২০০৯ সালের জুন মাসে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠনের ৯ মাস পূর্বে আমি জেনেভাস্থ জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের অফিসে গিয়েছিলাম। সেখান থেকে শুনলাম মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান মিস নেভী পিলে সপ্তাহ দু-এক আগে বাংলাদেশ সরকারের কাছে লিখিত একটি পত্রে এই মর্মে তার উদ্বেগের কথা জানিয়েছিলেন যে, ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইনের আওতায় অভিযুক্তদের সুবিচার নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। মিস পিলে একজন প্রথম সারির আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞ। তিনি রুয়ান্ডার যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের একজন অন্যতম বিচারক ছিলেন। বাংলাদেশ ডেস্ক অফিসারের কাছে ঐ চিঠির কপি চাইলে তিনি তা প্রদানে অপরাগতা প্রকাশ করেন। বাংলাদেশ সরকার ঐ চিঠি জনসমক্ষে প্রকাশ করেনি। রেনেটার কাছ থেকেও চিঠির কপি পাইনি।
যুদ্বাপরাধীদের বিচার শুরু হতে পারে এই আশংকায় ২০০৯ সাল থেকেই মামলার প্রস্তুতি গ্রহণ করছিলাম। একজন আইনজীবীর প্রথম এবং প্রধান কাজ হল আইনের চুলচেরা বিশ্লেষণ। এই লক্ষ্যে বিশ্বের সেরা আইনজীবীদের মতামত নিতে শুরু করলাম। সর্বমোট ৫ জন বিদেশি আইন বিশেষজ্ঞের কাছ থেকে মতামত নিলাম। তারা হলেনঃ বৃটেনের প্রখ্যাত সংবিধান বিশেষজ্ঞ মাইকেল বেলফ, কিউ.সি.। বাংলাদেশের সংবিধান, আইন এবং বিচার ব্যবস্থা সম্পর্কে মাইকেল আগে থেকেই অবহিত ছিলেন। দুই দশক পূর্বে অধ্যাপক গোলাম আযমের নাগরিকত্ব মামলায় তিনি ছিলেন বিদেশস্থ আমাদের প্রধান কৌশলী; মিঃ সলী জে সোরাবজী (ভারতের বর্ষীয়ান সিনিয়র আইনজীবী এবং এক সময়ের নামকরা এটর্নি জেনারেল), প্রফেসর উইলিয়াম শাবাজ, আয়ারল্যান্ডের গ্যালওয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালের অধ্যাপক এবং মানবাধিকার আইন বিশেষজ্ঞ; গ্রেগার গাই স্মিথ, আমেরিকান নাগরিক এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ আইন বিশেষজ্ঞ। তাদের সবার মতামতঃ ১৯৭৩ সালের আইন দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক মানদন্ডের অনেক নিচে এবং এই আইনের আওতায় সুবিচার সম্ভব নয়। তাছাড়াও ৮০ বছরের বেশি বয়োজ্যেষ্ঠ অস্ট্রিয়ান নাগরিক প্রফেসর ওটো টিফটারার, যিনি সলজবার্গ বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুষদের প্রাক্তন ডীন এবং ১৯৭৩ সালের আইন প্রণয়নের সাথে জড়িত ছিলেন, তার কাছ থেকে একটা মতামত নিয়েছিলাম আইনটির ঐতিহাসিক পটভূমি বুঝার জন্য।
২০১০ সালের মার্চ মাসে ট্রাইব্যুনাল গঠিত হবার পর বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করল। সবাই এক বাক্যে বিচারের পক্ষে অবস্থান নিল। কিন্তু শর্ত একটি ঃ বিচার স্বচ্ছ ও আন্তর্জাতিক মানের হতে হবে। প্রথম উদ্যোগ নিলেন বৃটিশ লর্ডসভার বর্ষীয়ান সন্মানিত সদস্য এবং বাংলাদেশের একনিষ্ঠ বন্ধু লর্ড এরিক এইভারী। তার উদ্যোগে আন্তর্জাতিক বার এসোসিয়েশনের যুদ্ধাপরাধ কমিটি ডিসেম্বর, ২০০৯ সালে একটি মতামত দেয়। এই মতামতে তারা ট্রাইব্যুনালের আইনের ১৪টি ত্রুটি বিচ্যুতি তুলে ধরেন। তারপর একে একে বাংলাদেশ সরকারের কাছে চিঠি লিখেন যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ রাষ্ট্রদূত স্টিফেন জে র্যাপ (২১ মার্চ ২০১১), ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ট্রানজিশনাল জাস্টিস (১৩ মার্চ ২০১১), হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (১৮ মে ২০১১) এবং অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল (২১ জুন ২০১১) । তারা সকলেই আইনের ত্রুটি তুলে ধরে পরিবর্তনের আহ্বান জানান। অন্যথায় বিচার প্রশ্নবিদ্ধ হবে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না বলেও জানিয়ে দেন। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এই মনোভাব বাংলাদেশ সরকারের উপর কোন ধরনের প্রভাব ফেলতে ব্যর্থ হয়। যুদ্ধাপরাধ বিষয়ক আইন একটি অত্যন্ত জটিল আইন। এই আইন আন্তর্জাতিক আইনের একটি অংশ। এই কারণেই সম্ভবত ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ সরকার বলেছিল অভিযুক্তরা ইচ্ছা করলে বিদেশি আইনজীবী নিয়োগ করতে পারবেন।
২০১১ সালে, আমরা তিনজন নামকরা বৃটিশ যুদ্ধাপরাধ আইন বিশেষজ্ঞকে বাংলাদেশে আনতে চেয়েছিলাম ডিফেন্স আইনজীবী হিসাবে। আমাদেরকে এই সুযোগ দেয়া হয়নি। দেশীয় আইনজীবীদের নিয়ে আমরা মোটামুটি একটি শক্তিশালী ডিফেন্স টিম গঠন করেছি। যারা লন্ডনস্থ আমাদের তিনজন আইনজীবীর কাছ থেকে প্রতিনিয়ত সহযোগিতা পেয়ে আসছেন। তারপরেও আন্তর্জাতিক মানের ডিফেন্স প্রদানে আমাদেরকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষ কোন সময়ই প্রসিকিউশন টিমকে শক্তিশালী করা কিংবা বিদেশি আইনজীবী নিয়োগের কোন উদ্যোগ নেয়নি। এটা রহস্যজনক । এই রহস্য হয়ত একদিন উদ্ঘাটিত হবে।
১৯৪৫ সালে গঠিত নুরেমবার্গ এবং টোকিও ট্রাইব্যুনাল ছিল মিলিটারি ট্রাইব্যুনাল। নুরেমবার্গের প্রায় ৫০ বছর পর বসনিয়া যুদ্ধ চলাকালে ১৯৯৩ সালে জাতিসংঘের সনদ অনুযায়ী নিরাপত্তা কাউন্সিলের সিদ্ধান্তক্রমে গঠিত হয় প্রাক্তন যুগোশ্লাভিয়া সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল। পরবর্তীতে ১৯৯৪ সালে গঠিত হয় রুয়ান্ডা ট্রাইব্যুনাল, ১৯৯৮ সালে গঠিত হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত বা আইসিসি (বাংলাদেশও এই আদালতের সদস্য), ১৯৯৯ সালে পূর্ব তিমুর, ২০০০ সালে সিয়েরালিয়ন, ২০০১ সালে কম্বোডিয়া এবং ২০০৭ সালে লেবাননের বিশেষ ট্রাইব্যুনাল। নুরেমবার্গ এবং টোকিও ছাড়া বাকি সকল ট্রাইব্যুনালে ১৯৪৮ সালের আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সনদ এবং ১৯৬৬ সালের ইন্টারন্যাশনাল কনভেন্টস অন সিভিল এবং পলিটিক্যাল রাইটস স্বীকৃতি পায়। কারণ নুরেমবার্গ এবং টোকিওর সময় ঐ দুটি সনদ গৃহীত হয়নি।
বাংলাদেশের ট্রাইব্যুনাল আইনে একজন অভিযুক্তের মৌলিক অধিকার এবং সাংবিধানিক অধিকার স্বীকৃত নয়। সংবিধানের প্রথম সংশোধনীর মাধ্যমে এই সকল অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে। (২০১২ সালের মাঝামাঝি সময়ে আমি একদিন ট্রাইব্যুনালে বক্তব্য রাখছিলাম, তখন একজন মাননীয় বিচারক আমাকে বললেনঃ মৌলিক মানবাধিকারের বিচারে আপনার মক্কেলতো বাংলাদেশের একজন তৃতীয় শ্রেণীর নাগরিক। তিনি যথার্থই বলেছিলেন।) এখানেই হচ্ছে বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধ আইনের সাথে আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ আইনের সংঘর্ষ। এ কারণেই এবং কোন ব্যতিক্রম ছাড়াই, আন্তর্জাতিক সমপ্রদায় বাংলাদেশের আইন সম্পর্কে সর্বদা সমালোচনামুখর। আর যারা বাংলাদেশের আইনে বিচার কার্য পরিচালনা করতে বদ্ধপরিকর তারা নুরেমবার্গ পরবর্তী বিগত অর্ধশতাব্দীরও বেশি সময়ের আইনের বিকাশকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা এবং অগ্রাহ্য করেছেন। যা বাস্তবতা বিবর্জিত এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে অগ্রহণযোগ্য। ফলস্বরূপ বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে বাংলাদেশের ট্রাইব্যুনাল সম্পূর্ণ বিতর্কিত। তারপর ডিসেম্বর মাসে বৃটিশ সাময়িকী 'দি ইকনমিস্ট' এবং 'আমার দেশ' পত্রিকায় প্রকাশিত স্কাইপ কেলেংকারিতে বিচারক, রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁশুলী এবং মন্ত্রীদের যোগসাজশ জনসমক্ষে প্রকাশিত হবার পর পশ্চিমা বিশ্বে ট্রাইব্যুনালের সর্বশেষ বিশ্বাসযোগ্যতাটুকুও হারিয়ে গেছে।
মুসলিম বিশ্বেও এই বিচার বিতর্কিত । ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তুরস্কের প্রেসিডেণ্ট আব্দুল্লাহ গুল এবং ঐ বছরের নভেম্বর মাসে প্রধানমন্ত্রী এরদোগান তাদের সফরকালে বাংলাদেশ সরকারকে বলেছিলেন ঃ "যুদ্ধাপরাধের বিচার আপনাদের কাজের মধ্যে প্রাধান্য ১পাওয়া উচিত নয়"। ২০১২ সালের এপ্রিল মাসে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী আঙ্কারা সফর করেন। এই সফরকালে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের একান্ত একটি বৈঠকের বেশিরভাগ সময় জুড়ে স্থান পায় যুদ্ধাপরাধ বিচার সম্পর্কিত বিষয়টি। এরপর প্রধানমন্ত্রী ইউ.এস.-ইসলামিক ওয়ার্ল্ভ্র ফোরামের আমন্ত্রণে কাতার সফর করেন। তাঁর ঐ সফরকালে বিভিন্ন দেশের ইসলামী নেতৃবৃন্দ কাতারের প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর কাছে তাদের অসন্তোষের কথা প্রকাশ করেন। অত্যন্ত বিশ্বস্ত সূত্রে আমরা এই বিষয়গুলো জানতে পেরেছি।
গত বছরের ডিসেম্বর মাসে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশের প্রেসিডেন্টের কাছে লিখিত একটি চিঠিতে অধ্যাপক গোলাম আযমের বিচার না করার অনুরোধ জানালে দু'দেশের মধ্যে কূটনৈতিক টানা-পোড়েনের সৃষ্টি হয়, একথাতো সবার জানা। কায়রোতে অনুষ্ঠিত বিগত ওআইসি সম্মেলনেও অনেক দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে বিষয়টি উপস্থাপন করেছিলেন। এই বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ও.আই.সি সেক্রেটারি জেনারেল এবং মালয়েশিয়ার বিরোধী দলীয় নেতা আনোয়ার ইব্রাহিম ২রা মার্চ তিউনিশিয়ার ক্ষমতাসীন দল আন্নাহাদা পার্টির নেতা রাশেদ ঘানুশি ট্রাইব্যুনালের সমালোচনা ও দেলওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুদন্ডের রায়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। যতটুকু জানা যায় সউদী আরব তাদের উদ্বেগের কথা বাংলাদেশের কাছে ব্যক্ত করেছে। সুতরাং নিঃসন্দেহে বলা যায় মুসলিম বিশ্বের বিরাট অংশ জুড়ে এই বিচার প্রশ্নবিদ্ধ।
৫ ফেব্রুয়ারি ট্রাইবুনাল জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। তারপর শাহবাগ থেকে মৃত্যুদন্ডের দাবি ওঠে। ২৮ ফেব্রুয়ারি ট্রাইব্যুনাল জামায়াতের নায়েবে আমীর মাওলানা দেলওয়ার হোসেন সাঈদীকে মৃত্যুদন্ড প্রদান করেন। শুরু হয় দেশব্যাপী প্রতিবাদ, বিক্ষোভ। কোথাও কোথাও তা হয়েছে সহিংস। বিগত দিনগুলিতে কমপক্ষে ১৫০ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। পুলিশ প্রয়োগ করেছে অতিরিক্ত শক্তি, চালিয়েছে নির্বিচারে গুলি। কোটি কোটি টাকার সরকারি-বেসরকারি সম্পত্তি বিনষ্ট হয়েছে। জনমনে আতংক, অনিশ্চিত ভবিষ্যত্ । বাংলাদেশে এখন শুধু আগুন জ্বলছে আর রক্ত ঝরছে।
এমতাবস্থায় আরো দু-একটি রায় ঘোষিত হলে বা বাস্তবায়িত হলে দেশব্যাপী অস্তিরতা এবং সহিংসতা বাড়বে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকগণ মনে করেছেন। ৯ মার্চের বৃটিশ সাময়িকী 'দি ইকনমিস্টে' প্রকাশিত সংবাদের হেডলাইন হচ্ছে ঃ "অশান্ত বাংলাদেশ, একটি বিভক্ত জাতি ঃ একটি ত্রুটিযুক্ত ট্রাইব্যুনাল পুরাতন ক্ষত উন্মুক্ত করেছে এবং দেশকে ঠেলে দিচ্ছে হুমকির মুখে।"
প্রতিটি যুদ্ধাপরাধের বিচারের উদ্দেশ্য হয় অতীতের একটি অধ্যায়ের অবসান ঘটিয়ে নতুন অধ্যায়ের সৃষ্টি করা। জাতীয় ঐকমত্য তৈরি করা। নুরেমবার্গ থেকে যুগোম্লাভিয়া, রুয়ান্ডা থেকে আই.সি.সি, পূর্ব তিমুর থেকে সিয়েরালিয়ন বা কম্বোডিয়া পর্যন্ত হয়েছেও তাই। কিন্তুু বাংলাদেশের বর্তমান ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে এই লক্ষ্য অর্জন যে কোনভাবেই সম্ভব নয় তা দিবালোকের মত স্পষ্ট। যে বিচার প্রক্রিয়া আন্তর্জাতিক সমপ্রদায় সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে, যে বিচার মুসলিম বিশ্বে প্রশ্নবিদ্ধ, যে বিচার নিয়ে দেশ ও জাতি বিভক্ত, সেই বিচারের মাধ্যমে সাময়িকভাবে হয়ত কোন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিল হতে পারে কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে এই বিচার দেশ ও জাতির জন্য কোন কল্যাণ বহন করে আনতে পারে না। ইতিমধ্যে ৪ মার্চে প্রকাশিত এক বিবৃতির মাধ্যমে ইংল্যান্ড বারের মানবাধিকার কমিটি বর্তমান বিচার কার্য স্থগিত করে আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়ের উদ্বেগের ব্যাপারে একটি নিরপেক্ষ তদন্তের আহবান জানিয়েছে। ১৮ই মার্চ ব্রিটিশ হাউস অফ কমন্সে অনুষ্ঠিত "বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের উপর আলোকপাত" শীর্ষক এক আলোচনা সভায় যুদ্ধাপরাধ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত স্টিফেন জে র্যাপ অবিলম্বে এই বিচার কার্যক্রমে ন্যায্যতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছেন। রাষ্ট্রদূত র্যাপ আরও বলেছেন, বিচারের পূর্বে সব দলের মধ্যে একটি সমঝোতায় পৌঁছানো সম্ভব হলে রায়-পরবর্তী প্রতিবাদ ও বিতর্ক এড়ানো সম্ভব হত।
এমতাবস্থায়, একমাত্র সমাধান হচ্ছে আইনকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করা এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সম্পৃক্ত করে বিচার কার্য পরিচালনা করা। অবশ্য এই জন্য প্রয়োজন জাতীয় ঐকমত্য। এতে কোন পক্ষেরই আপত্তি থাকার কথা নয়। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি তো এই প্রস্তাবের পক্ষে। জামায়াতে ইসলামীর এই প্রস্তাবে রাজি হওয়ার উচিত। এখন সরকার এই প্রস্তাবে রাজি হলে জাতীয় ঐকমত্যের সৃষ্টি হয়। কিন্তুু প্রশ্ন হল সরকারের মনোভাবের কি পরিবর্তন হবে? সরকারের মনোভাবের পরিবর্তন না হলে এই বিচার যে জাতিকে আরো বিভক্ত করবে এবং বাংলাদেশকে বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দিবে তাতে বোধহয় কোন সন্দেহ নেই।
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক
লেখক :বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী এবং ডিফেন্স টিমের প্রধান