somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"বিজ্ঞানের এক ভয়াবহ আবিষ্কার 'পারমানবিক অস্ত্র'; যার বিভৎসতা আজও ছড়িয়ে আছে হিরোশিমা এবং নাগাসাকিতে"

১৮ ই অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ১২:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আধুনিক বিজ্ঞানের সব আবিষ্কার যে সব সময় মানুষের কল্যানে কাজে এসেছে এমনটা নয়। বিজ্ঞান আমাদের হাতে এমনও কিছু তুলে দিয়েছে যা আমাদের নিজেদের ধংসের কারন হয়ে দাঁড়িয়েছে। কথায় বলে 'আধুনিক বিজ্ঞান মানুষকে দিয়েছে বেগ, কিন্তু কেড়ে নিয়েছে আবেগ!' আজ যে বিষয়টি আমি আপনাদের সামনে উপস্থাপন করবো সেটি হলো 'Atom Bomb/পারমানবিক বোমা'। পারমানবিক বোমা সম্পর্কে এর আগেও বিস্তর লেখা লেখি হয়েছে। এমনকি এই 'সাম্যহোয়্যার ইন ব্লগ'টিতেও এ সম্পর্কিত প্রচুর লেখা আছে। কিন্তু তারপরেও এই বোমা সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে আমি আবারও লিখলাম কারন, অজানাকে জানার একটা প্রবল আগ্রহ আমার মধ্যে বিদ্যমান। আর যতক্ষন পর্যন্ত একটা বিষয় সম্পর্কে আমি বিস্তারিত না জানতে পারছি ততক্ষন পর্যন্ত সেটা সম্পর্কিত কৌতুহল একেবারেই কাটতে চায় না! যার ফলশ্রুতিতে আমার আজকের এই পোস্ট!


পারমানবিক বোমার ইতিকথাঃ- সর্ব প্রথমে জেনে নেওয়া দরকার যে পারমানবিক বোমাটা আসলে কি? যীশুখৃষ্টের জন্মের ৪০০ বছর আগে থেকেই এটম সম্পর্কে মানুষের ধারণা ছিলো। গ্রীক দার্শনিক 'ডেমোক্রিটাস (Democritus)' বলেছিলেনঃ- "যদি কোনো বস্তুকে ক্রমাগত বিভক্ত করা হয়, তাহলে বস্তুটি ক্রমান্বয়ে এমন এক পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছবে যখন তাকে আর খন্ডিত করা যাবে না। বস্তুর এই ক্ষুদ্রতম অংশকেই গ্রীক দার্শনিকরা নাম দিয়েছিলেন পরমাণু (Atom)।"

এটি এসেছে গ্রীক শব্দ থেকে, যার বাংলা অর্থ - "অবিভেজ্য অথ্যাৎ যাকে আর ভাঙ্গা যায় না।" ডেমোক্রিটাসের মতে বিশ্বের যাবতীয় বস্তুই পরমাণু দ্বারা গঠিত আর বাকি অংশ সব শূন্য!

প্রাকৃতিক বস্তু সম্পর্কে প্রাচীন গ্রীক দার্শনিকের এই মতবাদ মানুষ প্রায় ভুলেই গিয়েছিলো। কিন্তু এর প্রায় ২,০০০ বছর পরে ১৮০৩ সালে লন্ডনের রসায়ন শাস্ত্রবিদ 'জন ডাল্টন (John Dalton)' প্রথম নতুন করে আবার এটম সম্পর্কে মতবাদ দিলেন । তিনিও বিশ্বাস করতেন- 'বিশ্বের যাবতীয় বস্তুই এটম দ্বারা গঠিত, যার কোনো ধ্বংস নেই। সে পরিবর্তিত হয় অথবা নতুন করে সৃষ্টি করে। তিনি আরো বিশ্বাস করতেন বিভিন্ন এটম দ্বারাই কোনো বস্তুর অণু গঠিত হয়।'

এরপর ১৮৯০ সালে লন্ডনের পদার্থ বিজ্ঞানী 'স্যার জোসেফ জন থমসন (Sir Joseph John Thomson)' এক পরীক্ষার দ্বারা দেখালেন যে, যদি আলোর মধ্য দিয়ে বিদ্যুৎ তরঙ্গ প্রবাহিত করা যায় তবে তা কোনো বস্তুকে নেগেটিভ চার্জ করে। কতিপয় বিজ্ঞানী পরমাণুর এই বস্তুটির নাম দিলো 'ইলেকট্রন'। থমসন বললেন, নেগেটিভ চার্জযুক্ত ইলেকট্রন এটমের অভ্যন্তরে পজিটিভ চার্জযুক্ত অন্য কোনো বস্তুকে ঘিরে আছে।


এছাড়াও এই পারমানবিক বোমা সম্পর্কে আরও একজন বিখ্যাত বিজ্ঞানী সচ্ছ ধারনা লাভ করতে পেরেছিলেন। তিনি হলেন বিজ্ঞানী স্যার আলবার্ট আইনস্টাইন। বিজ্ঞানের ইতিহাসে যার নাম সারা জীবনের জন্য অবিস্মরনীয় হয়ে থাকবে। পদার্থ যে শক্তিতে রূপান্তরিত হয় তা বিজ্ঞানী আইনস্টাইনের আগে কেউ ভাবতে পারেননি। ১৯০৫ খৃষ্টাব্দে তিনি মানুষের চিন্তার জগতে কয়েকটি বৈপ্লবিক ধারনার সৃষ্টি করেছিলেন। এই ধারণাগুলির মধ্যে ভর ও শক্তির বিনিময়তা ছিল অন্যতম ।


"তার সেই বিখ্যাত সমীকরণটি হল- E=mc2। এখানে E দ্বারা শক্তি, m দ্বারা ভর এবং c দ্বারা প্রতি সেকেন্ডে আলোর বেগকে বোঝান হয়েছে।"

অর্থাৎ পদার্থের ভরকে আলোর বেগের বর্গ দ্বারা গুণ করলে যে শক্তি পাওয়া যায় সেটাই হল ঐ পরিমাণ পদার্থের আবদ্ধ শক্তি। আমরা জানি যে আলোর বেগ প্রতি সেকেন্ডে ৩০ কোটি মিটার অর্থাৎ ১,৮৬০০০ মাইল । সুতরাং খুব অল্প পরিমাণ পদার্থকেও যদি ৩০ কোটির বর্গ দিয়ে গুণ করা হয় তাহলে যে বিপুল পরিমাণ শক্তি পাওয়া যাবে, সেটার হিসাব বের করা খুব একটা কঠিন ব্যাপার নয়। তখন তার মর্ম না বুঝলেও পরবর্তিতে মানুষ তার মর্ম যথাযথ ভাবে বুঝেছে। এবং পরবর্তী সময় বিজ্ঞানী 'করক্রফট এবং ওয়াগটন' তেজস্ক্রিয় পদার্থের বিভাজনের উপর পরীক্ষা করে আইনস্টাইনের ভরশক্তি (E=MC2) সূত্রের সত্যতা প্রমাণ করেন।


১৯১১ সালে পদার্থ বিজ্ঞানী 'আর্নেস্ট রাদারফোর্ড (Ernest Rutherford)' এটম সম্পর্কে দিলেন তার নিজস্ব মতবাদ। রাদারফোর্ড সম্পূর্ন একক প্রচেষ্টায় পরমাণুর একটি মডেল আবিষ্কার করেন । তিনি হাতে কলমে দেখালেন যে, এটমের অভ্যন্তরে কতগুলো বস্তু কুন্ডলীকৃত হয়ে আছে। তিনি এর নাম দিলেন 'নিউক্লিয়াস'। এই ক্ষুদ্র নিউক্লিয়াসই এটমের কেন্দ্রস্থল। এর চারপাশ ঘিরে আছে ইলেকট্রন। নিউক্লিয়াসে থাকে ধনাত্মক আধান বিশিষ্ট প্রোটন, এবং চার্জ নিরপেক্ষ নিউট্রন। আর নিউক্লিয়াসের বাইরে বৃত্তাকার কক্ষ পথে থাকে ঋণাত্মক আহিত ইলেকট্রন। ইলেকট্রনগুলো সর্বদা ঘূর্ণায়মান।

পরমাণুর মোট ভরের শতকরা ৯৯.৯৭৫ অংশ অবস্থিত এই নিউক্লিয়াসে। এর গড় ঘনত্ব প্রতি ঘন সেন্টিমিটারে প্রায় ৩x১০০০০০০০০০০০০ কিলোগ্রাম। পরমাণুর উপাদান প্রোটন, নিউট্রন ও ইলেকট্রনের মোট ভরের তুলনায় পরমানুটির ভর যতটা কম তাকেই শক্তির একক কে E=mc2 প্রকাশ করলে আমরা পরমাণুর সংযোগী শক্তির সন্ধান পাই ।

১৯১৩ সালে বিজ্ঞানী 'নীলস বোর (Neils Bohr)' এটমের নিউক্লিয়াসের সঠিক কাঠামো নির্দেশ করেন। তিনি ব্যাখ্যা করে দেখান কেমন করে এটম আলোর প্রকৃতিতে শক্তির সৃষ্টি করে।


১৯৩৮ সালে জার্মানীর 'অটোহান এবং স্ট্র্যাসম্যান' নামে দুইজন রসায়নবিদ 'ইউরিনিয়াম-২৩৫' মৌলের পরমাণু ভাঙ্গতে সফল হন। এবং এর ফলে হঠাৎ করে সারা বিশ্বে হৈচৈ পড়ে যায়। ২৭ ডিসেম্বর ১৯৩৮ সালের এক অধিবেশনে বোর পরমাণুর ভাঙ্গন ও তার ব্যাখ্যা বিজ্ঞানীদের কাছে ঘোষণা করলেন । বোরের ভাষণ শেষ হওয়ার আগেই শ্রোতাদের মধ্য থেকে বেশ কয়েকজন দ্রুত সভাকক্ষ ত্যাগ করে টেলিফোনে ব্যাপারটা স্ব স্ব গবেষণাগারে জানিয়ে দিলেন। কয়েকদিনের মধ্যেই ওয়াশিংটনের কারনেজ ইনস্টিটউশন এবং কলম্বিয়া বিম্ববিদ্যায়ের বিজ্ঞানীরা হান-স্ট্র্যাসম্যানের আবিষ্কারকে স্বীকৃতি জানালেন। কারণ পারমাণবিক বোমা নির্মাণের মূল চাবিকাঠি নিহিত ছিল এই আবিষ্কারটিতেই।

নির্ধারিত কোন কোন ভারী পরমাণুর একের পর এক পর্যায়ক্রমিক বিভাজন প্রক্রিয়াকে সমপ্রতিক্রিয়াধারা বলা হয়।

সহজে বিদারণীয় মৌল দ্বারা বন্দীকৃত এই নিউট্রিন পরবর্তী পর্যায়ের বিভাজন ঘটায় এবং এ ভাবেই ধারাটা চলতে থাকে। পারমাণবিক বোমায় এই প্রক্রিয়া ব্যবহার করা হয়। পারমাণবিক শক্তি বা অস্ত্র উৎপাদনের জন্য দরকার এমন একটি প্রক্রিয়ার সূচনা করা যাকে বলা হয় সমপ্রতিক্রিয়াধারা। ইউরিনিয়াম নিউক্লিয়াস মোটামুটি সমান দু’ভাগে বিভক্ত হলে যদি সেই সাথে এক বা একাধিক নিউট্রন নির্গত হয় তাহলেই শুধু সমপ্রতিক্রিয়াধারা ঘটানো সম্ভব।

১৯৩৯ খ্রীষ্টাব্দে 'জোলিয়ো কুরি' ও তার সহযোগিরা দেখালেন যে ইউরিনিয়াম নিউক্লিয়াস ভাঙ্গলে নিউট্রন বের হয়ে আসে। ইহাছাড়াও ঐ একই সালে আরও অনেক বিজ্ঞানী ইউরেনিয়ামের এটমকে ভাংতে সক্ষম হন। তারা দেখলেন যে, ইউরেনিয়ামের এটম ভাংলে প্রচন্ড শক্তির সৃষ্টি করে। এই শক্তিকে সামরিক কাজে ব্যবহার করা যায় কিনা বিজ্ঞানীরা তারও সম্ভাব্যতা পরীক্ষা করে দেখতে লাগলেন।


ঠিক সেই সময়েই বেজে উঠল দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের দামামা। এই যদ্ধের ভয়াবহতা যখন চারিদিকে ছড়িয়ে পড়তে লাগল তখন ১৯৩০ সালে ইউরোপ থেকে পালিয়ে আশা তিন বিজ্ঞানী লিও শিলার্ড, এডওয়ার্ড টেলার, এবং ইউজিন একটা নতুন ফন্দি আবিষ্কার করলেন। তারা ইউরোপকে চরম শিক্ষা দিতে চাইলেন। তারা সব সময় চাইতেন যে, পারমানবিক বোমা তৈরিতে আমেরিকান প্রশাসন উদ্যোগ নেওয়া শুরু করুক। কিন্তু তাদের মধ্যে কারোরই তেমন রাজনৈতিক প্রভাব ভাল ছিল না। সুতরাং তারা বাধ্য হয়ে বিজ্ঞানী আইনস্টাইনের শরণাপন্ন হলেন। এবং তাদের অনুরোধেই আইনস্টাইন ১৯৩৯ সালের ২রা আগষ্ট মার্কিন পেসিডেন্ট ফ্রাংকলিন ডি রুজভেল্ট'কে একটি চিঠি লিখলেন। উক্ত চিঠিটি 'আলেক্সান্ডার স্যাকস' এর হাত ঘুরে প্রেসিডেন্টের হাতে পৌঁছালো প্রায় দুই মাস পর ১১ই অক্টোবর ১৯৩৯ সালে। যে চিঠিতে তিনি ইউরেনিয়াম-২৩৫ সমৃদ্ধকরনে জার্মানীর নাৎসী বাহিনীর অগ্রগতি সম্পর্কে প্রেসিডেন্টকে সতর্ক করে দেন এবং তাকে পারমানবিক বোমা তৈরির উদ্যোগ নিতে বলেন। চিঠির প্রতি উত্তরে প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট সেনা ও নৌবাহিনীর সমন্বয়ে ইউরেনিয়াম গবেষনার জন্য একটি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত জানান পদার্থ বিজ্ঞানীকে।


কিন্তু শুধু আমরিকা নয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালিন সময়ে যুদ্ধরত সমস্ত দেশই পারমানবিক বোমার দিকে এগুচ্ছিল। একদিকে যুদ্ধের ব্যয় মিটাতে বৃটেনের তখন অত্যন্ত করুন অবস্থা। জার্মানী ইউরেনিয়াম ফিসন গবেষনার কাজে এগিয়ে থাকলেও যুদ্ধকালিন সময়ে এদিকে নজর দেওয়ার সময় তার একেবারেই ছিলনা। রাশিয়াও ততদিনে পারমানবিক বোমার মূল সূত্র ভাল ভাবে আয়ত্ব করতে পারেনি। যুদ্ধের কারনে জাপানে তখন ঘাটতি চলছে। তাদেরও পারমানবিক গবেষনার মত টাকা নেই। ঠিক সেই সুযোগে অপেক্ষাকৃত কম ক্ষতিগ্রস্থ দেশ যুক্তরাষ্ট্র এগিয়ে গেল পারমানবিক বোমা আবিষ্কারের দিকে। এবং অবশেষে ১৯৪০ সালে আণবিক শক্তিকে সামরিক কাজে ব্যবহার করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র সরকার অনেক বড় অংকের বাজেট বরাদ্দ করলেন। গবেষণার ফল ভালোই হলো। ১৯৪২ সালে যুক্তরাষ্ট্র সরকার পারমাণবিক বোমা তৈরীর সরকারী অনুমোদন দান করলেন। এ বছরেরই ২রা ডিসেম্বর তারিখে বিজ্ঞানী 'ফার্মী (Fermi)' এবং তার সহকর্মীরা ইউরেনিয়াম থেকে প্লুটোনিয়াম গঠনে সক্ষম হন এবং ইউরেনিয়াম-২৩৮ থেকে ইউরেনিয়াম-২৩৫ কে আলাদা করতে সক্ষম হলেন। ১৯৩৯ সাল থেকে শুরুকরে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত বছরে ২০০ কোটি ডলারেরও বেশি খরচ করে প্রথম সাফল্যজনক ভাবে যে প্রকল্প 'পারমানবিক বোমা' তৈরি করতে পারলো, তার নাম ছিল "ম্যানহাট্রন প্রজেক্ট"। আর এর প্রধান ছিলেন পারমানবিক বোমা তৈরির জনক হিসাবে পরিচিত বিজ্ঞানী 'রবার্ট ওপেনহেইমার'


ম্যান হাট্রন প্রজেক্টে কর্মরত উল্লেখ যোগ্য বিজ্ঞানীরা হলেন- "রবার্ট ওপেনহেইমার, ডেভিড বম, লিউ শিলার্ড, ইউজিন উইগনার, অটো ফ্রিশ, রুডলফ পিয়ারলস, ফেলিক্স ব্লক, নেইল বোর, এমিলিও সেগর, জেমস ফ্রাঙ্ক, এরিকো ফারমি, ক্লাউস ফুক্স এবং এডওয়ার্ড টেলার প্রমুখ।


অবশেষে তৈরি হলো সেই বিধ্বংসী বোমাঃ- পারমাণবিক বোমা তৈরির জন্য যে পদার্থটি ব্যবহৃত হয় তার নাম ইউরেনিয়াম (Uranium). বিজ্ঞানীরা সংক্ষেপে পদার্থটির নাম বোঝানোর জন্য শুধু এর প্রথম অক্ষরটি (U) ব্যবহার করেন। ইউরেনিয়াম অত্যন্ত ভারী তেজস্ক্রিয় পদার্থ। ভূ-পৃষ্ঠের উপরিভাগে এ পদার্থের পরিমাণ শতকরা ০.০০৪% ভাগ। ভূ-ত্বকের ৬.৪০ কিলোমিটার গভীর পর্যন্ত এর মজুদের পরিমাণ প্রায় ১৩,০০,০০,০০,০০,০০,০০০ টন। আফ্রিকার বলিভিয়ান কঙ্গোতে এবং কানাডার গ্রেট বিয়ার হৃদ এলাকায় এর আকরিক পাওয়া গেছে। এছাড়াও অ্যারিজোনা, ক্যালিফোর্নিয়া, কলোরাডোতেও অল্পবিস্তর ইউরেনিয়ামের আকরিকের সন্ধান পাওয়া গেছে। আকরিক থেকে শোধন করে ইউরেনিয়াম আইসোটোপ পাওয়া যায়। যেমন-ইউরেনিয়াম-২৩৮, যার পারমাণবিক ওজন ২৩৮ অর্থাৎ এর নিউক্লিয়াসে আছে ৯২টি প্রোটন এবং ১৪৬টি নিউট্রন। প্রকৃতিতে এধরনের আইসোটোপই বেশিমাত্রায় পাওয়া যায়। এক হিসাবে দেখা গেছে শতকরা ৯৯.৩% ভাগই এ জাতীয় ইউরেনিয়াম। দ্বিতীয় আইসোটোপটির নাম ইউরেনিয়াম-২৩৫ অর্থাৎ এর নিউক্লিয়াসে আছে ৯২টি প্রোটন এবং ১৪৩টি নিউট্রন। প্রকৃতিতে এদের পরিমাণ শতকরা মাত্র ০.৭% ভাগ। তৃতীয় প্রকারের আইসোটোপের পরিমাণ একেবারেই নগণ্য, যা প্রায় হিসেবের মধ্যেই ধরা হয় না।

পারমাণবিক বোমা তৈরির জন্য ব্যবহৃত হয় ইউরেনিয়াম-২৩৫। ইউরেনিয়াম-২৩৮ কে নিউট্রন কণা দ্বারা আঘাত করলে নিউট্রন এর নিউক্লিয়াসে ঢুকে পড়ে এবং সামান্য সময়ের জন্য এর পারমাণবিক ওজন দাঁড়ায়-২৩৯। ইউরেনিয়াম পরমাণুটি সাথে সাথে দুটো নিউক্লিয়ার ইলেকট্রন অর্থাৎ দুটি বীটা রশ্মি ত্যাগ করে প্লুটোনিয়াম পরমাণুতে পরিণত হয়। প্লুটোনিয়ামের পারমাণবিক ওজন হয়-২৩৯। কিন্তু ইউরেনিয়াম-২৩৫ এর বেলায় প্লুটোনিয়াম হয় না। বিজ্ঞানী অটোহ্যান ইউরেনিয়াম-২৩৫ এর উপর শক্তিশালী নিউট্রন নিক্ষিপ্ত করে ভিন্ন ব্যাপার অবলোকন করেন।


আসলে বিজ্ঞানী অটোহ্যানের এই পরীক্ষার ফলাফলই হলো পারমাণবিক বোমা তৈরির মূল তত্ত্ব। ইউরেনিয়াম-২৩৫ এর উপর নিউট্রন দ্বারা আঘাত করলে ইউরেনিয়াম পরমাণুটি দুটো পৃথক অংশে বিভক্ত হয়ে পড়ে। তার মানে ইউরেনিয়াম ধ্বংস হয়ে নতুন মৌলিক পদার্থের সৃষ্টি করে। এই নতুন পদার্থের একটির নাম বেরিয়াম পরমাণু এবং অপরটি ক্রিপটন পরমাণু। বেরিয়াম এবং ক্রিপটন পরমাণু সৃষ্টি হবার সাথে সাথে তিনটি নতুন নিউট্রন কণা এবং বিপুল পরিমাণ শক্তির সৃষ্টি করে। সৃষ্ট এই তিনটি নিউট্রন পরমাণু অন্য তিনটি অক্ষত ইউরেনিয়াম পরমাণুকে আঘাত করে এবং একই পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি ঘটে। ইউরেনিয়াম পরমাণুর খন্ডিত হওয়ার এই প্রক্রিয়াকে বলা হয় 'বিভাজন বিক্রিয়া বা ফিউশন বিক্রিয়া'

পরমাণু বিভাজন হওয়ায় যে নতুন নিউট্রন কণার জন্ম দেয় তা আবার অন্য পরমাণুকে আঘাত করে। এভাবেই বিক্রিয়াটি চলতে থাকে ধারাবাহিক ভাবে। যাকে বলা হয় Chain Reaction. কিন্তু শক্তির সৃষ্টি হয় কেমন করে ওটাই হলো আসল কথা। যেহেতু ইউরেনিয়াম একটি তেজস্ক্রিয় পদার্থ সেজন্য সে স্বতঃস্ফুর্তভাবে রশ্মি বিকিরণ করে এবং স্থায়িত্ব আনার চেষ্টা করে। কিন্তু এর স্থায়িত্ব কম বলে এর নিউক্লিয়াস অন্য পরমাণুর নিউক্লিয়াসের তুলনায় সহজে ভেঙ্গে যায়। বিভাজন প্রক্রিয়াটি ঘটে যাওয়ার পর ইউরেনিয়াম পরমাণুর অস্তিত্ব লোপ পেয়ে যায় এবং সাথে সাথে কিছু পদার্থের ক্ষয় হয়। তার মানে দুটো নতুন পদার্থ বেরিয়াম এবং এবং ক্রিপটন তৈরি হয়। তাদের মোট ওজন ইউরেনিয়ামের মোট ওজনের চেয়ে কিছু কম হয়।


পারমানবিক অস্ত্র উৎপাদনের মূল প্রতিবন্ধকতা হল, প্রকৃতিতে প্রাপ্ত মৌলের সল্পতা। প্রকৃতিতে ঠিক যে পরিমাণ ইউরেনিয়াম মজুদ আছে তার ৯৯.২৯% শতাংশ হল ইউরেনিয়াম-২৩৮ আইসোটোপ, যা দিয়ে কোন মতে পারমানবিক অস্ত্র তৈরি করা সম্ভব নয়। কারন ইউরেনিয়াম-২৩৮ স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে নিউট্রন কণিকা নির্গমন করে ভেঙে যায়। তাই বাকি মাত্র ০.৭৯% শতাংশ প্রকৃতি থেকে প্রাপ্ত ইউরেনিয়ামকে পৃথক করতেই মূল বাজেটের প্রায় ৯০% শতাংশ খরচ হয়ে যায়। এই পৃথকীকরনের কাজে যে যন্ত্রটি ব্যবহার করা হয় তার নাম 'সেন্ট্রিফিউজ'। আবার এই যন্ত্র দিয়ে ইউরেনিয়াম-২৩৮ কে প্লুটোনিয়াম-২৩৯ আইসোটোপে পরিনত করা সম্ভব যা ফিসাইল যোগ্য। ২০% বিশুদ্ধ ইউরেনিয়াম-২৩৫ আইসোটোপকে বলা হয় হাইলি এনরিচড বা (HEU) এবং ৮০% বা তার অধিক বিশুদ্ধ ইউরেনিয়াম-২৩৫ কে বলা হয় উইপন্স গ্রেডেড ইউরেনিয়াম।


এখন প্রশ্ন থেকে যায় যে, একটি পারমানবিক বোমা বানাতে কতটুকু ইউরেনিয়াম বা প্লুটোনিয়াম লাগবে? প্রতিটি পারমানবিক অস্ত্র তৈরিতে সর্বনিম্ন যে পরিমান ফিসাইল পদার্থের প্রয়োজন হয়, তাকে 'সংকট ভর বা ক্রিটিক্যাল মাস' বলা হয়। অথ্যাৎ এর কম পরিমান ফিসাইল পদার্থ থাকলে একটি স্থিতিশীল নিউক্লিয়ার চেইন বিক্রিয়া শুরু হয় না। এই সংকট ভর ফিসাইল পদার্থের ঘনত্ব, আকৃতি, বিশুদ্ধতা এবং পদার্থটিকে ঢেকে রাখার জন্য যে বহিরাবনের ধাতব আবরন বা শেল ব্যবহার করা হয় তার উপর নির্ভর করে। এখানে বলে রাখা ভাল যে, ফিসাইল পদার্থ তেজস্ক্রিয় বলে তারা সর্বদা স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে নিউট্রন কনিকা নিঃস্বরন করে। সংকট ভরের চেয়ে কম পরিমান ফিসাইল পদার্থকে 'সাব ক্রিটিক্যাল মাস বা অসংকট ভর' এবং সংকট ভরের চেয়েও বেশি পরিমান ফিসাইল পাদার্থকে 'সুপার ক্রিটিক্যাল মাস বা অতি সংকট ভর' বলে। একটি বিশুদ্ধ ইউরেনিয়ামের সংকট ভর ৫৬ কিলোগ্রাম এবং যা প্লুটোনিয়ামের ক্ষেত্রে অনেক কম, মাত্র ১০ কিলোগ্রাম। অথ্যাৎ একটি পারমানবিক বোমা তৈরি করতে কমপক্ষে ৫৬ কিলোগ্রাম ইউরেনিয়াম অথবা ১০ কিলোগ্রাম প্লুটোনিয়াম লাগবে। এখন অবশ্য মাত্র ০৫ কিলোগ্রাম প্লুটোনিয়াম দিয়ে স্যুটকেস আকারের পারমানবিক বোমা প্রস্তুত করা সম্ভব হচ্ছে। তবে এ ক্ষেত্রে শর্ত হলো, প্লুটোনিয়ামের বিশুদ্ধতা অত্যন্ত বেশি হতে হবে।


ম্যানহাট্রন প্রজেক্টের বিস্তারিত বর্ননাঃ- "ম্যানহাট্রন প্রজেক্ট" আগেই প্রতিষ্টা লাভ করলেও মূলত এটি পূর্নাঙ্গ ভাবে কাজ শুরু করে 'লেসলি রিচার্ড গ্রোভের নেতৃত্বে ১৯৪২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে'। গ্রোভস ছিলেন সত্যিই একজন দক্ষ সংগঠক। তিনি অল্প দিনের মধ্যেই পারমানবিক বোমা তৈরির জন্য পর্যাপ্ত পরিমানে ইউরেনিয়াম জোগাড় করে ফেললেন। আর এই পারমানবিক বোমা তৈরির ফ্যাক্টরি স্থাপনের জন্য নিয়োগ করলেন শিল্প কোম্পানী 'ডুপোন্ট এবং কেলগ কর্পোরেশনকে'। নিউ মেক্সিকো অঙ্গরাজ্যের লস আলামস এ অস্ত্র পদার্থ বিজ্ঞান নকশা এবং গবেষনার জন্য স্থাপিত হলো প্রকল্প ওয়াই (Y) । এবং ডঃ রবার্ট ওপেন হেইমারকে এর প্রধান হিসাবে নিযুক্ত করলেন যিনি ছিলেন ক্যালির্ফোনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন পদার্থ বিদ্যার অধ্যাপক। বিশিষ্ট পরমানু গবেষক ফার্মি তার নিউক্লিয়ার রিয়্যাক্টর সিপি-১ এর মাধ্যমে ইউরেনিয়াম এবং গ্রাফাইট ব্যবহার করে ১৯৪২ সালের ০২রা ডিসেম্বর প্রথম উৎপাদন করলেন পারমানবিক শক্তি। জানুয়ারী ১৯৪৩ সালে গ্রোভস ওয়াশিংটনে প্রতিষ্টা করলেন প্লুটোনিয়াম গবেষনা এবং উৎপাদন কারখানা। এবং একই সালের মার্চ মাসে পূর্নউদ্দ্যোমে কাজ শুরু করা হলো লস আলমাসে। সাথে সাথে ঐ সময়েই যুদ্ধক্ষেত্রে পারমানবিক বোমা ব্যবহারের জন্য বিমানের প্রস্তুতি, বৈমানিকদের প্রশিক্ষন এবং বিমান ক্ষেত্র প্রস্তুতের জন্য গ্রহণ করা হলো অপর এক প্রকল্প যার নাম "প্রোজেক্ট আলবার্টা"

১৯৪৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ম্যানহাট্রন প্রজেক্টকে সর্বাধিক অগ্রাধিকার প্রকল্প হিসাবে (AA-1) হিসাবে চিহ্নিত করা হলো। লেসলী গ্রোভ পারমানবিক বোমার প্রথম পরীক্ষার দিন নির্ধারন করলেন ১৯৪৫ সালের বসন্তের মাঝা-মাঝি সময়ে। এবং এই পরীক্ষার জন্য '১৭ টি বি-২৯' বোমারু বিমানকে পরমানু বোমা ফেলার অত্যন্ত উপযোগী করে গড়ে তোলা শুরু হলো।


প্রথম পারমাণবিক বোমা বিষ্ফোরণঃ- অনেক কাঠখড় পোড়ানোর পরে অবশেষে ১৯৪৫ সালে পারমানবিক বোমার পরীক্ষামূলক পর্বপ্রস্তুতি চুড়ান্ত ভাবে শেষ হল। এখন প্রয়োজন শুধু সরেজমিনে পরীক্ষা। লস আলামাস থেকে ১২০ মাইল দূরে অবস্থিত আলামগোরজে বিমান বেসকে এই পরীক্ষার জন্য উপযুক্ত স্থান হিসাবে চিহ্নিত করলেন জেনারেল গ্রোভস। যদিও নিরাপত্তার কারনে এই স্থানটি ছিল যথেষ্ট দূরবর্তি এবং বিচ্ছিন্ন, তথাপি মানুষের বিভ্রান্তির জন্য একটি বানোয়াট কাহিনী প্রচার করা হলো যে, এই বিমান বেস এ সংরক্ষিত সব জিনিসপত্র এক অপ্রত্যাশীত ভাবে বিষ্ফোরন ঘটে নষ্ট হয়ে গেছে।

প্রথম পারমানবিক বোমার জন্য প্রয়োজনীয় প্লুটোনিয়াম জুলাই মাসের প্রথমেই লস আলামাসে পৌছে ছিল। ১২ই জুলাই দুপুরে মহামূল্যবান এই বস্তুটিকে আলামগোরজোতে স্থানান্তর করা হল। কয়েক ঘন্টার মধ্যেই অপারমাণবিক অংশ সমূহ কে বহন করে এক সারি গাড়ির মিছিল গন্তব্য স্থানের দিকে রওয়ানা হলো। গন্তব্য স্থানটি হলো সেই জনমানব শূন্য মরু অঞ্চল Jornada del Muerto (The Journey of Death)। যেখানে এই বিষ্ফোরনের উদ্দেশ্যে ১০০ ফুট উচু একটি ধাতব টাওয়ার নির্মান করা হয়েছিল। ঐ স্থানটির সাংকেতিক নাম দেওয়া হলো ট্রিনিটি এবং যে পারমানবিক বোমাটি পরীক্ষার জন্য নির্ধারন করা হয়েছিল তার নাম ছিল গেজেট। সন্ধার মধ্যেই সব কিছুর প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হল, বাকি রইল শুধু বিস্ফোরক সলতেটি ঢোকানো।


পরের দিন সকালে বোমাটিকে টাওয়ারের উপর একটি প্ল্যাটফর্মে উত্তোলন করা হল । বিকাল ৫টার মধ্যে সব প্রস্ততি সমাপ্ত হল। পরীক্ষার সময় নির্ধারিত হল ১৬ জুলাই সূর্যোদয়ের সাড়ে চার ঘন্টা পূর্বে অর্থাৎ রাত আড়াইটার সময়। ১৫ জুলাই মধ্য রাত্রির কিছু পূর্বে এই সময় পরিবর্তন করা হয়। রাত তিনটার সময় গ্রোভস এবং ওপেনহাইমার লক্ষ্য করলেন যে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন। যার কারণে সময় আবারও পিছিয়ে দিলেন। সময় চূড়ান্তভাবে নির্ধারিত হল সকাল সাড়ে পাঁচটা অর্থাৎ সূর্যোদয়ের এক ঘন্টা আগে। যে পাঁচজন লোক টাওয়ারে বসে শেষ মুহূর্তের কাজগুলি সমাধা করছিলেন তাদেরকে সকাল পাঁচটায় স্থান ত্যাগ করার জন্য আদেশ দেওয়া হল। প্রত্যেকেই তারা নেমে এসে নিজ নিজ গাড়িতে চড়ে বিপজ্জনক এলাকা ত্যাগ করলেন।


টাওয়ার এবং তার উপরে অবস্থিত বস্তুটি আলোকিত করার জন্য বিরাট ফ্লাডলাইট জ্বালানো হল । টাওয়ার থেকে মাত্র সতের হাজার গজ দূরে অবস্থিত মূল শিবির । জেনারেল গ্রোভস এই শিবিরে ফিরে আসার দশ মিনিট পর চূড়ান্ত গণনা শূরু হল । সময়ের ব্যবধান যতই কমতে লাগল মিনিট থেকে এসে সেকেন্ডে ঠেকল, আশঙ্কা-উদ্বেগের পরিমাণ সেই তালে লাফিয়ে লাফিয়ে দ্রুত লয়ে বাড়তে লাগল । নিমিষের মধ্যে যা ঘটতে যাচ্ছে তার প্রলঙ্করের সম্ভাবনা সম্বন্ধে এই শিবিরের সকলেই সচেতন ছিলেন । বিজ্ঞানীরা অনুভব করছিলেন যে তাঁদের হিসাব নিকাস সঠিক। সুতরাং বোমাটির বিস্ফোরণ একদমই অবধারিত । কিন্তু একই সাথে প্রত্যেকের মনের গহনে বেশ জোরালো সন্দেহও লুকিয়ে ছিল ।


রেডিওতে গণনা যখন ১০, ৯, ৮, ৭, ৬, ৫-এ ভাবে শূণ্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল তখন একটি খুঁটিতে ভর করে বিজ্ঞানী গ্রোভস কাঠের মত নিশ্চপ হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। নিস্তব্ধ ঘরটিতে 'এখন' শব্দটি উচ্চারিত হওয়ার সাথে সাথেই কয়েকটি মধ্যাহ্ন সূর্যের আলোর সমান দ্বীপ্তিতে বিদ্যুৎ চমকের মত উদ্ভাসিত হয়ে উঠলো গোটা মরুভুমি, প্রায় দু’শ মাইল পর্যন্ত দেখা গেল জলন্ত বহ্নিশিখার আলো। এটার রঙ সোনালী, রক্তবর্ণ, বেগুনী, ধুসর এবং নীল। এই আলো নিকটবর্তী পর্বতমালার প্রতিটি শৃঙ্গ, শৈলশিরা এবং তুষারস্তুপের ফাটলকে এমন সুস্পষ্ট ও সুষমার সাথে প্রদীপ্ত করেছিল যা অবর্ণনীয়।


সেই বিস্ফোরনের আলো এতটাই উজ্জল ছিল যে দূর দূরান্তের মানুষ ভাবল আজ সূয্য দুই বার উঠল নাকি? মূহুর্ত্বের মধ্যে কমলা রংয়ের আলোর কুন্ডলির মেঘ সেকেন্ডে ৩৬০ ফুট থেকে উঠে গেল ৩০০০০ ফুট উচুতে। প্রত্যক্ষ দর্শনেই যা শুধু কল্পনীয় । মহান কবিরা যে সৌন্দর্যের শুধু স্বপ্ন দেখেছিলেন, এ সেই সৌন্দর্য! কিন্তু তাদের বর্ণনায় এ সৌন্দর্যের রুপ ধরা পড়ে নি। পৃথিবীর এই প্রথম পারমাণবিক বিষ্ফোরণ প্রত্যক্ষ করতে যে সব বিজ্ঞানীরা উপস্থিত ছিলেন তাদের সবারই মোটামুটি একই ধরণের প্রতিক্রিয়া হয়েছিল । ওপেনহাইমার স্মৃতিচারণ করেছেন, "উপস্থিত ব্যক্তিদের কেউ কেউ হেসেছিলেন, কয়েকজন কেঁদে ফেলেছিলেন, তবে বেশীরভাগই ছিলেন স্তব্ধ ।"


পরবর্তী কয়েক ঘন্টায় সংগৃহীত উপাত্ত থেকে জানা গেল, যে রকমটি আশা করা হয়েছিল তার চেয়ে অনেক বেশী জোড়ালো হয়েছে বিষ্ফোরণ । গ্রোভস সমরমন্ত্রী স্টিমসনকে জানালেন যে ১৫,০০০ থেকে ২০,০০০ টন টি. এন. টি –র সমতুল্য বিষ্ফোরণ ঘটেছে । সবাই আশ্চার্য হয়ে দেখল, যে ইস্পাতের টাওয়ারটির সাথে বোমাটি বেঁধে দেওয়া হয়েছিল সেটি প্রচন্ড উত্তাপে বাষ্পীভূত হয়ে গেছে ।

বিস্ফোরনের ভয়াবহতা প্রত্যক্ষ করে বিজ্ঞানী ইসিডর রাবি প্রতিক্রিয়া ব্যাক্ত করলেন এভাবে যে, 'প্রকৃতির সমস্থ নিয়ম আজ উল্টে গেল, মানুষ আজ থেকে পৃথিবী ধংসের বিধাতা হল'।


পারমানবিক বোমার বাস্তব প্রয়োগঃ- এরপর বিশ্বের প্রথম আণবিক বোমার বাস্তব প্রয়োগ হয় ১৯৪৫ সালের ৬ আগস্ট তারিখে জাপানের হিরোসিমা শহরে বোমা নিক্ষেপের মধ্য দিয়ে। হিরোসিমাতে যে পারমাণবিক বোমাটি নিক্ষেপ করা হয়েছিলো তার ধ্বংস ক্ষমতা ছিলো ১৩,০০০ শর্ট টন (১১,৮০০ মেট্রিক টন) টিএনটি। বোমাটির নিজের ওজন ছিলো ৯,০০০ পাউন্ড (৪,১০০ কেজি)। এতে এক মূহুত্বেই প্রাণহানি ঘটেছিলো ৭৫ হাজার লোকের। এবং ডিসেম্বরে এর মোট মৃতের সংখ্যা দাড়ায় প্রায় ১ লক্ষ ৬৬ হাজার। এর একটি সৌখিন নামও ছিলো 'ক্ষুদে বালক' (Little Boy).


প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ননা মতে, ১৯৪৫ সালের ৬ আগস্ট রাত ভোর হওয়ার আগেই ২টা ৪৫ মিনিটে 'এনোলা গে' নামের একটি বি-৫৯ বোমারু বিমান মেরিয়ানার টিনিয়ান দ্বীপ থেকে জাপান অভিমুখে রওনা দেয়। বিমানটির বিশেষভাবে নির্মিত বোমার খাঁচায় ছিল 'লিটল বয়' সাংকেতিক নামের ৯ ফুট লম্বা, ২ ফুট ব্যাসের ও ৯ হাজার পাউন্ড ওজনের একটি আণবিক বোমা। স্থানীয় সময় ৮টা ১৬ মিনিটে হিরোশিমার মাটি থেকে প্রায় ২ হাজার ফুট উপরে থাকা অবস্থায় বোমাটি বিস্ফোরিত করা হয়। বোমাটি ছিল পরিশুদ্ধ ইউরেনিয়াম-২৩৫ দ্বারা তৈরি। ইউরেনিয়ামের প্রধান একটি বড় খণ্ড থেকে কয়েক ফুট দূরে বোমার অপর মাথায়, তার আরেকটি ছোট অংশ রাখা ছিল।


ছোট অংশটিকে ট্রিগারের সাহায্যে বড় অংশে প্রবেশ করানো মাত্র ইউরেনিয়ামের 'ক্রিটিক্যাল ম্যাস' অতিক্রম করায় সেখানে ১৪০ পাউন্ড ইউরেনিয়ামে পারমাণবিক ফিশন প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যায়। ০.০২১ আউন্স ইউরেনিয়ামের ম্যাস মুহূর্তের মধ্যে গতি, তাপ, আলো প্রভৃতি ধরনের শক্তিতে রূপান্তরিত হয়ে অভাবনীয় এক বিস্ফোরণের জন্ম দেয়। বিস্ফোরণের শক্তি ছিল ১৫ হাজার টন টিএনটি-র সমান। বিশাল ব্যাঙের ছাতার মতো কুণ্ডলি হিরোশিমার আকাশকে ছেয়ে ফেলে। মুহূর্তের মধ্যে শহরের ৯০ শতাংশ মাটির সাথে মিশে যায়। নিমেষেই মৃত্যু হয় ৭৫ হাজার মানুষের। ডিসেম্বরের মধ্যে মৃতের সংখ্যা দাঁড়ায় ১ লাখ ৬৬ হাজার।


এরই মাত্র তিনদিন পরে নিক্ষেপ করা হয়েছিলো দ্বিতীয় বোমাটি। ১৯৪৫ সালের ৯ আগস্ট তারিখে জাপানের নাগাসাকি শহরে ফেলা হয়েছিলো দ্বিতীয় বোমাটি। 'বকস্কার' নামের অপর একটি আমেরিকান বি-২৯ বোমারু বিমান দক্ষিণ-পশ্চিম জাপানের কাইউসু দ্বীপের কোকুরা অভিমুখে উড়ে আসে। প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে সে তার গতিপথ পরিবর্তন করে নাগাসাকি শহরের দিকে মুখ ঘুরিয়ে নেয়। সে বহন করেছিল 'ফ্যাট ম্যান' সাংকেতিক নামের আণবিক বোমা। এই বোমার 'কোর'টিতে ছিল তেজস্ক্রিয় প্লুটোনিয়াম।


সেটির চতুর্দিক ছিল তার দিয়ে সংযুক্ত শক্তিশালী বিস্ফোরক পদার্থ। এসব বিস্ফোরক একসাথে বিস্ফোরিত হওয়ার সাথে সাথে 'কোরের' প্লুটোনিয়ামে পারমাণবিক ফিশন-এর চেইন রি-এ্যাকশন শুরু হয়ে যায় এবং বৃহত্তর আণবিক বিস্ফোরণটি ঘটে। সেই বিস্ফোরণের মাত্রা দাঁড়ায় ২২ হাজার টন টিএনটির বিস্ফোরণ- শক্তির সমান। লম্বায় ১২ ফুট ও ব্যাসে ৫ ফুট আয়তনের 'ফ্যাট ম্যান' বোমাটিকে স্থানীয় সময় সকাল ১১টা ০২ মিনিটে বিস্ফোরিত করা হয়। ০.০৩৫ আউন্স প্লুটোনিয়াম ম্যাস বিভিন্ন ধরনের শক্তিতে রূপান্তরিত হয়।


হিরোশিমার বোমার চেয়ে শক্তিশালী হওয়া সত্ত্বেও নাগাসাকির ভৌগোলিক কিছু বৈশিষ্ট্যের কারণে হতাহতের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কিছুটা কম ছিল। কিন্তু তার পরেও এতে লোক নিহত হয়েছিলো ৪০,০০০ জন। এবং গুরুতর আহত হয় আরও প্রায় ৭৫,০০০ হাজার মানুষ। বোমাটির ওজন ছিলো ১০,০০০ পাউন্ড (৪,৫০০ কেজি)। হিরোশিমা এবং নাগাসাকিতে নিক্ষিপ্ত দুটি বোমার আঘাতে নিমেষেই প্রায় লক্ষাধিকেরও বেশি মানুষের প্রানহানী ঘটেছিল। আহত হয়েছিল আরও প্রায় দেড় লক্ষাধিক মানুষ। যাদের অনেকেই পরবর্তিতে মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছিল। এবং অচিরেই এই মৃতের সংখ্যা গিয়ে দাড়ায় ২ লক্ষ ৩০ হাজার।


হিরোশিমা-নাগাসাকির বীভৎসতার কথা বিশ্ববাসী প্রথম জানতে পারে চার সপ্তাহ পরে। আমেরিকা একথা অনেকদিন গোপন রাখে যে, এটি একটি তেজস্ক্রিয় এটম বোমা ছিল। ফলে আণবিক তেজস্ক্রিয়তা থেকে রক্ষা পাওয়ার চেষ্টা করার সুযোগ থেকে মৃত্যুপথযাত্রীদের বঞ্চিত করা হয়েছিল। ফলে ডাক্তাররাও সঠিক ধারায় চিকিৎসা করতে পারেনি। শুধু এ কারণেই মৃতের সংখ্যা অনেক বেড়ে যায়। বোমার আঘাত ছিল বীভৎস, কিন্তু তার চেয়ে ভয়ঙ্কর ছিল আমেরিকান 'নীরবতার' ফলাফল।


অস্ট্রেলিয়ার সাংবাদিক উইলফ্রেড গ্রাহাম বুর্চেট এটম বোমা নিক্ষেপের এই ঘটনার চার সপ্তাহ পর ২ সেপ্টেম্বর টোকিও থেকে হিরোশিমা পৌঁছান। পরে তিনি তার চোখে দেখা বিবরণ পত্রিকার জন্য নিউজ ডেসপ্যাচ আকারে প্রেরণ করেন। সেই ডেসপ্যাচে বুর্চেট লিখেন, 'তিরিশতম দিনে হিরোশিমায় : যারা পালাতে পেরেছিলেন তারা মরতে শুরু করেছেন। চিকিৎসকরাও কাজ করতে করতে মারা যাচ্ছেন। বিষাক্ত গ্যাসের ভয়। মুখোশ পরে আছেন সকলেই।'

তিনি আরো লিখেন, 'হিরোশিমাকে বোমা বিধ্বস্ত শহর বলে মনে হচ্ছে না। মনে হচ্ছে, দৈত্যাকৃতির একটি রোলার যেন শহরটিকে পিষে দিয়ে গেছে। পঁচিশ বা তিরিশ বর্গমাইল জুড়ে একটিও অট্টালিকা দাঁড়িয়ে নেই।'

তার ডেসপ্যাচে বুর্চেট আরো লিখেন, 'বোমায় অক্ষত থাকা মানুষগুলো দিন কয়েক পরে অসুস্থবোধ করতে শুরু করে ও হাসপাতালে যেতে থাকে। চিকিৎসকরা তাদের শরীরে ভিটামিন-এ ইনজেকশন দেয়। দেখা যায় যে, ইনজেকশনের জায়গায় মাংস পঁচতে শুরু করেছে। এমন মানুষদের একজনও বাঁচেনি।'

৫ সেপ্টেম্বর বুর্চেটের ডেসপ্যাচটি 'ডেইলি এক্সপ্রেস' পত্রিকায় ছাপা হয়। সাহসী সাংবাদিক বুর্চেট নিজেই তেজস্ক্রিয় বিকিরণে আক্রান্ত হয়ে ১৯৮৩ সালে ক্যান্সারে মারা যান। সে বছরই তার লেখা 'শ্যাডো অফ হিরোশিমা' বইটি প্রকাশিত হয়।


প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণের শেষ নেই। টার্গেটের কেন্দ্রে তাপমাত্রা বেড়ে কয়েক হাজার সেলসিয়াসে দাঁড়ায়। মানব দেহসহ সবকিছু মুহূর্তে সম্পূর্ণ 'নাই' হয়ে যায়। ভূ-পৃষ্ঠের পাথরে বা কংক্রিটে কেবল মানব-মানবীর দেহ অবয়বের একটি অস্পষ্ট ছায়াচিহ্ন থেকে যায়। চোখ ধাঁধানো আলো ও মহাপ্রলয়ঙ্করী ঝড় বয়ে যায়। ছাই-ভস্মসহ সবকিছু উড়ে যায় ঊর্ধ্বাকাশে—এটমবোমার বিস্ফোরণের সিম্বল, ব্যাঙের ছাতা আকৃতির ধোঁয়ার বিশাল কুন্ডলিতে। হিরোশিমা-নাগাসাকির এই কুকীর্তির বোঝা সত্তর বছর পরেও বয়ে চলেছে সেখানকার সন্তান-সন্ততিরা। প্রতিটি মাকে ভয়ে ভয়ে দিন গুনতে হয়, যে সন্তানটি তার ভূমিষ্ঠহবে সে বিকৃত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের অবয়ব নিয়ে জন্মাবে না তো!

এরপর পারমাণবিক বোমার বাস্তব প্রয়োগ আর হয়নি। কিন্তু বোমা তৈরীর কাজ অব্যাহত আছে। তৈরী হয়েছে আরো উন্নত মানের পারমাণবিক বোমা হাইড্রোজেন বোমা এবং সর্বাধুনিক নিউট্রন বোমা। যার ধ্বংস ক্ষমতা আরো অনেক বেশি। এবং প্রায় অবিশ্বাস্য!!


বিশ্বে পারমাণবিক বোমা মজুদকৃত দেশের সংখ্যাঃ- বর্তমান বিশ্বে পারমানবিক বোমার বিস্ফোরন ঘটিয়েছে অথবা মজুদ আছে এমন দেশ গুলো হলো, "যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, চীন, ইসরাইল, ভারত ও পাকিস্থান।" যদিও ইসরাইল কখনও তা স্বিকার করেনা। এছাড়াও এটা ব্যাপক ভাবে বিশ্বাস করা হয় যে, উত্তর কোরিয়া এবং ইরানেও পারমানবিক অস্ত্র রয়েছে। বর্তমান পৃথিবীতে যে পরিমান পারমানবিক অস্ত্র মজুদ আছে তাতে মনে করা হয় যে, উক্ত পারমানবিক অস্ত্র গুলো সব একসাথে ব্যবহার করে এই ক্ষুদ্র পৃথিবীকে কয়েকশত বার ধংস করা সম্ভব।

আজকের মত শেষ করবো, তবে তার আগে বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইনের একটা সুন্দর উক্তি আপনাদের জানাতে চাই! একবার আলবার্ট আইনস্টাইনকে প্রশ্ন করা হয়েছিল যে, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঠিক কি ধরনের অস্ত্র ব্যবহার হতে পারে? উত্তরে আইনস্টাইন বলেছিলেন, "তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ সম্পর্কে বলতে বললে সেটা আমি ঠিক বলতে পরেবো না, তবে চতুর্থ বিশ্বযুদ্ধ যে লাঠি এবং পাথর দিয়ে হবে তা খুব ভাল ভাবেই বলতে পারি.........!!!"

তথ্যসূত্রঃ-
০১। পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষা - উইকিপিডিয়া
০২। ম্যানহাটন প্রকল্প - উইকিপিডিয়া
০৩। এটম বোমা আবিস্কারের ইতিহাস ।
০৪। ম্যানহাঁটন প্রোজেক্ট এবং পারমাণবিক বোমার ইতিহাস ।
০৫। পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরণ: এক ভয়ংকর সত্য
০৬। হিরোশিমা: বয়ে চলেছে এক গভীর বেদনার ইতিহাস

বিঃ দ্রঃ- টাইপিংয়ের ভুলের কারনে হয়তো অনেক জায়গায় বানানে ভুল থাকতে পারে। সেটাকে বিবেচ্য বিষয় হিসাবে না ধরে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখলে কৃতার্থ হবো!
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১২:৪২
৩৮টি মন্তব্য ৩৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাসান মাহমুদ গর্ত থেকে বের হয়েছে

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১২


যুক্তরাষ্ট্রের একটি বাংলা টেলিভিশন চ্যানেল হাসান মাহমুদের সাক্ষাৎকার প্রচার করেছে। আমি ভাবতেও পারি নাই উনি এতো তারাতারি গর্ত থেকে বের হয়ে আসবে। এই লোকের কথা শুনলে আমার গায়ের লোম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দারিদ্রতা দূরীকরণে যাকাতের তাৎপর্য কতটুকু?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১৮



দরিদ্র দূরীকরণে যাকাতের কোনো ভূমিকা নেই।
যাকাত দিয়ে দারিদ্রতা দূর করা যায় না। যাকাত বহু বছর আগের সিস্টেম। এই সিস্টেম আজকের আধুনিক যুগে কাজ করবে না। বিশ্ব অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্তান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্তান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের বিয়ের খাওয়া

লিখেছেন প্রামানিক, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৮


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

১৯৬৮ সালের ঘটনা। বর আমার দূর সম্পর্কের ফুফাতো ভাই। নাম মোঃ মোফাত আলী। তার বিয়েটা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। বাবা ছিলেন সেই বিয়ের মাতব্বর।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপি-আওয়ামী লীগের মধ্যে মৈত্রী হতে পারে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০০


২০০১ সাল থেকে ২০০৬ পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত আওয়ামী লীগের ওপর যে নির্যাতন চালিয়েছে, গত ১৫ বছরে (২০০৯-২০২৪) আওয়ামী লীগ সুদে-আসলে সব উসুল করে নিয়েছে। গত ৫ আগস্ট পতন হয়েছে আওয়ামী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×