১৪ তারিখ তেল-গ্যাস-বিদু্ত-বন্দর-খনিজ সম্পদ ও জাতীয় সম্পদ রক্ষা জাতীয় কমিটি ঢাকায় অর্ধদিবস হরতাল পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সবাই মনে হয় জানেন, আজ ১১টায় জাতীয় কমিটি পল্টনের মুক্তাঙ্গন থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অভিমুখে ঘেরাও কর্মসূচি পালন করবে। দাবি, সাম্রাজ্যবাদী কোম্পানির সাথে গত ৭ তারিখ শেখ হাসিনার সমুদ্রের গ্যাস ব্লক ইজারা চুক্তির চূড়ান্ত অনুমোদন বাতিল।
হরতাল বাংলাদেশে কোন নতুন ব্যাপার নয়। বিভিন্ন সময়ে, বিভিন্ন দাবিতে হরতালের ডাক এসেছে (শাসকগোষ্ঠীর কুত্তাদের মধ্যে কামড়াকামড়ির ফলাফলস্বরূপ)। কিন্তু জনগণের স্বার্থে হরতালের ঘটনা এদেশে খুব বেশি ঘটেনি। তবে যখন ঘটেছে, তা ঘটা করেই ঘটেছে। ভিত কঁাপিয়ে দিয়েছে এদেশের লুটেরা সাম্রাজ্যবাদের দালাল শাসকগোষ্ঠীর।
তেল-গ্যাস-বিদু্ত-বন্দর ও জাতীয় সম্পদ রক্ষা জাতীয় কমিটি বিগত কয়েক বছর ধরেই দেশের সম্পদ রক্ষার জন্য দেশপ্রেমিক জনতাকে সাথে নিয়ে আন্দোলন সংগ্রাম করে আসছে। তাদের উদ্যোগে বন্দর রক্ষা পেয়েছে, ফুলবাড়িতে কয়লা রক্ষা পেয়েছে, এখনও এশিয়া এনার্জি তা গ্রাস করতে পারেনি। গত ২ তারিখ জাতীয় কমিটির আহবানে পেট্রোবাংলা ঘেরাও কর্মসূচিতে (সাগরের গ্যাস ব্লক বিদেশি বহুজাতিক কোম্পানিকে ৮০ ভাগ রপ্তানির শর্তে ইজারা দেয়ার প্রতিবাদে) সরকারের হুকুমে পেটোয়া পুলিশ বাহিনী নৃশংস হামলা করে জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব আনু মুহাম্মদ সহ শতাধিক নেতা-কর্মীকে আহত করে। পরবর্তীতে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে দেশপ্রেমিক জনগণ এ ঘটনার প্রতিবাদে তীব্র নিন্দা ও বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। জনগণের এই রোষের মুখে সরকার তদন্ত করার আশ্বাস দেয়। এই প্রতিবাদ-বিক্ষোভের আওয়াজ সরকারের কানে পৌঁছেছে, টনক নড়েছে, এটা মনে হলেও, শেখ হাসিনা গত ৭ তারিখ খুবই গোপনে সেই ইজারা চুক্তিতে চূড়ান্ত স্বাক্ষর দেয়।
Click This Link
এই স্বাক্ষর দান এটাই প্রমাণ করে যে, তারা সাম্রাজ্যবাদের কাছে দাসখত/মুচলেকা দিয়েই ক্ষমতায় বসেছে এবং তারাই যে মার্কিন-ভারত সাম্রাজ্যবাদের যোগ্যতম দালাল তা প্রমাণ করতে উঠে-পড়ে লেগেছে। এবিষয়টি যে শুধু এই সরকারই করছে তা নয়, বিগত দিনে বিনএনপি-জামাত জোট সরকারও একই কায়দায় তাদের তাঁবেদার হওয়ার প্রমাণ রেখেছে। ফলে হাসিনার গ্যাস ব্লক ইজারার চূড়ান্ত অনুমোদনেও তারা নিশ্চুপ, পাছে তারা দালাল হিসেবে আরও কম যোগ্য হয়ে পড়ে।
১৯৭১ সালে দেশের আপামর জনগণ নিজের দেশের মালিকাকানা-সার্বভৌমত্ব-স্বাধীনতা-সম্পদ-শিক্ষা-সংস্কৃতিসহ যাবতীয় প্রাণ-প্রকৃতি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখার তাগিদ অনুভব করেছিল। দীর্ঘ ৯ মাস তারা তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে মুক্তির জন্য লড়াই করেছিলেন। বিপরীতে, সেই যুদ্ধের সময়ও গুটিকয়েক দালাল-মুৎসুদ্দী-বেঈমান তৈরি হয়েছিল, যারা মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের মদদপুষ্ট হয়ে জামাত-নেযামে ইসলামি এইসব দলের হয়ে জনগণের মুক্তি সংগ্রামকে নস্যাৎ করার কুৎসিত অপচেষ্টায় লিপ্ত ছিল, তৈরি হয়েছিল রাজাকার-আলবদর-আলশামস। বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাসে তারা চিরদিন মীরজাফর হিসেবেই পরিচিত আছে-থাকবে।
ঠিক একইভাবে বর্তমানে বাংলাদেশের আপামর জনগণের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব-সংস্কৃতি-সম্পদের উপর নিয়ন্ত্রণের জন্য যে সংগ্রাম চলছে, সেই সংগ্রাম অবশ্যই নতুন মুক্তিগ্রামই বটে। এই মুক্তিসংগ্রামে নেতৃত্ব দিতে পারে সাম্রাজ্যবাদবিরোধী, জাতীয় সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নিয়োজিত দেশপ্রেমিক জনগণই। আর বিপরীতে যারা দেশের সম্পদ পাচারের মূল হোতা - সেই শেখ হাসিনা, খালেদা, নিযামী, এরশাদ, তৌফিক এলাহী, আইনুন নিশাত, কামাল হোসেন, ম. তানিম, আবুল মাল আব্দুল মুহিত, মাহমুদুর রহমান, হোসেন মনসুর (পেট্রোবাংলার সাবেক চেয়ারম্যান)সহ জোট-মহাজোটের ভেতরের সাম্রাজ্যবাদের পাচাটা শুয়োর গংরা অবশ্যই এই যুগের নব্য রাজাকার, আলবদর, আলশামস, যাদের ভবিষ্যৎ প্রাপ্তি জনগণের লাথি, থুথু ও গণট্রাইবু্নালে বিচার। এই মুক্তিসংগ্রাম আরো বেগবান করার জন্যই তেল-গ্যাস-বিদু্ত-বন্দর ও জাতীয় সম্পদ রক্ষা জাতীয় কমিটির ১৪ তারিখ হরতাল। এই দিন সবাই বাসায়-অফিসে বসে না থেকে রাস্তায় নেমে আসুন, হরতাল সফল করুন, নিজেদের দেশপ্রেমের প্রমাণ দিন, প্রমাণ করুন আপনি নব্য আলবদর-আলশামস-রাজাকারদের পক্ষের নন।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৯ বিকাল ৩:৩৯