যন্ত্রনা নাকি জ্ঞানভানডার সমৃদ্ধিকরন আপনারাই বলেন??
কিডনী রোগের প্রকৃত কারণ এবং চিকিৎসা
স¤প্রতি বাংলাদেশে কিডনী নষ্ট হওয়াসহ অন্যান্য মারাÍক কিডনী
রোগ বৃদ্ধির যে পিলে চমকানো খবর বেরিয়েছে, তাতে যে-কোন
সচেতন ব্যক্তিমাত্র মর্মাহত হবেন। রিপোর্টে বলা হয়েছে যে,
এসব প্রাণনাশী কিডনী রোগের সংখ্যা কল্পনাতীত হারে বৃদ্ধির মুল
কারণ হলো ভেজাল খাবার, ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপ। এই তিনটি
কারণকে এলোপ্যাথিক কিডনী বিশেষজ্ঞরা প্রকৃত কারণ বললেও আসলে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে বরং বেশী বেশী এলোপ্যাথিক ঔষধ খাওয়াকেই কিডনী নষ্ট হওয়ার মূল কারণ বলতে হবে। কেননা
আমরা অনেকেই জানি না যে, আমরা যতো ঔষধ খাই তার অধিকাংশই
রক্তে প্রবেশ করে তাদের কাজ-কর্ম পরিচালনা করে থাকে। পরবর্তীতে
তাদেরকে রক্ত থেকে সংগ্রহ করে ছেকে ছেকে শরীর থেকে বের করার
দ্বায়িত্ব পালন করতে হয় এই কিডনী দুটিকে। ফলে আমরা যতো বেশী
ঔষধ খাই, আমাদের কিডনীকে তত বেশী পরিশ্রম করতে হয় এবং
ফলস্রুতিতে কিডনী দুটি তত বেশী দুর্বল-ক্লাšত-শ্রাšত-অসুস্থ হয়ে
পড়ে। তাছাড়া বেশী বেশী ঔষধ খেলে তাদেরকে শরীর থেকে বের করে
দেওয়ার জন্য প্রচুর পরিমাণে পানি খেতে হয়।
কিন্তু আমাদের অনেকেই
বেশী বেশী পানি খাওয়ার বিষয়টি মেনে চলি না। কিডনী ড্যামেজ
হওয়ার মুল কারণ হিসেবে যে রোগকে বিবেচনা করা হয় তার নাম
নেফ্রাইটিস এবং নেফ্রাইটিস হওয়ার মুল কারণও এই ঔষধ। কিডনী যদিও
নিয়মিত আমাদের খাওয়া সকল ঔষধসমুহ নিষ্কাশন করে কিšদ তার
মাঝেও ঔষধের দুয়েকটা কণা কিডনীর অজাšেতই কিডনীর গায়ে লেগে
থাকে। পরবর্তীতে সেই কণাটির ওপর নানারকমের জীবাণু, ক্যামিকেল,
মৃতকোষ ইত্যাদি জমতে জমতে সেটির গঠন বদলে যায়। ফলে কিডনী
আর সেই কণাটিকে চিনতে পারে না। এক সময় কণাটি নিজে কিডনীর
একটি অংশ হওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু কিডনী সেই কণাটিকে গ্রহন করতে
রাজী হয় না। শেষ পর্যšত কিডনীর ভিতরে গৃহযুদ্ধ শুরু হয় যাকে
ডাক্তারী ভাষায় বলে অটোইমিউন রিয়েকশান (ধঁঃড়রসসঁহব ৎবধপঃরড়হ)। এভাবে কিডনীর এক অংশ অন্য অংশকে চিনতে না পেরে শত্র“ হিসেবে গণ্য করে এবং তাকে ধ্বংস করার জন্য উঠেপড়ে লেগে যায়। ফলে কিডনী নিজেই নিজের ধ্বংস ডেকে আনে এবং আমরা কবরের বাসিন্দা হয়ে যাই। সাথে সাথে সšতান-
সšততিদের করে যাই পথের ভিখারী। কেননা এলোপ্যাথিক চিকিৎসায় কিডনী রোগের যে চিকিৎসা খরচ, তাতে যে-কোন কিডনী রোগীর পরিবারকে পথে নামতে দুয়েক বছরের বেশী লাগে না।
কাজেই বলা যায় যে, উচ্চরক্তচাপ এবং ডায়াবেটিস আমাদের কিডনীর যতটা ক্ষতি না করে, তারচেয়ে অনেক
বেশী ক্ষতি করে এসব রোগ চিকিৎসার নামে যুগের পর যুগ খাওয়া
মারাÍক ক্ষতিকর এলোপ্যাথিক কেমিক্যাল ঔষধগুলি। বিশেষ করে যে-সব এলোপ্যাথিক ঔষধ মানুষ বেশী বেশী খায় (যেমন-এন্টিবায়োটিক, ব্যথার ঔষধ, বাতের ঔষধ, ঘুমের ঔষধ, ব্লাড প্রেসারের ঔষধ, মানসিক রোগের ঔষধ ইত্যাদি), এগুলো কিডনীর এতই ক্ষতি করে যে, এদেরকে কিডনীর যম বলাই উচিত। একটি বাস্তব সত্য কথা হলো, প্রচলিত অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতিতে ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপ কখনও সারে না ; বলা হয় এগুলো “নিয়ন্ত্রণে থাকে”। আসল কথা হলো, কোন ঔষধ যখন বছরের পর বছর, যুগের পর যুগ খাওয়া হয়, তখন সেই ঔষধ আর রোগকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না বরং রোগই সেই ঔষধকে নিয়ন্ত্রণ করে ফেলে। ফলে এসব কুচিকিৎসায় ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপ তো সারেই না বরং দিন দিন আরো নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। মাঝখানে মারাত্মক মারাত্মক ঔষধের ধাক্কায় কিডনীর বারোটা বেজে যায়। অথচ একজন বিশেষজ্ঞ হোমিও ডাক্তারের অধীনে চিকিৎসা নিলে ডায়াবেটিস, উচ রক্তচাপ এবং নেফ্রাইটিস দুয়েক বছরের
মধ্যেই কেবল নিয়šত্রণ নয় বরং একেবারে নির্মুল হয়ে যায়। এমনকি
যদি এসব রোগ নিরাময়ের জন্য যুগের পর যুগও হোমিও ঔষধ খেতে
হয়, তথাপি হোমিও চিকিৎসা করা বুদ্ধিমত্তার পরিচায়ক হবে। কেননা
হোমিও ঔষধে যেহেতু ঔষধের পরিমাণ থাকে খুবই কম, সেহেতু এগুলো
কয়েক যুগ খেলেও কিডনীতে জমে কিডনী নষ্ট হওয়ার সম্ভাবণা নাই। হ্যাঁ, অন্যান্য রোগের মতো কিডনী রোগের চিকিৎসাতেও হোমিও ঔষধ শ্রেষ্টত্বের দাবীদার। কারণ প্রচলিত অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতিতে কিডনী রোগের কষ্টগুলো নিয়ন্ত্রণ করা গেলেও কিডনী রোগের পেছনের মূল কারণসমূহ দূর করা যায় না। একমাত্র হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার মাধ্যমেই কেবল কিডনী রোগের পেছনের মূল কারণসমূহ দূর করা সম্ভব হয় এবং এভাবে একই রোগ কয়েক বছর পরপর ঘুরে ফিরে বার বার ফিরে আসা ঠেকানো যায়।
কিডনী নষ্ট হওয়ার কারণে যারা ডায়ালাইসিস (ফরধষুংরং) করে বেঁচে আছেন, তারাও ডালাইসিসের পাশাপাশি হোমিও চিকিৎসা গ্রহন করে তাদের বিকল কিডনীকে ধীরে ধীরে সচল করে তুলতে পারেন। হ্যাঁ, হোমিওপ্যাথিতে বংশগত রোগ প্রবনতার (ঈযৎড়হরপ সরধংস) ইতিহাস এবং শারীরিক-মানসিক গঠনগত (ঈড়হংঃরঃঁঃরড়হ) বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী ঔষধ প্রয়োগ করলে মানুষের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা (রসসঁহব ংুংঃবস) উজ্জীবিত হয় এবং ফলস্র“তিতে দেখা যায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে নষ্ট কিডনী আবার ভালোভাবে কাজ করতে শুরু করে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে কিডনী পুরোপুরি ভালো না হলেও যথেষ্ট উন্নতি হওয়ার ফলে ডায়ালাইসিসের সংখ্যা কমানো যায়। যেমন- দেখা যায় যেই রোগীর প্রতি সপ্তাহে একবার ডায়ালাইসিস করতে হতো, তার হয়ত এখন পনের দিনে বা মাসে একবার ডায়ালাইসিস করলেই চলে। আর কিডনী পুরোপুরি ভালো হয়ে গেলে ডায়ালাইসিস পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া যায়। অথচ প্রচলিত অন্যান্য চিকিৎসায় একবার ডায়ালাইসিস শুরু করলে কিডনী না পাল্টানো (করফহবু ঃৎধহংঢ়ষধহঃধঃরড়হ) পর্যšত আর সেটি বন্ধ করা যায় না। বরং যত দিন যায় ডায়ালাইসিস তত বেশী ঘন ঘন করতে হয়। আমাদেরকে বুঝতে হবে যে, ডায়ালাইসিসের মাধ্যমে নষ্ট কিডনী (ঈজঋ) কখনও ভালো করা যায় না বরং ইহার মাধ্যমে কেবল কিডনীর কাজ বিকল্প উপায়ে স¤পন্ন করে রোগীকে বাঁচিয়ে রাখা হয়। হ্যাঁ, একথা সত্য যে, শতকরা নব্বইভাগ রোগ বিনা চিকিৎসাতেই ভালো হয়ে যায় (আমাদের শরীরের নিজস্ব রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার বদৌলতে)। এতে সময় বেশী লাগে কিন্তু উপযুক্ত চিকিৎসা গ্রহন করলে অনেক কম সময়ে রোগের হাত থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। সেহেতু অনেকের সাময়িকভাবে নষ্ট কিডনীও বিনা চিকিৎসায় ভালো হয়ে যেতে পারে।
সাধারণত কিডনী রোগের হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা রোগের ভয়াবহতার মাত্রা এবং রোগের পেছনের অšতর্নিহিত কারণ অনুযায়ী দুই থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে শেষ করা যায়। কিন্তু প্রচলিত অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতিতে কিডনী রোগের চিকিৎসা প্রায় সারাজীবনই চালিয়ে যেতে হয়। নষ্ট কিডনী প্রচলিত অন্যান্য চিকিৎসায় কখনও ভালো হয় না। কারণ তাদের টার্গেট হলো কিডনীকে ভালো করা নয় বরং কৃত্রিম উপায়ে কিডনীর কাজ অন্যভাবে চালিয়ে নেওয়া (যেমন- ডায়ালাইসিস করা এবং কিডনী পাল্টানো)। হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের মায়াজমেটিক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে এতে অনেক বিস্ময়কর ঘটনা ঘটতে দেখা যায়, যা অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতিতে অকল্পনীয়। যেমন- হোমিও চিকিৎসায় কিডনীর ধ্বংস হওয়া কোষতন্তুর (ঃরংংঁব) জায়গায় ভালো টিস্যু গজাতে দেখা যায়। সাধারণত কিডনী পাল্টানোর পরে অনেক ক্ষেত্রে কিডনী গ্রহীতার শরীর এই নতুন কিডনীকে গ্রহন করতে চায় না (রসসঁহব ৎবধপঃরড়হ), নতুন কিডনীকে সে প্রত্যাখান করে (ৎবলবপঃরড়হ ড়ভ হবি শরফহবু)। নতুন কিডনীকে প্রত্যাখ্যানের এই হার বেশ উচ্চ। রক্ত স¤পর্কের আÍীয় ছাড়া অন্যদের কিডনী গ্রহন করলে এসব বিদ্রোহের ঘটনা ঘটে থাকে। প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতিতে নতুন কিডনীর বিরুদ্ধে শরীরের এই বিদ্রোহকে সামাল দিতে লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যয় করতে হয় ; অথচ এসব ক্ষেত্রে অপারেশনের পূর্ব থেকেই (অথবা অপারেশনের পরেও) যদি হোমিও চিকিৎসা অবলম্বন করা হয় তবে অšতত একশগুণ কম খরচে বিদ্রোহ সামাল দেওয়া সম্ভব।
নতুন কিডনী সংযোজনের পরে অনেক সময় দেখা যায় কিডনীর সাথে সম্পর্কিত রোগের (যেমন-ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ইত্যাদির) মাত্রা বেড়ে গিয়ে এমন পর্যায়ে পৌঁছে যে, তাকে আর নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপের মতো কিডনীর সাথে স¤পর্কিত রোগসমুহ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় যে কত সহজে দমন করা যায়, তা পুর্বেই বলেছি। কিডনী রোগীদের পাশাপাশি যাদের কিডনী রোগ নাই কিন্তু ফ্যামিলিতে কিডনী রোগের ইতিহাস আছে, তাদের উচিত প্রতিরোধমুলক (চৎবাবহঃরাব) হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা নিয়ে কিডনী নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি থেকে মুক্ত থাকা। কারণ একজন দক্ষ হোমিও ডাক্তার যে-কোন মানুষের সামগ্রিক ইতিহাস শুনলে অদুর অথবা দুর ভবিষ্যতে তার কি কি রোগ হওয়ার সম্ভাবনা আছে, তা বুঝতে পারেন এবং সেই অনুযায়ী ঔষধ প্রয়োগ করে তাকে সে রোগে আক্রাšত হওয়ার ঝুঁকি থেকে রক্ষা করতে পারেন। আবার যে-সব ডায়াবেটিস রোগী একই সাথে উচ্চ রক্তচাপেও ভোগছেন, তাদের কিডনী নষ্ট হওয়ার হাত থেকে বাঁচার জন্য হোমিও চিকিৎসা গ্রহন করা একেবারে ফরজ। যে-সব কিডনী রোগীর রোগের কারণ অজ্ঞাত বলে ডাক্তাররা মতামত দেন, তাদের জন্যও হোমিও চিকিৎসা অবলম্বন করা ফরজ।
আপনার কিডনী রোগ হালকা, মাঝারি, মারাÍক বা চরম মারাÍক যে পর্যায়েই থাকুক না কেন, (কিডনী একশভাগ নষ্ট হওয়ার পুবেই) যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আপনার হোমিও চিকিৎসা অবলম্বন করা উচিত। কারণ হোমিওপ্যাথিতে “অনেক দেরি হয়েছে গেছে” বলে কোন কথা নাই। যে-সব কিডনী রোগী জরুরি ভিত্তিতে কিডনী পাল্টানোর চেষ্টা করছেন, তারাও হোমিও চিকিৎসার মাধ্যমে কিডনী পাল্টানোর জন্য বেশী সময় পেতে পারেন। আরেকটি কথা হলো, অন্য যে-কোন পদ্ধতির চিকিৎসার পাশাপাশিও আপনি হোমিও চিকিৎসা গ্রহন করতে পারেন ; এতে কোন সমস্যা হয় না। পরিশেষে কিডনীরোগ বিশেষজ্ঞসহ সেবার মানসিকতা স¤পন্ন সকল মেধাবী ডাক্তারদের প্রতি আমাদের আহ্বান, আপনারা সামান্য কষ্ট শিকার করে হোমিওপ্যাথি আয়ত্ত করে নিন এবং হোমিও ঔষধ প্রেসক্রাইব করুন যাতে কিডনী রোগীরা বহুগুণ কম খরচে, কম সময়ে এবং কম ভোগাšিতর মাধ্যমে রোগমুক্ত হতে পারেন।