বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকরণ যেকোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্যই একটি গর্বের বিষয়। কিন্তু বাংলাদেশের অনেক বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকরণ কি সত্যিকরার্থেই অর্থপূর্ন? প্রথমে লক্ষ্য করি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম কিভাবে করা হয়? - সাধারণতঃ যে স্থানে বিশ্ববিদ্যালয়টির মূল ক্যাম্পাস থাকে সেখানকার নাম অনুসারে হতে পারে। (যেমনঃ অক্সফোর্ড শহরের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা কানাডার ব্রিটিশ কলম্বিয়া রাজ্যের ব্রিটিশ কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় (UBC)) । রাজ্যের নাম অনুসারে ও দেশের নাম অনুসারেও নামকরণ হতেই পারে।
- কোন বিখ্যাত ব্যক্তির নামে হতে পারে (যেমনঃ স্যার জন মনাশ এর নাম অনুসারে অস্ট্রেলিয়ার মনাশ বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশের শাহজালাল সাইন্স এন্ড টেকনলজী বিশ্ববিদ্যালয়)
এবারে বাংলাদেশের বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকরণগুলো দেখি-
World University of Bangladesh - বাংলাদেশের বিশ্ব বিশ্ববিদ্যালয় । (মন্তব্যঃ নিশ্প্রয়োজন)
City University - শহর বিশ্ববিদ্যালয় (মন্তব্যঃ কোন শহরের বিশ্ববিদ্যালয়? এরকম নামের বিশ্ববিদ্যালয় অবশ্য আছে London Metropolitan University অথবা City University of Newyork)
Stamford University, Bangladesh- আমেরিকার কানেকটিকাট নামের রাজ্যের শহর স্ট্যামফোর্ড। সেই শহরের নামে বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশে!) এছাড়াও Nebraska, New York, Texas, Vermont এ এই নামের জায়গা আছে। এমনকি যুক্তরাজ্যেও লিংকনশায়্যার ও লন্ডনে এই নামে স্থান আছে। কিন্তু বাংলাদেশের স্ট্যামফোর্ড বলে কোন শহর, গ্রাম বা কিছু নেই। উল্লেখ্য আর্ল অব স্ট্যামফোর্ড একটি অতি পুরাতন ইংরেজ উপাধি (http://en.wikipedia.org/wiki/Earl_of_Stamford) ও স্যার স্ট্যামফোর্ড (http://en.wikipedia.org/wiki/Stamford_Raffles) সিংগাপুর শহরের গোড়াপত্তন করেন। যদি একারণে তাদের নামে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম এমনটি রাখা হয় তাহলে বলা যেতে পারে বাংলাদেশে কি মহান কোন ব্যক্তি পাওয়া যায়নি?)
State University Of Bangladesh- বাংলাদেশের রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয়। (মন্তব্যঃ কোন রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়? বাংলাদেশ রাজ্যময় হলো কবে থেকে? এরকম নামের বিশ্ববিদ্যালয় অবশ্য আছে State University of California কিন্তু সেটিতো আমেরিকা রাজ্য আছে বলেই। আর তাছাড়া, সাধারণঃ স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সরকার পরিচালিতই হয়ে থাকে।)
Victoria University of Bangladesh - এই ভিক্টোরিয়া একজনই হতে পারেন এবং তিনি হলেন ইংল্যান্ড এর রানী। ব্রিটিশ শাসন তো শেষ। আমরাও কানাডা কিংবা অস্ট্রেলিয়ার মতো ইংল্যান্ডের কাছে দ্বায়বদ্ধ নই (Victoria University, Canada ও Australia খুব নাম করা দুই বিশ্ববিদ্যালয়)। তাহলে তাঁর নামে বাংলাদেশে কেন বিশ্ববিদ্যালয়?
Northern University Bangladesh- বাংলাদেশের উত্তরীয় বিশ্ববিদ্যালয়। (মন্তব্যঃ আসলে কি তাই? এর মূল ক্যাম্পাস কাওরান বাজারের কাজী নজরূল ইসলাম রোডে এবং আগে ছিল মোহম্মদপুরের ইকবাল রোডে। বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে অর্থাৎ রাজশাহীতে নয়। তবে রাজশাহীতে এদের একটি শাখা ক্যাম্পাস রয়েছে। মনে হয় না সেই মহান ক্যাম্পাসটির কারনে এর নাম রাখা হয়েছিল)
Eastern University- পূর্বীয় বিশ্ববিদ্যালয়। অবস্থান ধানমন্ডিতে। বাংলাদেশের পূর্বে নয়। তবে বাংলাদেশ বিশ্বের পূর্বে এই চিন্তা করলে মন্তব্যঃ নিশ্প্রয়োজন।
Green University of Bangladesh- বাংলাদেশের সবুজ বিশ্ববিদ্যালয়। (ফার্মগেইটের ওভারব্রিজের পাশে বাসস্টপেজের সঙ্গে এই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে (পুরাতন) বাংলাদেশের সবুজের যদি কোন চিহ্ন পাওয়া যেত তাহলে এই নামটি আসলেই সুন্দর হতে পারতো। তবে কাফরুলে প্রস্তাবিত নতুন ক্যাম্পাসের দেয়ালের রং অবশ্য সবুজ!)
North South University- উত্তর-দক্ষিণ বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোগ্রামে উত্তর-দক্ষিণ মেরূর ছবি আছে। অবস্থান বনানীতে। মেরূতে নয়। তবে জ্ঞানের উত্তর-দক্ষিণ বোঝালে মন্তব্যঃ নিশ্প্রয়োজন।
East West University- পূর্ব-পশ্চিম বিশ্ববিদ্যালয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোগ্রামেও কোন একটি মেরূর ছবি আছে। অবস্থান আপাততঃ মহাখালীতে। বিশ্ববিদ্যালের বক্তব্য অনুসারে, এখানে ইষ্টার্ন কালচারে ওয়েষ্টার্ন শিক্ষা দেওয়া হয়- তাই এই নাম। তবে কৌতুহলী জনতা সন্দেহ করতেই পারেন যে, নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম দেখে নামটি রাখা হয়েছিল কিনা? এর অধিক মন্তব্য নিশ্প্রয়োজন।
Southeast University- দক্ষিণ-পূর্ব বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু মূল ক্যাম্পাস বাংলাদেশের দক্ষিণেও নয়, পূর্বেও নয়। তবে মনে হয় নর্থসাউথ, ইষ্টওয়েস্ট এর পর আর দিক কম্বিনেশন এটিই হতে পারে! নাম দেখে নাম রাখার হাস্যকর প্রতিযোগিতার আরও এক দৃষ্টান্ত।
American International University Bangladesh- আমেরিকীয় আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ। মালিকানা আমেরিকান সরকারের নয়। এমনকি আমেরিকার দেশের সরকারের সাথে যুক্তও নয়। নিজের দেশের বিশ্ববিদ্যলয়ে অন্য কোন দেশের নাম জুড়ে দেওয়া এক ধরণের হীন মন্যতা হতে পারে যদি সেই দেশটি হয় আরো উন্নত।
Daffodil International University- ডেফোডিল শীত প্রধান দেশের ফুল। বাংলাদেশ এটি ফোঁটে না। বাংলাদেশের বাংলা ফুলের (যেমন- শাপলা, পদ্ম্, রজনীগন্ধা, গোলাপ, গান্ধা) নামে রাখলে মনে হয় আর বড় মনের পরিচয় হতো। কিন্তু চলতো না।
এমন অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের উদাহরণ দিতে পারবো যারা শুধুমাত্র নাম কনফিউসন করে বলে পরিবর্তন করেছে। যেমন Newcastle University Australia ও Newcastle University Upon Tyne । ২য়টির (ইংল্যান্ডে অবস্থিত) নাম আগে শুধুমাত্র নিউক্যাসল বিশ্ববিদ্যালয়ই ছিল। কিন্তু ১মটির সাথে দ্বন্দ্ব করে বলে পরিবর্তন করে আপন টাইন শব্দ যোগ করে নিয়েছে।
আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম যদি অন্যদেশের হাসির খোরাক হয় তবে সেটি নিশ্চয়ই অনেকেরই নিশ্চয়ই ভাল লাগবে না।
সবশেষে অহেতুক কৌতুহল বসেই এই লেখার অবতারনা। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের মান যাচাই করা বা পরিচিতি তুলে ধরা এই লেখার উদ্দেশ্য নয়। কথায় আছে, নামে কিবা আসে যায়! কথাটি যে সত্য তা আমরা সবাই জানি। এই লেখায় এমন অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম এসেছে যেখান থেকে পাশ করে গ্র্যাজুয়েটরা বিশ্বের নামী বিশ্ববিদ্যালয় ও কোম্পানীতে আছেন। তাই যে যেখানেই পড়ুক না কেন, সকলের সাফল্য কামনা করি।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই অক্টোবর, ২০১০ রাত ৮:৩৪