আগের পর্ব এখানে
Click This Link
দুই..
এই অবস্থায় বসে থেকে অপেক্ষা করা যায় আবার চলেও যাওয়া যায়। হাসান কি করবে বুঝতে পারছে না। রাত সাড়ে আটটায় ইন্টারভ্যু নেয়ার জন্য কারো বসে থাকার কথা না। কিন্তু বসে আছে মনে হচ্ছে।পিয়ন মতো একটা চ্যাংরা ছেলে চারবার কফি নিয়ে সামনের রুমে ঢুকেছে, বের হয়েছে। হাসানের দিকে ফিরেও তাকায়নি। সে বুঝে গেছে যে বসে আছে সে কফিগোত্রীয় না। কফিগোত্রীয় লোকজন দুঘন্টা ধরে বসে থাকবে না। অকফিগোত্রীয়রা বসে থাকবে, আঙ্গুল ফুটাবে,গলা খাকরানি দিবে। কিছু আসবে যাবে না। এদের তাকাতাকির কিছু নাই।
হাসানের এটা ছাব্বিশ নম্বর ইন্টারভ্যু। শুরুর দিকে তার মধ্যে এক ধরনের উত্তেজনা কাজ করতো। উত্তেজনায় গলা শুকিয়ে যাবার কথা, ঘনঘন বাথরুম পাবার কথা, তার হলো উলটো। ইন্টারভ্যুয়ের দুদিন আগে থেকে টাট্টি বন্ ।ওয়েটিং রুমে ঢোকার পর থেকে মুখে থুথু জমা শুরু হতো। মুখে বৈকাল হ্রদ নিয়ে বসে থাকা বিরক্তিকর। সে এই বিরক্তির মধ্যে দিয়ে অনেকবার পার করেছে। মানুষ বিরক্তি নিয়ে বেশিদিন থাকতে পারে না। সে তার নিজস্ব নিয়মে ছোটখাটো সমস্যার টোটকা বের করে ফেলে। হাসানও বের করে ফেললো। তার টোটকা এরকম, মনে মনে ভাবতে হবে, সে একটা স্বচ্ছ দীঘিতে সাঁতার কাটছে।দীঘির জল এতো টলটলে যে ইচ্ছে করে ডুব দিয়ে বসে থাকি।
‘জলেতে মন বান্ধি আমি, জলেতে থুই হিয়া
পিরীত করে মৎস্য কইন্যা জলেতে ডুব দিয়া।’
আকাশে হলদে চাঁদ।চাঁদের আলোয় দীঘির জলেও হলদেটে ভাব এসে গেছে। দীঘিটার পাড় বাধানো। একদম জল ছুঁই ছুঁই সিঁড়িটায় একটা মার্বেলের দেবশিশু উবু হয়ে দীঘির পানিতে চুমুক দিচ্ছে। মনে হচ্ছে এই বুঝি পরে যাবে। দেবশিশুর মা এসে তাকে ধরে ফেলবে। ‘দুত্তুপাখিটা এতো দূর আসলো কী করে।আমার জানু পাখিটা কি করে? পানির অত কাছে যায় না বাবু সোনা।’ হাসান সেই দৃশ্য উপভোগ করতে থাকবে। হাসানের মনে হবে দেবশিশুকে ছুঁয়ে দেয়। সে যতোই সাঁতরে ঘাটের কাছে যেতে চাইবে, দীঘিটা ততোই বড় হতে থাকবে। তবু সে প্রাণপন দীঘির পানিতে হাত চালাতে থাকবে। একসময় ক্লান্ত হবে। দীঘির হলদেটে পানিতে হাবুডুবু করতে করতে অনেকখানি পানি খেয়ে ফেলবে। এ পর্যায়ে মুখে জমে থাকা থুথু এক ঢোকে ভিতরে ঢুকে যাবে। হাবুডুবু করতে হবে ইন্টারভ্যুয়ের ডাক শোনার ঠিক পর মূহুর্তে।
‘এক্সকিউজ মি, আপনি কি হাসান সাহেব, ম্যাডাম আপনাকে ভেতরে যেতে বলেছেন।’
চলবে…..
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই আগস্ট, ২০০৯ ভোর ৬:০৪