
১৯৮৪সালের ২২শে আগস্ট। সামিয়া মারা গেছে। দীর্ঘ পনের বছর তাকে গুপ্ত ঘরে আটকে রাখা হয়েছিল। এই গুপ্ত ঘরেই তার মৃত্যু হয়। মারা যবার দিন তার চাচা তাকে বলেছিল ছোট ঘুলঘুলির ফাঁক দিয়ে --এখনও সময় আছে খোদার কাছে তোমার অপরাধ স্বিকার করে তওবা পড়। সামিরা হয়ত ক্ষিন কন্ঠে অথবা দৃপ্ত কন্ঠে বলেছিল--- যে অপরাধ আমি করিনি তার জন্য মাপ আমি কারও কাছে চাইব না। এই ঘুলঘুলি দিয়েই তাকে দিনে একবার খাবার দেয়া হত। মারা যাবার পরদিন খাবার দিয়ে যায় কাজের লোক। তার পরদিন খাবার দিতে এসে দেখে সামিয়া খাবার খায়নি। তার বাবাকে ডাকা হয়। বাবা এসে কয়েকবার সামিয়াকে ডাকেন জবাব না পেয়ে দরজা খুলে দেখতে পান সামিয়া দুইদিন আগেই মারা গেছে। শবদেহ গোসল করানোর পর সামিয়াকে যে সকল মহিলা দেখেছেন সবাই এক বাক্যে বলেছেন --সে ঠিক তার পনের বছর আগে যেমন ছিল তার চেয়ে অনেক বেশী সুন্দর ও পবিত্র চেহারা নিয়ে মারা গেছে।
সামিয়া ছিল দুরন্ত এক প্রজাপতি। যে ভুল করে জন্মগ্রহন করেছিল সৌদি আরবে। তাকে তার বাবা মা লেখাপড়া শিখবার জন্য আমেরিকায় পাঠান। সে সেখানে লেখাপড়া শিখে বড় হয়। হয়ত কোন এক বিদেশীর প্রেমে পরে। সে আর সৌদী আরবে আসতে চায় না। তার বাবা-চাচা তাকে ধোঁকা দিয়ে নিয়ে আসে দেশে। সেখানে তাকে জোর করে বিয়ে দেয়া হয়। বিয়ের পরদিন সামিয়ার স্বামী সামিয়াকে তালাক দেন কারন সামিয়া স্বতী নয়। অর্থাৎ তার হাইমেন অক্ষত নয়।
ক্রুদ্ধ বাবা-চাচা সামিয়াকে জিজ্ঞাসা করেন -তা সত্যি কিনা? সামিয়া বিবাহপূর্ব যৌন সম্পর্কের কথা অস্বিকার করে। কিন্তু তার বাবা-চাচা তা মানতে রাজি নয়। তাই তাকে আটক করে রাখা হয় অন্ধকার গুপ্ত ঘরে। সেই ঘরেই তার মৃত্যু হয় পনের বছর তের দিন পরে।
অনেকেই চেষ্টা করেছে সামিয়ার মুক্তির জন্য কিন্তু সামিয়ার বাবা-চাচা কিছুতেই রাজি হয়নি। আর সৌদি আরবে বাবা স্বামীর উপরে কোন আইন আজ পর্যন্ত নেই। সামিয়ার বাব-চাচার বিশ্বাস ছিল আল্লাহর ইচ্ছায় সামিয়ার এই শাস্তি হচ্ছে এর কোন নড়চড় হবে না।
সামিয়া সুন্দরী ছিল এবং তার ব্যাবহার ছিল খুব মিষ্টি। আস্তে আস্তে বদ্ধ ঘরে তিলে তিলে সে মৃত্যু বরন করে। সামিয়া না হয় সুদূর সৌদী আরবের মেয়ে। এই সতী/অসতীর প্রশ্নে আমাদের দেশের কত মেয়ে যে অকাতরে অন্ধকার জীবনে ডুবে যাচ্ছে ??!!
নারী যাতে সতী থাকে তার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহন করেছে দেশ, সমাজ, কাল এর পুরুষেরা। এটা তো আমরা সবাই জানি রাজপ্রাসাদের নারীদের পাহারা দেবার জন্য খোঁজা রাখা হত পাহারাদার হিসাবে। এই খোঁজাও তৈরী করা হত নিষ্ঠুর ভাবে।
নীল নদের দেশ মিসর । এই মিসরেই প্রথম নারীর স্বতীত্ব রক্ষায় প্রচলন হয় খৎনার যা মানাসির নামে প্রচলিত। মেয়েরা জন্মের পর পর তাদের clitoris কেটে ফেলা হত। এইটা জনপ্রিয় ছিল মানাসির, কাহতান, মুররা, বানি, হাজির, আই এবং আমজান গোত্রের মধ্য। এদের মধ্যে । মিসর থেকে এটা ছড়িয়ে পরে সম্পুর্ন মধ্যপ্রাচ্যে। সম্পূর্ন clitoris, labia major and labia minor কেটে ফেলা হত যাতে একজন নারী কখনই সতঃস্ফুর্ত ভাবে যৌনকর্মে লিপ্ত না হয়।
আর এক ধরনের খৎনা আছে যা pharaonic cirumision নামে পরিচিত। এটা এতই ভহাবহ যে তা যদি একজন পুরুষের করা হয় তবে তার নিম্নাঙ্গ বলে কিছু থাকে না।
এই বর্বর প্রথা সৌদী আরব সহ প্রায় সারা বিশ্ব নিষিদ্ধ করা হয়েছে । বাদশাহ ফয়সল এই খৎনা প্রথা নিষিদ্ধ করেন। তারপর সারা মধ্যপ্রাচ্যে তা নিষিদ্ধ হয়। তারশপরও এই প্যাগানদের প্রথা এখনও চালু আছে। কঠোর শাস্তির কথা জেনেও গোপনে এই খৎনা করা হয় যেন মেয়েরা সতীত্ব বজায় রাখে আর সঙ্গম কালে মেয়েদের দুঃসহ যন্ত্রনা দেখে তারা অনাবিল আনন্দ লাভ করে।
জাপান, চী্ন, করিয়া সহ কোন দেশই নারীর সত্বী কিনা এই পরিক্ষায় পিছিয়ে নেই। সতীত্ব রক্ষায় চলছে যুগে যুগে দেশে দেশে কালে কালে নারী নির্যাতন। কেন এই সতীত্ব রক্ষা? এর কারন কি পুরুষতান্ত্রিক সমাজে পুরুষ নিশ্চীত হতে চায় তার সন্তানের জনক অন্য কেউ নয়। যে তার বৈধ স্ত্রী তার গর্ভজাত সন্তান কেই সে স্বিকৃতি দেবে তাই তার এত সাবধানতা!!?? এখানে নেই কোন বিশ্বস, নেই ভালোবাসা। ছোট বেলা থেকে একটা কথা শুনে এসেছি, মাটির পাত্রে কুকুর মুখ দিলে সেই পাত্রটি মানুষ ফেলে দেয়। নারী নাকি সেই মাটির পাত্র। নারীকে তাই তার স্বতীত্ব বজায় রাখতে হবে। আমার প্রশ্ন নারী যদি মাটির পাত্র হয় তবে কুকুরটা কে?? নারীকে এখনও পরিক্ষা দিতে হয় সে সত্বী কিনা? আর সেই পরিক্ষা এতই হাস্যকর -- করুনা করতেও ঘৃনা হয় পরিক্ষকদের।
এখন দিন বদলেছে। আমরা মাটির পাত্র ব্যাবহার করি না। যে পাত্র ব্যাবহার করি সেই পাত্রে কুকুর মুখ দিলে পাত্রটিকে খুব ভাল করে পরিস্কার করা হয় তা আর ফেলে দেয়া হয় না। নারীর কি কোন পরিবর্তন হয়েছে?? হ্যাঁ হয়েছে। তবে খুব সীমিত। তবুও তো হয়েছে। আমি আশাবাদী।