মিরপুর মুক্ত দিবস আজ। ‘৭১-এর ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ শত্রুমুক্ত হলেও সেই বিজয়ের ৪৬ দিন পর রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে ‘৭২ সালের এই দিনে মুক্ত হয় রাজধানীর উপকণ্ঠ মিরপুর। মুক্তিযুদ্ধের এই শেষ রণাঙ্গনে শহীদ হন শতাধিক। তবে ৩৬ বছরে এই শহীদদের কোনো স্বীকৃতি মেলেনি আজও। সরকারি গেজেটে নেই তাদের নাম নেই কোনো স্মারক চিহ্নও। একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্তান সেনাবাহিনী আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করলেও সেই ঢাকারই মিরপুর ১২ নম্বর সেকশনের ৪ বর্গ কিলোমিটার এলাকা তখনো শত্রুমুক্ত হয়নি।‘৭২জানুয়ারি পর্যন্ত অবাঙালি রাজাকার-আলবদর বাহিনীর সমর্থনে এখানে ঘাপটি মেরে ছিলো একদল পাকিস্তানি সৈন্য ।
এ প্রসঙ্গে দেশ টিভির সঙ্গে কথা হয় মিরপুরের রণাঙ্গনের কোম্পানি কমান্ডার (অব) মে.জে.হেলাল মোরশেদের (বীর প্রতীক)। তিনি বলেন,
“মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান বাহিনী তাদের সাহায্য করার জন্য ইস্ট পাকিস্তান সিভিলিং বলে একটি বাহিনী গঠন করেছিল যার সদস্য এসেছিল তৎকালীন বিহারী জনগোষ্ঠীর থেকে নেয়া আর এদের সঙ্গে রাজাকার আল বদর বাহিনীতো ছিলই এলাকাটিকে বলতে গেলে ছোটখাট পাকিস্তানের ঘাঁটি বলেই বলা যেত। এমন কি ওদের বাড়িতে পাকিস্তানের ফ্লাগ উড়ছে।”
সারাদেশ শত্রুমুক্ত হয়ে গেলেও ভারতীয় মিত্র বাহিনী বা ঢাকার মুক্তিযোদ্ধারাও কৌশলগত কারণে আক্রমণ চালায়নি তাদের ওপর।
১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু দেশে ফেরার পর সিদ্ধান্ত হয় ৩০ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে সকল মুক্তিযোদ্ধা তার কাছে থাকা অস্ত্র জমা দেবে। এজন্য ওই দিনই মিরপুর মুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়। ৩ প্লাটুন সেনা সদস্যের সহায়তায় অপারেশনে অংশ নেয় পুলিশ বাহিনীর সদস্যরাও। কিছু ঘাপটি মেরে থাকা শত্রুপক্ষের সমরশক্তি সম্পর্কে সঠিক তথ্য না থাকায় যুদ্ধের প্রথম অগ্রাভিযানেই নিহত হন বাঙালি সেনা ও পুলিশের ১২২ জন সদস্য।
মে.জে.হেলাল মোরশেদ এ বিষয়ে বলেন, “ওরা অত্যন্ত তৈরি অবস্থায় ছিল প্রতিটি ঘরে প্রতিটি জানালার ফাঁক দিয়ে ছাদের উপরে অস্ত্র মেশিনগান, লাইট মেশিনগান, হেভি মেশিনগান এবং রাইফেলেরতো শেষ নেই এক্সপ্লোসিভের শেষ নেই। প্রথম যে গুলির ঝাঁক আসলো ৫/১০ মিনিটের মধ্যে শহীদ হয়ে যান ৪২ জন।
পরে ৩১ জানুয়ারি এস ফোর্স ও বেঙ্গল রেজিমেন্টের সহায়তায় আত্মসমর্পণে বাধ্য করা হয় পাকিস্তানি সেনা ও তাদের দোসরদের । কিন্তু দীর্ঘ ৩৬ বছরেও এই যুদ্ধের স্বীকৃতি মেলে নি। সরকারি খাতায় নেই শহীদদের নাম নেই কোনো স্মারক স্তম্ভ।
মে.জে.হেলাল মোরশেদ বলেন “১৬ তারিখ একটা বিশাল আকার সেটাকে আমাদের মানতেই হবে। তারপরেও আমরা বিচ্ছন্নভাবে যে এলাকাগুলো আমাদের সার্বভৌম দখলে আসেনি তাদেরকেও মুক্তিযুদ্ধের অংশ এবং মুক্তিযুদ্ধের যুদ্ধক্ষেত্র হিসেবে ঘোষণা করতে হবে।”
তথ্যসূত্রঃ