এই লেখাটি ওয়ালর্ড কাপ কৃকেট উপলক্ষে লিখেছিলাম। ইনডিয়ান মুভি ইন্ডাস্ট্রির সাথে কৃকেটের সম্পর্ক নিয়ে মজার কিছু তথ্য আছে।
ইনডিয়ান স্টারদের কাছে কৃকেটাররা যখন স্টার
মুজাহিদ আকাশ
ওয়ার্ল্ড কাপ কৃকেট খেলতে এখন 16টি দেশের ন্যাশনাল টিম ওয়েস্ট ইন্ডিজের সবুজ দ্বীপগুলোতে গিয়ে হাজির হয়েছেন। সব দেশই আশা করছে ভালো কিছু করে দেখানোর। যারা শিরোপা জেতার স্বপ্ন দেখেন সেই অস্ট্রেলিয়া, সাউথ আফৃকা, ইনডিয়া, শ্রী লংকা, পাকিসত্দান, নিউ জিল্যান্ড, ইংল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ তো শিরোপার স্বপ্ন দেখতেই পারে। বাদ নেই বাকিরাও। তারা প্রত্যেকেই জিততে চান অনত্দত এক বা একাধিক ম্যাচ।
দেশের মানুষের আশাও তেমনি।
কৃকেট জ্বরে এখন ভুগছে অনত্দত 16টি দেশ।
কৃকেট যেমন কাউকে তারকা বানাতে পারে তেমনি মিডিয়ার তারকারা আবার পরিণত হতে পারেন কৃকেট তারকাদের ভক্তেও।
ধরম্নন লতা মঙ্গেশকরের কথা। ভারতরত্ন খেতাব পাওয়া সঙ্গীতকুইন তিনি। সারা পৃথিবীতে ইনডিয়াকে পরিচিত করেছেন আলাদা পরিচয়ে। প্রায় সময়ই তাকে দেখা যায় সাদা শাড়িতে রঙিন সব গান গাইতে। টিভি দেখার সময় হয় না যার, নিজের গাওয়া গান নিয়ে মুভি দেখার সময়ও যার কষ্ট করে বের করতে হয় তিনি কিন্তু ঠিকই খোজ রাখেন কৃকেটের। শুধু খোজ নয়, একেবারে সর্বশেষ খবরটিও রাখেন। নতুন কোনো গায়ক বা গায়িকা হিন্দি মুভিতে গান গাইছেন সে খবরটি মাঝে মধ্যেই তিনি রাখেন না কিন্তু ইনডিয়ান কৃকেট টিমে নতুন কোনো সদস্য এলো, কোন পজিশনে তিনি খেলেন, তার রেকর্ড কেমন এসব খবর তার মুখস্থ। আর বিভিন্ন দেশের কৃকেট সম্পর্কেও ভালো ধারণা রাখেন তিনি। কোন দল কেমন খেলে, কার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সুযোগ রয়েছে এসবও বলতে পারেন ভালোমতোই। শুধু তাই নয়, গত চলিস্নশ বছরে তিনি বহু কৃকেট ম্যাচ মাঠে গিয়ে দেখেছেন। এখন বয়সের কারণেই তিনি মাঠে গিয়ে খেলা দেখতে পারেন না, কিন্তু টিভিতে নজর থাকেই। সব কৃকেট খেলুড়ে দেশে তিনি বেড়াতে গিয়েছেন, মাঠে বসে দেখেছেন অনেক ঐতিহাসিক ম্যাচ। কোনো অনুষ্ঠানের শেডিউল ফাইনাল করার আগে দেখে নেন কৃকেট ক্যালেন্ডার। ভালো ম্যাচ থাকলে ওই দিন প্রোগ্রাম বাতিল করেন বা প্রোগ্রামের শেডিউলই নেন না। অবাক হবেন না যদি এই ওয়ার্ল্ড কাপের কোনো ম্যাচের গ্যালারিতে লতা মঙ্গেশকরকে দেখতে পান।
ইনডিয়ান মুভির জীবনত্দ লেজেন্ড দিলীপ কুমার। তিনিও কৃকেটের খুব ভক্ত। তবে লতার মতো ভক্ত নন_ আরো বেশি ভক্ত। তিনিও খেলার খবর রাখেন খুব। কবে কোন ম্যাচ কোথায় হবে সব জানা তার। কৃকেট ম্যাচ মানেই তার কাছে উৎসব। যখন তিনি বলিউডের সবচেয়ে ব্যসত্দ নায়ক ছিলেন তখনো কোনো ম্যাচ মিস করতেন না। এমনও নজির আছে কৃকেট দেখার জন্য তিনি শুটিং বাতিল করেছেন। অনেক ম্যাচ দেখেছেন মাঠে বসেই। সে সুযোগ না হলে রেডিওতে ধারাভাষ্য শুনতেন। তখন তো টিভিতে ম্যাচ দেখাতো না, রেডিওতে শোনানো হতো। এখন টেলিভিশনে ম্যাচ দেখানো হয় বলে কাজটা সোজা হয়ে গেছে। কষ্ট করে মাঠে যেতে হয় না। তাছাড়া এখন দিলীপ কুমারের স্বাস্থ্যও ভালো যাচ্ছে না। তাই টিভিই শেষ ভরসা।
ব্যক্তিগত জীবনে দিলীপ কুমারের সঙ্গে অনেক কৃকেটারের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। কৃকেট খেলা দেখার কারণে স্ত্রী সায়রা বানুর সঙ্গে কলহ না হয়ে সম্পর্ক আরো গাঢ় হয়। সায়রা বানু বলেন, আমি চাই বেশি করে কৃকেট ম্যাচ থাকুক টিভিতে। তাহলে আমার সাহেব ওইদিন ঘরে থাকবে। আমার সঙ্গে বেশি সময় কাটাবে।
লাভার বয় ইমেজ নিয়েই এখনো আছেন বুড়ো হয়ে যাওয়া দেব আনন্দ। তবে তার মনটা এখনো আঠারোর তরম্নণের। আচার-আচরণে তো বটেই। খেলাধুলার প্রতি আবেগের দিক দিয়েও। তিনি কৃকেট পছন্দ করেন এ যুগের ছেলেদের মতো। মানে ওয়ানডে কৃকেট। টেস্ট খেলা দেখার মতো ধৈর্য তার নেই। তরম্নণের মন তো। অস্থির। ওয়ানডে কৃকেট যখন শুরম্ন হলো তখন তিনি মনত্দব্য করেছিলেন, কৃকেট এমনই হওয়া উচিত। আজো তাই মনে করেন।
কৃকেট নিয়ে কেবল কথা বলেই ৰানত্দ হননি তিনি। মুভিও বানিয়েছেন। আমির খানের সঙ্গে করেছেন আওয়াল নাম্বার। কৃকেট নিয়ে এটাই ছিল প্রথম মুভি। যদিও মুভিটি হিট হয়নি কিন্তু নতুন সাবজেক্ট নিয়ে মুভি তৈরি করার আইডিয়াটা তিনিই দেন। এরই ফলে তৈরি হয় হিট মুভি লগান। এটিতেও আমির খান ছিলেন। আশুতোষ গোয়ারিকরের এই মুভি গিয়েছিল অস্কার পর্যনত্দ।
কয়েকদিন আগেও কৃকেট নিয়ে মুভি হয়েছে। নাম ইকবাল। বর্তমানে আরেকটি মুভি হচ্ছে। নাম হ্যাটটৃক। তার মানে দাড়াচ্ছে দেব আনন্দের দেখানো পথ দিয়ে এখন হাটছেন বহুজন।
এদের বাইরেও বহু তারকা আছেন যাদের জীবনে কৃকেট আছে অনেকটা জুড়ে। নওশাদ আলী, কল্যাণী আনন্দজি, লক্ষ্মীকুমার পেয়ারিলাল, মনোজ কুমার এবং জিতেন্দ্র পড়েন এই দলে। কৃকেটের জন্য তারা ছাড়তে পারেন যে কোনো কিছু।
আর নানা পাটেকারের কৃকেটপ্রীতি তো ইনডিয়ান মুভিতে খুবই মুখরোচক আলোচনার বিষয়। সিরিয়াস অভিনেতা এই নানা পাটেকার নাকি প্রিয় দল হারলে অবোধ শিশুর মতো কান্নাকাটি করেন। তিনি বলেন কৃকেট হচ্ছে তার প্রথম প্রেম, অভিনয় দ্বিতীয়। শচিন আর সৌরভের দারম্নণ ভক্ত তিনি। ক্যাপ্টেন হিসেবে আজহারউদ্দিনকে বেস্ট মানেন।
অনেক অনাথ কৃকেটারকে ব্যাট-বল কিনে দিয়েছেন তিনি। তার দেয়া টাকায় চলে পাড়ার দরিদ্র মানুষের কৃকেট ক্লাব। এভাবে কয়েকজন কৃকেটারের ক্যারিয়ার গড়তে কাজ করেছেন নানা পাটেকার। অনেক সময়ই দেখা যায় পঞ্চান্ন বছর বয়সী নানা পাটেকার পাড়ার পনেরো বছর বয়সীদের সঙ্গে কৃকেট খেলছেন।
অনেক কৃকেটারও মুভিতে নাম লিখিয়েছেন। শুরম্ন হয়েছিল সেলিম দুরানিকে দিয়ে। পারভীন ববির বিপরীতে হিরো হয়েছিলেন তিনি। এরপর মুভিতে এসেছেন সুনীল গাভাস্কার, সন্দ্বীপ পাতিল, কপিল দেব, অজয় জাদেজা, বিনোদ কাম্বলি এবং সলিল আনকোলা। যদিও তারা কেউই অভিনেতা হিসেবে নাম কামাতে পারেননি। তারা হয়তো মনে করেছিলেন মাঠে খেলাটাই কঠিন, বাসত্দবে এসে দেখলেন পর্দায় খেলাটাও কম কঠিন না।
আর কৃকেটারদের সঙ্গে মুভি স্টারদের হৃদয় বিনিময় তো খুবই সাধারণ ঘটনা। মনে আছে নিশ্চয়ই, স্যার গ্যারিফিল্ড সোবার্সের কথা। তিনি প্রেমে পড়েছিলেন ইনডিয়ান অভিনেত্রী আনজু মাহেন্দ্রর। কঠিন প্রেম ছিল সেটা। আনজু কিন্তু প্রেমে পড়েছিলেন তখনকার সুপারস্টার রাজেশ খান্নার। ওদিকে রাজেশ খান্না তখন ডুবছিলেন ডিম্পল কাপাডিয়ার প্রেমে। বুঝুন অবস্থাটা। যাক শেষ পর্যনত্দ রাজেশ খান্নাই সফল হয়েছিলেন ডিম্পলকে বিয়ে করে। থাক এসব পুরনো ব্যর্থ প্রেমের কথা। এ রকম প্রেম যে সফল হয়নি তা কিন্তু নয়। কৃকেটার মনসুর আলী খান পাতৌদিকে প্রেম করে বিয়ে করেছিলেন শর্মিলা ঠাকুর। তাদের দুই সনত্দান সাইফ আলী খান আর সোহা আলী খান এখনকার বলিউড স্টার।
ওয়েস্ট ইনডিয়ান ব্যাটসম্যান ভিভ রিচার্ডসের প্রেমে পড়ে নীনা গুপ্তা বেসামাল হয়ে গিয়েছিলেন। তিনি প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়েছিলেন তার জীবনের সবচেয়ে বড় লৰ্য তার গর্ভে ভিভের সনত্দান ধারণ। সেটাতে নীনা সফল। বিয়ে করেননি নীনা কিন্তু ভিভ রিচার্ডসের সনত্দান নিয়েছিলেন। মাসাবা নামে নীনার যে মেয়েটি আছে আসলে সে ভিভ রিচার্ডসের কন্যা।
ইমরান খান বিয়ে করেছিলেন জেমাইমাকে কিন্তু প্রেম করেছিলেন অসংখ্য। তার এসব প্রেমিকার মধ্যে ছিল লেডি অফ ইনডিয়া খ্যাত জিনাত আমান পর্যনত্দ।
ইনডিয়ার সাবেক ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ আজহারউদ্দিন প্রেম করলেন অভিনেত্রী সঙ্গীতা বিজলানীকে। সালমান খানের সাবেক এই প্রেমিকার প্রেমে পড়ে আজহার দুই সনত্দানকে ভুলে গেলেন। তালাক দিলেন স্ত্রীকে। ঘরে আনলেন সঙ্গীতাকে। এখনো সঙ্গীতা আজহারের সঙ্গে আছেন কিন্তু সঙ্গীতার উচ্চাভিলাষী জীবনের খরচ মেটাতে ম্যাচ ফিক্সিং করে টাকা কামাতে গিয়ে সর্বস্বানত্দ হয়েছেন। আজীবন নিষিদ্ধ হয়েছেন কৃকেট থেকেই।
আর এখনকার স্টারদের মধ্যে সুস্মিতা সেনের সঙ্গে ব্রায়ান লারার প্রেম আছে বলে গুজব আছে। তারা দুজন মুভিও করছেন একসঙ্গে। বলা হয়, ওয়ার্ল্ড কাপ শেষ হলেই এ বিষয়ে মিডিয়াতে ঘোষণা আসতে পারে।
দিল ওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গের মন্দিরা বেদি তো পাকিসত্দানি এক কৃকেটারকে প্রেম করে বিয়ে করে এখন পুরোদস্তুর কৃকেট ধারাভাষ্যকার।
অভিনেত্রী দুলারির সঙ্গে ইরফান পাঠানের সম্পর্ক নতুন মাত্রা নিতে যাচ্ছে বলে ইনডিয়ার টিভি জগতের মানুষরা মনে করছেন।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০