
শহর এলাকায় ও গ্রামাঞ্চলের বাজারে ১০ হাজার ডিজিটাল সেন্টার স্থাপন করা হবে। ৮০ বর্গফুটের এ সেন্টার থেকে সরকারি স্কুলশিক্ষকরা বেতন তুলতে পারবেন; অবসরে যাওয়া চাকরিজীবীরা তুলতে পারবেন পেনশনের টাকা।
শুধু তা-ই নয়, এই ডিজিটাল সেন্টারগুলোর মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধা, বয়স্ক নাগরিক, গর্ভবতী মায়েরা তাঁদের ভাতা তুলতে পারবেন। কৃষি ভর্তুকি, কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচির টাকা, ছাত্রছাত্রীদের উপবৃত্তি ও নগদ সহায়তা পরিশোধ করা যাবে এই কেন্দ্রগুলো থেকে। পাশাপাশি বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির বিলও পরিশোধ করা যাবে এর মাধ্যমে। টাকা পাঠানোও যাবে দেশের যেকোনো স্থান থেকে।
আগামী মাসের মধ্যেই দেশের বিভিন্ন স্থানে এ ধরনের দেড় হাজার কেন্দ্র চালু হবে। ২০১১ সালের মধ্যে এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে ১০ হাজারে।
গত পরশু বাংলাদেশ ব্যাংক ট্রেনিং একাডেমীতে এক সেমিনারে 'ডিজিটাল সেন্টার'-এর বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেন, 'এটি একটি যুগান্তকারী উদ্যোগ। এটি বাস্তবায়িত হলে অর্থনৈতিক বিপ্লব ঘটবে। আমরা অনেক ভেবেচিন্তে এ প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছি। এটি চালু হলে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর ওপর অতিরিক্ত চাপ অনেক কমবে এবং প্রতিষ্ঠানগুলো এতে লাভবান হবে।
এ ছাড়া এ প্রকল্পের ফলে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, যাদের কাছে ব্যাংকিং সেবা পেঁৗছায় না, তারা বিশেষভাবে উপকৃত হবে।' এ প্রকল্প সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার বাস্তবায়নে অনেকাংশেই সহায়তা করবে বলে তিনি আশা করেন। প্রকল্পটি বিভিন্ন সরকারি সংস্থার অনুমোদন ইতিমধ্যেই পেয়েছে বলে জানান উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান ডিজিটাল টেকনোলোজিস লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা প্রকৌশলী মোজাম্মেল হক বাবু।
গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর ডিজিটাল সেন্টার কার্যক্রমের অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।
চলতি বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি বিটিআরসি ডিজিটাল সেন্টার সেবার জন্য একটি সর্বজনীন কোড (১৪২০৩) বরাদ্দ করে। গত ৪ এপ্রিল এ প্রকল্পের সঙ্গে একই প্ল্যাটফর্মে মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনার জন্য চুক্তি হয়। এ ছাড়া তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং গতপূর্ত মন্ত্রণালয় এ প্রকল্পকে স্বাগত জানায়।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধে মোজাম্মেল বাবু বলেন, সারা দেশে ১০ হাজার ডিজিটাল সেন্টার স্থাপিত হলে অর্থপ্রবাহ বাড়বে। কমবে চাহিদা ও সরবরাহের মাঝখানে সময়ের ব্যবধান। ফলে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দ্বিগুণ হবে। দেশের বিভিন্ন বাজার ও ব্যবসায়িক এলাকায় এসব ডিজিটাল সেন্টার স্থাপন করা হবে। এ জন্য ভূমি সহায়তা দেবে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।
ট্রেনিং একাডেমীর প্রধান মো. এবতাদুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এসএমই ও স্পেশাল প্রোগ্রামস বিভাগের মহাব্যবস্থাপক সুকোমল সিংহ চৌধুরী, এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন আফতাব উল ইসলাম ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ রেজওয়ানুল কবীর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
ডিজিটাল সেন্টারের সেবা : 'ডিজিটাল মানি' বা মোবাইল পেমেন্ট সেবার আওতায় সরকারের পক্ষে বেতন পরিশোধ, পেনশন পরিশোধ,
মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা, বয়স্ক ভাতা, গর্ভবতী মায়েদের ভাতা, কৃষি ভর্তুকি, কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচির ভাতা, ছাত্রছাত্রীদের উপবৃত্তি প্রদান ও নগদ সহায়তা পরিশোধ করা হবে।
'ডিজিটাল অ্যাকসেস'-এর মাধ্যমে অনলাইন শপিং, চিকিৎসকের পরামর্শ, টেলিমেডিসিন, ব্যাংক ও বীমা ইত্যাদি সেবা পাওয়া যাবে। আগামী দিনে এর সঙ্গে যোগ হবে ডিজিটাল স্টক, যার মাধ্যমে এ সেন্টারগুলোতেও সাধারণ মানুষ শেয়ার কেনাবেচাও করতে পারবে।
কর্মসংস্থান : এ সেন্টারগুলোতে প্রায় ৫০ হাজার নারীর কর্মসংস্থান হবে। মূলত এসএসসি থেকে ডিগ্রি পর্যন্ত পড়াশোনা করা মেয়ে বা গৃহবধূরা এখানে কাজ করতে পারবেন।
কোথায় স্থাপিত হবে : ঢাকা শহরে এক হাজার ৩২০টি, চট্টগ্রামে ৫০০টি, রাজশাহী, খুলনা, সিলেট, বরিশাল ও রংপুর শহরে ৫০০টি, ৫৭টি জেলা শহরে এক হাজার ৭১০টি, ৪৯০টি উপজেলায় এক হাজার ৪৭০টি এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে চার হাজার ৫০০টি কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। চলতি বছরের ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে এক হাজার ৫০০টি, ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে দুই হাজার এবং আগামী বছরের মধ্যে ছয় হাজার ৫০০টি ডিজিটাল সেন্টার চালু হবে।
সুবিধা : এসব ডিজিটাল সেন্টার কাজ শুরু করলে ক্ষুদ্রঋণ বিতরণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর একচেটিয়া কারবার এবং সুদের হার কমবে বলে আশা করেন উদ্যোক্তারা। যেকোনো ধরনের সেবার জন্য সার্ভিস চার্জ নেওয়া হবে ১ শতাংশ। এসব সেন্টার থেকে সরকারি স্কুলের শিক্ষকদের প্রতি মাসের বেতন তোলার হয়রানি ও গ্রাহকদের সেবা বিল দেওয়ার বিড়ম্বনা দূর হবে। ব্যাংকগুলোর ওপর বাড়তি চাপ কমবে এবং তারা মূল কাজে আরো মনোযোগ দিতে পারবে। মানি লন্ডারিং ও জঙ্গি অর্থায়ন চিহ্নিতকরণের বিশেষ ব্যবস্থাও থাকছে এ প্রকল্পে।