সাইবার স্পেসে যাদের নিয়মিত বিচরন তারা বিষয়টি ইতিমধ্যে একাধিকবার হয়ত খেয়াল করে থাকবেন, ব্লগে সাইবার আইন চালুর বিষয়ে বিডিনিউজ সম্প্রতি একটি বিতর্কিত বক্তব্য দিয়ে বেড়াচ্ছে। কখনও সম্পাদক নিজে আবার কখনও বা নিজেদের ব্লগ প্লাটফর্মের মডারেটরের মাধ্যমে এহেন প্রচার চালাচ্ছে মিডিয়া হাউজটি।
বিডিনিউজের এ বিতর্কিত ভূমিকা নিয়ে ব্লগারদের প্রতিবাদের ঝড় ও আমরা অনলাইনে দেখেছি একাধিকবার। একটু আগে বিডিনিউজ হোমপেইজ খুলতেই নতুন একটি ল্যাখা চোখে পড়লো, 'প্রাইভেট, পাবলিক ও সোশ্যাল মিডিয়া ' শিরোনামে। নামেই সোশ্যাল মিডিয়া থাকায় বেশ আগ্রহ ভরে পড়তে শুরু করলাম। বেশি পড়তে হলো না, অল্প কিছুদূর যাওয়ার পরই বুঝলাম লেখক হচ্ছেন বিডিনিউজের সৃষ্টি করা আরোও একজন 'সাইবার আইন বিশেষজ্ঞ হুজুর’! তিনিও সাইবার আইন চালু করা কেনো জরুরী, এমন টাইপ বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন পুরো লেখায়।
পলাশ দত্ব নামের এই লেখক ভদ্রলোক লিখেছেন, এরই মধ্যে এই মিডিয়ার চরিত্র বুঝে নানা দেশের নানা সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান নিজেদের জন্য নীতিমালা তৈরি করে নিয়েছে। কেন? তারা অভিজ্ঞতা থেকে বুঝে নিয়েছে যে সোশ্যাল মিডিয়া শেষ পর্যন্ত একটি পাবলিক মিডিয়া।
আইচ্ছা, বুঝলাম.. উনার এই কথার মানে হচ্ছে বিশ্বের সব দ্যাশ ইতিমধ্যে সাইবার আইন টাইন কৈরা সোশ্যাল মিডিয়া জব্দ করার ব্যবস্থা কৈরা ফালাইছে। খালি আমরাই এ বিষয়ে পিছাইয়া রইছি। আহা.. অবুক! অবুক!!
যাক, ল্যাখার মাঝে ম্যালা ‘আকাইম্যা’ প্যাচাল আছে। সেগুলো পইড়া কোন ইন্টারেস্ট পাই নাই। আকাজের কথায় ভরা, মাঝে ফেইসবুকের প্রাইভেসি সেটিংস নিয়াও একখান জ্ঞানগর্ভ টিউটোরিয়াল পাইলাম। লেখাটি থেকে আসুন জেনে নেই কিভাবে কাস্টোমাইজ করবেন নিজের স্ট্যাটাস শেয়ারিং এবং প্রাইভেসি। অবুক!
লেখক ভদ্রলোক সম্প্রতি ফেইসবুকে স্ট্যাটাস দেয়া নিয়ে জাবি শিক্ষকের নামে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করার নির্দেশ সংক্রান্ত সিদ্ধান্তে আদালতকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, রুহুলের স্ট্যাটাস এবং এই নিয়ে আদালতের আইনি প্রক্রিয়াটি বাংলাদেশের জন্য একটি স্মরণীয় এবং প্রয়োজনীয় ঘটনা হয়ে থাকবে বলেই মনে হয়। কেননা এর থেকেই দ্রুত ধাবমান সোশ্যাল মিডিয়া নিয়ে একটি দিক-নির্দেশনার দিকে এগুতে পারে বাংলাদেশ। আহা, যারা যারা ফেইসবুকে রুহুলের মতো 'বেয়াদবী' করবেন তাদের কে অবশ্যই জেলে পুরতে হবে।
পুরা ল্যাখার সামারি কৈরা যা বুঝলাম, ফেইসবুক হৈলো একখান উন্মুক্ত টেলিভিশন টাইপ পর্দা, টেলিভিশনে যদি কেউ কাউরে গাইলাই তাইলে তার যেমন শাস্তি হওয়া উচিৎ তেমনি ফেইসবুকে কেউ কাউরে নিয়া কিছু লিখলে বা সমালোচনা করলে তারও শাস্তি হওয়া উচিৎ।
এই লেখা পড়িয়া আরোও বুঝিলাম, ব্লগার এবং ফেইসবুকার বন্ধুরা, উন্মুক্ত ফেইসবুক টেলিভিশন পর্দায় কাউরে নিয়া আলোচনা-সমালোচনা করা চৈলবো না, খপর্দার!! তাইলে সোজা রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা।
চলুন, আমরা এই 'নবীজি সাইবার আইন বিশেষজ্ঞ' সাংবাদিক এবং কবি ভাইয়ের কন্ঠে কন্ঠ মিলাই, আসুন সাইবার আইন কায়েম করি আর সোশ্যাল মিডিয়া এবং ব্লগে যারা লেখালেখি করেন তাদের নামে দলে দলে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করি।
আইচ্ছা, ধরুন নবীজি সাইবার আইন বিশেষজ্ঞের কথামতো অনলাইনে যারা ‘উল্টা-পাল্টা’ লেখালেখি করে তাদের নামে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করলাম, জেলেও পুরলাম। এখন আমরা কি করুম? কন তো? গাঞ্জা খামু! গাঞ্জা খাইলে শরীর খারাপ হয় না, বিডিনিউজ তার হোমপেইজে ম্যালা সময় ধৈরা একটা সংবাদ ঝুলাইয়া সবাইরে দেখাইছে, শিরোনাম: ‘অনিয়মিত গাঁজা সেবনে ফুসফুসের ক্ষতি হয় না ’।
হ! উড়াধুড়া একটা সোর্স দিয়া বিডিনিউজ কৈছে গাঞ্জা খাইলে সমস্যা নাই, তাই আমরা গাঞ্জা খামু, আবার ব্লগার এবং অনলাইন অ্যাকটিভিস্টদের মুখ বন্ধ করতে সাইবার আইন জরুরী-খুব জরুরী। তাই আমরা সাইবার আইনও কায়েম করুম। কি কন? লন, দলে দলে সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকটিভিস্টদের নামে রাষ্ট্রদোহ মামলা করি আর এরপর শান্তি মতো গঞ্জিকা সেবন করি!
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জানুয়ারি, ২০১২ রাত ২:৪৭