*** এই লেখাটি একটি সতর্কতামূলক গদ্য। এখানে উল্লেখিত জিনিষের অনেক ব্যতিক্রম আমরা পাবো। কিন্তু সতর্ক থাকতে তো দোষ নেই। এই লেখার টার্গেট রিডার হলেন তারাই যারা Skilled workers and professionals ক্যাটাগরিতে কানাডায় ইমিগ্রান্ট হয়ে আসতে চাইছেন। এই লেখাটি তাদের জন্য নয় যারা ফান্ডিং নিয়ে লেখাপড়া করতে আসছেন কানাডাতে। এই লেখাটা কোন ধরণের বিতর্ক সৃষ্টির জন্যও নয়। কেও এই আর্টিকেল পড়ে আহত/নিহত হলে লেখক বা প্রচারক দায়ী থাকবে না। সংবেদনশীলতা সরিয়ে রেখে পড়তে চাইলে পড়তে পারেন। নাইলে এড়িয়ে যান, দয়া করে।
এই লেখাটির কোন অংশে যদি দ্বিমত থাকে তবে অবশ্যই রেফারেন্স দিয়ে এডিট করে দেবেন। এই লেখাটা এখানে দেওয়ার একটাই উদ্দেশ্য তা হলো, স্কিল মাইগ্রেন্টদের মাঝে কিছুটা সচেতনতা সৃষ্টি করা এন্ড আশার বেলুনটা যাতে হঠাৎ ফুটো হয়ে না যায় এই চেষ্টা করা। আমরা সব সময়ই সাক্সেস স্টোরি কেই হাইলাইট করি, কিন্তু আনসাক্সেস্ফুল হওয়ার কি কি কারণ থাকতে পারে তা এই লেখাটার মধ্য দিয়ে জানানোর চেষ্টা করা হয়েছে। আর আমি এক্সপেক্ট করবো কোন স্কিল্ড মাইগ্রেন্ট এই লেখাটা এডিট করবেন।
আরেকটা ব্যাপার এখানের রেফারেন্সগুলো কিন্তু ২০০৯,২০১০,২০১১ এর। তাই বর্তামান পরিস্থিতি কি তা নিয়েও আমরা বা আপনারা এডিট করতে পারেন রেফারেন্সসহ।
আমি শুরুর কথাগুলোর সাথে এডিট করে আবারও এই কয়েকটা লাইন দিয়ে দিচ্ছি যা আমার কথাঃ
এই লেখার শুরুতেই আমি বলে নিয়েছি এটা শুধুমাত্র স্কিল্ড মাইগ্রেশন নিয়ে, তাদের জন্য নয় যারা ফান্ডিং নিয়ে লেখাপড়া করতে আসছেন কানাডাতে। এই লেখাটিকে 'আক্রমণ' হিসেবে না দেখতে অনুরোধ করবো। বরং আপনি কিভাবে নিজেকে স্কিল্ড ইমিগ্রান্ট হিসেবে প্রিপেয়ার করবেন তার একটি নমুনা হলো এই আর্টিকেল।***
► এই লেখাটা দেয়ার মেইন টার্গেট হলো যাতে আমরা লেখাপড়া করতে যেতে আরও বেশী উৎসাহী হই।
সবচেয়ে মজার কথা হলো, স্কিল্ড মাইগ্রেশন এখন টেম্পরারিলি ক্লোজড
[মামুন শরীফ কে ধন্যবাদ লিঙ্কটির জন্য] এবং ২০১৩ থেকে আবার তা শুরু হবে নিয়মকানুন এর কিছু পরিবর্তন সাথে নিয়ে তা হলোঃ
১। Making language the most important selection factor by establishing new minimum official language thresholds and increasing points for language;
২। Increasing the emphasis on younger immigrants, who are more likely to acquire valuable Canadian experience and remain in the workforce longer;
৩। Increasing points for Canadian work experience and reducing points for foreign work experience;
৪। Simplifying the arranged employment process to prevent fraud and abuse yet enable employers to staff positions quickly; and
Awarding points for spousal language ability and Canadian experience.
এখানে লক্ষ্যনীয় বিষয় হলো, এই নিয়মগুলোর বা ক্রাইটেরিয়াগুলোর অভাবই, অনেক স্কিল্ড মাইগ্রেন্টদের অসফলতার কারণ যা মূল লেখাটা পড়লে বোঝা যাবে। আশ্চর্যজনকভাবে ব্যাপারটা মিলে গেছে যা এই লেখাটিকে আরও বস্তুনিষ্ঠ করছে।
আবারও বলছি, যারা কানাডায় পড়াশোনা করতে যাবেন বা করার ইচ্ছা রাখছেন তাদের চিন্তিত হওয়ার কোনই কারণ নেই। আই রিপিটঃ চিন্তিত হওয়ার কোনই কারণ নেই। আপনার ক্যানাডিয়ান ডিগ্রি আপনাকে তাদের জব ফিল্ডে সহজ এন্ট্রিই এনে দিবে। সকলের জন্য শুভ কামনা।
কোন কিছুকে ছোট করার জন্য এই পোস্ট বা ডক না। কিছু জিনিষ যা শেয়ার করলে মানুষ সচেতন হবে ওই চেষ্টাই করা হয়েছে। দয়া করে কেও এই পোস্টকে নিজের উপর আক্রমণ হিসেবে দেখবেন না।
- মু. রাশিদুল হাসান, HigherStudyAbroad™ Bangladesh Chapter
-------------------------------------
-------------------------------------
নিচের এই কমেন্টটা আমি লেখার শেষে দিয়েছিলাম, মনে হয় না কেওই লেখাটা শেষ পর্যন্ত পড়ছেন। তাই শুরুতে এড করে দিলাম। দয়া করে এই কমেন্টটি পড়ে লেখাটি পড়ুনঃ
এবং একটি কমেন্ট : Ashim Akhand (E-mail: [email protected]):-
Yes. life is hard in Canada.One has to work hard to maintain the high standard of living and enjoy the developed infrastucture ,free school education and medical service.But it is not that all black as in Mr.Dulal's article.I have a lot of Bangladeshi and non-bangladeshi friends who have professional jobs or business and are living a good life. I think the two main problems with Bangladeshis are cultural and language barrier.Who want to achieve something through education and self-development can achieve.We see a lot of Indians and chinese are in good positions.So instead of blaming on Canadian system let's try to change our habits and improve ourselves through education and observation to integrate into the canadian society.After all, most of us immigrated to have a better future for our children. A lot of opportunities are their in other provinces too.Nobody forces us to live near Danforth and victoria Park to enjoy "Ilish mas" and "Kochu shak" and cry for better future.Please don't get me wrong.I just wanted us to explore Canada and try to improve ourselves accepting the many good things offered by this country.
---------------------------------
---------------------------------
মূল লেখকঃ
সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল এবং এই লেখাটি নেয়া হয়েছে The BengaliTimes থেকে যা টরন্টো, কানাডা থেকে প্রকাশিত। ফেসবুক পেজঃ https://www.facebook.com/BanglaNews
মূল লেখাঃ
‘বেশির ভাগ মানুষ কানাডায় যেতে আগ্রহী’ এই শিরোনামে গত ২৩ জুন ২০১০-এ একটি খবর পরিবেশন করেছে অটোয়াস্থ সংবাদ সংস্থা এপি। ইপসোস রেইড ২৪টি দেশের ১৮ হাজার মানুষের ওপর অনলাইন জরিপে জানিয়েছে, চিনের ৭৭%, ভারতের ৬৮%, যুক্তরাষ্ট্রের ৬০% এবং অন্যান্য দেশের ৫০% লোক কানাডায় বসবাস করতে চায়। এমনকী যুক্তরাষ্ট্রের এক তৃতীয়াংশ মানুষও মনে করে কানাডায় জীবন যাপনের মান সবচেয়ে উন্নত এবং কানাডা ভিন্ন জাতি গোষ্ঠী ও সংস্কৃতির প্রতি সহনশীল। সবই ঠিক।
আবার এ কথাও ঠিক এখানে শ্রমিকের জীবন আরো ভয়াবহ। মধ্য প্রাচ্যের শ্রমিকেরা দেশের অর্থনীতির মারুদন্ডকে শক্ত করছে। কিন্তু আমরা কী কানাডা থেকে পারছি? এখন এখানে নুন আনতে পান্তা ফুরায় প্রবাদটি ৯৯.৬৬% সত্য। শুরুতে উল্লেখ করলাম জরিপের কথা। জরিপের কথা- বেশির ভাগ মানুষ কানাডায় বসবাস করতে চায়। এমন কি প্রতিবেশী যুক্তরাষ্ট্রের লোকজনেরও ধারণা, কানাডা পৃথিবীর সেরা শান্তির দেশ। বিভিন্ন ধরনের জরিপেও তা প্রকাশ পেয়েছে। তারপরও কানাডা থেকে ফিরে যাবার হার ৮ শতাংশ। স্ট্যাটিসটিকস কানাডার হিসাব মোতাবেক, ৩০ লাখ কানাডিয়ান স্থায়ীভাবে বসত গড়েছে অন্য দেশে।
গত বছর জুনে কানাডিয়ান এ ব্রড প্রজেক্ট অব দ্য এশিয়া প্যাসিফিক ফাউন্ডেশনের এক প্রতিবেদনে প্রকাশ, আগামী তিন দশকে বছরে ৮% থেকে বৃদ্ধি পেয়ে তা ২৭% এ পৌছুঁবে। তাই সরকার ‘ব্রেইন গেইল’ শীর্ষক একটি পাইলট প্রকল্প নিয়েছেন। যাতে কানাডিয়ান এবং তাদের স্বজনেরা কানাডায় প্রত্যাবর্তন করে। ২০১১-এর জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে সিটিজেন ও ইমিগ্রেশনমন্ত্রী জেসন কেনি এ প্রকল্প উদ্বোধন করেন।কানাডায় কর্মসংস্থানের যথার্থ ব্যবস্থা নেই। ১৫ বছর আগে টরন্টোতে কর্মক্ষম বেকারের সংখ্যা ছিল ৩ লক্ষেরও বেশি। বর্তমানে কানাডার বেকারত্বের হার ৮.১% । প্রফেশনাল জব তো সোনার হরিণ নয়, হীরের হরিণ। একথা আমার নয়, ভুক্তভোগীদের। আর এখানে ‘হায়ারিং’ এবং ‘ফারারিং’ মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ। তাই সিংহভাগ কর্মজীবীরা আতঙ্কে ভূগেন। আগামী অর্থ বছরে সরকার ২০ লাখ সরকারি চাকুরেজীবীদের ছাঁটাই করার ঘোষণা দিয়েছে। বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের চিত্র আরো ভয়াবহ।যারা স্বর্গীয় স্বপ্ন নিয়ে কানাডায় আসেন, তারা দুঃস্বপ্ন আর দুশ্চিন্তায় হাবুডুবু খান। চাকরি পাওয়া তো দুষ্কর। অর্থনৈতিক মন্দায় ১০ ডলারের কঠিন শ্রমিকের জীবনের ‘অড জব’ বলতে যা বুঝায়, তাও সহজে কপালে জুটে না।
অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ইমিগ্রান্টদের ভাগ্যে অতি সাধারণ চাকরি জুটে না। স্ট্যাটিসটিকস্ অব কানাডার অপর এক জরিপে জানা গেছে, ২০০৬-এ বিদেশ ডিগ্রিপ্রাপ্ত প্রায় ২,৮৪,০০০ অভিবাসীর মধ্যে ২৪% ভাগ্যবান আগের পেশার কাছাকাছি কাজ পেয়েছে। কানাডায় এসে পুনরায় পড়াশোনা করে চাকরি পেয়েছে ৫৩ শতাংশ। আর কানাডায় জন্মগ্রহণকারীরা লেখাপড়ার পর চাকরি পাবার সম্ভাবনা ৬২ শতাংশ। অর্থাৎ দ্বিতীয় প্রজন্ম চাকরি-বাকরি, জীবনযাপনের ক্ষেত্রে ভাল করবে। কিন্তু নতুন ইমিগ্র্যান্টদের অবস্থা গল্পের মতো ভয়াবহ।
সম্প্রতি দুই বাংলাদেশি পরিবার দেশে ফিরে গেল ৫ মাসের মাথায়। ভদ্রলোক ইঞ্জিনিয়ার আর তার স্ত্রী ডাক্তার। মাগুরায় তাদের নিবাস। অনেক স্বপ্ন নিয়ে এসে দুঃস্বপ্নের সমুদ্র পাড়ি দিয়ে ব্যাক টু প্যাভেলিয়ন। কেউ কেউ আত্মহত্যাও করতে বাধ্য হয়েছে।কারণ, ভদ্রলোকের যেহেতু ৫০ এর বেশি বয়স, তাই গোঁফ ফেলে দিয়ে চুলে রঙ দিয়ে যুবক সেজে প্রতিদিন কাজের সন্ধানে বের হতেন এবং সন্ধ্যেবেলা শূন্য হস্তে ফিরতেন। তার কলেজে পড়ুয়া ছেলে একটা কারখানায় এক মাস কাজ করার পর লে-অফ পেয়েছে। আর ডাক্তার মহিলা টিমহর্টনে (চা-কফির দোকানে) বহু চেষ্টা করেও ঢুকতে পারেননি। অপ্রিয় সত্য হলো, তিনি তরুণী নন, দেখতেও সুন্দরী নন। তাই তারা স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেন।
এখানে অলিখিত নিয়ম হচ্ছে ৪৫ বছরের পর সাধারণত চাকরি-বাকরিতে নেয়া হয় না। এই কথাটা অনেকটা অবিশ্বাস্য শোনালেও এই লিঙ্ক থেকে ঘুরে আসুন এন্ড দেখুন নতুন ইমিগ্রেশন এর নিয়মে ৪৫ বছরের লোকজন পাবেন মাত্র ২ পয়েন্ট [যেখানে সর্বোচ্চ পয়েন্ট হল ১২!!] লিঙ্কঃ Click This Link
অথচ কানাডায় ইমিগ্রেশনের জন্য নানা ধরনের (শিক্ষা, সম্পদ, পেশা প্রভৃতি) যোগ্যতার মতো বয়সও একটি যারা ইমিগ্রেশন নিয়ে আসেন, তাদের পরিবার প্রধানের বয়স সাধারণত ৪০ থেকে ৫০ বছর হয়ে থাকে। এই মধ্য বয়সে একজন মানুষ পড়াশোনা শেষ করে, চাকরি-বাকরি করে, সংসার এবং অর্থনৈতিকভাবে কিছুটা স্বচ্ছলতা অর্জন করেন। সন্তানরা স্কুলে যায়। এমতাবস্থায় ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে নিজের ভবিষ্যৎ ‘জলাঞ্জলি’ দিয়ে বাড়ি বিক্রি করে, চাকরি ছেড়ে, ব্যাংকে জমানো টাকা নিয়ে কানাডায় চলে আসেন। তারপর? তারপর স্বর্গীয় নায়কোচিত জীবনের বদলে ‘নারকীয় জীবন’ শুরু হয়। হন্যে হয়ে চাকরি খোঁজা। ফ্যাক্টরি জব, ট্যাক্সি ড্রাইভ, কারখানার লেবার, সিকিউরিটি জব, হোটেলের বয়, বাবুর্চির চাকরিও এই ক্রান্তিকালে সোনার হরিণ। বিভিন্ন দেশের উচ্চ শিক্ষিত ডাক্তার, পিএইচডি, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষক, উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা স্বেচ্ছায় কারাবরণের মতো কানাডা বরণ করেন অর্থাৎ অভিবাসী হয়ে মানসিক যন্ত্রণায় তিলে তিলে নিঃশেষিত হন। এতে তাদের ফিরে যাবার পথও থাকে না। কারণ, ইমিগ্র্যান্ট হয়ে আসার পথ অনেকটাই ওয়ান ওয়ে।
কানাডা স্ট্যাটিসটিকস মোতাবেক ৫ শতাংশ ইমিগ্র্যান্ট ফিরে যায়, ৫ শতাংশ পিআর কার্ড নিয়ে আসা যাওয়া করে, ১০ শতাংশ পেশাগত জব পায়। বাকি ৮০ ভাগ নিউ ইমিগ্র্যান্ট ফাঁদে পড়ে কাঁদে। কোথাও কাজের জন্য গেলেই বলবে, তোমার কি কানাডিয়ান এক্সপেরিয়েন্স আছে? না থাকলে- নো। কানাডিয়ান এক্সপেরিয়েন্সের জন্য মধ্য বয়সে আবার শিক্ষাঋণ (ওসাপ) নিয়ে পড়াশোনার পর ৫০ শতাংশও চাকরি পায় না। বরং মাথার উপর শিক্ষা ঋণের বোঝা! এভাবেই নিউ ইমিগ্র্যান্টরা প্রতি মুহূর্তে জীবনযুদ্ধ করছেন। আর ইঞ্জিনিয়ার জাকির হোসেন যেমন তাঁর ছড়ায় বলছনে জীবন যুদ্ধে বিধ্বস্ত সৈনিকরে কথাঃ ‘এই কানাডা সেই কানাডা যে কানাডায় এসে, বাংলাদেশের ডাক্তার বাবু ট্যাক্সি চালায় শেষে!এই কানাডা সেই কানাডা সুযোগ পেলাম সেবার, আমরা যারা ইঞ্জিনিয়ারসেলেসটিকায় লেবার!!এই কানাডা সেই কানাডা যেই কানাডায় থাকি কেমন ভালো আছি আমিজানেন আমার মা কি!!’
কানাডায় জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার খুবই নগণ্য। তাই বলে তারা নিউ ইমিগ্র্যান্টদের চায় না। তারা চায় তাদের ফুটফুটে সন্তান, যারা আগামী দিনের কানাডিয়ান। সে জন্য নানা ধরণের হিসাব নিকাশ, ছলচাতুরি, কলাকৌশল করে মোহ সৃষ্টি করে রেখেছে। কানাডার ‘ছেলে ধারর’ পলিসিতে ইমিগ্র্যান্টরা স্বেচ্ছায় ফাঁদে পা দিয়ে মাকড়সা হচ্ছে।
কানাডায় কাজ অর্থাৎ চাকরির চালচিত্রের আরো কটি নমুনা অন্য লেখকদের কাছ থেকে ধারকর্জ করে তুলে ধরছি:
ক] সাংবাদিক জসিম মল্লিক দৈনিক প্রথম আলোতে লিখেছেন:
“এটা ঠিক যে আমাদের মত দেশ থেকে বিভিন্ন পেশার যারা আসেন এই দেশটিতে তাদের জন্য একটি উপযুক্ত চাকরি পাওয়া সত্যি কঠিন। এজন্য তাদেরকে বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে হয়। শুধু আমাদের দেশ বলে নয় অন্য যে কোন দেশের জন্যও একই কথা প্রযোজ্য। তিনটি জিনিস চাকরি পাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সেগুলো হচ্ছে, কানাডার ডিগ্রী, অভিজ্ঞতা এবং রেফারেন্স। তবে কেউ যদি অডজব করতে চান তাহলে কারো রেফারেন্স হলে চলবে। এছাড়াও আপনি এজেন্সিতে নাম লিখিয়ে রাখলে আপনাকে কাজের জন্য ডাকা হবে। অনেক ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সাংবাদিক, এমবিএ করা লোকজন অনোন্যপায় হয়ে হাতের কাছে যে কাজ পাচ্ছেন তাই করছেন। কারণ সবাইকেই সারভাইভ করার ব্যাপারটি মাথায় রাখতে হয়। এখান কোন কাজকেই ছোট করে দেখা হয় না।”
খ] আলী আশরাফ সাপ্তাহিক যোগাযোগে (জুলাই ০৯, ২০১০, মন্ট্রিয়ল) লিখেছেন:
“অভিবাসী হিসাবে পৃথিবীর সর্বত্র থেকে যে উচ্চশিক্ষিত, অভিজ্ঞ এবং মধ্যবয়সী সচ্ছল ব্যক্তি, তাদের পরিবার কানাডায় আসছেন, তার মধ্যে মাত্র ২০ ভাগ নিজেদের যোগ্যতার কাছাকাছি কাজ পেয়েছেন। সেটাও চার পাঁচ বছরের আগে নয়। বাকীরা সবাই সাধারণ্যে মিশে যেতে বাধ্য হয়েছেন। হন্তারক হতাশা কাটাতে পেরেছেন খুব কম অভিবাসী।”
গ] জিয়াউল হক জিয়া টরন্টোস্থ সাপ্তাহিক দেশের আলোর আগস্ট ১০, ২০১০ সংখ্যায় ‘বাংলাদেশি কানাডিয়ানদের প্রত্যাশা ও সম্ভাবনা: আমাদের করণীয়’ প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন:
“আমাদের বাংলাদেশে অর্জিত শিক্ষাগত যোগ্যতার ইকুইভ্যালেন্সের দিকটিও আমাদের নিজেদের মাঝে প্রশ্ন সৃষ্টি করে। সনদ ইকুভ্যালেন্সের ভিত্তিতে এখানে যে সনদ দেয়া হয় তা এখানকার চাকরীর বাজারে খুব একটা গুরুত্ব বহন করে না। এটি কোন একটি বিশেষ ক্ষেত্রে শিক্ষা ও পেশাদারী ট্রেনিং এ প্রবেশের পূর্বশর্ত হিসেবে কাজ করে। অর্থাৎ এখানকার শিক্ষা ও কাজের দক্ষতাকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়। যার ফলশ্রুতিতে আমাদের কমিউনিটির যারা এখানে ভাষা অর্জন ও শিক্ষায় নিজেদের দক্ষ করে তুলতে পারছেন, তারা প্রতিযোগিতামূলক বাজারে প্রবেশ করতে পারছেন, এর বাইরে একটা বিশাল শ্রমশক্তি ওয়ার্কি ক্লাস চাকুরির উপর নির্ভরশীল।”
ঘ] মন্ট্রিয়লের মুক্তিযোদ্ধা গবেষক তাজুল মোহম্মদ লিখেছেন:
“উচ্চ শিক্ষিত লোকেরাও কানাডা অভিবাসী হবার পর তাদের নিজ নিজ পেশাগত কাজের স্বীকৃতি পাচ্ছেন না...। বাংলাদেশিসহ বহু চিকিৎসক, প্রকৌশলী পেশাগত কাজ পাননি। ফলে জীবিকার জন্য কেউ করছেন ওয়াটারি, কেউ চালাচ্ছেন ট্যাক্সি। ফুড ডেলিভারী দিয়েও সংসার চালাতে হচ্ছে কাউকে কাউকে। আবার একই কাজ করে নতুন অভিবাসীরা কানাডিয়ানদের চেয়ে অনেক কম উপার্জন করছেন বলেও অনেক অভিযোগ রয়েছে। এসব বিষয়ে অবশ্য অভিবাসন মন্ত্রণালয়ের কোনো ব্যাখ্যা পাওয়া যায় নি।” (তথ্যসূত্র: কানাডার চিঠি/ তাজুল মোহম্মদ। প্রকাশক: অন্য প্রকাশ, প্রকাশ কাল: বইমেলা ২০০৭, ঢাকা। পৃষ্ঠা: ১৮০)
ঙ] নজরুল মিন্টো তাঁর উত্তর আমেরিকার চালচিত্র গ্রন্থে ‘শ্রীলঙ্কার মহেশ্বরী’র যে জীবন সংগ্রামের চিত্র ব্যাখ্যা করেছেন তার সার সংক্ষেপঃ
"শ্রীলঙ্কার এক স্বচ্ছল পরিবারের স্কুল শিক্ষিকা মহেশ্বরী পুভানেশ্বর অনেক স্বপ্ন নিয়ে ১৩ বছর আগে কানাডায় এসে এখনো দুঃস্বপ্নে হাবুডুবু খাচ্ছেন। রাত ১১টা থেকে ভোর পর্যন্ত ৭.৭৫ ডলারের ক্লিনিং (ঘর মোছা, ময়লা সরানো, টয়লেট পরিষ্কার)-এর কাজ করেও সংসার চালাতে হতাশায় হিমশিম খান। পেটপুরে খাবার জন্য প্রতি রোববার সন্তানদের নিয়ে মন্দিরে যান। গ্লাস ফ্যাক্টরিতে কাজ করতে গিয়ে তার স্বামী হাত হারিয়ে ফিরে গেছেন শ্রীলঙ্কায়।নজরুল মিন্টোর উল্লেখিত গ্রন্থে ‘উল্টো রাজার দেশ কানাডা’ শীর্ষক নিবন্ধের এক স্থানে আছে: ‘কানাডার কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সার্টিফিকেটের অনেক মূল্য। যদিও এখানে এ সার্টিফিকেট দিয়ে উপযুক্ত কাজ খুঁজে পাওয়া কষ্টকর...’
চ] স্বদেশে বিভিন্ন পেশায় প্রতিষ্ঠিত মধ্যবয়সী অভিবাসীরা এসে হতাশায় চোখে মুখে অন্ধকার দেখেন। কারণ, তাদের বিদ্যা-বুদ্ধি-মেধা, অভিজ্ঞতা-অর্জন, শিক্ষা-সার্টিফিকেট সব কিছুর মূল্যমান প্রায় শূন্য। চাকরি খুঁজতে গেলেই ‘ক্যানাডিয়ান এক্সপেরিয়েন্স’ চায়। সেজন্য অনেকেই ঋণের বোঝা ‘ওসাফ’ নিয়ে মধ্য বয়সে ‘ছাত্র’ সাজেন, পড়াশোনা করেন। তপস্যায় মন দেন। তারপরও করুন অবস্থা। যেমন অভিবাসী ডাক্তারেরা আন্তর্জাতিক সনদ নিয়ে এসে আবার চিকিৎসাবিদ্যা পাঠ করে পরীক্ষায় অর্ধেকই অকৃতকার্য হচ্ছেন। ফলে তাদের পক্ষে কানাডায় চিকিৎসা পেশায় নিয়োজিত হতে পারছেন না। বাংলাদেশে নামকরা ডাক্তার সাঈদ কোর্স করেও মেডিক্যাল ক্লিনিকগুলোর দ্বারে দ্বারে ঘুরে নার্সের চাকরিও পাননি বিগত ক’বছরে। ফলে সরকারও বিব্রত। সম্প্রতি এ তথ্য দিয়েছে কানাডিয়ান ফ্যামিলি ফিজিশিয়ান জার্নালের দু’টি গবেষণামূলক প্রতিবেদন।
ছ] কৃষিবিদ প্রণবেশ পোদ্দার জানাল,
এসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশি এগ্রিকালচারিস্ট ইনক কানাডা সমিতির সদস্য সংখ্যা তিন শতাধিক। এছাড়াও রয়েছেন আনুমানিক আরো ২০০ কৃষিবিদ। কানাডা প্রবাসী ৫ শতাধিক কৃষিবিদদের মধ্যে পড়াশোনা করে মাত্র ২৫ জনের মতো পেশাগত কাজ করছেন। গত ১৮ মার্চ ২০১০এ মন্ট্রিয়লে অভিবাসীদের জন্য দরজা আগলে রাখা নীতি শীর্ষক এক সম্মেলনে বক্তৃতাকালে ইমিগ্রেশনমন্ত্রী বলেন, কানাডার বাইরের দেশ থেকে নেয়া শিক্ষা এবং অভিজ্ঞতাকে কানাডায় স্বীকৃতি না দেওয়া নিয়ে তীব্র সমালোচনা আছে। বিভিন্ন মহলের সমালোচনার মুখে ফেডারেল সরকার গত বছর বিদেশ অর্জিত ডিগ্রীর স্বীকৃতি দেওয়ার পদক্ষেপ নেয়। কিন্তু দেশের শত শত পেশাজীবী সংগঠনের মধ্যে ৮/১০ টি সংগঠন সরকারের উদ্যেগে সাড়া দিয়ে এগিয়ে আসে। সিংহভাগ প্রতিষ্ঠানই সরকারের আহ্বানে সাড়া না দেওয়ায় ফেডারেল সরকারের উদ্যোগটি কার্যত কোনো ফল দিতে পারে নি।
জ] টরন্টোর বাঙালি অধ্যুষিত এলাকার সাবেক সাংসদ মারিয়া মিন্না এক সাক্ষাৎকারে বলছেন,
‘আমি প্রতিদিনই সকাল সন্ধ্যা ভোটারদের ঘরে ঘরে যাচ্ছি। দেখতে পাচ্ছি- আমার এলাকার লোকজন ন্যূনতম জীবন ধারণের জন্য প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করছে। তাদের অনেকের চাকরি নেই, থাকলেও এমন চাকরি করতে বাধ্য হচ্ছে, উপায় থাকলে এমন চাকরি করতো না। তার উপর রয়েছে কর্মজীবী বাবা-মার জন্য চাইল্ড কেয়ার অসুবিধার অভাব। রয়েছে, মাধ্যমিক পরর্বতী উচ্চশিক্ষার জন্য সন্তানদের প্রচুর ধারদেনা! বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর টিউশন ফি-ও দিন দিন বেড়েই চলছে।‘(সাপ্তাহিক আজকাল, জুলাই ২৯, ২০১১, টরন্টো, কানাডা।)
ঝ] ‘চাকরী পাওয়া সহজ নয়। তাই অনেকে কাজ খোঁজে। একটা চাকরি পেতে নিজেকে প্রতিনিয়ত ব্যস্ত রাখতে হবে।’ (কানাডিয়ান ইমিগ্রেশন/ মুহম্মদ আখতার হোসেন। সাউথ ইষ্ট পাবলিকেশন্স, আগস্ট ২০০১, ঢাকা। পৃ-৩০)
কানাডায় এসে দেখি আমার জন্য এখানে কিছু করার নাই। আমি তখন টরন্টোর রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছি। বছর খানেক হয় এসেছি। মনমতো কোনো কাজ পাই না। ভালো কাজের জন্য যে এতো কিছুর দরকার লাগে আমার আগে জানা ছিল না। দেশে আমার বেশ ভালো একটা চাকরি ছিল। একটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানীতে ম্যানেজারের পদ ছিল। ভালো বেতন। কিন্তু একদিন ভাবলাম, যাই। কানাডা যাই। অনেকেই যাচ্ছে। শুনেছি কনাডা নাকি হ্যাভেন। এর আগে আমি অফিস থেকে দেশ বিদেশ গিয়েছি। আমেরিকা গিয়েছি। লন্ডন গিয়েছি। প্যারিস গিয়েছি। আসলাম কানাডা। এপ্লাই করলাম। ধরলাম ইমিগ্রেশন ল’ এজেন্সি। কানাডা আসতে গিয়ে প্রায় ফতুর দশা। লম্বা প্রসেস। তারা আমার কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে নিল ফী বাবদে। আসার সময় সাথে নিয়ে আসলাম প্রায় বিশ হাজার ডলার। সেই টাকা বসে বসে খাই। পরে জেনেছি ল্যান্ডিংপেপার জাল করেও অনেক লোকজন এদেশে ঢুকেছে একসময়। অনেক খুনী ডাকাতও বাংলাদেশে থেকে এদেশে এসেছে। তারা বহাল তবিয়তে আছে। জাতির পিতার খুনীও আছে কানাডায়।
৯/১১ এর আমেরিকা থেকেও হাজার হাজার অবৈধ ইমিগ্র্যান্ট কানাডায় এসেছে। অনেকে আবার ওদেশে নানা ধরণের ক্রাইমের সাথে জড়িত ছিল। ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতি, বাড়ি কেনাবেচায় জালিয়াতি। নানা কিছু ঘটে আমেরিকায়। অনেকে স্টুডেন্ট হিসাবে আমেরিকায় এসে আর পড়াশুনা করেনি। ডলারের মোহে পড়ে পড়াশুনার পাট চুকিয়ে দিয়েছে। এরা কেউ ট্যাক্সি চালায়, কেউ পিজা ডেলিভারি করে প্রচুর পয়সা রোজগার করেছে।
আমি কানাডায় এসে দেখি আমার জন্য এখানে কিছু করার নাই। কঠিন অবস্থা। যাকেই বলি-ভাই, একটা কাজ দেন। সেই বলে, কাজ নাই। যাকেই বলি, ভাইসাব পড়াশুনা করতে চাই, সেই বলে পড়ে কী হবে? পড়ে কারো কিছু হয় নাই। কেউ একটা ভালো বুদ্ধি দেয় না। উত্তর আমেরিকায় অড জবকে সবাই বলে ‘কাজ’। আমি যখন প্রথমবার আমেরিকায় আসি তখন দেখি সবাই বলে কাজে যাচ্ছি। আমি একটু ফাপড়ে পড়ে যাই। এখন বুঝি ‘কাজ’ জিনিসটা কী?(অমল ধবল চাকরি/ জসিম মল্লিক। দ্য বেঙ্গলি টাইমস ডটকম, সেপ্টেম্বর ২২, ২০১১ টরন্টো, কানাডা)
বিষয়গুলো দেশের বাইরে থাকলে বুঝা যায় না। আবার সংক্ষেপে ব্যাখ্যা করাও মুশকিল! কানাডায় সত্যি সত্যি উন্নতমানের জীবন আছে। কিন্তু জীবনের আড়ালে রয়েছে নিউ ইমিগ্র্যান্টদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা। যা গল্প-উপন্যাস কিংবা চলচ্চিত্রের চরিত্রকেও হার মানায়।
এসব নিয়েই দীপা মেহেতা নির্মাণ করেছেন Heaven on Earth’। কানাডায় অভিবাসীদের নিয়ে নির্মিত যার হিন্দি নাম- ‘বিদেশ’। চাইলে এই লেখাটাও পড়তে পারেনঃ [link|http://www.somewhereinblog.net/blog/shahin72blog/28724248|কানাডায় ইমিগ্রেশন ও নতুন জীবন সূচনার চ্যালেঞ্জ [০৫ ই আগস্ট, ২০০৭]]
সবশেষে, এই লেখার সবকিছুই ব্লেমগেম মনে হতে পারে। আসলে আমাদের সবার গল্প, অভিজ্ঞতা খুবই বিচিত্র এবং ক্ষেত্র বিশেষে ভিন্ন। কিন্তু সচেতন হতে তো দোষ নেই। Ashim Akhand ভাই এর কথাগুলো পুনরায় বলে শেষ করছিঃ
So instead of blaming on Canadian system let's try to change our habits and improve ourselves through education and observation to integrate into the canadian society.After all, most of us immigrated to have a better future for our children.Please don't get me wrong.I just wanted us to explore Canada and try to improve ourselves accepting the many good things offered by this country.
সবার জন্য শুভ কামনা।