আপনাকে প্রায় সবটা পথই যেতে হবে পানিপথে। আমরা যাত্রা (পানিপথে) শুরু করি ৩০ অক্টোবর রাত ১১টায়। রাতে আমাদের ট্রলার বেশ খানিক পথ (তিন ঘন্টা) পাড়ি দেয়ার পর বড় নদীর কাছাকাছি যেয়ে সিদ্ধান্ত হল রাতটা এখানেই কাটাবো।
আবার ফজরের আজানের পর আমাদের ট্রলার চলতে শুরু করল। ঘন্টা খানেক চলার পর আমরা স্থানীয় ফরেষ্ট অফিসে পৌছালাম। এখান থেকে অনুমতি নিয়ে তারপরই শুরু হবে মুল যাত্রা। এই সময়টা আমরা ফ্রেস হয়ে গোসল করে প্রস্তুত হলাম দীর্ঘ ভ্রমনের জন্য। কারন সব জায়গাতে আপনি পানি পাবেন ঠিকই কিন্তু লোনা। পথে একমাত্র মিষ্টি পানির উৎস হল সুন্দরবনের মধ্যে ফরেষ্ট ক্যাম্প গুলোর পুকুর। ঘন্টাখানেক পর অনুমতি মিলল তারপর আবার যাত্রা শুরু এরমধ্যে সকালের নাস্তা তৈরী হলো চলতে চলতে সবাই নাস্তা সেরে নিলাম। এরপর একেবারে ফ্রি হয়ে চলে গেলাম ট্রলারের ছাদে এখান থেকে দুচোখ ভরে দেখতে থাকলাম বিশ্বের বিস্ময় আমাদের ঐতিহ্য সুন্দরবন। যতদুর চোখ যায় ততদুর শুধু সবুজের সমারোহ। এভবে সারাদিন আমাদের ট্রলার চলতে থাকল, সময়মত দুপুরের খাবার সেরে নিলাম। সন্ধ্যার কাছাকাছি সময়ে আমরা পৌছালাম সুন্দরবনের মধ্যে দোবেকী নামক ফরেষ্ট ক্যাম্পে। এখান থেকে কিছুদূর যাবার পর সিন্ধান্ত হল রাতে খাবার জন্য মাছ ধরতে হবে নদী থেকে বনের মধ্যে ছোট খাল দেখে ট্রলার থামিয়ে আকাদের মধ্যে কয়জন জাল নিয়ে নদীতে নেমে পড়ল অল্পকিছুক্ষনের মধ্যে তারা ২কেজির মত বিভিন্ন রকম ছোটবড় মাছ নিয়ে ফিরে এলো। এরপর আমাদের বাবৃর্চি রান্নার কাজে মনোযোগ দিলো এবং মাঝি ট্রলার ছাড়ল। এভাবে চলতে চলতে রাত প্রায় ১২টার দিকে আমরা হিরন্ট পয়েন্ট (স্থানীয় নাম) পৌছালাম যেটা নীলকমল নামে পরিচিত। এখানে নদীর মাঝে ট্রলার নোঙর করে আমরা রাতের খাবার খেয়ে সবাই শুয়ে পড়লাম। সকাল সকাল ট্রলারের শব্দে ঘুম ভাঙল অল্প কিছুক্ষন চলার পর আমরা হিরণ পয়েন্ট ফরেষ্টে পোছালাম। এরপর এখানে নেমে ফ্রেশ হয়ে গোসল সেরে নেমে পড়লাম ঘুরে বেড়ানোতে। দেখার মত অনেক কিছুই আছে এখানে, সুউচ্চ ওয়াচ টাওয়ার থেকে সুন্দরবন দেখার সুযোগ পাবেন, মন চাইলে সুন্দরবনের মধ্যে হাটাহাটি করতে পারেন অনেকটা, ভাগ্যে থাকলে অনেক হরিনের দেখা পাবেন এখানে, আরো আছে হেলিপ্যাড সহ অনেক কিছুই। এখানে ঘোরাঘুরি শেষ করে আবার ট্রলার ছাড়ল দুবলার উদ্দেশ্যে। যেতে যেতে সামনে পড়ল মেজর জিয়ার দ্বীপ (স্থানীয় নাম)। এখানে মূলত শুটকি মাছ উৎপাদন করা হয়। যেটা পরবর্তী সময়ে ঢাকা,চট্রগ্রাম সহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাঠানো হয়। এছাড়া এখানে আছে একটি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র, মিঠা পানির অনেক বড় একটি পুকুর,মেজর জিয়ার বাংলো, খাচায় আটকানো দুইটি সামুদ্রিক ইগল[img|http://media.somewhereinblog.net/images/thumbs/SkMilon94_1257823839_17-DSC0105 , এবং একটি কুমির। এখানে ঘন্টা ২ ঘোরার পর আবার আমাদের ট্রলার মূল দুবলার উদ্দেশ্যে। পানি পথে চলতে চলতে বিকাল ৪টার দিকে আমরা দুবলাতে পৌছাই। তখন ক্ষুধা চরমে, তাড়াতাড়ি দুপুরের খাবার খেয়ে ট্রলার থেকে নেমে পড়লাম ভূমিতে। এটা মূলত দুবলার চর নামে পরিচিত। গহীন বন এবং সাগরের জেগে ওঠা চর। এখানে দেখার মত অনেক কিছুই পাবেন আপনি। সুন্দরবনের মধ্যে হাটতে হাটতে ক্লান্ত হয়ে গেলে নো টেনশন সরাসরি নেমে পড়ুন সাগরে মন জুড়িয়ে গোসল করুন যতক্ষন মন চায়। এখানের বিচটি ককসবাজারের তুলনায় অনেক ছোট কিন্তু অনেক সুন্দর । সারাদিন পর রাতে অনুষ্ঠান (পূজা) এবং সেই সাথে অন্য পাশের মঞ্চে চলে সারারাত ব্যাপী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান । এখানে দর্শনার্থীর সংখ্যা আনুমানিক ৫০০০০ হাজারের কাছাকাছি কিংবা তার চাইতে বেশী হবে। নারী,পুরুষ,দেশী,বিদেশী সব ধরনের মানুষের আনাগোনা পাবেন আপনি এখানে। আর আপনার সিকিউরিটি নিয়ে মোটেও ভাববেন না কারন এখানে আপানার পাশে পাবেন ফরেষ্ট পুলিশ, পুলিশ, কোষ্টগার্ড , রাব এবং ডিবি পুলিশের টহল দলকে। তবে সুন্দরবনের কিছু ভাগ দেখে আপনার মন খারাপ হতে পারে কারন সিডরের আঘাতের ক্ষতি সবখানেই কম বেশী আপনার চোখে পড়বে। এবারের এই মেলার স্পন্সর ছিলো গ্রামীনফোন। এখানে সন্ধ্যার সময় ফানুস উড়িয়ে মেলার উদ্বোধন করা হয়। এখানে মিডিয়া বলতে সবগুলাকেই (মুলত টিভি) পাবেন আপনি। মেলাতে ঘুরতে ঘুরতে কষ্ট হলে দোকানে (খাবার দোকান) বসে পেট পূজা করতে পারেন। খাবারের মধ্যে পাবেন চটপটি,ফুসকা,বিরিয়ানি,পোলাও থেকে শুরু করে মোটামুটি সব ধরনের খাবার। খাবার পরে আবার মিষ্টি পান পাবেন এখানে। আর খাবারের দাম আপনার নাগালের মধ্যেই। আপনি ট্রলারে যাবার বা আসার পথে ভাল করে লক্ষ্য করলে অনেক বানর, হরিণ, বিভিন্ন প্রজাতির পাখি, এবং পানিতে শুশুক দেখতে পাবেন। তবে বাঘ দেখার চিন্তা করে যাবেন না কারন তিনিতো রাজা, তিনি তার মন মর্জি মতই বিচরন করেন। তবে বিভিন্ন জায়গায় রাজা মশাইয়ের পায়ের খোজ চোখে দেখতে পাবেন আর তাতেই আপনাকে সন্তুষ্ট থাকতে হবে। সর্বোপরি আপনি মজা পাবেন এই ভ্রমনে। পরের দিন ভোর হতে সাগরে বিসর্জনের মধ্য দিয়ে এই মেলার সমাপণি। ছবিতে লক্ষ্য করুন।
আগামি বছর ঠিক একই সময়ে আবার বসবে এই মেলা। প্রস্তুত হন যাবার জন্য মন চাইলে, ঢাকা থেকে অনেক টুরিষ্ট কোম্পানির মাধ্যমে যেতে পারবেন।
(লেখাটা সংক্ষিপ্তাকারে)
ছবিগুলো দেখে বুঝুন কেমন সুন্দর জায়গাগুলো।
দু:খিত ছবিগুলো সাজাতে পারিনি বর্ণনার সাথে।
সাথে মন্তব্য জানাতে ভুলবেন না কেমন?