আমি ঈশ্বর প্রেরিত দেবদূত। আমার আগমন মানবতার কল্যান সাধনের লক্ষ্যে।সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে পড়েছে অমুসলিম আর নাছরাবাদ। অবক্ষয় দেখা দিয়েছে সমাজের, রাষ্ট্রের, মানুষের নৈতিকতাবোধের। অমুসলিম বিলুপ্ত ঘোষনা করে দ্বীনে ইসলাম কায়েম করবো বলে আমি দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।স্বৈরাচার নিপাত যাক, মৌলবাদ প্রতিষ্ঠা পাক এ আমার শ্লোগান, এ আমার অঙ্গীকার,এ আমার রবের আদেশ। আমার উপর নাযিল হয়নি তাওরাত, যাবুর কিংবা কুরআন মাজীদের মত উঁচু মানের কোন ধর্মীয় গ্রন্থ। আমি এসেছি শান্তির বাহক হিসেবে।সাম্যবাদে অবস্থান রেখে পরিচালনা করবো আমার নিজস্ব শাসনতন্ত্র, ধর্মতন্ত্র। নতুন প্রথার প্রচলন হবে গতানুগতিক প্রথার পতন ঘটিয়ে।ক্ষমতার আসন আমার অন্ধকার চোখে আলো দেখিয়েছে।এ বড়ই মজার।
যে ঈশ্বর আমাকে প্রেরন করেছে মানবতা রক্ষার স্বার্থে, কলুষিত সমাজ আর মানবজাতিকে আলো দেখাতে, আমি সেই ঈশ্বরকে স্বীকার করিনা, এখন আমিই ঈশ্বর। আমারই ছোহবতে জন্ম নেবে অসংখ্য ধর্মযাজক। সমগ্র জনতা অনুসরন করবে আমার ধর্মতন্ত্র। আমি ধর্ম বুঝি না, ঈশ্বর বুঝি না, আমি বুঝি ক্ষমতা।
ক্ষমতার স্বার্থে আমি প্রয়োগ করবো আমার একান্ত নিজস্ব ধর্মনীতি। ধ্বংস হয়ে যাক রাষ্ট্রের কাঠামো। সমগ্র দেশ জুড়ে দেখা দিয়েছে মঙ্গা। প্রিয় বাংলাদেশ ভেসে যাচ্ছে বন্যায়। বর্ন্যাতদের সাহায্যে দেশ-বিদেশ থেকে কোটি কোটি ডলার আসছে। মিডিয়া গুলোতে বর্ন্যাতদের সাহায্যের আবেদন প্রচার হচ্ছে। কোটি কোটি টাকা এসে জমা হচ্ছে দেশী্য় একাউন্টে। এ আমার অহংকার। এ আমার গৌরব।
এসব কেবল তাদেরই দেয়া হবে যারা আমাকে অনুসরন করবে, যারা মৌলবাদ প্রতিষ্ঠা করতে চায়। এভাবে ত্রাণের সমস্ত জিনিস আমার ঘরেই ফিরে আসবে। এ-ই আমার ধর্মতন্ত্র,আমার শাসনতন্ত্র।
আরো আছে বন্দী করা হবে বুদ্ধিজীবি সমাজকে। রিমাণ্ডে নিয়ে এদের মাথায় ঢুকিয়ে দেয়া হবে আমার শাসননীতি ধর্মনীতি।দেশ থেকে বিতাড়িত করা হবে মুক্তচিন্তার মানুষ গুলোকে। বাক স্বাধীনতা হরন করা হবে এসব আবর্জনা ভরা মস্তিষ্কের।
অধিকার হরন করা হবে ছাত্র সমাজের, আপামর জনতার। আন্দোলনের ডাক পড়লেই জারি হবে ১৪৪ ধারা, অচল করে দেয়া হবে সমগ্র দেশ। চলবে অনির্দিষ্ট কালের কারফিউ। ছাত্র সমাজ, বুদ্ধিজীবি সমাজ ধ্বংস না হলে মৌলবাদ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে না। কেবল দাড়ি, টুপি, পাঞ্জাবী, থাকলেই নেতৃত্ব দেয়ার যোগ্যতা অর্জন করবে, আমার সহচর হবে, হবে আমার অনুসারীও। আমি জানি, এরাই নামাজ পড়ার উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বের হয়ে মসজিদের আগে যদি কোন বেশ্যাখানা পায়, টুপি-পাঞ্জাবী আড়াল করে তারা সেখানে আগে যায় এ তাদের অভ্যাস, এ তাদের ধর্মনীতি! অথবা একই পোষাক পরে এরা মসজিদে আবার বেশ্যাখানায় যায়। এরাই আমার দলে প্রতিষ্ঠা পাবে, এরাই নেতৃত্ব দেবে! দেশের দায়ভার গ্রহন করবে আপামর গোঁড়া সমাজ। একসময় পুলিশ থেকে আরম্ভ করে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা সবাই-ই হবে কেবল নাম স্বাক্ষরধারী। প্রতিষ্ঠিত হবে আমার স্বপ্ন, আমার মৌলবাদ।
সব সংবাদই আমাকে রাখতে হয়। চোখ বুলিয়ে দেখতে হয় প্রতিদিনের সংবাদপত্র গুলো। গতকাল একটি স্বনামধন্য পত্রিকায় পড়েছি ছাত্র আন্দোলন চলাকালে এক পুলিশ অফিসার আন্দোলন রোধ করতে গিয়ে ছাত্রদের ভিড়ের ভেতর আটকা পড়ে যায় ঐ পুলিশ অফিসার এক ছাত্রকে মেরে মাথা ফাটিয়ে দিয়েছিল, ফলে ছাত্ররা তার উপর ক্ষেপে যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র অফিসারের নেমপ্লেট দেখে তাকে জিজ্ঞেস করলো
আনোয়ার, তোর যোগ্যতা কি?
অফিসার বলল পঞ্চম জামাত
তোর বাবার নাম?
অফিসার বলল জানি না।
মায়ের নাম?
অফিসার বলল জানি না।
সেই পুলিশ অফিসার তার জন্ম পরিচয় জানে না। জানবে কিভাবে? আসলে সে কোন এক পতিতার পেটের দশমাস দশ দিনের ফসল অর্থাৎ সে জারজ, যার কয়েকশ পিতার মধ্যে হয়তো আমারই অনুসারী, ধর্মযাজক কিংবা মন্ত্রী রয়েছ। তার মুখ দিয়েই হয়তো বের হয় বড় বড় ধর্মীয় বুলি আমার শাসনতন্ত্র এভাবে চলছে, চলবে। আমি আপনাদের শান্তির প্রতিষ্ঠাতা অগ্রদূত। আমিই আলোর দিশারক।
(বিঃ দ্রঃ এটি একটি কল্পিত কাহিনী। কারো সাথে মিলে গেলে তা স্রেফ কাকতালীয়।)
উপরোক্ত লেখাটি বিএনপি"র শাসনামলে শুভম সনীল সম্পাদিত নির্জলা আকাশ পত্রিকায় প্রথম প্রকাশিত হয়েছিলো।