somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এসো বই পড়ি-১

২৪ শে জুন, ২০০৯ সন্ধ্যা ৭:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার কাছে প্রিয় বই সেটাই যেটা আমি বার বার পড়ি। এ হিসেবে আমার প্রিয় বইয়ের সংখ্যা অনেকগুলো। আমাকে সুযোগ দেওয়া হলে আস্তে আস্তে পাঠকদের সামনে আমি সেগুলো সম্পর্কে বলবো। প্রথমে যে বইটির কথা বলবো সেটির নাম হচ্ছে ‘ আধুনিক মালায়েশিয়ার রূপকার ড. মাহাথির মুহাম্মদ, নিবার্চিতি ভাষণ-১’। আপনারা যারা সচেতন মানুষ তারা নিশ্চয় মাহাথির মুহাম্মদ সম্পর্কে ভালভাবে অবগত আছেন। আমি মাহাথির মুহাম্মদ সম্পর্কে কৌতুহলি হলাম সে দিন থেকে যেদিন শুনলাম তিনি সেচ্ছায় ক্ষমতা ত্যাগ করেছেন। যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় ক্ষমতা ত্যাগ করে সে অবশ্যই একজন স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের নির্লোভ সাহসী মানুষ। তাঁর ক্ষমতা ত্যাগের কারণ হলো তিনি তাঁর লক্ষে( ২০২০ ভিশন) নির্ধারিত সময়ের আগেই পৌঁছে গেছেন। আমি তখন থেকেই তাঁর সম্পর্কে জানার জন্য উদ্গ্রীব হই। আমার বই পড়ার নেশা দেখে আমার এক বন্ধ একদিন এক শিক্ষকের বাড়িতে নিয়ে গেলেন সেই শিক্ষকের স্টাডি সার্কেলের সদস্য বানাতে। আমি খুশি মনে সেখানে গেলাম। মজার বিষয় হলো সেই স্টাডি সারকেলটা শুরু হয়েছিল এই বইটি দিয়ে। সেই থেকে আমি এই বইটির ভক্ত হয়ে যাই। বইটি নিজের কাছে রাখার জন্য হন্য হয়ে খুঁেজছি কিন্তু বইটি রাজশাহীর কোন মার্কেটে খুঁেজ পাইনি। অবশেষে ঢাকাতে এসে বইটির সন্ধান পাই। বইটি বর্তমান আমাদের দেশের যুবসমাজের পড়ার মতো একটি বই। বিশেষ করে আমাদের দেশের রাজনীতিবীদরা যদি বইটি পড়ে এর শতভাগের কিছু অংশও যদি মেনে চলে বা তিনি যেসব কথা বলেছেন সে অনুসারে আমাদের দেশের জন্য পদক্ষেপ নেন তবে আমাদেরকে আজ এই জরুরি অবস্থার মধ্যে দিয়ে যেতে হবে না বা বার বার দুর্নীতিতে প্রথম হতে হবে না।
ড. মাহাথির মনে করেন বিভিন্ন সময়ে ইসলামের ভুল ব্যাখ্যা করা হয়েছে। ভুল ব্যাখ্যার কারণে মুসলমানরা অনেক পিছিয়ে গেছে এবং অমুসলিমরাও ইসলামের সার্বজনীন কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। তিনি বাস্তবে প্রমান করে দেখিয়েছেন যে, ইসলাম উন্নতির পথে কোন অন্তরায় নয় বরং সহায়ক”।
এ বইতে মাহাথিরের সংক্ষিপ্ত জীবনীও আলোচিত হয়েছে। তাঁর জীবনের যে অংশটুকু আমার সবচেয়ে ভালো লেগেছে তা পাঠকদের না বলে পারছি না। আর তা হলো তাঁর সময় সচেতনতা। বইয়ের ভাষাতে, “ব্যাক্তিগত জীবনে মাহাথির অত্যন্ত শৃঙ্খলাপরায়ণ ছিলেন। তাই তিনি ক্ষমতায় এসেই সর্বপ্রথম সবাইকে সময় মেনে চলার নির্দেশ দিলেন। দেশব্যাপী সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অফিসের উপস্থিতিরসময় রেকর্ড করার জন্য তিনি পাঞ্চ কার্ড ব্যবহারের রীতি চালু করেন। তিনিও এই কার্ড ব্যাবহার করে অফিস করতে শুরু করেন। টাইম ম্যাগাজিন একবার মাহাথিরের পর পর পাঁচ দিনের অফিসে ঢোকার সময়ের রেকর্ড প্রকাশ করে, সকাল ৭:৫৭, ৭:৫৬, ৭:৫৭, ৭:৫৯, এবং ৭:৫৭। অধিকাংশ দিনই তিনি অন্তত সাড়ে সাতটা পর্যন্ত কাজ করেন। মাহাথিরই সম্ভবত পৃথিবীর একমাত্র প্রধানমন্ত্রী যিনি নিজের নাম লেখা ব্যাজ (নেম ট্যাপ) লাগিয়ে অফিস করতেন।
প্রচুর বই পড়া এবং নিয়মিত লেখালেখিতে অভ্যস্ত মাহাথির মুহাম্মাদ নিজেকে একজন ‘মৌলবাদী’ হিসেবে বর্ণনা করেন। কারণ তাঁর বক্তব্য হলো, ‘কোন ধর্মের মৌল বিষয়ে খারাপ কিছু নেই’। তিনি শুধু পশ্চিমাদের সমালোচনা করেননি; মুসলমানদেরও সমালোচনা করেছেন কঠোর ভাষায়। মুসলমানদের উত্তরণের দিকনির্দেশনা দিয়েছেন নানাভাবে”।
তিনি তাঁর এক ভাষনে বলেন, “ যখন তুরস্ক একটি বিশ্বশক্তি ছিল এবং পূর্ব ইউরোপের বিশাল এলাকা জয় করেছিল, তখন দেশের সামরিক শক্তি আধুনীকিকরণ পদ্ধতি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল। কারণ, দেশের ধর্মীয় বিশেষজ্ঞরা সৈন্যদের প্যান্ট পড়াতে আপত্তি তোলেন। এই তুচ্ছ বিষয়কে নিয়ে যখন যুগের পর যুগ ধর্মীয় বিশেষজ্ঞদের মধ্যে বিতর্ক চলে, তখন তুর্কি সাম্রাজ্যের প্রতি বহিঃশত্র“র আক্রমন জোরদার হয়ে ওঠে। আজ প্যান্ট পরা মুসলমানদের মধ্যে কোন ধর্মীয় বিতর্কের বিষয় নয়। যে কেউ পড়তে পারেন। আমরা পশ্চিমাদের মত পোশাক পড়লেই অমুসলিম হয়ে যাই না। কিন্তু সে বিষয়ে তর্ক বিতর্কে যে সময়টা অতিবাহিত হয়েছে তাকে তুর্কি সেনাবাহিনীকে এবং এর প্রতিরক্ষা শিল্পকে আধুনিকীকরণ করার সময় অনেক বয়ে যায় এবং শেষ পর্যন্ত শত্র“র হাতে তুর্কি সাম্রাজ্যের শোচনীয় পতন ঘটে। তুর্কির ইতিহাসের সাথে ইসলাম এবং শিল্পের কি সম্পর্ক? এর সম্পর্ক এ ক্ষেত্রে মুসলমানরা অনেক সময় ছোট খাটো বিষয় নিয়ে এতো ব্যতিব্যস্ত থাকে যে তারা তাদের বড় বড় সমস্য ও দায়দায়িত্ব ভূলে যায়।”
ইসলাম ও বিশ্বায়ন শিরোণামে এক ভাষনে (২০০০ সাল) তিনি পশ্চিমাদের কঠোর সমালোচনা করে বলেন, “ ইউরোপীয়রা জাতি হিসেবে আগ্রাসী এবং তারা সব কিছুই দখল করে নিতে চায়। যুদ্ধই ছিল তাদের সমস্ত সংস্কৃতি ও অর্থনীতির ভিত্তি। মানুষকে হত্যার জন্য কিভাবে আরো আধুনিক অস্ত্র তৈরি করা যায় সেদিকেই ছিল তাদের মনোযোগ। এমনকি আজও আমরা দেখতে পাই, মানুষকে নিপুন ভাবে হত্যা করতে তারা পৈশাচিক যুদ্ধাস্ত্র তৈরিতে ব্যাস্ত। তাদের অজুহাত, বিশ্বকে তারা নিরাপদ আর শান্তিময় করতে চায়। এখন তারা পুঁজিবাদের বিষদাঁতকে প্রকাশ করেছে। মুক্ত বাণিজ্যের বাণীকে তারা নিঃশঙ্কচিত্তে প্রচার করে চলেছে। তারা আশ্বাস দিচ্ছে, মুক্ত বাণিজ্য পৃথিবীকে সমৃদ্ধ করবে, স্বর্গে পরিণত করবে। কিন্তু আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে, কিছুদিন আগেই তারা সমাজতন্ত্র নিয়ে উচ্ছ্বসিত ছিলো। তখনও তারা আশ্বাস দিয়েছিল, সমাজতন্ত্র বিশ্বকে বদলে দেবার চাবিকাঠি। এখন তারা নতুন ব্যবস্থা( পুঁজিবাদ) নিয়ে পুরানো প্রতিশ্র“তি আাওড়ে চলেছে।”
ধর্মের ব্যাখ্যা নিয়ে আমাদের একে অন্যের সাথে কলহে লিপ্ত হওয়াকে তিনি মুসলমানদের পতনের অন্যতম কারণ হিসেবে দেখিয়েছেন।
আমার মতে, গত কয়েক শতাব্দীর মধ্যে তিনিই একমাত্র রাষ্ট্রনায়ক জিনি আতœবিশ্বাসের সাথে তাঁর বিভিন্ন বক্তব্যর মাঝে কুরআন-হাদিসের উদ্ধৃতি দেন। যেমন ইসলাম ও ন্যায়বিচার সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেন,“ ইসলামের ঘোষণা হলো এ বিশ্ব সৃষ্টি করা হয়েছে প্রধানত ন্যায় বিচার ও সত্য প্রতিষ্ঠা করার জন্য। পবিত্র কুরআনের সূরা ‘আল-হিজর’ এর ৮৫ নং আয়াতে বলা হয়েছে:“আকশমন্ডলী ও পৃথিবী এবং এদের অন্তর্বর্তী সব কিছুই আমি ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য সৃষ্টি করেছি।”
একদা নবী করিম (সা.) বলেছেন, “কোন গুরুত্বপূর্ণ পদে যখন কাউকে নিয়োগ করা হয় এমতাবস্থায় যে, উক্ত কাজের জন্য তার চেয়ে উপযুক্ত লোক থাকে তাহলে তা হবে আল্লাহর সাথে, তাঁর নবীর সাথে এবং সকল বিশ্বাসীর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা।”
“ইসলামে পদ্ধতি বা প্রক্রিয়াকে কোন সময়েই মূল বিষয়ের মতো কোন সময়েই গুরুত্ব দেয়া হয়নি। যেমন নামায কিভাবে আদায় করা হলো সেটাই বেশী গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয় বরং নিয়ত বা কি উদ্দেশ্যে নামায আদায় করা হল সেটা বেশী গুরুত্বপূর্ণ।”
বইটি আমি এ যাবৎ অনেক মানুষকে পড়ার পরামর্শ দিয়েছি। তাদের সবাই-ই বইটি পড়ে আমাকে ধন্যবাদ জানিয়েছে।
তিনি যে কথাটি বার বার বলেন মুসলমানদের উদ্দেশ্যে আর তা হলো, “ মুসলমানদের এখন করণীয় হলো পুনরায় কুরআনের মুখাপেক্ষী হওয়া, সঠিক হাদিস অনুসরণ করা ও গবেষণা করে তার সময়োপযোগী ব্যাখ্যা করা।”
দুঃখের বিষয় আমরা এখনও কুরআনের অর্থ না পড়ে শুধু আরবি পড়ছি আর ফাযায়েলে আমলের মতো গুটিকয়েক দুর্বল হাদিসের চর্চা করছি। আর সাহিত্য, বিজ্ঞানের বই পড়াকে দুনিয়াদারি কাজ মনে করে তা থেকে দূরে থাকছি।
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×