
জীবন নামের অলৌকিক ঘটনাটি মহাবিশ্বে এসেছিল ৪ বিলিয়ন বছর আগে কিন্তু আমরা মানুষের এসেছি মাএ ২০ হাজার বছর আগে। এখনও আমরা একটি ভারসাম্যপূর্ন জীবন যাপন করছি অন্যকিছু ধ্বংসের মাধ্যমে।
একটি অসাধারন গল্প শোন যা আমাদের এবং সিদ্ধান্ত নাও তুমি কি করতে পার। গল্পটি আমাদের জীবনের অধ্যায়গুলো নিয়ে সাজানো।
পৃথিবীর প্রথমে শুধু কিছু আগুনের স্ফুলিঙ্গই ছিল। একটি আদ্র ধুলিকনা যা অন্যান্য গ্রহের মতই, হাজির হয়েছিল এবং সেখানেই জন্ম হয় “অলৌকিক জীবনের”। আমাদের বর্তমানের জীবন একটি চেইনের সাথে যুক্ত যা আবার যুক্ত অন্যসব জীবনের সাথে। সেই সংযুক্ত জীবন চলে আসছে ৪ বিলিয়ন বছর ধরে। এবং এখনও নতুন আগ্নেয়গিরি স্ফুলিঙ্গ ছড়িয়ে যায় আমাদের প্রিয় ভূমিতে। তারা পৃথিবীকে সেই ভাবেই আগলে রেখেছে যেভাবে রেখেছিল তার জন্মের সময়। সে এখন ধরে রেখেছে আমাদের পৃথিবীর সেই অতীত ধোয়াচ্ছন ঐতিহ্যকে। এই বায়ুমন্ডল ধরে রেখেছে অক্সিজেন, ঘন বায়ুমন্ডল যা আদ্র এবং কার্বন ডাই অক্সাইডে ।
পৃথিবী ঠান্ডা হল। তার সাথে সাথে তৈরী হল জলীয় বাষ্পের বর্ষন যাকে আমরা বৃষ্টি বলি। পৃথিবীর অবস্থান সূর্য থেকে সঠিক দুরুত্বে, না বেশি কাছে না বেশি দূরে, যার ফলে পৃথিবী পানিকে গলিতো রাখতে সক্ষম হয়েছে। পানির স্রোত ধারা যা আমাদের শিরার মত ছড়িয়ে পড়ে এই পৃথিবীতে। এই নদীগুলো শক্ত পাথর আর শীলা থেকে খনিজ নিয়ে জড়ো করতে থাকে সাগরের পরিষ্কার পানিতে। আর সাগর হতে থাকে লবনাক্ত থেকে লবনাক্ত।
তাহলে আমরা কোথা থেকে এসেছি?
কোথায় জীবনের প্রথম পদচারনা হয়?
সেই অলৌকিক সময়ে, আদিম জীবন যা উত্তপ্ত পৃথিবীতেই অস্থিত্ব এরা তাদের জীবনে আভা ছড়িয়েছিল মাত্র। তাদের বলা হয় archeabacteria । এরা সকলেই পৃথিবীর তাপকে খাদ্য হিসিবে গ্রহন করতো। শুধু মাত্র cyanobacteria বা নীল-সবুজ এলজি(শেওলা) বাদে। তারা একাই পেড়েছিল সূর্যের ছড়িয়ে পড়া আলোক শক্তিকে ধরতে। তারাই ছিল বর্তমানের জীব জগতের প্রাচীন জন্মদাতা। এই ক্ষুদ্র ব্যাকটেরিয়া এবং তাদের বিলিয়ন বিলিয়ন বংশধরেরা আমাদের গ্রহের ভবিষ্যতই পরিবর্তন করে ফেলে। এরা পৃথিবীর আবহাওয়াই পরিবর্তন করে ফেলে।
কি হয়েছিল সেই কার্বনের যা আমাদের বায়ুমন্ডলকে দূষিত করে রেখেছিল?

কার্বন এখন আছে, পৃথিবীর ভূত্বকে আবদ্ধ বা কঠিন অবস্থায়। তখনও কোন একটি সাগরে micro-organisms এর আর্বিভাব হয়েছিল। তারা কার্বন কে বায়ুমন্ডল থেকে সরিয়ে জমাটবদ্ধ করতে থাকে। এবং সাগরে মিশ্রিত করতে থাকে। স্থরে স্থরে সাজানো এই micro-organisms কে আমরা এখনও দেখতে পাই। ধন্যবাদ তাদেরকেই, তারাই কার্বনকে বায়ু থেকে সরিয়ে দিয়েছে যার ফলে অন্যান্য জীবন নিজেদের বিকাশ করতে পারল। যার ফলে জীবনের উন্মেষ ঘটে বায়ুমন্ডলে। বৃক্ষ সূর্যের শক্তিকে খাদ্য হিসেবে গ্রহন করে।
এই পৃথিবীর পানিচক্রটি চলমান একটি প্রক্রিয়া। জলপ্রপাত, জলীয় বাষ্প, মেঘ, বৃষ্টি, ঋতু, নদী, সাগর, মহাসাগর, হিমবাহ....কিন্তু পানিচক্রটি কখনও ভাঙ্গে নি। সব সময় পৃথিবীতে তাই পানির পরিমান সমান ছিল। পৃথিবীর সফল সব প্রজাতীই সেই একই পানি পান করে আসছে। বিস্ময়কর ব্যাপার হচ্ছে পানিই হল সবচেয়ে অস্থির পদার্থ। এটিই গলিত থাকে নদীর পানির মত আবার গ্যাস হিসেবে থাকে জলীয় বাষ্প হিসেব, আবার কঠিন হয়ে থাকে বরফের মত।
সাইবেরিয়াতে শীতের মধ্যে অনেক গুলো জমাটবদ্ধ হ্রদ পাওয়া যায় যাতে পানি চলমান থাকে বরফের মধ্যেও। ফলে জীবন ঠিকই গতিশীল থাকতে পারে। জীবন চালিকা শক্তি হল তার সংযুক্তি হওয়ার ক্ষমতা। সবকিছুই সংযুক্ত। কোন কিছুই স্বয়ং সম্পূর্ন নয়। পানি এবং বায়ু অবিচ্ছেদ্য, সংযুক্ত জীবনের সাথে এবং আমাদের জীবনের সাথে এই পৃথিবীর। শেয়ারিংই সবকিছু। সবুজ বৃক্ষ মাধ্যমে মেঘ যা অক্সিজেনের উৎস হিসেবে কাজ করছে বাতাসে। ৭০% অক্সিজেন যা ছাড়া আমাদের ফুসফুস কাজ করতে পারে না, তা আসে আলগি(শেওলা) থেকে যা ছড়িয়ে আছে মহাসাগরের উপরের পৃষ্ঠ জুড়ে। আমাদের এই পৃথিবীতে আছে অসাধারন একট ভারসাম্য যাতে সবাই একটি গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে এবং তাদের অস্থিত্ব আছে অন্যদের অস্থিত্বের মাধ্যমে। একটি সুক্ষ অতি ভঙ্গুর ঐকতান যা সহজেই ভেঙ্গে ফেলা যায়। সেখানে কোরালগুলোর(প্রবাল) জন্ম হয় আলজি এবং শেল এর বিবাহ বন্ধনের মাধ্যমে। এই কোরাল বা প্রবাল গুলো সারা সমুদ্রের ১% জুড়ে থাকে। কিন্তু তাদেরকে বাসস্থান হিসেবে ব্যবহার করে হাজার রকমের মাছ,বিভিন্ন রকম প্রানী আর শেওলা গুলো। প্রতিটি সমুদ্রের সুস্থিতা তাদের উপরই নির্ভর করে।

পৃথিবী সময় গণনা করে বিলিয়ন হিসেবে। সেই হিসেবে একটি পরিপূর্ন বৃক্ষ তৈরী করতে আমাদের পৃথিবীর লেগেছে ৪ বিলিয়ন বছর। প্রজাতীর শৃঙ্খলা রক্ষায় এই বৃক্ষগুলো হল এক একটি মাধ্যম, একটি উপযুক্ত জীবন্ত ভাস্কর্য। গাছ মধ্যকাষনের গর্জনকে তুচ্ছ করেছে। তারাই একমাএর প্রাকৃতিক উপাদান যারা আকাশের দিকে মাথা তুলে দাড়াতে পড়েছে। তারাই উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছে সেই cyanobacteria এর ক্ষমতাটুকু, যার মাধ্যমে সূর্যের আলো থেকে সরাসরি খাদ্য তৈরী করতে পারে। তারা সেই আলো সংরক্ষন করে এবং তা সুষম ভাবে ছড়িয়ে দেয় কান্ড আর পাতার মধ্যে। সেই গুলোই থেকেই উৎপন্ন হয় পানি, খনিজ, শাক-সবজি আর জীবিত বস্তু। আর তাই ধীরে ধীরে মাটি হয় আরও উর্বর। সেই মাটিতে বেড়ে উঠে মাইক্রো জীবনগুলো, যারা মাটিতেই খায়, পড়ে, ঘুমায় আর নিজদের পরিবর্তন করে। তারাই মাটিকে করে আরও উর্বর একটি স্থরে সেখানে সকল ভুমির জীবন সংযুক্ত।

এই পৃথিবীর জীবন সর্ম্পকে আমরা কি জানি?
কতগুলো জাতিসত্তার সর্ম্পকেই বা আমরা জানি?
হয়ত ১০টি জাতি? অথবা হয়ত ১০০টি জাতি?কিংবা তারও বেশি?
আমরা কি জানি কিভাবে তারা কোন শক্তির দ্বারা সম্পর্কযুক্ত?
পৃথিবী, অলৌকিক একটি জায়গা। যেখানে জীবন এখনও একটি রহস্যময় বিষয়। প্রানীতে প্রজাতি গত বৈশিষ্ট্য তাদের আচরন প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ধরে চলে আসছে। তাদের কেউ কেউ হয়ে তৃনভূজি অথবা তৃনভুজতাই তাদেকে গ্রহন করে নিয়েছে। এবং তারা উভয়ই সাফল্য পেয়েছে। প্রানী তার ক্ষুদা মিটিয়েছে বৃক্ষ খেয়ে। সেই বৃক্ষ আবার জন্মে, বার বার। প্রতিটি প্রজাতিরই এই নাটকে আছে গুরুত্বপূর্ন অবদান, সব প্রানীরই এখানে সমান স্থান রয়েছে। কোন কিছুই অপ্রয়োজনীয় বা ক্ষতিকারন নয়। তারা সবাই ভারসাম্যপূর্ন। আর সেখানেই তুমি ,হোমো সেপিয়েন্স, বিজ্ঞ মানুষ, সেই নাটকে প্রবেশ করেছো, । তুমি সুবিধা নিয়েছো ৪ বিলিয়ন বছর ধরে তিলে তিলে চলে আসা সমভাবে বন্টিত সম্পদের। তোমার বয়স মাত্র ২০০০০ বছর কিন্তু তুমি এই পৃথিবীর চেহারাই পরিবর্তন করে ফেলেছো। তোমার দূর্বলতাকে জয় করে তুমি পাকাপোক্ত বসবাসের জায়গা করে নিয়েছো যা এর আগের কোন প্রজাতি করতে পারেনি। ১৮০,০০০ বছরের যাযাবর জীবন শেষে পরিবেশ ও প্রকৃতিকে ধন্যবাদ যে মানুষেরা সুস্থির হতে পেরেছে। তারা আর শিকারের উপর নির্ভরশীল নয়। তারা পছন্দ করেছিল আদ্র পরিবেশ যেখানে আছে প্রচুর মাছ আর বন্য ফলমূল। যেখানে মাটি, পানি আর জীবন মিশ্রিত। এবং এখনও পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষ সমুদ্রপাড় বা নদীর পাড় বা কো হ্রদের পারে বাস করে চলেছে। সারা পৃথিবীতে প্রতি চার জনের একজন বাস করে ৬০০০ বছর পূর্বে মানুষ যেভাবে বাস করতো সেইভাবে, যেখানে ঋতুর পর ঋতু প্রকৃতি প্রদত্ত শক্তির উপর চলছে। এটাই হল ১.৫ বিলিয়ন মানুষের জীবন, স্যাংখিক বিচারে যারা সব উন্নত দেশের জনসংখ্যার থেকেও বেশি। কিন্তু তাদের জীবনের আয়ুষ্ককাল কম এবং যা অত্যাধিক পরিশ্রমের মূল্য হিসেবে পরিগনিত হয়। প্রকৃতিক অনিশ্চিয়তার মাঝেই তাদের প্রতিদিন কার জীবন চলছে। শিক্ষা সেখানে দূলর্ভ। সন্তান সেখানে পরিবারের একমাত্র সম্পদ হিসেবে বিবেচিত হয় যতদিন তাদের হাত দুটো সক্ষম থাকে। মানবতার প্রতিভাটুকু সব সময়ই কিছুটা দূর্বলতার বহি:প্রকাশ করে। তাদের শারিরীক শক্তি তাদের প্রধান অক্ষমতা যা তারা দূর করছে পৌষ্য প্রানী সাহায্যে নতুন এলাকা আবিষ্কারের মাধ্যমে।
(২০০৯ সালে বিখ্যাত মুভি হোম অবলম্বনে লিখা। মুভিটি মানবজাতীর জন্য একটি সতর্ক বার্তা বলেই আমার মনে হয় আর তাই লিখতে শুরু করলাম এই ধারাবাহিক লিখা। সবগুলো ছবি এই মুভি থেকেই নেওয়া।)
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই অক্টোবর, ২০১২ সকাল ১০:৩১