ছোট বেলা থেকেই আমি একটু ইমোশনাল। কবিতা-টবিতা লিখি । কলেজে এসে ভাবলাম পড়াশুনা বন্ধ করে খালি কবিতা লিখব আর বজরায় করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মত ঘুরে বেড়াব । তখন খুব কাছের বন্ধু নয়ন বুদ্ধি দিল বজরায় যেন নাচ-গানের ব্যবস্থা রাখি তাহলে সেও সাথে যাবে। যেই ভাবা সেই কাজ, শুরু করে দিলাম যোগার যন্ত্র , লিখে ফেল্লাম বজরা উদ্বোধনী কবিতা । ঠিক সেই সময় ফ্যাক্ট এসে বাধা হয়ে দাড়ালো।বাবা আমাকে কলেজ যাবার জন্য প্রতি সপ্তাহে দুই টাকা দিতেন যখন একটা গোল্ড-লিফের দাম আড়াই টাকা, কলেজে যাওয়া আসার ভাড়া বারো টাকা। আমি মাঝে-মধ্যে টিউশনি করি নিজের স্বাধের কাজ গুলা করার জন্য । এত ঘাত -প্রতিঘাতের মধ্যে টাকা জমিয়ে বজরা কেনা একটু কঠিন হয়ে যাচ্ছিল। তখন নয়ন বুদ্ধি দিল বজরা বাদ দিয়ে ট্রাক নিয়ে চিন্তা ভাবনা করার জন্য । আমি ড্রাইভার আর ও হেল্পার, আমরা সারা দেশ বজরার বদলে ট্রাকে ঘুরে বেড়াব , বলা বাহুল্য তখন নয়নের কথা আমি খুব গুরত্ব দিয়ে শুনতাম, ও শুধু আমার বন্ধুই ছিলনা বরং সোনালী-পাতার নিয়মিত যোগানদাতাদের একজন ছিল। যেই ভাবা সেই কাজ, যোগার করে ফেল্লাম একটা দুই-নম্বর ড্রাইভিং লায়সেন্স আর আমি স্কুলে থাকতেই চাচার গাড়ি দিয়ে ড্রাইভিং শিখে ফেলেছিলাম । আমাদের প্রিপারেশন যখন জোর কদমে চলছিল এবং আমরা চেষ্টা করছিলাম বন্ধু শিপলু আর এমরানকে বেপারটার সাথে সম্পৃক্ত করতে , তখনি একটা দুর্ঘটনা ঘটল , এক স্নিগ্ধ বিকেলে নয়নের বাবা নয়নকে ডেকে " ভাদাইম্মা " বলে গালি দিলেন। এর পর থেকেই নয়ন প্ল্যান থেকে সরে গেল। আমি ওকে অনেক বুঝলাম যে তর বাবা স্পেল্লিং মিসটেক করছে , শব্দটা আসলে " ভাদাইম্মা " না বরং বাদাইম্মা হবে যার মানে অনেকটা পাল-তোলা নৌকার মতো সুন্দর , ফুরফুরে। কিন্তু সেদিনের পর থেকে ও আর স্বাভাবিক হলনা, উঠে পরে পড়াশুনা শুরু করে দিল, তিন-চারটা টিচারের কাছে যাওয়া শুরু করলো । দেখা শাখ্খাত কমতে শুরু করলো। কলেজ শেষ করে নয়ন -শিপলু চলে গেল বাঙ্গালোরে পড়াশুনা করতে। আমি যেতে পারলামনা কারন তখনও আমার জন্য সপ্তাহে বরাদ্দ দুই টাকা। পড়াশুনা শেষ করে এমরান চলে গেল অস্ট্রেলিয়া, নয়ন থেকে গেল ইন্ডিয়ায়, শিপলু দেশ এ আসল কিন্তু যোগাযোগ কমে গেল। সবাই বিয়ে করলো, ব্যস্ত হয়ে গেল জীবন নিয়ে।
যে যেখানেই থাকুক সারমর্ম হলো আমাদের যোগাযোগ কমে গেল, বলা চলে তেমন যোগাযোগ নেই । মাঝে মাঝে এমরান ফোন করে, দোষারোপ করে কেন আমি সবার সঙ্গে যোগাযোগ করিনা। কালে ভদ্রে শিপলুর সাথে দেখা হয়। নয়নের সাথে কোনো যোগাযোগ হয়না। প্রায় বছর দশেক পর কদিন আগে নয়ন whatsapp এ টেক্সট পাঠিয়েছে ( দশ বছর পর ) , " দোস্ত কেমন আছিস " ........./ ভালো নাইরে দোস্ত। জীবন অনেক বদলে গেছে। স্বপ্ন গুলা একেকরকম রকম হয়ে গেছে। কবিতার অর্থ, ধরন পাল্টে গেছে। অনেক খুজেও এখন রুগ্ন - স্বপ্নবাজ ছেলে টাকে পাইনা। তার জায়গা দখল করে নিয়েছে ১৬৫ পাউন্ড ওজনের চিন্তা-চেতনায় স্থবির এক জম্বি।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:৫২