আগামিকাল অলসটার স্থিতি যাদুবিদ্যার পরীক্ষা। কিন্তু কিছুতেই পড়ায় মন বসছে না তার। বারবার মন চলে যিচ্ছে সেই তেপান্তরে। দুই যাদুবর্ষ আগে সে এসেছিল মায়াপুরীর যাদুশালায় যাদু শিখতে।সবাই নাকি এই নগরীতে এসে মায়ায় আটকে যায়, ভুলে যায় বাড়ি ফিরবার কথা, তাই এই নগরীর নাম মায়াপুরী। আর যারা যাদুবিদ্যায় পারদর্শী হতে চায় তাদের জন্য যাদুশালা যেন এক স্বপ্নের জায়গা ,সাত সমুদ্দুর তের নদী পার করে তবেই পেতে হয় যাদুশালার চাবি, চাবি ছাড়া তুমি যদি ঢুকতে চাও যাদুশালায় কক্ষনও পারবে না তুমি। সেই চাবি তোমার লাগবেই লাগবে। তো অনেক বাধা পেরিয়ে সাত সমুদ্দুর তের নদী পার করে কিভাবে যেন অলসটাও পেয়ে গিয়েছিল সেই চাবি। নিতান্তই যাদুবিদ্যার প্রতি আগ্রহে অলসটাও চেষ্টা করে কিভাবে কিভাবে যেন পেয়ে গেল সেই চাবি। তারপরই যাদুশালায় যাদু শিখতে আসার জন্য অলসটা এল এই মায়াপুরীতে।
কিন্তু এত্ত দিন হয়ে গেল মায়াপুরী তো এখনো তাকে মায়ায় বাঁধতে পারলো না। ক্ষণে ক্ষণেই অলসটার মনে পড়ে যায় তেপান্তরের কথা যেখানে আছে অলসটার মা, ছোট্ট দুষ্টু বোনটা আর গম্ভীর বড় বোন।প্রতি দিন যদিও যাদুবার্তা পৌঁছে দেয় তার মা তবুও যাদুবার্তায় কিচ্ছুতেই যে মন ভরে না অলসটার। তেপান্তরে যেয়ে আলসেমী করে মার বকা খেতেই যে তার বেশী ইচ্ছে করে। তেপান্তরের মায়াকে কিছুতেই দূর করতে পারেনি এই মায়াপুরী ,হোক না সে তেপান্তর সেটাও যেন অলসটার বেহেশত।
যাদুশালাতেও আলসেমী বহাল আছে তার কিন্তু যাদুশিক্ষকেরা সব সময় অলস থাকতে দেয় না আর তাকে। খাটিয়ে মারে সারা সপ্তাহ ধরে আর মাঝখানে যে বিরতিটুকু পায় সে তাতেই গা এলিয়ে দেয় বিছানায়। কিন্তু সেই নিশ্চিন্ত মনে আলসেমির স্বাদ আর পায় না সে ,মাথার উপড় খাড়ার মত ঝুলে থাকে যাদুপরীক্ষার সতর্কবাণী বা ব্যাবহারিক যাদুশিক্ষার তাড়া। এত কাজ থাকা সত্ত্বেও মায়াপুরীর মাঝে এই একমাত্র যাদুশালাটাই যা একটু পচ্ছন্দ অলসটার। এর মাঝে তেপান্তরের একটা গন্ধ পায় সে, বুক ভরে নিঃশ্বাস নেয়ার আনন্দটুকু এখানে আছে। যাদুর বিষয়গুলো বড্ড খটমটে লাগলেও যাদুশালাটা ভীষণ পচ্ছন্দ তার। চুপচাপ আলসেমী করতে করতে যাদুশালার অর্ধ প্রাচীরের উপড় বসে আশপাশটা দেখতে বড়ই আনন্দ লাগে তার। কত্ত মানুষের আনাগোনা এই যাদুশালায়!! কোন কোন দূর দেশ থেকে যে যাদু শিখতে আসে সবাই। এদের কেউ কেউ সারাদিন যাদু নিয়েই পরে থাকে, কেউ কেউ যাদু শেখাকে গ্রাহ্যই করে না আবার কেউবা এক দেখাতেই শিখে ফেলে একেকটা যাদুবিদ্যা । অবাক হয়ে সব দেখে অলসটা।
কিভাবে কিভাবে যেন কিছু বন্ধুও জুটে গেছে অলসটার। এই বন্ধুগুলোর জন্যই যাদুশালাটাকে আরো আপন লাগে তার। তেপান্তরে ফিরতে না পারার দুঃখ অনেকটাই ভুলিয়ে দেয় এই বন্ধুরা। অলসটাকে টেনে বের করে এনে তাদের দস্যিপনায় সাথে নেয়। মন খারাপ হলে এক লহমায় মন ভালো করে দেয়। এই বন্ধুগুলো না থাকলে হয়তো মায়াপুরীতে টিকতেই পারতো না অলস। মায়াপুরীর মায়া বাঁধতে না পারলেও বন্ধুগুলো কি এক মায়ায় যেন আটকে ফেলেছে অলসটিকে।
তবুও দিন শেষে কেন যেন তেপান্তরে কথা খুব মনে পড়ে অলসের। তবুও কেন যেন তেপান্তরে তার ছোট্ট বাড়িতে মার বকা খেয়ে খুব আলসেমী করতে ইচ্ছে করে। ছোট্ট বোনটার সাথে খুনসুটিতে মেতে উঠতে ইচ্ছে করে। ইচ্ছেগুলো মনের ভেতর পুরে রেখে অলসটা অপেক্ষা করে যাদুবিদ্যা শেষ হওয়ার। খালি যাদুবিদ্যাটা শেষ হোক না সে ঠিকই ফিরবে তেপান্তরে । তেপান্তরের অলস ফিরে যাবে তেপান্তরে, নিশ্চই ফিরবে।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মে, ২০১২ রাত ১০:৫২