somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইসলামে যাকাত ও উশরের বিধান----- ২য় কিস্তি

১৪ ই আগস্ট, ২০১১ রাত ১১:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আর্থ সামাজিক উন্নয়ন ও দারিদ্র্য বিমোচন সহ মানব কল্যাণে যাকাত ও উশরের ভূমিকা :
যাকাত ব্যবস্থার ধর্মীয়, নৈতিক ও নানাবিধ ইতিবাচক উদ্দেশ্য থাকলেও এর অর্থনৈতিক ও সামাজিক উদ্দেশ্য সবিশেষ গুরুত্ববহ। অর্থ নৈতিক দৃষ্টিতে ধন-সম্পদ পুঞ্জিভূত করণ একটি মারাতক অপরাধ। সম্পদের ব্যাপক ব্যয় ব্যবহার এবং বিনিয়োগই হচ্ছে তার জন্য স্বাভাবিক ব্যবস্থা। যকাত ব্যবস্থা বাস্তব সাংগঠনিক পদ্ধতি, এটি সম্পদ পুঞ্জিভূত করণের প্রধান প্রতিরোধক। কেননা ইসলাম সামাজিক শ্রেণী বৈষম্যকে শুধু অপছন্দই করে না বরং তা দুরীভূত করার কথা ও বলে। তাই একটি সুখী সমৃদ্ধ এবং উন্নত সামাজিক পরিবেশ সৃষ্টির জন্য বিত্তশালী মুসলিমদের অবশ্যই তাদের সম্পদের একটি অংশ দরিদ্র ও অভাবগ্রস্তদের দুর্দশা মোচনের জন্য ব্যয় করতে হবে। এর ফলে শুধু অসহায় এবং দুস্থ মানবতারই কল্যাণ তাই নয়, সমাজে আয় বন্টনের ক্ষেত্রে ও বৈষম্য অনেক খানি হ্রাস পাবে।
সামাজিক উন্নয়ন ও মানব কল্যাণের উদ্দেশ্যকে সফল করার জন্য আজ বিশ্বে ধনতান্ত্রিক, সমাজতান্ত্রিক মিশ্র অর্থনৈতিক পদ্ধতির উম্মেষ ঘটেছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কোন অর্থনৈতিক পদ্ধতিতে উল্লেখিত উদ্দেশ্যকে পরিপূর্ণ ভাবে সফল করা সম্ভব হয়নি। এসব অর্থনৈতিক পদ্ধতি মানবীয় কল্যাণকে করেছে সংকুচিত। এতে বিশেষ ব্যক্তি ও গোষ্ঠি লাভবান হয়েছে। তারা শোষনের মাধ্যমে গড়ে তুলেছে পাহাড়তুল্য সম্পদ। ফলে সমাজে স্বল্পবিত্ত ব্যক্তিরা দিন দিন নিঃস্ব হয়ে পড়ছে। কেবল মাত্র ইসলামই চায় সম্পদশালীরা যেন অতিরিক্ত সম্পদকে যাকাতের মাধ্যমে অপেক্ষাকৃত গরীবদের মাঝে ব্যয় করে, যা উভয়ের ক্ষেত্রে কল্যাণ বয়ে আনবে এবং ধন-সম্পদের আবর্তনে গোটা অর্থনীতির উন্নয়ন ঘটবে। বিশেষ করে স্বল্পবিত্ত লোকেরা যেন তাদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের সুযোগ লাভ করতে পারে। এর ফলে একদিকে যেমন সম্পদের পূর্ণ ব্যবহার সুনিশ্চিত হবে, অন্য দিকে গরীবের আয়ের বৈষম্যও বহুলাংশে লাঘব হবে। এক্ষেত্রে উভয়ের মাঝে যাকাত ও উশর হলো আল্লাহ প্রদত্ত সেতু বন্ধন।
এদিকেই ইংগিত করে আল কুরআন ঘোষণা দিয়েছে:
كَىْ لَايَكُوْنَ دُوْلَةً بَيْنَ الْاَغْنِيَاءِ مِنْكُمْ
“যেন সম্পদ তোমাদের কেবল ধনীদের মধ্যেই আবর্তন না করে”। {সূরা আল হাশর-৭}
সামাজিক উন্নয়ন ও মানব কল্যাণের যে সকল ক্ষেত্রে যাকাত ও উশর গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে । নিম্নে সে গুলো সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :

ক. দারিদ্র্য বিমোচন ও দরিদ্রদের পুনর্বাসন :
ইসলামে দারিদ্র্য সমস্যার স্বরূপ: কেউ কেউ ধারনা করে থাকে, দারিদ্র্য হলো আল্লাহর বিশেষ অনুকম্পা ও নিয়ামত। দারিদ্র্য সৎ মানুষের বন্ধু। দারিদ্র্য পবিত্র আর সম্পদ পাপের অগ্রিম শাস্তি, তাই দারিদ্র্যকে স্বাগত জানানো উচিৎ। ইসলাম সন্নাসবাদের এই ধারনাকে প্রত্যাখ্যান করে।
আবার কেউ কেউ এই ধারনা করে, দারিদ্র্য অপ্রতিরোধ্য নিয়তি। এর প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। একে সন্তুষ্টি চিত্তে মেনে নেয়া ছাড়া কোন বিকল্প নেই। অদৃষ্টবাদের এ ধারনাকেও ইসলাম স্বীকার করে না।
ইসলাম ধনাঢ্য জৌলুসপূর্ণ জীবন কে নিরুৎসাহিত করেছে, তবে সাথে সাথে দারিদ্র্যকে ও ঘৃণার চোখে দেখেছে। ইসলাম মনে করে দরিদ্রতা একটি জঘণ্য আপদ, একটি সামাজিক ব্যধি, যার কুপ্রভাব ব্যক্তি-পরিবার, সমাজ-জাতি, ঈমান-আকীদা, নীতি-চরিত্র, চিন্তা ও সংস্কৃতির উপর পড়ার প্রবল আশংকা রয়েছে। তাই এই সমস্যার প্রতিবিধান করা একান্ত জরুরী। নিম্নে দারিদ্র্যের কিছু কুফল তুলে ধরা হচ্ছে।

১. দারিদ্র্য ঈমান-আকীদার জন্য হুমকি স্বরূপ
দারিদ্র্্েযর কারণে নিজের ¯্রষ্টার কুফরী করতেও মানুষ কুন্ঠিত হয় না।
হাদীসে সেই কথার প্রতি ধ্বনী শুনা যায়। রাসূল সা. বলেছেন: كَادَ الْـفَقْرُ اَنْ يَكُوْنَ كُفْرًا
‘এটি অত্যন্ত সংগত কথা যে, দরিদ্রতা মানুষকে কুফরীর দিকে নিয়ে যায়’।{বয়হাকী এবং তাবরানী}
একারণেই রাসূল সা. একই সাথে কুফরী ও দরিদ্রতার কুপ্রভাব থেকে আল্লাহর দরবারে আশ্রয় প্রার্থনা করে দো’য়া করেছেন:
اَللّهُمَّ اِنِّىْ اَعُوْذُبِكَ مِنَ الْـكُـفْـرِ وَالْـفَقْرِ- وَفِىْ رَوَايَةِ- مِنْ شَرِّفِتْنَةِ الْـفَـقْـرْ
‘‘হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট কুফরী ও দরিদ্রতা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। অন্য বর্ণনায় আছে দরিদ্রতার ফিতনার অনিষ্টতা থেকে পানাহ চাই’’।{সুনানে আবু দাউদ ও বোখারী}

২. দারিদ্র্য চরিত্র ও নৈতিকতার জন্য হুমকি স¦রূপ :
দারিদ্র্যের কষাঘাত ও ক্ষুধার নির্মম যাতনা মানুষকে যে কোন অপরাধ করতে বাধ্য করে। দারিদ্র্যপূর্ণ সমাজে মানবতাবোধ লোপ পায়। হিং¯্র আচরণ প্রসার লাভ করে। অন্যায় বিস্তৃত হয়।
এদিকে ইংগিত করে মহানবী সা. বলেছেন -
خُذُوْا مِنَ الْعَطَاءِ مَادَامَ عَطَاءً- فَاِذَا صَارَ رِشْوَةً عَلى الدِّيْنِ فَلَا تَأْخُذُوْهُ- وَلَسْتُمْ بِتَارِكِيْهِ- تَـمْنَعُكُمُ الْـحَـاجَةُ وَالْـفَـقْـرُ
‘‘দান যতক্ষণ তা দান থাকে, তোমরা গ্রহণ করো। যখন তা ধর্মের ব্যাপারে ঘুষে পরিণত হয়, তা গ্রহণ করোনা। তবে তোমরা তা বর্জন করতে পারবেনা, দারিদ্র্য ও অভাব তোমাদেরকে বিরত হতে দেবে না’’। {আল বুখারী}

ঋণগ্রস্থ ব্যক্তির উপর ঋণের প্রভাব সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সা. বলেন :
إِنَّ الرَّجُلَ اِذَا غَرِمَ حَدَّثَ فَكَـذَبَ وَوَعَـدَ فَأَخْلَفَ
‘‘যে লোক ঋণ গ্রহণ করে, সে যখন কথা বলে মিথ্যা বলে, যখন প্রতিশ্রুতি দেয় তা ভঙ্গ করে’’।{বোখারী ও মুসলীম}

বাংলায় একটি প্রবাদ বাক্য রয়েছে-‘অভাবে স্বভাব নষ্ট’। আসলে দারিদ্র্য মানুষদেরকে অপকর্ম করতে বাধ্য করে স্বভাবকে খারাপ করে দেয়। পক্ষান্তরে যদি দারিদ্র্য বিমোচনের ব্যবস্থা করা যায় তাহলে অনেক দুচ্চরিত্রবান ও খারাপ স্বভাবের লোকেরাও অসংখ্য অনৈতিক ও খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকতে পারে। হতে পারে সুন্দর চরিত্রের অধিকারী। এ প্রসঙ্গে যেমনটি বর্ণিত হয়েছে যে, এক ব্যক্তি রাত্রিতে কিছু দান করল। যে কোন ভাবেই হোক সে দান করলো। সেটি এক চোরের ভাগ্য। লোকেরা তা নিয়ে কানা ঘুষা করতে লাগলো। অন্য রাত্রিতে সে আরো কিছু দান করলো। সেটি একজন জিনাকারীনীর ভাগ্যে জুটলো। এ নিয়ে ও মানুষেরা নানা কথা বার্তা বললো। সে ব্যক্তি রাত্রে স্বপ্নে দেখল, চোরকে তুমি যে সম্পদ দান করেছ, সে এটি লাভ করে চুরির কাজ থেকে বিরত ছিল। আর তুমি জিনা কারীনীকে যে মাল দান করেছ, সে এটি পেয়ে জিনা থেকে নিবৃত্ত ছিল। {বোখারী ও মুসলীম}

এ ঘটনায় পরিস্কার ভাবে ফুটে উঠেছে যে, অভাব বিমোচন এই চোর এবং জিনাকারীনীকে খারাপ কাজ থেকে দূরে থাকার পথ উম্মুক্ত করেছে।

৩. দারিদ্র্য মানুষের সুষম-সুস্থ চিন্তা শক্তি বিলুপ্ত করে :

দারিদ্র্যের কু-প্রভাবে সুস্থ চিন্তায় পর্যন্ত বিস্তৃত। কারণ যে ব্যক্তি নিজের পরিবারের ও সন্তান-সনতুতির নূন্যতম জীবন উপকরণের অধিকারী নয় সে কি করে সূক্ষ্ম চিন্তা করবে? হযরত ইমাম আবু হানিফা রহ. বলেছেন- “যার বাড়ীতে আটা নেই তার নিকট কোন বিষয়ে পরামর্শ নিতে যেয়োনা’’। কেননা তার চিন্তা বিক্ষিপ্ত হতে বাধ্য। একদা ইমাম আবু হানিফা রহ. এর ছাত্র ইমাম মুহাম্মদ রহ. কে তার গৃহ পরিচারিকা সে খবর দিল যে, তার ঘরের আটা শেষ হয়ে গেছে, তিনি তখন বললেন, এই খবরে আমার মাথা থেকে ৪০টি ফিকাহ সম্পর্কিত মাসআলা উধাও হয়ে গেছে। {ফিকহুয যাকাত- ড. ইউসুফ আল কারযাভী}

৪. দারিদ্র্য শিক্ষার্জনের পথে অন্তরায় : যা জাতিকে পঙ্গু করে ফেলে। কারণ স্বল্পশিক্ষিত সমাজের কাছে কোন ভালোর আশা করা যায়না।

৫. দারিদ্র্য মানুষকে নিজের মান মর্যাদা উপেক্ষা করতে বাধ্য করে :
খারাপ ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বাস করতে ও অস্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণ করতে বাধ্য করে।

৬. দারিদ্র্য পরিবারের শান্তি শৃংখলার বিঘন ঘটায় :

দারিদ্র্যতা স্বামী-স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততির মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটিয়ে পরিবারের কাঠামোকে নড়বড় করে দেয়। এমনকি দরিদ্রতার কারণে কলিজার টুকরা সন্তানও বিক্রি করে দেয়, এমনকি হত্যা পর্যন্ত করতে দ্বিধা করেনা।

৭. দারিদ্র্য সমাজ ও সামাজিক স্থিতিশীলতার জন্য অন্তরায় :
দরিদ্রতার সবচেয়ে ভয়ানক দিক হলো, তা সমাজের শান্তি নিরাপত্তা ও সামাজিক স্থিতিশীলতার জন্য বড় হুমকি।
জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও উপার্জন স্বল্পতার কারণে সৃষ্ট দরিদ্রতার ব্যপারে মানুষ ধৈর্য ধারন করতে পারে কিন্তু সম্পদ বন্টনে দুর্নীতি, মানুষের উপর মানুষের অন্যায় কর্তৃত্ব, জনগণের পয়সায় কিছু মানুষের বিলাসিতার ফলে সৃষ্ট দরিদ্রতা মানুষের হৃদয় মনকে আন্দোলিত করে, সৃষ্টি করে নানা দাঙ্গা-হাঙ্গামা, পারস্পরিক ভ্রাতৃত্ব ও বন্ধুত্বের সেতুকে তীব্র ঝাকুনী দেয়। সমাজে যতদিন দারিদ্র্যের এ দৃশ্য থাকবে, ততদিন হিংসা-বিদ্বেষ মানুষের অন্তরে আগুন ধরিয়ে রাখবে। যে আগুনের লেলিহান শিখা সবকিছু জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দিতে পারে। এসব বৈষম্য থেকেই বঞ্চিত ও নি:স্ব মানুষের মনে নানা ধ্বংসাতক পরিকল্পনা তৈরী হয়।
৮. দরিদ্রতা, জাতির স্বাধীনতা, আত্মবিশ্বাস ও আত্মমর্যাদার জন্য এক বিরাট হুমকি - দারিদ্য্র অভাবী নাগরিকের মনকে দেশ রক্ষার কোন শপথই আন্দোলিত করবে না। জাতির ইজ্জত রক্ষার কোন ভাবনাই তাকে পীড়িত করবেনা। যে দেশ তার সাথে নিষ্ঠুর আচরণ করেছে, তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে, স্বভাবত:সে দেশের জন্যে রক্ত দিতে সে কৃপণতা করবে।
মোট কথা যে কোন সমাজ ও দেশের জন্য দারিদ্র্য একটা সবচেয়ে জটিলও তীব্র সমস্যা। সমাজে হতাশা ও বঞ্চনার অনুভুতির সৃষ্টি হয় দারিদ্র্যের ফলে। পরিণামে দেখা যায় মারাত্মক সামাজিক সংঘাত। অধিকাংশ সামাজিক অপরাধও ঘটে দারিদ্র্যের কারণে। ইসলাম তাই দারিদ্র্য লালন কখনো পছন্দ করে না। ইসলাম শাশ্বত জীবন ব্যবস্থা। ইসলাম তাই দারিদ্র্য মুক্ত ও সুখী সমৃদ্ধ সমাজ গঠনে বদ্ধপরিকর। বাস্তব সম্মত পদক্ষেপের মাধ্যমে ইসলাম দারিদ্র্য বিমোচনের কালজয়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। যাকাত ও উশর ভিত্তিক অর্থনীতি প্রণয়ন করে ইসলাম দারিদ্র্য বিমোচনে যে মজবুত ভুমিকা পালন করেছে, মানুষের গড়া কোন অর্থনীতিতে তার নজির নেই। কারণ, যাকাত ও উশর দারিদ্র্য বিমোচন ও দরিদ্র জনতার পুনর্বাসনের স্থায়ী পদ্ধতি।

খ. কল্যাণমুলক কর্মসূচী :
যাকাতের অর্থ দিয়ে যদি দরিদ্র ও নি:স্ব মানুষদের কর্মক্ষম করার জন্য পুনর্বাসন প্রশিক্ষণ এবং কর্মসংস্থান মূলক কল্যাণধর্মী কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়, তাহলে আগামী স্বল্প সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে দারিদ্র্য সত্যিকার অর্থে বিদায় নিবে। এ প্রস্তাবিত কর্মসূচীর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো :--
১. বিধবাদের কল্যাণ।
২. বিকলাঙ্গদের কল্যাণ।
৩. বৃদ্ধদের জন্য মাসহারা।
৪. কন্যাদায়গ্রস্তদের সাহায্য।
৫. ঋণগ্রস্ত কৃষকদের জমি অবমুক্ত করণের সাহায্য।
৬. ইয়াতিমদের প্রতিপালন।
৭. স্মরণার্থী সহায়তা।
৮. উদ্বাস্ত পুনর্বাসন।
৯. অভাবী সাধারণ জনগণের সুচিকিৎসার জন্য ইউনিয়ন ভিত্তিক মেডিকেল
সেন্টার স্থাপন।
১০. এ ছাড়া যাকাতের অর্থ দিয়ে গরীবদের জন্য স্থায়ী আয়ের ব্যবস্থা করে দেয়ার নিমিত্তে রিক্সা ভ্যান কিনে দেয়া থেকে শুরু করে স্থায়ীভাবে বিভিন্ন ধরণের হালাল ব্যবসায় পূঁজির যোগান দিয়ে তাদেরকে সাহায্য করা যেতে পারে।


গ. শিক্ষা ও প্রশিক্ষণমূলক কর্মসূচী :

যাকাতের মাধ্যমে অর্জিত অর্থ দিয়ে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণমূলক অনেক কর্মসূচী বাস্তবায়ন করা সম্ভব । ইসলামী শিক্ষা বিস্তারের জন্য যাকাতের অর্থ দিয়ে গরীব ছাত্রদের বই কিনে দেয়া থেকে শুরু করে তাদের জামা কাপড় ও লিল্লাহ বোর্ডিং এ থাকার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। তথ্য প্রযুক্তির এ যুগে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে গরীব জনশক্তিকে অধিকতর উৎপাদনমুখী করা যেতে পারে এই অর্থ দিয়েই।
এছাড়া ইসলামী সাহিত্য প্রকাশ ও প্রসারের জন্য যাকাতের অর্থ ব্যয় করে জন সাধারণকে ইসলাম মুখী করা যেতে পারে।

ঘ. কর্মসংস্থান ও গৃহায়ন কর্মসূচী : যাকাতের প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে কর্মসংস্থান ও গৃহায়ন কর্মসূচী সফলভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব।
১. গরীব কৃষকদের হালের বলদ ক্রয়ে এ অর্থ দিয়ে সাহায্য করা যেতে পারে।
২. এছাড়া এ অর্থ দিয়ে ক্ষুদ্র আকারের উৎপাদন মুখী কর্মসূচী যেমন: চাল,চিড়া মুড়ি তৈরী, নার্সারী তৈরী, তাত সামগ্রী তৈরী, হাস-মুরগী পালন ও মাছের চাষ, সেলাই মেশিন, ইলেক্টিক সামগ্রী মেরামত। রিক্সা-ভ্যান তৈরী ও মেরামত ইত্যাদি।
৩. ক্ষুদ্রাকারের ব্যবসা যেমন: মুদি দোকান, চায়ের দোকান, মিষ্টির দোকান, মাছের ব্যবসা, ফলের ব্যবসা ইত্যাদি পরিচালনা করা যেতে পারে। যাতে নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
৪. এছাড়া বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা, অসহায় মহিলাদেরকে এ অর্থ দিয়ে সেলাই কাটিং,বুটিক সহ বিভিন্ন কুটির শিল্প সামগ্রী তৈরী করার প্রশিক্ষণ দিয়ে তারেকে স্বাবলম্বী হতে সহায়তা করা যেতে পারে।
৫. প্রতি বছর বিপুল সংখ্যক লোক বন্যা, নদী ভাংঙ্গন ও অগ্নিকান্ডে তাদের ঘর-বাড়ী হারায়। যাকাতের অর্থ দিয়ে এ সকল বাস্তুহারা মানুষদেরকে গৃহ নির্মাণে সহায়তা কর যাবে।

ঙ. উৎপাদন বৃদ্ধি :
যাকাত যেমন কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করে তেমনি অর্থনীতিতে উৎপাদনও বৃদ্ধি করে। যাকাতের অর্থ নি:স্ব ব্যক্তির ভিক্ষার হাতকে কর্মীর হাতে রূপান্তরিত করে। যেকোন উৎপাদন কাজে শ্রমের সাথে পুঁজির সংযোজন অনস্বীকার্য। মানুষ তার শ্রমের মাধ্যমে বিস্ময়কর উন্নয়ন ঘটাতে পারে, কাজে লাগাতে পারে অসংখ্য প্রকৃতির সম্পদকে, পারে মরুভূমিকে উর্বর জমিতে পরিণত করতে। তবে এর জন্য প্রয়োজন যন্ত্রপাতি যা অর্থনীতির ভাষায় পুঁজি দ্রব্য। পুঁজির অভাবে বহু কর্মক্ষম দরিদ্র জনগোষ্ঠি বেকারত্ব জীবন যাপন করছে। যাকাতের মাধ্যমে অর্থ প্রদান করে এই সকল দরিদ্র জনশক্তিকে উৎপাদন কর্মকান্ডে ব্যবহার করে উৎপাদন বহগুণে বাড়ানো সম্ভব হবে।

চ. সুদের কুফল মুক্ত সমাজ গঠন :
সুদের নৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক কুফলের অভিশাপে আজ সারা বিশ্ব বিদগ্ধ। যাকাত ও উশর ভিত্তিক অর্থব্যবস্থা সুদকে বিলুপ্ত করে সমাজ থেকে এসব কুফলকে দূর করার পথ উন্মুক্ত করে। ফলে সমাজে ও রাষ্ট্রে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়।

ছ. মজুতদারী রোধ করার এক বলিষ্ঠ পদক্ষেপ :
যাকাত মজুতদারদের আপসহীন শত্রু। যকাত অর্থকে অলসভাবে মজুত করে রাখার প্রবণতা নাশ করে। কারণ, মজুতকৃত অর্থ সম্পদের উপরই যাকাত হিসাব করা হয়ে থাকে।

জ. রাষ্ট্রীয় আয়ের উৎস সৃষ্টি ও সামাজিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে :
যাকাত ইসলামী রাষ্ট্রের আয়ের অন্যতম উৎস। ধনী ব্যক্তিদের কাছে থেকে যাকাত আদায় করে তা রাষ্ট্রের কোষাগারে যাকাত তহবিলে জমা হয়। এ অর্থ রাষ্ট্রীয় আয় হিসাবে রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ভিত্তিকে সুদৃঢ় করে। ফলে রাষ্ট্র সব পর্যায়ের নাগরিকের জন্য জীবনের মৌলিক চাহিদা (অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, বাসস্থান, চিকিৎসা ইত্যাদি) পূরণের তথা সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার শক্তি অর্জন করে।
যাকাত সামাজিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে মানবেতিহাসের প্রথম আইনানুগ ব্যবস্থা। ব্যক্তিগত দানের উপর মানুষকে নির্ভরশীল না করে রাষ্ট্রীয় ভাবে নিয়মিত ভাতা হলো যাকাত। এ নিরাপত্তা শুধু মুসলমানদের জন্যই নয় বরং ইসলামী রাষ্ট্রে বসবাসরত সকল অভাবী জনগণের জন্য, হোক সে অমুসলীম।

ঝ. ঋণ সহায়তা দান :

ঋণগ্রস্ত ব্যক্তিকে দান করা যাকাত ব্যয়ের একটি অন্যতম ফান্ড। তাই সমাজে ঋণী ব্যক্তিদের যাকাত দিয়ে সহযোগিতা করে ঋণ সহায়তায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা সম্ভব।
ঞ.সামাজিক ঐক্য সংহতি ও পারস্পরিক সাহায্য সহযোগিতার বন্ধন সুদৃঢ় করণঃ

যাকাতের মাধ্যমে মুসলমানদের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতার মনোভাবকে উৎসাহিত করা হয়। ফলে সকল সামাজিক বৈষম্য দূরিভূত হয়ে এক অনুপম বিশ্ব ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়। ফলে ইসলামী সাম্য ও মৈত্রীর আদর্শ যাকাতের মাধম্যে প্রস্ফুটিত হয়। যাকাত ধনী ও গরীবের মধ্যে সেতু বন্ধন। এর দ্বারা দুই শ্রেণীর মধ্যে সামাজিক ঐক্য ও সংহতি সৃষ্টি হয়।


১ম কিস্তি এখানে View this link
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ট্রাম্পকে শুভেচ্ছা জানালেন ড. ইউনূস

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:১০





যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় ডোনাল্ড ট্রাম্পকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।শুভেচ্ছা বার্তায় ড. ইউনূস বলেন, ‘মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ের জন্য আপনাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শীঘ্রই হাসিনার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৩৮


পেক্ষার প্রহর শেষ। আর দুই থেকে তিন মাস বাকি। বিশ্ব মানবতার কন্যা, বিশ্ব নেত্রী, মমতাময়ী জননী, শেখ মুজিবের সুয়োগ্য কন্যা, আপোসহীন নেত্রী হযরত শেখ হাসিনা শীগ্রই ক্ষমতার নরম তুলতুলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাছে থেকে আমির হোসেন আমুকে দেখা একদিন....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৪৬

আমির হোসেন আমুকে দেখা একদিন....

২০০১ সালের কথা। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একটা আন্তর্জাতিক দরপত্রে অংশ গ্রহণ করে আমার কোম্পানি টেকনিক্যাল অফারে উত্তীর্ণ হয়ে কমার্শিয়াল অফারেও লোয়েস্ট হয়েছে। সেকেন্ড লোয়েস্টের সাথে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নারী বুকের খাতায় লিখে রাখে তার জয়ী হওয়ার গল্প (জীবন গদ্য)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৩২



বুকে উচ্ছাস নিয়ে বাঁচতে গিয়ে দেখি! চারদিকে কাঁটায় ঘেরা পথ, হাঁটতে গেলেই বাঁধা, চলতে গেলেই হোঁচট, নারীদের ইচ্ছেগুলো ডিমের ভিতর কুসুম যেমন! কেউ ভেঙ্গে দিয়ে স্বপ্ন, মন ঢেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্রী ও কুশ্রী পদাবলির ব্লগারদের টার্গেট আমি

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৫



আমাকে জেনারেল করা হয়েছে ১টি কমেন্টের জন্য; আমার ষ্টেটাস অনুযায়ী, আমি কমেন্ট করতে পারার কথা; সেটাও বন্ধ করে রাখা হয়েছে; এখন বসে বসে ব্লগের গার্বেজ পড়ছি।

সম্প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×