অমর সিং পুন্দির ও কুন্দন সিং পুন্দির আপন ভাই। ভারতের হিমাচল প্রদেশের প্রত্যন্ত পাহাড়ি গ্রামে তাদের বাস। ছোট ভাই অমর পাথর ভাঙার কাজ করেন। আর কুন্দন তাদের উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া জমি চাষ করেন। এভাবে যে আয় হয় তা দিয়েই চলে তাদের সংসার। দু'ভাইয়েরই বয়স চল্লিশের কোটায়। প্রায় পুরোটা জীবন দু'ভাই রয়েছেন একসঙ্গে। প্রায় সবকিছু ভাগাভাগি করে ব্যবহার করেন। একই বাড়িতে থাকেন, একই জিনিসপত্র ব্যবহার করেন; এমনকি দু'ভাইয়ের বউও একজন

অমর ও কুন্দনের গ্রামটি প্রায় ছয় হাজার ফুট উঁচু পাহাড়ের পাশে। গ্রামে প্রায় দুই'শ মানুষের বাস। সেখানে জীবনযাপন খুবই কঠিন। গ্রামের অধিকাংশ বাসিন্দার রয়েছে ছোট ছোট আবাদি জমি। ওই জমি চাষ করেই চলে তাদের জীবিকা। আশপাশে বাড়তি আবাদি জমিও নেই। পৈতৃক জমি ও ঐতিহ্য দুটোই রক্ষা হয়। অমর ও কুন্দনের স্ত্রী ইন্দিরা দেবী বলেন, ' একসঙ্গে দুই স্বামীর ঘর করা মোটেও সহজ নয়। আমাদের অনেক সংগ্রাম করতে হয়। ' ইন্দিরা জানান, তিনি পালা করে দুই স্বামীর সঙ্গে রাত কাটান। কুন্দর বলেন, পালা করে না নিলে এক স্ত্রী নিয়ে দু'ভাইয়ের সংসার সম্ভব নয়। অমরের মতে, পরিবার টিকিয়ে রাখতে এবং ঝগড়া-বিবাদ এড়াতে তাদের অনেক ত্যাগ করতে হয়। আবেগের জায়গাগুলোতেও অনেক ছাড় দিতে হয়।
বাইরের লোকজনের কাছে ' বহুপতি গ্রহণ ' খুবই খারাপ প্রথা। ভারতে আইনগতভাবে এটি নিষিদ্ধ। কিন্তু এ গ্রামের বাসিন্দাদের কাছে এটি ঐতিহ্য ও সামাজিক মূল্যবোধ । বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই এ ধরনের বিয়ে হয়। এই গ্রামের অনেক মেয়ের তিনজনের বেশি স্বামী রয়েছেন। আসলে স্বামীর সংখ্যা নির্ভর করে পরিবারে ভাই ক'জন তার ওপর। পৈতৃক জমি টিকিয়ে রাখতে সাধারণত পরিবারের সব ভাই মিলে এক মেয়েকে বিয়ে করেন। ইন্দিরা দেবী বলেন, 'বছরের পর বছর ধরে এ প্রথা চরে আসছে। আমার ননদের দুই স্বামী। আমার শাশূড়িরও দুই স্বামী। ইন্দিরা তিন সন্তানের মা। জিনগতভাবে ওই সন্তানের বাবা তাহলে কে - অমর না কুন্দন ? দু'ভাই অবশ্য এ ব্যাপার কিছু ভাবেন না। তবে তাদের ১৭ বছরের মেয়ে সুনীতা সিং বলেন, 'আমার কাছে মা-বাবা সবাই সমান। তারা আমার কাছে ঈশ্বরের মতো। অমর ও কন্দুন তাদের এই পারিবারিক ঐতিহ্য ধরে রাখতে চান। তাদের বড় ছেলে সোহনা সিংও এ পক্ষে। তবে সুনীতা এ ব্যাপারে এখনো নিশ্চিত নন। কারণ তার পছন্দ এক স্বামী।
সূত্র : দৈনিক সমকাল




সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে অক্টোবর, ২০০৮ দুপুর ১২:৪৯