২৬ এপ্রিল ২০০৯
আজ অনেকদিন পর একটি প্রোগ্রাম হল বাইরে। এক তরুণ কবির (হায়, আমি আর তরুণ নই!) সঙ্গে কিছুক্ষণ কাটবে আজিজ মার্কেটে এবং আশেপাশে। কবির নাম...থাক, উহ্য থাক। এর সঙ্গে কবে, কখন, কীভাবে পরিচয় মনে নেই। মনে পড়ছে, পরিচয়ের প্রথম দিকেই নিজের সম্পর্কে অনেক কথা জানিয়ে দিয়েছিল। নিজের ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে, প্রেমের সম্পর্কে এমনভাবে জানিয়েছিল যে আমি তো অভিভূত। মনে হয়েছিল তখন লেখালেখির জন্যই নিশ্চয় এমনটা হয়েছিল। আমাকে সে কতকাল থেকেই চেনে-জানে ভেবেছিল হয়তো। আমিও ভেবেছিলাম, চিনি তো একে। ওই দিনই আমার প্রিয় কিছু ক্ল্যাসিক্যাল গান রেকর্ড করে নিয়ে গিয়েছিল। আর আমাকে শিখিয়েছিল অনেককিছু ইন্টারনেট সম্পর্কে, কম্পিউটার চালনার নানা সমস্যা সম্পর্কে।
দশাসই শরীর ছিল তার, কিন্তু মন আবেগে ভরপুর।
আজ দেখলাম শরীর যথেষ্টই হালকা, আর মনেরও মনে হল পরিবর্তন হয়েছে খানিকটা।
বললাম, ফেসবুকে দেখলাম তর্কাতর্কি, রেশারেশি। ওই সময়টা লিখতে পারলে বেশি ভাল লাগত না কি?
অবাক, মানল দেখি আমার কথাটা। গান ভালবাসে। মোবাইল থেকে শোনাল কিছু রাগমেশানো গান। নিজেও গলা মেলাল। সাহিত্য ভালবাসে খুব, কবিতা বিশেষত। নিজেরও হাত ভাল লেখার। পরিচিতি যথেষ্ট।
অনেক খোঁজখবর রাখে চারপাশ সম্পর্কে। এত, যে আমি বিমূঢ় বোধ করতে থাকি। সরল বিশ্বাসে আমি অনেককেই ‘সৎ’, সত্যবাদী বলে জানি। ‘সুশীল সমাজ’-এর কারো কারো সম্পর্কে বলল, লাখ লাখ কোটি কোটি টাকা এদের, ঘুষ খায় এরা, ভাবতে পারেন? ভাবতে তো অনেক কিছুই পারি, এদেশে যেকালে থাকি, কিন্তু কিছু বিশ্বাস তো থাকে বেঁচে, নইলে কীভাবে নিঃশ্বাস নিই?
আমরা গত কয়েক বছর খুবই খারাপ অবস্থার মধ্যে ছিলাম। তারই রেশ ধরে এখনো নানা দুর্দশা। কিন্তু তারপরও এখন মনে জাগে একটু আশা : খানিকটা হলেও ভালোর দিকে যেতে পারে দেশ।
২৭ এপ্রিল ২০০৯
রোজই লিখতে বসতে আমিও চাই। এটা সাইকোথেরাপির মতো কাজ করে। মনে হতে থাকে যে নিজের কাছে নিজেকে খানিকটা স্বচ্ছ করা গেল। মগ্নতা, ফারহান দাউদ, শিমুল সালাহউদ্দিন, পান্হ রহমান রেজা, তনুজা, শূন্য আরণ্যক, সব্যসাচী প্রসূন, আপনারা উৎসাহ দিলেন বলে লেখার ইচ্ছাটা বাড়ল। আপনাদের ধন্যবাদ। গতকালও বসেছিলাম অল্প সময়ের জন্য। বাইরে বেরিয়ে ফিরতে দেরি হয়ে যাওয়ায় পোস্ট আর করা হল না।
শূন্য আরণ্যক-এর কাছে ‘মানুষের মন চায় মানুষেরই মন’ কথাটা ভাল লেগেছে তো? এটা কিশোর রবীন্দ্রনাথের লেখা থেকে ধার করা। আমার ধারণা ছিল উক্তিটি খুব পরিচিত, তাই উদ্ধৃতিচিহ্ন বসাইনি। অবশ্য খুবই সাধারণ একটি কথাই এটা, সকলেই কোনো না কোনো সময়ে বলে থাকবেন। সাধারণ, সহজ কথাই আমরা বলতে ও শুনতে চাই। কিন্তু অনেক সময় সরল কথাটি বলতে গিয়েও ‘জটিল’ কথার ঘূর্ণাবর্তে পড়ে যেতে হয়, পথ হারিয়ে বসতে হয়। আবার কথা তো সবসময় মনে সোজাসুজি আসে না, কথার রূপেও আসে না তা কখনো কখনো, ছবি হয়ে আসে, স্বপ্ন হয়েও আসে। আমরা তখন কিছু বলতে গিয়ে অস্বস্তিতে বেসামাল হতে পারি, বা, ফূর্তিতে উদ্দাম। বা, ধীরস্থির, প্রকৃতিকে অনুসরণ করে যেতে পারি। অবশ্য আমরা অনেকে শিল্প সৃষ্টি করার আগ্রহে, বা, প্রতারণা করার ইচ্ছায় বানানো কথার আশ্রয় নিই। নিজের ভিতরে ডুব দিয়ে ‘প্রকৃত’ কথাটি বলতে গিয়ে কিছু না কিছু তৈরি করা বাক্য আমরা সকলেই বলি, কিন্তু যদি তার ভাগটাই বেশি হয় তবে আমাদের স্বস্তি লাগার কথা নয় বলে আমার তো মনে হয়। লেখকদেরও তা মনে হয় বলে আমার ধারণা।
অনেক লেখাকে বিশেষত কবিতাকে যে অনেকের কাছে দুর্বোধ্য লাগে সে কথা ভাবতে গিয়েই ওপরের কথাগুলি, যা পুরানো কথাই, লেখায় এল।
একটা কবিতা পড়ি। কবির নামটি শেষে বলি।
মা
স্টেশনের প্লাটফর্মে, রাত দশটায়
তিন-তিনটে বাচ্চা নেচে চলেছে
তাদের শায়িত মায়ের চারপাশ ঘিরে।
এপাশে-ওপাশে যাওয়া-আসা করছে ট্রেন, যাত্রীদের ওঠানামা
কুলিদের দৌড়ঝাঁপ, কারো দিকে তাকাবার সময় নেই কারো
তার মাঝখানে
অফুরান হাসির শব্দে গোল হয়ে
বাচ্চাকটা ঘুরছে মাকে ঘিরে, এখনই উঠে তাদের খেতে দেবে মা
মায়ের মুখের ওপর ভনভন করছে মাছি
আর আলতো পায়ে কখন পাশে এসে দাঁড়াচ্ছে মুদ্দোফরাস
তাকে তুলে নিয়ে যাবে বলে এখন
মর্গে
তার বাচ্চা তিনটে নেচে চলেছে নেচেই চলেছে চারপাশ ঘিরে
এই রাত দশটায়।
কবির নাম : শঙ্খ ঘোষ। কাল কেনা হল নতুন এ বইটি। নাম : মাটিখোঁড়া পুরোনো করোটি।
যখন ইচ্ছা যতবার ইচ্ছা কবিতাটি পড়তে পারবেন আলাদাভাবে, কবিতারসিক ব্লগার। আর কিছুর জন্য নয়,
এ জন্য আমাকে ধন্যবাদ দিন। দিন।