শান্তশিষ্ট একটি গ্রাম চারিপাড়া।
বৃদ্ধ আজিমউদ্দীন তার নাতির সাথে গরুর ওলান থেকে দুধ নামিয়ে একটু জিরিয়ে নিচ্ছে, কদিন আগে বাধানো ঘাটে। এ কটা বছরে কত কিছুই না বদলিয়েছে তাদের। ভাইরা চিটাগাং আর ঢাকাই বাড়ি বানিয়াছে এ কদিনে। মোদ্দাকতা যুদ্ধের পরে ফিরে তাকানো্র ফুস্রত পাইনি তার ভাই-ভাইপোরা।ভাবতেই ভাল লাগছিল তার। হঠাৎ চমকে উঠল নাতির ডাকে। ও দাদা, ও দাদা চলো না পইর এ জাল মারি। না এখন না- বলে উঠল আজিমউদ্দীন। তার নিজের তিন পুত্রের ডজন খানিক ছেলে-মেয়ে আছে, কখন এদের কাউকে তিনি কোলে তুলেছেন বলে মনে পারে না। কিন্তু ছোট ছেলের ঘরের এই নাতিটা সব হিসেব যেন গন্ডগোল করতে জন্মিয়েছে। কেন যেন মনে ধরেছে তার এই নাতিটাকে। এই নিয়ে তার স্ত্রী তাকে টীপ্পনী কাটেন। বৃদ্ধ বয়সে নাকি মানুষের অনেক রকম ভীমরতি হয়। যাক বাবা তার মন অন্য দিকে না গিয়ে এই নাতিটার দিকে গিয়েছে এতেই তিনি অনেক খুশি।
ও দাদা যাবে না- এই ডাকে হুশ ফিরলো আজিমউদ্দীনের।
এই বিকেল বেলা কী শুরু করলি, ওই তাসির মা কই গেলি। এই ছেলে কয় কী দেখ।এই অবেলায় নাকি পইর এ নাইমতাম। হাঁকশুনে দৌড়ে আসে তাসির মা রাবেয়া। এরে তো আপনে লাই দিয়া মাথায় তুলছেন, এর কথা হুননের কি দরকার । এইকথা বলে কষে এক থাপ্পর লাগায় তাসির গালে।
এএই কী করলী তুই। আমার নাতিটারে মারলি ক্যান। তোরে কি মারতে ডাকছি নি। তাসি এথক্কনে দাদার চিতাপড়া পান্জাবীতে মুখ ডুবিয়ে কাদছে। আজিমউদ্দীন রেগে গিয়ে তাসির মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললেন- চল তাসি পইরয়ে, দাদার জালখান লইয়া আয়।
তাসির কান্নামাখা চেহাড়াতে এখন হাসির ঝলক। একদৌড়ে উঠান পেড়িয়ে বড়ঘরে পৌছল সে। আজিমউদ্দীন লুঙ্গীর গোছ মাড়েন আর নাতির আসার অপেক্ষায় থাকেন। দাদা-নাতির এই খেলা খুবই পরিচিত রাবেয়ার কাছে।
(চলবে)