শাশুড়ী এবং পূত্রবধুর ভিতর কোন্দল আমাদের সমাজে বিষফোড়ার মতো যন্ত্রনাদায়ক। ছেলেকে বিয়ে করিয়ে ঘরে বউ আনার কিছুদিন পর শুরু হয় এই কোন্দল। প্রথম প্রথম সম্পর্ক ভাল থাকলেও কিছু দিন পর সেই সম্পর্ক তেতো হয়ে যায়। এক সময় আলাদা হাড়িতে রান্না থেকে শুরু করে মুখ দেখাদেখিই বন্ধ। বিপাকে পড়তে হয় ছেলেকে। একদিকে জননী আর অন্যদিকে স্ত্রী। কখনো স্ত্রীর কাছে স্বামী ভাল আর কখনো মায়ের কাছে ছেলে। বেশীর ভাগ সময় সন্তানকে নিরব থাকতে হয় যা স্ত্রী এবং মা দুজনের জন্যই কষ্টদায়ক। মা মনে করে ছেলে তার স্ত্রীকে শাসন করে না কেন আর স্ত্রী মনে করে আমার স্বামী তার মাকে কিছুই বলে না কেন? আজ সেই সমস্যার সমাধান একটা গল্পের মাধ্যমে দেওয়ার চেষ্টা করব।
পূত্রবধুর কাছে শাশুড়ী পরম শ্রদ্ধের পাত্র হলেও পূত্রবধুর কাজ কর্মে টুক টাক ভুল ধরা ছিল শাশুড়ীর অভ্যাস। এক সময় এই অভ্যাসটা বদ অভ্যাসে পরিণত হয়। পূত্রবধু যে কাজই করুক না কেন তার পিছনে লাগতেই হবে বিষয়টা অনেকটা এমন হয়ে দাড়ায়। কথা বললে শাশুড়ী ডাক দিয়ে বলবে, এত জোরে কথা বল কেন? একটু প্রাণ খুলে হাসলে বলবে, এই ভাবে শব্দ করে হাসতে নাই এগুলো কু-লক্ষন। রান্না করলে বলে লবন হয় নাই, ঝাল বেশী। রান্না না করলে বলে সারা দিন শুয়ে শুয়ে কাটাবে নাকি? প্রথম প্রথম এসব কথাকে পূত্রবধু তেমন পাত্তা দিত না। এক সময় শাশুড়ীর অত্যাচারের মাত্রা বেড়ে যায়। পূত্রবধুও এক পর্যায়ে উত্তর দিতে শুরু করে। শুরু হয় যুদ্ধ, ছেলে অফিস থেকে এলেই দুই জনের নালিশ। ছেলের মাথা খারাপ হবার জোগাড়। সংসারে অশান্তির দাবানল, অফিস থেকে ঘরে ফিরতেই মন চায়না ছেলের। ছুটির পর এদিক সেদিক ঘুরে সময় নষ্ট করে গভীর রাতে ঘরে ফিরতে শুরু করে ছেলে। এমন বাজে অবস্থায় কারই বা ভাল লাগে? পূত্রবধু এক পর্যায়ে সিদ্ধান্ত নেয় যে সে তার শাশুড়ীকে হত্যা করে ফেলবে। কিন্তু কিভাবে? মনে পড়ে তার এক মামার কথা, সে একজন বিজ্ঞানী। তার কাছে পরামর্শের জন্য যায়। মামা তাকে পরামর্শ দেয় যে তুই তোর শাশুড়ী যে ভাবে পারিস মেরে ফেল তবে সাবধান তোর ঘাড়ে যেন দোষ না চাপে। তা না হলে তুইও বাঁচতে পারবি না, হয় ফাঁসী অথবা যাবজ্জীবন জেল খাটতে হবে। পূত্রবধুর মাথায় কাজ করে না যে কিভাবে তার শাশুড়ীকে হত্যা করবে। সে মামার কাছে জানতে চায় কিভাবে মারলে কেউ তাকে সন্দেহ করবে না।
মামা তাকে দুইদিন পর আবার তার সাথে দেখা করতে বলে। সেই মোতাবেক ও আবার মামার কাছে যায়। মামা তাকে বলে তুই একবারে তোর শাশুড়ীকে মারতে যাস না বরং আমি তোকে একটা মেডিসিন দিচ্ছি যা প্রতিদিন একটু একটু করে খেলে পাঁচ ছয় মাসের ভিতর ধীরে ধীরে তোর শাশুড়ী মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়বে। মামা তাকে পাউডারের মাতো দেখতে একটা প্যাকেট ধরিয়ে বলে তুই প্রতিদিন রাতে শোবার আগে এক চামচ করে এই পাউডার গুলিয়ে তোর শাশুড়ীকে খুব আদর করে খাওয়াবি। তবে ট্রিটমেন্টটা শুরু করবি তোর শাশুড়ীর সংগে ভাল সম্পর্ক গড়ে তোলার পর তা না হলে সে তোর হাতে পানিও খাবে না। এমনকি এই ছয় মাসের ভিতর তুই তোর শাশুড়ীর সংগে এমন ব্যবহার করবি যে সে যদি তোকে গালিও দেয় তুই মুখ বুজে হাসি মুখে তা সহ্য করবি। তুই কখনো তার সাথে ঝগড়া করবি না। তোর জামাই যেন পরিষ্কার বুঝতে পারে যে তুই তার মাকে অনেক আপন করে নিয়েছিস এবং নিজের মায়ের মতো ভালবাসিস তা না হলে সে তোকে সন্দেহ করতে পারে। তোর শাশুড়ীর মৃত্যুর পর যদি তোকে বিন্দু মাত্র সন্দেহ হয় তাহলে পোষ্ট মর্টেম রিপোর্টে কিন্তু তোর এই স্লো পয়জন ধরা পড়বে। সুতরাং সাবধান, পারবিতো এমন করতে? পূত্রবধুর কাছে মামার কৌশলটা খুব ভাল লাগল। সে অকপটে বলে ফেলল হ্যা পারব মামা, ঝঞ্জাটটাকে পৃথিবী থেকে বিদায় করতে আমি যে কোন ত্যাগ স্বীকার করতে রাজী।
শুরু হল পূত্র বধুর ট্রিটমেন্ট। শাশুড়ী বকে আর বউ হাসে। আদর করে খাওয়ায়, কাপড় চোপড় ধুয়ে দেয়, মাথায় তেল মালিশ করে দেয়, চুল বেঁধে দেয় সেই সংগে ভিতরে ভিতর দাঁত কিড়মিড় করতে থাকে। প্রতিদিন রাতে এক গ্লাস দুধ দেয় যার ভিতরে গোলানো থাকে এক চামচ বিষ। শাশুড়ী বউয়ের ব্যবহারে ধীরে ধীরে তার প্রতি একটা মায়া জন্মে যায়। চার পাঁচ মাস যেতে না যেতেই শাশুড়ী কেউ বেড়াতে এলে উল্টে তাদের কাছে পূত্রবধুর প্রশংসা শুরু করে দেয়, সে বলে আমার ছেলের বউ এত লক্ষ্মী যে এত বকি তাও রাগ করে না, আমাকে এত আদর করে যে নিজের মেয়ে হলেও মনে হয় এমন করত না। এই দিকে পূত্রবধুও তার রাগ কন্ট্রোল করার এক অসাধারণ ক্ষমতা ভিতরে ভিতরে তৈরী করে ফেলে। এখন শাশুড়ীর কোন কিছুই আর খারাপ লাগে না এমনকি গালি দিলেও মনে হয় আপন মা তাকে গালি দিচ্ছে। ছেলেও খুব ফুরফুরা মেজাজে থাকে, সকাল সকাল অফিস থেকে ফিরে মা এবং বউ দুজনকেই তাদের প্রাপ্য বুঝিয়ে দেয়। সংসারটা হটাৎ করে একটা সুখের সংসারে রূপ নেয়। হঠাৎ করে পূত্র বধুর মনে হয় এমন একজন শাশুড়ী যে কিনা তাকে নিজের মেয়ের স্থানে বসিয়েছে তাকে আমি মেরে ফেলব? না; তাকে বাঁচাতেই হবে। ঊদ্ধশ্বাসে সে তার মামার কাছে ছুটে যায়। মামাকে সে সব খুলে বলে এবং এই বিষের কোন এন্টিবায়োটিক আছে কি না জানতে চায়। মামা তার কথায় অবাক হয়ে যায় এবং বলে কেন তুই না তাকে মেরে ফেলতে চেয়েছিলি? ও তার ভুল বুঝতে পারে এবং বলে আমার শাশুড়ীকে আমি মরতে দিব না। আমার জীবনের বিনিময়ে হলেও তাকে বাঁচাব। মামা আপনি একটা উপায় বলুন, আমি আমার শাশুড়ীকে ছাড়া ঐ সংসারে এক মুহূর্তও কল্পনা করতে পারি না। সে আমাকে তার মেয়ের মতো ভালোবাসে, আমি তাকে মরতে দিব না। কোন মেয়ে তার মাকে মরতে দিতে চায় না। মামা, কিছু একটা করুন।
মামা তখন একগাল হাসি দিয়ে বলে, আরে পাগলি আমি তোকে তোর শাশুড়িকে মারার জন্য কোন বিষ দেইনিরে; ওটা ছিল এটা ভিটামিন ও ক্যালিসিয়ামের মিশ্রন। বয়স হয়ে গেলে মানুষের শরীর খিটখিটে হয়ে যায় কারন তাদের শরীরের নানান ব্যাথা বেদনা শুরু হয়। ভিটামিন ক্যালসিয়াম তাদের শরীরটাকে ব্যালেন্স রাখে। তুই নিশ্চিন্তে ঘরে যা, তোর শাশুড়ীর কিছুই হবে না। পূত্র বধু তখন দুই চোখ দিয়ে অঝোরে অশ্রু ঝরিয়ে মামার বুকের কাছে মাথা নিয়ে ফিস ফিস করে বলে “মামা তুমি অসাধারণ” তোমার তুলনা তুমি নিজেই। তোমার এ ঋণ আমি কোনদিন শোধ দিতে পারব না।