স্কুল বা কলেজ জীবনে যদি কাউকে প্রশ্ন করা হয় বড় হয়ে তুমি কি হতে চাও? সে চোখ বুঝে উত্তর দিবে, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ব্যারিষ্টার, প্রফেসর, মেজর, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার বা ম্যাজিস্ট্রেট। দুইটা জিনিসের প্রতি কারো তেমন কোন লক্ষ থাকে না ১) রাজনীতি বিধ ২) ব্যবসায়ী।
সাধারণত তিন শ্রেণীর মানুষ ব্যবসায়ী হয়ঃ ১) বাপ দাদা ব্যবসায়ী সেই সুত্রে অথবা ২) চাকরী বাকরী খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না অথচ কিছু একটা করে খেতে হবে সেই সুত্রে এবং ৩) চাকরী করে কিছু টাকা জমিয়েছে এখন আর পরের গোলামী ভাল লাগে না তাই জমানো টাকা আর অভিজ্ঞতা দিয়ে নিজে কিছু করা।
ব্যবসায়ীদের উথান পতনঃ একজন ব্যবসায়ী সারা জীবন গেইন করে যাবে এমন কোন ইতিহাস খুঁজে পাওয়া যায় না। কখনো উথান আর কখনো পতন। এই দুই এর সমন্বয়ে একজন ব্যবসায়ীর জীবন পার হয়ে যায়।
ব্যবসায়ীদের সাহসঃ সাধারণত একজন চাকরী জীবি আর ব্যবসায়ীর সাহস এক রকম নয়। ব্যবসায়ী যে কোন রকমের ঝুঁকি নিতে পারে, হয়তো সেই ঝুঁকিতে সে লাভবান হবে আর নয়তো ফকির। একজন চাকরী জীবিকে ঝুঁকি নিতে হয় না। হয় সৎ পথে কোন মতে জীবন ধারন অথবা অসৎ পথে প্রাসাদ গড়ার প্রতিযোগীতা।
কটু কথা আর গ্লানিঃ একজন সফল ব্যবসায়ীকে এই দুইটা জিনিস স্পর্শ করবেই না তবে বিফল হলে তাকে এই দুইটা জিনিস বয়ে নিয়ে বেড়াতে হবে আজীবন।অনেক সময় এই দুইটা জিনিস একজন বিফল ব্যবসায়ীকে সফলতার দিকে অগ্রসর হওয়ার প্রেরণা জোগায়। তবে ভেঙ্গে পড়লে ব্যবসায়ে ফেরা অসম্ভব। মনকে শক্ত করার মতো দৃঢ়চেতা হতে হবে। তা না হলে এখানেই ইতি।
প্রতিযোগীতাঃ ব্যবসায়ে রয়েছে তীব্র প্রতিযোগীতা। এই জগতে পা রাখলে বোঝা যায় প্রতিযোগীতা কি জিনিস। বেশী দামে মাল কিনে ব্যাংকের সুদ মেটাতে অনেক সময় কম দামে মাল বিক্রি করে টাকা ক্যাশ করতে হয়। এ সকল ক্ষেত্রে প্রতিযোগী ব্যবসায়ীরা চরম ভাবে লোকসানের সম্মুখীন হয়। অনেক বড় বড় ব্যবসায়ী ইচ্ছাকৃত ভাবে তাদের প্রতিযোগীদের ডাউন দেবার জন্য লসে মাল বিক্রি করে থাকে। ছোট খাট ব্যবসায়ী এ ধরনের কুট চালে পথে বসে যায়।
ব্যবসায়ের মূল নীতিঃ কথায় বলে হয় মাল আমার গোডাউনে আর না হয় ক্যাশ আমার পকেটে। এই সূত্রকে কাজে লাগিয়ে যে ব্যবসা করতে পারবে সে হয়তো টিকে থাকবে। আর যাদের পুঁজি কম, তারা যেন তেন ভাবে মাল বিক্রি করে তাদের স্টাবলিষ্টমেন্ট খরচ চালাতে গিয়ে মূল ধর্ম থেকে সরে আসে আর তখনই ঘটে বিপত্তি।
ঝুঁকি নেবার প্রবনতাঃ ঝুঁকি ছাড়া কোন ব্যবসা নাই। সাপ পাঁচ ক্যালকুলেশন করে ব্যবসায়ে ঝুঁকি নিতেই হবে। ঝুঁকি না নিতে জানলে ব্যবসা করার কথা মাথায় না আনা ভাল।
প্রতিবন্ধকতাঃ মাল রানিং না থাকলে স্টক লট হবার সম্ভাবনা ৯০%। এ সকল ক্ষেত্রে ব্যবসায়ের চরম প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়। বিপুল পরিমান টাকা আটকে যাওয়ায় অনেক ব্যবসায়ী লস গুনতে গুনতে আসল টাকাও ঘরে আনতে ব্যর্থ হয়।
সহযোগীতাঃ একজন সফল ব্যবসায়ীকে অনেকেই সহযোগীতা করতে আগ্রহী হয় কিন্তু একজন লুজারকে কেউ কানা কড়ি দিয়েও সহযোগীতা করে না। সুতরাং লস হতে থাকলে কারো সহযোগীতা পাওয়া যাবে না এই ধারনা মাথায় রেখেই ব্যবসা করা উচিত।
ব্যাকআপ মানিঃ সকল ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে ব্যাকআপ মানি থাকতে হবে। এক লসেই চট্টি পট্টি গোল হলে পথের ফকির হওয়া ছাড়া গতি নাই। সুতরাং যা মূলধন থাকবে তার ৫০% অবশ্যই ব্যাক আপ মানি হিসাবে রাখতে হবে। অথবা লাভ হলে সেখান থেকে ব্যাক আপ মানি সরিয়ে রাখতে হবে যেন আশু সমস্যার সমাধান করা যায়।
ব্যাংক লোনঃ কোন প্রকার লোনের চক্রান্তে জড়িয়ে ব্যবসা করতে গেলেই তাকে রাস্তায় নামতে হবে। লোন নিলে সুদ দিতে হবে। আল্লাহর রাসূল (সাঃ) বলেছেন, সুদের সর্ব শেষ পরিণতি হচ্ছে দারিদ্রতা। সুতরাং সুদি কারবারে কেউ জড়িয়ে বিশাল ব্যবসায়িক সম্রাজ্য গড়ে তুললেও তার ঘুম হারাম হয়ে যাবে যদি ব্যবসায়ের চাকা বন্ধ থাকে। তখন তাকে বলতে শোনা যাবে ফ্যাক্টরী পুরা বন্ধ করলে লস হয় দুই কোটি আর খুলে রাখলে লস হয় ৫০ লাখ। অন্তত দুই কোটি লসের থেকে মাসে ৫০ লাখ লস অনেক ভাল।
ব্যবসায়ে ঘুরে দাঁড়াবার মন মানসিকতাঃ অনেক সময় কিছু ভুল সিদ্ধান্ত মানুষকে ব্যবসা থেকে ছিটকে পড়তে সাহায্য করে। একবার ভুল হয়ে গেলে বার বার ভুল হতে থাকে। এমতাবস্থায় ধৈর্য ধারণ করে ঠান্ডা মাথায় এগোতে না পারলে কেল্লা ফতে। যে কোন ধরনের স্লিপ করলে ব্যবসায়ে ঘুরে দাঁড়াবার মত দৃঢ়তা থাকতে হবে। মন ভেঙ্গে গেলে সে আর ব্যবসায়ে ফিরতে পারবে না।
হতাশা পরিহারঃ আল্লাহর কাছে সর্বদা সাহায্য চাইতে হবে। হতাশ হয়ে পড়লে সামনের দিকে এগোনো খুব কষ্টকর। মনে রাখতে হবে রাতের পর আবার দিন আসবে ইনশা আল্লাহ।
উচ্চ ভিলাষীতাঃ ব্যবসা লাভজনক হলেও উচ্চ ভিলাষীতা পরিহার করতে হবে। মানুষকে যতটা কম বুঝতে দেওয়া যায় ততটাই মঙ্গল। আল্লাহর রাসূলকে তিন কূল পাঠ করার শিক্ষা আল্লাহ পাক এজন্য দিয়েছিলেন যে মানুষ মানুষকে ক্ষতি করতে পারে নানান কায়দায়। সাধারণত হিংসা মানুষকে ধ্বংস করে দেয়। সুতরাং সাধারণ জীবন যাপন মানুষের হিংসা থেকে মুক্ত রাখে।
ধর্ম ভীরুতাঃ ব্যবসার পিছনে ছুটতে ছুটতে আল্লাহকে ভুলে গেলেই বিপদ। আল্লাহ পাক চাইলে তার সবকিছুকে ধ্বংস করে দিতে পারেন। ব্যবসার অযুহাতে সালাত আদায় থেকে বিরত থাকলে তার ধ্বংস অনিবার্য। সর্বদা আল্লাহকে ভয় করতে হবে। আল্লাহর কাছেই চাইতে হবে যেন তিনি কারুন বা হামানদের মতো লাঞ্চিত না করেন।
যাচাই বাছাইঃ ব্যবসা করতে চাইলে অনেক স্টাডি করা প্রয়োজন। কেউ কিছু বললেই হুট করে ব্যবসা শুরু করা যায় না। উক্ত ব্যবসার সংগে জড়িত এমন আরো
দুই চার জনের সংগে পরামর্শ করে নেওয়া উত্তম। নেগেটিভ কথা শুনলে সেখানে আর না ভেড়াই ভাল।
ব্যবসায়ের চাবিঃ যে ব্যবসাই করা যায় না কেন যদি তা ক্যাশ ক্রয় এবং ক্যাশ বিক্রয়ের নিশ্চয়তা দেয় তাহলে নিশ্চিন্তে নেমে পড়ুন। বাকি বকেয়া আছে এহেন ব্যবসায়ে কশ্চিন কালেও জড়ানোর দরকার নাই। মনে রাখবেন বাকির নাম হচ্ছে ফাঁকি।
কেউ উপকৃত হলেই ধন্য হব।