ফেইসবুক!!!! কি একখান ওয়েবসাইট বানাইছে। এক্কেরে আমার প্রাণের ওয়েবসাইট । ক্য়দিন ব্যবহার কইরাই প্রেমে পড়লাম। অলটাইম আমারে ফেইসবুকে পাওয়া যায়। কয়েকদিনেই প্রায় শ'খানেক এপ্লিকেশন ব্যবহার করলাম আর ২শ গ্রুপে জয়েন করলাম। তখনকার দিনের কথা মনে হইলে এখনও আমার মনটা হু হু করে। কি দিন কাটাইছি ফেইসবুকের সাথে। হায় আল্লাহ!!! ফেইসবুকটারে তুমি কেন মাইয়্যা মানুষ কইরা জন্ম দিলানা? দিলে ফেইসবুক বুঝত প্রেম কারে কয়।
একদিন পিসিতে আমার তৎকালীন প্রেমিকা অর্থাৎ ফেইসবুক ব্যবহার করছি। হঠাৎ.. একজনের প্রোফাইল পিকচার দেখলাম। ইয়া আল্লাহ। তুমি যা কর ভালোর জন্যই কর। ফেইসবুকরে মাইয়্যা বানাইলে তো আমি আর এর সাথে প্রেম করতে পারতাম না (এই ফাকে বলে রাখি আমি খুবই ভালো ছেলে। একসাথে ২টা মেয়ের সাথে কখনোই প্রেম করি না।)। আল্লাহ! তোমারে আর তোমার উসিল্লারে ( যে বেটা ফেইসবুক বানাইছে) অশেষ ধন্যবাদ ফেইসবুকরে ওয়েবসাইট আর এই মাইয়্যাটারে মাইয়্যা বানানোর জন্য।
মানুষ এত সুন্দর হয় কেমনে?- মেয়েটার প্রোফাইল পিকচার দেখার পর বারবার আমার এইকথাটাই মনে হচ্ছিল। ফেইসবুকে অনেক মিথ্যা বা ফেইক একাউন্ট আছে- এটা জানা সত্যেও আমার মনে হল- ''এই ছবি আর এই নাম দিয়ে কেউ যদি ফেইক একাউন্ট তৈরি করে তবে সে সমস্ত জাতির সাথে বেঈমানী করেছে। এইটা কোনভাবেই ফেইক একাউন্ট হতে পারে না।"
শেষ পর্যন্ত আমার অনুমানই সত্য হয়েছিল।
ভাবলাম, দেখি বিড়ালের ভাগগে শিঁকে ছিড়ে কিনা। প্রথমেই ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট না পাঠিয়ে একটা মেসেজ পাঠালাম- "You are looking so innocent". মেসেজটা পাঠানোর পর আমার যে কি অবস্থা!! (কানে কানে সত্য কথাটা বলে নেই- রাতে ঘুমাতে পারি নাই)। রাত ৩টায় পিসি বন্ধ করে বিছানায় গেলাম। বিছানায় কি আর ঘুম আসে। বিছানায় যদি মনই না থাকে তবে ঘুম আসবে কোথ্থেকে। মনতো আমার ১ম প্রেমিকার কাছে থাকা ২য় প্রেমিকার কাছে। ৫ মিনিট পর পর মোবাইলে ফেইসবুকে লগ ইন করি-মেসেজের উত্তর এসেছে কিনা। ২২ ঘন্টা ১০ মিনিট আমার হৃদয় রক্তাক্ত করে উত্তর আসল। গভীর ভালবাসায় মেসেজের দিকে তাকিয়ে থাকলাম। অনেক্ষণ মেসেজটা অপেন করলামনা। পড়লেইতো ফুড়িয়ে যাবে। মেসেজটা অপেন করলাম। অপেন করেই হৃদয়টা আবার রক্তাক্ত হয়ে গেল। কারণ, মেসেজটাতে যা লিখা ছিল তা হচ্ছেঃ tnx. এরকম কষ্ট জীবনে বড় কম পেয়েছি। বদ মেয়েছেলে! ২টা লাইন আরেকটু বেশি লিখলে কি এমন ক্ষতি হত? এত ভালোবাসা নিয়ে আমি আমার মেসেজটা পাঠালাম,আর সে কিনা.......
অনেক চিন্তা-ভাবনা করে ২য় মেসেজটা পাঠালামঃ May I add you.
মেসেজটা পাঠানোর পর আবার কি অবস্থা হয়েছিল সেটা আর বললাম না। কিন্তু একদিন পর যেটা হইল.......। আমার মেসেজের বিপরীতে কোন মেসেজ এলো না। কিন্তু তার বদলে যা হলো সেটা শুধু আমার মনে আব্দুল করিমের একটা গান বারবার মনে করিয়ে দিলঃ
প্রেম সেলপিন দিল বুকে, প্রেম সেলপিন দিল বুকে মরি হায় হায়
আমার অন্তরায়, আমার কলিজায়।
মেসেজের প্রত্তুত্তরে আমি যা দেখে প্রেমে পাগলপারা হয়েছিলাম- সেই প্রোফাইল পিকচারটা পরিবর্তিত হয়ে এই আকার ধারণ করল।
এখন আপনারাই বলেন, এই অবিচার কি মেনে নেয়া যায়। না যায় না। চিন্তা করলাম গম্ভীর কিছু লিখে পাঠাই। আমি দেখেছি আমার গম্ভীর কথায় প্রায়ই কাজ হয়। যেই ভাবা সেই কাজ। লিখলামঃ 'অ্যাড করতে বলায় প্রোফাইল পিকচার সরিয়ে ফেললেন না সুন্দর বলায় সরিয়ে ফেললেন। যদি অ্যাড করতে বলায় এ কাজটি করে থাকেন তাহলে আমার কিছু বলার নেই। আর আমাকে অ্যাড করার দরকার নেই। আর যদি সুন্দর বলায় এ কাজটি করে থাকেন তাহলে আমি আপনার উপর রাগান্বিত। যদিও জানি আপনার উপর রাগ করার আমার কোন অধিকার নাই। আমি রাগান্বিত কারণ আমি বিশ্বাস করি একজন সুন্দর মানুষকে সুন্দর না বলা অপরাধ। ভালো থাকবেন।'
এই মেসেজটাতেই চিড়া ভিজল। একদিন পরেই এলো সেই বহু আকাংক্ষিত ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট। সাথে সাথেই কনফার্ম।
''এই সুজ....ন! এদিকে আয়।"
ইশ! আম্মুটা না কি বিরক্ত করে। ১ম প্রেমিকাকে বন্ধ করে গেলাম। গিয়ে দেখি অবস্থা সিরিয়াস। কাহিনীর সাথে সম্পর্ক নাই বলে কেন সিরিয়াস সেটা আর লিখলাম না। যেতে হলো নানা বাড়ি। নানা বাড়ি আবার পিসি নাই। তাই মোবাইল-ই ভরসা। নানা বাড়িতে বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকায় ফেইসবুকও বেশি ব্যবহার করতে পারলাম না। তবে এর মাঝেই চলল আমাদের পিচ্চি সাইজ মেসেজ আদান-প্রদান। প্রথমে আমি আমার পরিচয় ভালো করে তাকে দিলাম। কি করি, কোথায় পড়ি-এইসব হাবিজাবি। সে-ও তার পরিচয় দিল। পুরো পরিচয়টা আপনাদের দিলাম না। শুধু এইটুকুই বলি-
আমার বয়স তখন ছিল সদ্য আঠারো, আর মেয়েটাও সদ্য তার আঠারোতম বিবাহ বার্ষিকী উদযাপন করেছে। আর যে ছবি দেখে আমি পাগলপারা হয়ে ছিলাম তা ফটোশপে এডিট করা।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জানুয়ারি, ২০১০ রাত ১১:৩৭