আইয়ামে জাহিলিয়াত মানে অজ্ঞতার সময়,মূর্খের সময়,যেখানে কোন ন্যায় নীতির বালাই নাই। জোর যার মুল্লুক তার।আমাদের দেশের হাল অবস্থাও তাই।
বর্তমানে একটা নিয়ম প্রচলিত হয়ে গেছে সেটা হল হয় আপনি ক্ষমতাসীনদের সাথে থাকবেন এবং তাদের অন্যায়কে সমর্থন করবেন নয়ত আপনি তার বিরোধী বলে বিবেচিত হবেন। যেমন কোন দেশ যদি আমেরিকার পক্ষ না নেয় তবে সেই দেশটিকে বলা হবে মৌলবাদি, জঙ্গি, শয়তানের অক্ষ শক্তি প্রভৃতি । ঠিক একই ভাবে আমাদের দেশে যদি কেউ আওয়ামী সরকারের সমর্থন না করে তবে সে হবে রাজাকার,যুদ্ধাপরাধী প্রভৃতি যদিও তার বয়স ৪০ এর নিচেও হয়।
দেশের স্বনাম ধন্য একটা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া শেষে যখন এদেশেই চাকুরী শুরু করি তখন অনেকে বলে কেন এদেশে রয়েছে? বিদেশে কেন চলে যাচ্ছ না? এমন কি পরিবারের পক্ষ থেকেও বাহিরে যাবার জন্য চাপ ছিল। কিন্তু আমার কাছে বিদেশে যাবার চেয়ে দেশে থেকে কিছু করাই মানসিকতাই প্রাধান্য পায়। তার পরও পরিবারের চাপে ও আর্থ সামাজিক পরিস্থিতি বিবেচন করে শেষ পর্যন্ত বিদেশেই চলে যাই। সেখানে কিছু দিন থেকে আবার গত বছর দেশে চলে আসি।
দেশে এসে এখনও চাকুরীতে ঢুকিনি কিন্তু ঢুকার ইচ্ছে ছিল। সেজন্য ইতিমধ্যে কয়েকটা কম্পানিতে আবেদন করেছি। পাশা পাশি নিজেই একটা কম্পানি দেবার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলাম।
কিন্তু আজ সিদ্ধান্ত আবার পরিবর্তন করলাম। এদেশে আর থাকব না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যদি বলেন কেন থাকবেন না? কোটি কোটি লোক তো আছেই।
আমি বলব কেন থাকব এদেশে? আইয়ামে জাহিলিয়াতের কাহিনী শুধু পাঠ্যপুস্তকে পড়েছি। কিন্তু তার বাস্তব রুপ এখন দেখছি।
এদেশে কোন মানুষের নিরাপত্তা নেই।একজন সচেতন ব্যক্তি হিসেবে আপনার নিজের ও পরিবারের নিরাপত্তার বিধান করা জরুরী। সে ক্ষেত্রে আমি বলব এখানে আমাদের নিজেদের, পরিবারের কারো কোন নিরাপত্তা নেই।
অনেকে বলবেন হায়াত মউত আল্লাহর হাতে। আমি একমত একথার সাথে। কিন্তু এটাও আপনাকে মানতে হবে জীবন রক্ষার জন্য আমাদের নবী (স) কেউ দেশ ত্যাগ করতে হয়েছে।
এবার দেখুন কিছু উদাহরণ
১. গত কাল সংবাদপত্রে দেখলাম ৬ বছরের শিশুকে চাঁদার জন্য হত্যা করেছে চাঁদাবাজেরা। শিশুটির বাবা কুয়েত প্রবাসী। তার স্ত্রী চাঁদাবাজদের চাঁদা দিতেও রাজি ছিল। শুধু সন্তানের নিরাপত্তার জন্য থানায় একটা জিডি করেছিল। এটাই তার দোষ। থানায় জিডি করার জন্য তার একমাত্র সন্তানকে হারাতে হল।
২.আমাদের জনগনের নিরাপত্তা দেবে যে বাহিনী তারাই যদি আমাদের প্রকাশ্য গুলি করে মারে তবে তাদের প্রতি আর আমাদের আস্থা রাখা যৌক্তিক হবে বলে মনে করিনা। এ মাসেই কয়েকটা ছাত্রকে পুলিশের সামনে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এরও কিছুদিন আগে পুলিশ নিজেই হত্যা করেছে রাস্তায় বিক্ষোভরত কয়েকজনকে।
৩.যে দেশে খুনের সাজা মওকুফ করে দেওয়া হয় এবং এর মাধ্যমে খুনিকে আরো বেশি খুন করার উৎসাহ দেওয়া হয় সে দেশ যে পঁচে গেছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
সরকার যন্ত্রটি যদি মূক বধির হয়ে যায় তবে তাদের থেকে কল্যাণ মূলক কিছু আশা করা বাতুলতা মাত্র।
খুনি বিপ্লবকে কিছু দিন আগে মৃত্যুদন্ড থেকে রেহাই দেওয়া হয়েছে। এর পর মিডিয়াতে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছে এটা নিয়ে। সরকারের সেদিকে কোন খেয়াল নেই। এর পর আবারও সেই একই খুনিকে অন্য আরেকটি হত্যা মামলার যাবতজীবন কারাদন্ড মওকুফ করে ১০ বছর করে দিলেন রাস্ট্রপতি। কি বিচিত্র এ দেশ!
৪.গণমাধ্যমের সাংবাদিকেরা ভাবত যে, দেশে আর যেই হোক তারা অন্তঃত নিরাপদে আছেন। কে তাদের আঘাত করবে? সেরকম সাহস হয়ত কারো নেই। কারণ তাদেরকে আঘাত করলে সেটা গণমাধ্যমে সরব হয়ে উঠবে।
তাদের সেই ধারণাও ধুলিসাৎ হয়ে গেছে। সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যা কান্ড এর বাস্তব প্রমান।
৫.সেনাবাহিনীর ভায়েরা হয়ত ভাবত যে তারা হয়ত নিরাপদ। পিলখানা সহ বর্তমান সেনাবাহিনীতে গুম সংস্কৃতি তাদের সে ভাবনাকেও থমকে দিয়েছে।
৬.আরেকটা কথা হল কেউ যদি ভাবে সে আওয়ামীলীগ করে সুতরাং সে নিরাপদ।তাহলে সেও বোকার সর্গে বাস করছে।কারণ ছাত্রলীগ নিজেদের হাতে নিজেরা যেভাবে খুন হচ্ছে প্রতিনিয়ত আর মেয়র পদে থাকা অবস্থায় তার নিজের দলের লোকের হাতে প্রয়াত মেয়র লুকমান যেভাবে নিহত হলেন তাদেখে একথা নিশ্চিত বলা যায় যে কেউই এদেশে নিরাপদ না।
আমার বিবেচনায় দেশের বর্তমান অবস্থা আইয়ামে জাহিলিয়াতকে ছাড়িয়ে গেছে। এখানে কোন ন্যায়-নীতি, সুবিচার,আইন বলে কিছু নেই।
তাই আমার কথা হল এদেশে কি কোন সভ্য ও যোগ্য মানুষের বসাবাসের উপযোগী অবস্থা বিরাজমান?
এদেশে থেকে কিছু না করতে পারার চেয়ে দেশের বাহিরে থেকে যদি দেশের জন্য কিছু করা যায় তবে সেটাই মনে হয় যুক্তিযুক্ত হবে।
মেকি দেশ প্রেম দিয়ে এদেশের কিছুই হবে না।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১২ রাত ১১:১৬