

ক্লান্ত বিকাল।পলাশী থেকে নীলক্ষেতের মধ্যবর্তী ফুটপাথ। একজন বয়স্ক লোক হেটে চলেছেন মন্থর গতিতে। দুটি হাতই পিছনে, সে দুই হাতে ধরা আছে ম্যাগাজিন বা কাগজ কিছু একটা । গন্তব্য নীলক্ষেত।খুব সম্ভবত: মডার্ণ বুক সেন্টার।অন্য মনষ্ক বা কোন গভীর চিন্তায় মগ্ন।মডার্ণ বুক সেন্টারের ভাষ্যমতে এই ব্যক্তিটিই সবচেয়ে বেশী বই কেনেন।এই আজীবন শিক্ষক (এবং অবশ্যই আজীবন ছাত্র)আর কেউ নন, তিনি বুয়েটের তড়িৎ কৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড: মুহাম্মাদ আলী চৌধুরী।যারা স্যারের ক্লাস করেছেন তারা জানেন মুহাম্মাদ আলী স্যার কি?আমি সেই সৌভাগ্যবানদের মধ্যে একজন।সেটা অবশ্য অনেক বছর আগের কথা। স্যার তখন বসতেন ই.এম.ই বিল্ডিং এর নীচ তলায়(এখন যেখানে লিফ্ট হয়েছে)।এখন অবশ্য বসেন ও.এ.বি বিল্ডিং এর নীচ তলায়।সবাই বাসা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসলেও স্যার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাসায় যেতেন হয়তো শুধু ঘুমানোর জন্য।মানে বুঝতেই পরছেন বুয়েট ক্যাম্পাসই স্যারের ঘরবাড়ি।স্যারের রুমে সবসময় থাকত সেভেন আপ আর চানাচুর।এই পৃথিবীতে সবাই কোন না কোন দায়িত্ব নিয়ে আসে। স্যার বুঝি এসেছিলেন শুধু নিজেকে বিলিয়ে দেবার জন্যই।মেশিন বা পাওযার ইলেকট্রনিকস্ এর মত দাপুটে সাবজেক্ট তিনি পড়াতেন অত্যন্ত সাবলীলভাবে। যখন যেটি পড়াতেন মনে হত সেটি চোখের সামনে উঠে এসেছে,এবং এর মত সহজ বিষয় বুঝি আর কিছুই নেই।আমি জানি এখনও স্যার একইভাবে পড়ান।বয়সের ভার বাড়লেও তা হার মেনেছে ভিতরে লুকিয়ে থাকা চির সবুজ তারুণ্যের কাছে।
একটি উদাহরণ দিই। মাষ্টার্স লেভেলে পাওযার সেমিকন্ডাক্টর ডিভাইস পড়ানোর সময় স্যার ক্লাশ শেষে একটি বই এর রেফারেন্স দিলেন।স্যার কখনো পড়ানোর সময় বই বা লেকচার সীট দেখতেন না। যা পড়ানোর সব মুখস্থ করে আসতেন।তো ক্লাস শেষে আমরা নীলক্ষেতে গেলাম বইটি খুজতে । দোকানী বই এর একটি মাত্র কপি দিয়ে বলল আর একটি কপি মুহাম্মাদ আলী স্যার দুপুরে নিয়ে গিয়েছেন। বুঝুন অবস্থা। সারা বিকাল স্যার পড়াশুনা করে সন্ধ্যায় তিনি লেকচার দিয়েছেন কোন ডকুমেন্ট ছাড়া ।এই বয়সে এত উদ্যম এর উৎস কি তা এখনো আমার কছে রহস্যময়।নিবেদিত এই শিক্ষক বুয়েটের পাশাপাশি ইউ.আই.ইউ তে পার্ট টাইম ক্লাশ নিয়ে তাদেরকে ধন্য করেছেন।
স্যার ক্লাশে বলতেন “আপনারা ক্লাসে চিল্লাচিল্লি করিয়েন না। তাহলে কিন্তু জাভেদ মিয়াদাদের মত লাফায়ে লাফায়ে সিলেবাস শেষ করে দেব টেরও পাবেন না”।
চিরকুমার এই শিক্ষকের সংসার বা সন্তান সন্ততির মোহ নেই। আমরা হাজার হাজার ছাত্রছাত্রীর তার হাজার হাজার সন্তান। এখনও পেশাগত কারণে স্যারের সাথে মাঝে মাঝেই দেখা হয়। সালাম দেওয়ার আগেই স্যার বলে উঠেন “কি খবর আপনার ?” আর আমি পিতৃ স্নেহের ঘ্রাণ পাই। আপনারা কখনও পেয়েছেন কি?
স্যারের ফেসবুক ফ্যান পেইজ দেখুন।
Click This Link
অ.ট. স্যার এখন অসুস্থ। জিন্ডেস ভুগেছন। যদিও অবস্থা উন্নিতর দিকে, সবাই স্যারের জন্য দোয়া করেবন।