আমি প্রতিমুহূর্তে উপলব্ধি করি এদের প্রতিটি নিঃশ্বাস, অযত্নে বেড়ে ওঠা আর আহারের জন্য দ্বারে দ্বারে লাঞ্ছিত হওয়া। কিন্তু আমার করার কিছূ নেই। একটা সময় একটা কিছু করার চেষ্টা করেছিলাম। একটা স্কুল বানিয়েছিলাম। ওরা পড়বে আর মাসে একটি গ্রান্ড পার্টি হবে যারা ভালো করবে তাদের সম্মানে। দিনে দিনে বাড়তে বাড়তে সংখ্যাটি গিয়ে দাঁড়ালো ১০০তে।
কার্যক্রমটিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে কতো মানুষের দ্বারে দ্বারেই যে ঘুরলাম। জেলা প্রশাসক থেকে শুরু করে ইউনিসেফ এর কর্তাব্যক্তি পর্যন্ত! উৎসাহ ছাড়া বেশি কিছু পাইনি।
তবু দমে যাইনি। টানা তিন বছর চালিয়ে নিয়েছি। এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিমণ্ডলে হওয়ায় এর একটা সাড়া পরে গেলো এখানে সেখানে। পত্রিকাগুলো খাতির করে ফিচার ছাপালো। কিন্তু ভাগ্যে কোনও পৃষ্ঠপোষক জুটল না। শেষে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরাই একটা ব্যবস্থা করলাম। এবং তারপর বেশ একটা শৃঙ্খলায় চলে এসেছিল স্কুলটা। আলিম স্যারের সহযোগিতায় প্রশ্ন আর কিছু পুরনো বই নিয়ে পুরোপুরি একাডেমিক হয়ে উঠছিল। কিন্তু আমাদের এ কাজটিকে ভালো চোখে দেখলো না আমারই বন্ধু সুমন। যে সামনে সামনে আমাকে উৎসাহ দিত এবং গোপনে প্রক্টর স্যারকে বলে বন্ধ করতে বাধ্য করলো আমাদের কার্যক্রম। সুমন তখন ছাত্রদলের নেতা। ওর কথায় অনেক কিছু হয়। আমাদের পীঠে রাজনীতির সিল নেই। এমন কি কেউ খুঁজেও বের করতে পারবে না আমাদের বিশেষ কোনও পরিচয়।
এমন সব ছেলে-মেয়েরা ক্লাস নিত রোজ দুপুরে না ঘুমিয়ে যারা সবাই ছিল ক্যাম্পাসে দারুণ জনপ্রিয় এবং বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন করতো। কেউ ডিবেটের, কেউ স্কাউটের, কেউ রোটার অ্যাকট এর কেউ ইয়ুথ এন্ডিং হাঙ্গারের আবার কেউ ছিল ব্লাড ডোনার ক্লাবের। শুধু রাজনীতিবিদের অভাবে সহযোগিতা বঞ্চিত স্কুলটি একসময় বন্ধ হয়ে গেলো।
সহযোগিতার জন্য এমপির দরবারে ফোন করে কতো টাকা যে নষ্ট করলাম!
সে আজ বলে কাল আসবো, অমুক দিন, আজ ঢাকা ম্যাডাম ডেকেছে...এরপর শুনি ক্যাম্পাস ঘুরে চলে গেছে..কী উদ্দেশ্যে এসিছিল কে জানে। আমাদের ইচ্ছা ছিল আমরা কজন প্রতিনিধি দেখা করে একটা ব্যবস্থা করে নেবো।
এদিকে আমার বিশ্ববিদ্যালয় লাইফ শেষের পথে...
এবং একসময় শেষ হয়ে গেলো!
সেই মুখ গুলো, যাদেরকে আমরা স্বপ্ন দেখিয়েছিলাম সুন্দর জীবনের! ওরা জানতে চায় স্যার আমাদের...
আমি যেন লজ্জায় কাইকুই করি... পালাবার পথ খুঁজে পাই না।
ঢাকাতে বেশ ভালো একটা চাকরি করছি.... মাঝে মাঝে ওদের কথা মনে হলে ভেতরে কুকড়ে যাই। ভাবি ওদের জন্য কিছু করার সামর্থ্য আমাদের কোনওদিন হবে?
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মার্চ, ২০০৯ বিকাল ৪:২১