প্রথমে তাবীজ হারাম হওয়ার দলীল সমূহ কোরআন থেকে দিলামঃ
১) পবিত্র কুরআনে আল্লাহ পাক বলেন, আর যদি আল্লাহ তোমাকে কষ্ট দেন, তবে তিনি ব্যতীত তা অপসরণকারী আর কেউ নেই, পক্ষান্তরে যদি তোমার কল্যাণ করেন, তবে তিনিই তো সর্ববিষয়ে ক্ষমতাবান। (সূরা আন’আম: আয়াত-১৭)
২) আল্লাহ পাক আরো বলেন, আল্লাহ তোমাকে ক্লেশ দিলে, তিনি ব্যতীত তা মোচনকারী আর কেউ নেই এবং আল্লাহ যদি তোমার মঙ্গল চান, তাহলে তার অনুগ্রহ রদ করারও কেউ নেই। তাঁর বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা তিনি মঙ্গল দান করেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সূরা ইউনুস: আয়াত-১০৭)
৩) আল্লাহ পাক অন্যত্র ঘোষনা করেছেন, তোমরা যে সমস্ত অনুগ্রহ ভোগ কর, তা তো আল্লাহরই নিকট হতে; আবার যখন দুঃখ দৈন্য তোমাদেরকে স্পর্শ করে, তখন তোমরা তাঁকেই ব্যাকুল ভাবে আহ্বান কর। আর যখন আল্লাহ তোমাদের দুঃখ-দৈন্য দূরীভূত করেন, তখন তোমাদের একদল তাদের প্রতিপালকের সাথে শরিক করে। (সূরা নাহাল: আয়াত-৫৩ ও ৫৪)
উপরোল্লিখিত আয়াত সমূহ স্পষ্টভাবে প্রমাণ কর যে, দুঃখ-কষ্ট দূর করার মালিক একমাত্র আল্লাহ। আর বান্দা একমাত্র তাঁর কাছেই ভালো-মন্দের জন্য আশ্রয় প্রার্থনা করবে। আর তিনিই একমাত্র শক্তিধর, তিনিই একমাত্র বান্দার কল্যান সাধনে সক্ষম।
আসুন এবার নবী (সাঃ) এর হাদীস এর দিকে লক্ষ করি। এক শ্রেণীর লোক আছে যারা দেখাতে চান যে তারা, নবী (সাঃ) এর প্রেমে পাগল অথচ তারা হাদীসকে অস্বীকার করে, এই শ্রেণীর লোক হচ্ছে ইসলামের দৃষ্টিতে মুনাফেক। একবার অন্তত নিজের আমলকে কষ্টি পাথরে যাচাই করে দেখবেন বলে আশা রাখি।
১) ইমরান বিন হুসাইন (রাঃ) থেকে বর্ণিত, একদা নবী (সাঃ) এক ব্যক্তির হাতে তামার চুড়ি দেখতে পেয়ে বললেন এটা কি? সে বলল: এটা ওয়াহেনার অংশ। তিনি বললেন: এটা খুলে ফেল, কারণ এটা তোমার দুর্বলতা বাড়ানো ছাড়া আর কিছুই করতে পারবে না। যদি এ তাবীজ বাঁধা অবস্থায় তোমার মৃত্যু হয়, তাহলে কখনও সফলকাম হতে পারবে না। (সহীহ, মুসনাদে আহমদ, হাকেম, ইবনে মাজাহ)
২) উকবা বিন আমের (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে বলতে শুনেছি; যে ব্যক্তি তাবীজ ব্যবহার করবে, আল্লাহ তাকে পূর্ণতা দিবেন না, আর যে কড়ি ব্যবহার করবে, আল্লাহ তাকে মঙ্গল দান করবেন না। (আহমদ, হাকেম)
৩) উকবা বিন আল-জোহানী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, একদা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর খেদমতে একদল লোক উপস্থিত হলো। অতঃপর দলটির নয়জনকে রাসূল (সাঃ) বায়াত করালেন এবং একজনকে করালেন না। তারা বলল, হে আল্লাহ রাসূল (সাঃ) নয় জনকে বায়াত করালেন, আর একজনকে বাদ রাখলেন? রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন: তার সাথে একটি তাবীজ রয়েছে। তখন তার হাত ভিতরে ঢুকালেন এবং সেটা ছিড়ে ফেললেন। অতঃপর তাকেও বায়াত করালেন এবং বললেন, যে ব্যক্তি তাবীজ ব্যবহার করল সে শিরক করল। (সহীহ মুসনাদে আহমদ, হাকেম)
৪) একদা হুজায়ফা (রাঃ) এক রোগীকে দেখতে এসে তার বাহুতে একটি তাগা দেখতে পেলেন, অতঃপর তিনি তা কেটে ফেললেন বা ছিঁড়ে ফেললেন এবং বললেন যারা আল্লাহর উপর ঈমান এনেছে, তাদের অনেকেই শিরক করছে। (তাফসীরে ইবনে কাসীর)
৫) আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) এর স্ত্রী জায়নাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আব্দুল্লাহ বাহির থেকে এসে দরজার পার্শ্বে দাঁড়িয়ে কাশি দিতেন এবং থুথু ফেলতেন, যাতে তিনি এসে আমাদেরকে তার অপছন্দ অবস্থায় না দেখেন। তিনি বললেন, একদিন আব্দুল্লাহ আসলেন এবং কাশি দিলেন। তখন আমার কাছে এক বৃদ্ধা ছিল। সে আমাকে চর্ম রোগের জন্য ঝাড়-ফুঁক দিচ্ছিল। এ অবস্থায় তাকে আমি খাটের নিচে লুকিয়ে রাখলাম। অতঃপর তিনি ঘরে প্রবেশ করে আমার কাছে এসে বসলেন এবং আমার গলায় তাগা দেখে জিজ্ঞেসা করলেন- এই তাগাটা কি? আমি বললাম, এই সুতার মধ্যে আমার জন্য ঝাড় ফুক দেয়া হয়েছে। আমি একথা বলার পর আব্দুল্লাহ তাগাটা কেটে ফেললেন এবং বললেন আব্দুল্লাহ পরিবারবর্গ শিরক থেকে মুক্ত। আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে বলতে শুনেছি, ফাড়-ফুঁক, তাবীজাবলী এবং ভালোবাসা সৃষ্টির তাবীজ ব্যবহার করা নিঃসন্দেহে শিরক। (আহমদ, হাকেম, ইবনে মাজাহ)
৬) ইসা বিন আব্দুর রহমান থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন- আব্দুল্লাহ বিন ওকাইম (রাঃ) অসুস্থ ছিলেন, আমরা তাঁকে দেখতে গেলাম। তাঁকে বলা হলো, আপনি কোন তাবীজ কবজ নিলেইতো ভালো হতন। তিনি বললেন: আমি তাবীজ ব্যবহার করব অথচ এ সম্পর্কে রাসূল (সাঃ) বলেছেন- যে ব্যক্তি কোন কিছু রক্ষাকবচ ধারণ করবে, তাকে ঐ জিনিসের কাছে সোপার্দ করা হবে। (আহমেদ, হাকেম, ইবনে মাজাহ)
৭) রোআইফা বিন ছাবেত (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন; হে রোআইফা! হয়তো তুমি আমার পরেও অনেকদিন বেঁচে থাকবে। অতএব, লোকদেরকে এ কথা বলে দেবে যে, যে ব্যক্তি দাড়িতে গিঁট দিল অথবা খেজুরের ডাল লটকালো কিংবা চতুষ্পদ জন্তুর মল বা হাড় দিয়ে ইসতিঞ্জা করল, তার সাথে মুহাম্মাদের (সাঃ) কোন সম্পর্ক নাই। (আহমদ, নাসায়ী)
উপরোক্ত হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে তাবীজ ব্যবহার করা স্পষ্ট শিরক। আল্লাহ পাক তাঁর বান্দাদের সকল গোনাহ ইচ্ছা করলে ক্ষমা করে দিতে পারেন এক মাত্র শিরকের গোনাহ ছাড়া। শিরক একটা ভয়াবহ গোনাহের নাম। আসুন শরীর থেকে সকল প্রকার তাবীজ কবজ ছিড়ে ফেলি, আল্লাহর রাসূল (সাঃ) এর কথাগুলোকে গুরুত্ব দেই এবং মেনে নেই তিনি সত্য নাবী ও রাসূল (সাঃ) ও আল্লাহর বান্দা। তাবীজ কবজ প্রদানকারী কোন হুজুর সামান্য অর্থের বিনিময়ে তাবীজ বিক্রি করতে চাইল তাদের সাবধান করে দেই তারা যেন এই জঘন্য পাপকার্য আর না করে। মনে রাখতে হবে, কুরআন এসেছে আমল করার জন্য তাবীজ বানিয়ে গলায় ঝুলানোর জন্য নয়। কুরআন গলায় ঝুলিয়ে টয়লেটে যাওয়া কোন মুসলিমের কাজ নয় এটা পরিষ্কার ইহুদী ষড়যন্ত্র। তারা মুসলামানকে দিয়ে কুরআনকে টয়লেটে পাঠাচ্ছে তাবীজ দ্বারা। এছাড়াও তাবীজের ভিতর জ্বীনের সরদারের কাছে সাহায্য চেয়ে দরখাস্ত করা থাকে। তাবীজের ভিতর ফেরউন, হামান, শয়তান ও ঈবলীশের নাম লেখা থাকে।
আপনার কাছে আবারো অনুরোধ করছি দয়া করে তাবীজ শরীরে থাকলে তা আজই খুলে ফেলুন, মনে রাখবেন তাবীজ ঝুলানো অবস্থায় আপনার মৃত্যু এসে গেলে কশ্চিন কালেও আপনি নাজাত পাবেন না।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৩:৩১