সকাল বেলা ঘুমটা ভাঙল শাশুড়ীর ফোনে। ওপাশ থেকে কান্নাকাটির আওয়াজ। ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলাম না ঘটনাটা কি; প্রথমে ভেবেছিলাম শশুর বাড়ীর হয়তো কেউ বিয়োগ হয়েছে। অবশেষে জানতে পারলাম আমার ছোট শ্যালক আজ সকালে আমার বাসা থেকে নেমে মিরপুর যাবার পথে অপহরণকারীদের খপ্পরে পড়েছে। তিরিশ মিনিটের ভিতর ১ লক্ষ টাকা বিকাশ করে না দিতে পারলে তাকে হত্যা করা হবে। আমার শদ্ধেয় বড় ভাই টিআই মিজানুর রহমানকে (বর্তমানে RAB-3 এর খিলগাঁও ক্যাম্পে রয়েছে) ফোন দিয়ে ঘটনাটা জানালাম। তিনি দ্রুত গতিতে খিলগাঁও থানায় একটা ডায়রী করে তার কপি নিয়ে তার কাছে যেতে বললেন। খিলগাঁও থানার ওসি সাহেব খুব ভাল মানুষ। তিনি ঘটনাটা শুনে সংগে সংগে ডিউটি অফিসারকে দ্রুত এ্যাকশান নিতে বললেন। ওসি তদন্ত আমারদের কাছে ঘটনাটা শুনে সুন্দর করে বললেন এগুলো সাজানো নাটক ছাড়া কিছুই নয়! তিনি এমন কেস পূর্বেও অনেক দেখেছে। এমনটি তিনি একটা মামলার কপিও দেখালেন। আমি একটু উত্তেজিত হয়ে তাকে বললাম আপনি এমন ভাবে কথা বলছেন যে আমার মনে হচ্ছে আপনাদের থানায় এসে অভিযোগ করাটা আমার বিরাট একটা অপরাধ হয়ে গেছে। ঠিক এমনি সময় জানতে পারলাম অপহরণ কারীরা টাকা পেতে দেরী হচ্ছে দেখে সাইফুলের দাঁত ঘুষি মেরে ফেলে দিয়েছে। বিষয়টা ওসি তদন্তকে ততক্ষনাৎ জানালাম, তিনি বিদ্রুপ করে বললেন, আপনি কি মোবাইলে ভিডিও দেখেছেন যে তাকে ঘুষি মেরে দাঁত ফেলে দিয়েছে? আমার স্ত্রী প্রচন্ড উত্তেজিত হয়ে তার মুখের উপর বলেই ফেলল, এই জন্যই পুলিশের উপর মানুষের আস্থা নাই। আপনি বিষয়টা সিরিয়াসলি না নিয়ে আমাদের সংগে মজা করছেন? উনি একটু লজ্জা পেলেন মনে হয়। বাধ্য হয়ে বলেই ফেললাম থাক দরকার নাই আপনাদের তদন্তের আমার দরখাস্তটা আমাকে ফেরত দিন। উনি ফেরত দিলে আমি দরখাস্তটা নিয়ে থানা থেকে বের হয়ে RAB-3 এর ক্যাম্পে চলে গেলাম। সাইফুলের অফিসের বস আমাকে বার বার ফোন দিচ্ছিল যে টাকাটা দিয়ে দিব কি না। আমি বললাম একটু সময় নিন, তাদের বলেন টাকা ম্যানেজ করছি অপেক্ষা করেন। কিছুক্ষন পর RAB-3 এর ক্যাম্পে থাকা অবস্থায় জানতে পারলাম সাইফুলকে গাজিপুরের পুবাইল মিরের বাজার নামক স্থানে নামিয়ে দিয়েছে। অপহরণ কারীদের সংগে কথা হচ্ছিল ওর বসের সংগে, বস আমাকে মোবাইলে সব জানাচ্ছিল। জীবন বাচাঁনোর তাগিদে ওর বস টাকাটা দিতে রাজী হয় তবে একটু চালাকি করে বলে যে এক লক্ষ টাকা জোগাড় করতে পারি নাই মাত্র ৪০,০০০/- জোগাড় হয়েছে নিলে নিন অন্যথায় ওকে মেরে ফেলুন। ওরা ওতেই খুশী হয় এবং টাকাটা বিকাশের মাধ্যমে পাঠাতে বলে দুইটি পারসোনাল নম্বর দেয়। দুইটি নম্বরে এক লক্ষ টাকার পরিবর্তে ২০,০০০/= করে মোট ৪০,০০০/= টাকা দেওয়ার পর সাইফুলের মুক্তি মেলে। ওকে উদ্ধার করে নিয়ে আসা হল, গোটা মুখে রক্তের ছাপ, গলা, হাটু, কানের পিছন দিক, হাতের নখ, বুক সহ মাথায় ওরা প্রচুর আঘাত করেছে। প্লাস দিয়ে আঘাত করায় কেটে ছিড়ে গেছে এবং লাল হয়ে গেছে প্রত্যেক জায়গা। একটা অভিযোগ পত্র RAB-3 এর অফিসে জমা দেওয়া হল। সৎ এবং চৌকস ইনেসপেক্টর মোঃ মিজানুর রহমান যিনি RAB-3 এর হিরো অফ মার্চ ২০১৬ নামে খ্যাত তার দলবল নিয়ে সংগে সংগে অপারেশনে চলে গেল গাজীপুর। আমাদের পরামর্শ দিলেন রামপুরা থানায় একটা জিডি বা মামলা দায়ের করার জন্য। যেহেতু থানায় রিপোর্ট না করলে আইনি লড়াই সম্ভব নয় তাই আমরা সেখানে গেলাম। ওখানে যাওয়ার পর যখন ঘটনা বর্ণনা করলাম ডিউটি অফিসার শুনে বললেন এটাতো আমাদের থানার আন্ডারে না। কারন আপনাকে তারা গাড়িতে তুলে নিয়ে গেছে রামপুরা থানার ভিতর থেকে, এর পর বাড্ডা ক্রস করে কুড়িল বিশ্বরোড হয়ে বসুন্ধরা ৩০০ ফিট রাস্তা ধরে গাজীপুরের পুবাইল নামিয়ে দিয়েছে সুতরং এ ঘটনায় অনেক গুলো থানা জাড়িত। আমরা এই কেস নিতে পারব বলে মনে হয় না। আমি তাকে জিজ্ঞেসা করলাম, আমি কি তাহলে তিন থানায় দৌড়াব? না কি গাজীপুর যাব? আমার সংগে ছিল আমার সম্বন্ধি সরোয়ার আলম। উনি কালের কন্ঠে চাকরী করেন। ডিউটি অফিসারকে কালের কন্ঠের ক্রাইম রিপোর্টার জাহিদ ভাইয়ের কথা বলা হলে তিনি কথা ঘুরিয়ে বললেন দেখি ওসি স্যার আসুক তার পর সিদ্ধান্ত নিব। রাত দশটা অব্দি ওসি স্যারের জন্য অপেক্ষা করেছি। সাইফুল খুব অসুস্থ থাকায় এর মধ্যে তাকে আল রাজী হাসপাতালে ডাক্তার দেখিয়ে মেডিসিন নিয়েছি। ডিউটি অফিসারকে বললাম আমার বরং কাল আসি কারন ওসি স্যার কখন আসবে আমরাতো জানি না। উনি ঘাড় কাত করে সায় দিলে আমরা থানা থেকে বের হয়ে এলাম। একটু পরে আবার যাব, দেখি পুলিশ নামক মানুষের বন্ধু কি ব্যবস্থা নেয়।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মার্চ, ২০১৬ সকাল ৯:১১