শিরশ্ছেদের দণ্ড মাথায় নিয়ে সৌদি আরবের জেদ্দা কারাগারে আটক পাঁচ বাংলাদেশি অবশেষে ক্ষমা পেয়েছেন। অভিযুক্তদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা ও সমঝোতার ভিত্তিতে নিহত ব্যক্তির উত্তরাধিকারীদের প্রতিনিধিরা তাঁদের ক্ষমা করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে সৌদি আদালত রায় পরিবর্তন করে তাঁদের শিরশ্ছেদ থেকে রেহাই দেন। সম্প্রতি জেদ্দায় বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে পাঠানো একটি চিঠিতে এ কথা জানানো হয়।
সম্প্রতি ঢাকায় পাঠানো 'জেদ্দা কেন্দ্রীয় কারাগারে একটি হত্যা মামলায় আটক আটজন বাংলাদেশির মামলার সর্বশেষ অবস্থা অবহিতকরণ প্রসঙ্গে' শীর্ষক এক চিঠিতে জেদ্দায় বাংলাদেশ কনস্যুলেটের কাউন্সেলর (শ্রম) ড. এমাদুল হক জানিয়েছেন, ভিসা বিক্রির অর্থের লেনদেনকে কেন্দ্র করে ২০০৫ সালের ২৬ জানুয়ারি চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার সোনাকানিয়া গ্রামের মকর আলীর ছেলে নুরুল আমিন জেদ্দায় নিহত হন। এরপর সৌদি পুলিশ ওই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আট বাংলাদেশিকে অভিযুক্ত করে। অভিযুক্তরা হলেন ১. সিলেটের বিশ্বনাথের অলংকাইর গ্রামের আবদুল্লার ছেলে মো. রবি মিয়া, ২. সিলেট সদরের সিরাজপুর গ্রামের উসতার আলীর ছেলে আনোয়ার হোসেন, ৩. সিলেটের লালখা গ্রামের আজর আলীর ছেলে সমক আলী, ৪. সদর থানার নভাগি গ্রামের আবদুল বাসিরের ছেলে জাকারিয়া, ৫. মুগলিগাঁও গ্রামের আবদুল কাদিরের ছেলে তোরণ, ৬. জনৈক
মোকাদ্দেস আলীর ছেলে এনামুল হক (ঠিকানা অজ্ঞাত), ৭. জনৈক সোনা মিয়ার ছেলে সেলিম আহমেদ (ঠিকানা অজ্ঞাত) ও ৮. সিলেট সদর থানার রামকৃষ্ণপুর গ্রামের সাজিদ আলীর ছেলে মো. মোকাদ্দেস আলী।
চিঠিতে বলা হয়েছে, জেদ্দা কনস্যুলেট মামলার বিষয়ে অবহিত হওয়ার পরপরই নিহত ব্যক্তির উত্তরাধিকারীদের আইনানুগ প্রতিনিধি ও অভিযুক্তদের প্রতিনিধিদের মধ্যে যোগাযোগ করে সমঝোতার উদ্যোগ নেয়। কিন্তু নিহত ব্যক্তির পরিবারের প্রতিনিধিদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে জেদ্দা শরিয়া আদালত অভিযুক্ত প্রথম পাঁচজনকে শিরশ্ছেদের মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার আদেশ দেন। এ ছাড়া অপর তিন অভিযুক্তকে ১০ বছরের কারাদণ্ড এবং ৮০০ বেত্রাঘাতের আদেশ দেওয়া হয়। পরে আপিল আদালতও ওই রায় বহাল রাখেন এবং তা অনুমোদনের জন্য রিয়াদের সর্বোচ্চ কাউন্সিলে পাঠান।
চিঠিতে আরো বলা হয়, নিহত ব্যক্তির উত্তরাধিকারীদের আইনানুগ প্রতিনিধি ও অভিযুক্তদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা ও সমঝোতার ফলে অবশেষে নিহত ব্যক্তির পরিবার শিরশ্ছেদের রায় পাওয়া পাঁচ বাংলাদেশিকে ক্ষমা করে। এরপর মামলার পরিবর্তিত রায় অনুযায়ী শিরশ্ছেদের দণ্ড পাওয়া পাঁচ বাংলাদেশিকে পাঁচ বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, পরিবর্তিত রায়ের কপি জেদ্দা গভর্নর অফিস থেকে সৌদি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে বলে বাংলাদেশ কনস্যুলেট জানতে পেরেছে। এ ছাড়া কনস্যুলেটের প্রতিনিধি জেদ্দা কেন্দ্রীয় কারাগারে ওই মামলার প্রধান আসামি রবি মিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে রায় পরিবর্তনের কথা অবহিত করেছেন।
উল্লেখ্য, এক মিসরীয়কে হত্যার দায়ে সৌদি আরবের রিয়াদে গত অক্টোবর মাসে একই দিনে আট বাংলাদেশির শিরশ্ছেদ কার্যকর করার পর এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনা হয়। বাংলাদেশ দূতাবাস তার নাগরিকদের রক্ষায় যথাযথ ভূমিকা পালন করেছিল কি না তা নিয়েও বিতর্ক ছড়িয়ে পড়ে। তবে বাংলাদেশ সরকার বরাবরই বলে এসেছে যে সর্বোচ্চ চেষ্টার পরও ওই আট বাংলাদেশিকে রক্ষা করা যায়নি। তা ছাড়া সরকারি উদ্যোগে বিদেশে রক্তমূল্য দিয়ে বা নিহত ব্যক্তির পরিবারের প্রতিনিধিকে রাজি করিয়ে দণ্ড মওকুফ করার সাফল্যও বাংলাদেশের আছে। সর্বশেষ জেদ্দায় ওই পাঁচ বাংলাদেশির শিরশ্ছেদের রায় বদলকেও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা সাফল্য বলে মনে করছেন।
সৌদি আরবে বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে গত ১০ অক্টোবর ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে পাঠানো চিঠিতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বা মৃত্যুদণ্ডযোগ্য মামলার বিবরণী পাঠানো হয়। তাতে রিয়াদ দূতাবাসের আওতাধীন এলাকায় চার বাংলাদেশির বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের রায়ের কথা বলা হয়। জানা গেছে, ওই বাংলাদেশিদের শিরশ্ছেদের রায় ঠেকাতে বাংলাদেশ জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে এবং আশা করছে, এ ব্যাপারেও ইতিবাচক ফল পাওয়া যাবে।
সূত্রঃ মেহেদী হাসান, কালের কন্ঠ
Click This Link