্লেক্স
কোতোয়ালী, চট্টগ্রাম।
mahmud_am85@yahoo.com
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে অক্টোবর, ২০০৯ সকাল ১০:১৬
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইসরায়েলকে ধ্বংস করা সম্ভব নয়। তাই মিলেমিশে শান্তিপূর্ণ প্রতিবেশীর মত থাকাই দরকার।

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৭ শে মার্চ, ২০২৫ সকাল ৯:১৮



একটি জনগণ কিভাবে নিজেদের জন্য নরক ডেকে আনতে পারে-
গাজার জনগণ তার জ্বলন্ত প্রমান। এরা হামাসকে নিরংকুশ ভোট দিয়ে ক্ষমতায় এনেছে কারণ হামাস ইসরায়েলের ভৌগলিক এবং রাজনৈতিক অস্ত্বিত্বে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্প: শেষ রাতের সুর

লিখেছেন আমিই সাইফুল, ২৭ শে মার্চ, ২০২৫ সকাল ১০:০১

রাফি সাহেবের বয়স এখন সত্তরের কাছাকাছি। ঢাকার অদূরে, গাজীপুরের একটি ছোট্ট গ্রামে তাঁর বাড়ি। শেষ রাতে তিনি আজও কান খাড়া করে শুয়ে থাকেন। কে গায়? কোথা থেকে যেন একটা অদ্ভুত... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রসঙ্গ: মৃতদেহ সৎকার এবং সঙ্গীতসৎকার....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ২৭ শে মার্চ, ২০২৫ সকাল ১১:৪৯

প্রসঙ্গ: মৃতদেহ সৎকার এবং সঙ্গীতসৎকার....

কথা সাহিত্যিক শরতচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বহু বছর আগে তার “শ্রীকান্ত” উপন্যাসে ইন্দ্রকে দিয়ে সর্বকালীন এবং সর্বজন গৃহীত একটি উক্তি করিয়েছিলেন, সেটি হলো,- ”মরার আবার জাত কি”!

মৃতদেহ সৎকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্প: শেষ রাতের সুর (পর্ব ২)

লিখেছেন আমিই সাইফুল, ২৭ শে মার্চ, ২০২৫ বিকাল ৪:৫০

রাফি সাহেবের পড়ে যাওয়ার খবর গ্রামে ছড়িয়ে পড়ল দ্রুত। সকালের মিষ্টি রোদ গাজীপুরের এই ছোট্ট গ্রামে যখন পড়ছে, তখনই কাজের লোক রহিমা দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকল। সিঁড়ির নিচে রাফি সাহেব... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপসকামী বিরোধী রাজনীতিবিদদের জন্য পাঁচ আগস্ট দ্বিতীয় স্বাধীনতা নয়.....

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৭ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ১১:০১


..... বলেছেন নাগরিক জাতীয় পার্টির আহবায়ক নাহিদ ইসলাম। নাহিদ মিয়া বিএনপির নেতা মির্জা আব্বাস ও ফখরুল সাহেব কে উদ্দেশ্য করে এই মন্তব্য করেছেন। নাগরিক জাতীয় পার্টির নেতারা নিজেদের পচানোর... ...বাকিটুকু পড়ুন

×