somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মানবতা বিরোধী অপরাধে শেখ হাসিনা কে গ্রেফতারের সুযোগ রয়েছে আইসিসির?

১৩ ই মার্চ, ২০২৫ রাত ১১:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


সারাবিশ্বে তোলপাড় চলছে ফিলিপাইনের সাবেক প্রেসিডেন্ট রড্রিগো দুতের্তের গ্রেফতার নিয়ে। আইসিসির তদন্ত সাপেক্ষে ম্যানিলা থেকে আটক করা হয়েছে তাকে। দুতের্তের বিরুদ্ধে মানবতা বিরোধী অপরাধের সত্যতা মিলেছে। সাবেক এই প্রেসিডেন্ট যখন ক্ষমতায় ছিলো তখন 'ওয়ার এগিনেস্ট ড্রাগ' তথা মাদক ও নেশার বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর সময় সন্দেহভাজন ত্রিশ হাজার লোক কে হত্যা করেছে বলেছে আমেনিষ্টি ইন্টারন্যাশনাল জানিয়েছে।

বর্তমানে ফিলিপাইন ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্ট বা আইসিসির সদস্য না হওয়া সত্ত্বেও কিভাবে দুতের্তে গ্রেফতার হলেন তা নিয়ে অনেকের মধ্যে ধোঁয়াশা রয়েছে। ঘটনা হচ্ছে যে সময় দুতের্তে মাদক বিরোধী অভিযানের নামে ত্রিশ হাজার মানুষ হত্যা করেছিলো তখন ফিলিপাইন আইসিসির সদস্য ছিলো। ফিলিপাইন ২০১৯ সালের ১৯শে মার্চ আইসিসি থেকে সদস্য পদ প্রত্যাহার করেছে। কিন্তু আইসিসির নিয়ম অনুযায়ী পূর্বে সদস্য থাকার সময়ে সাবেক প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপন ও গ্রেফতার করা যাবে। আইসিসির সদস্যভুক্ত দেশগুলোতে কেউ যদি মানবাধিকার লংঘন করে তবে নিজ দেশ সহ অন্যান্য সদস্যভুক্ত যে কোনো দেশে অবস্থান করুক তাকে আইসিসি গ্রেফতার করতে পারবে বলে সসদস্যভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে চুক্তি আছে।

সাবেক প্রেসিডেন্ট দুতের্তে কে যখন গ্রেফতার করা হয় তখন ইন্টারপোলের লোকজন ছিলো বলে শোনা গিয়েছে। ফিলিপাইনের ইন্টারপোলের সদস্যপদ রয়েছে । অনেক সময় আইসিসিকে সহযোগিতা করে থাকে ইন্টারপোল অপরাধী কে গ্রফতার করতে। দুতের্তের ক্ষেত্রেও এমন কিছু হয়েছে খুব সম্ভবত। তবে ফিলিপাইনের সহযোগিতা ছাড়া এই কাজ সম্ভব হতো না। এক সময় ফিলিপাইনের সর্বোচ্চ পদ থেকে আইসিসি কে সহযোগিতা করতে অস্বীকার করা হয়েছিলো। কিন্তু দুতের্তে কে ম্যানিলা থেকে গ্রেফতার করার ঘটনায় রাষ্ট্রের ভূমিকা অবশ্যই ছিলো সকলের অভিমত।

সারাবিশ্বে আলোচনা শুরু হয়েছে এরপর আইসিসি কাকে গ্রেফতার করতে পারে সে বিষয়ে ! গত কয়েক বছরে বাংলাদেশসহ অনেক দেশের সরকার প্রধানেরা মানবতা বিরোধী অপরাধ করেছে। রানিং প্রেসিডেন্ট বা প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন সময় আইসিসি কতৃক কারো বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি খুবই কঠিন কাজ কিন্তু যখন তারা ক্ষমতাচ্যুত হন বা মেয়াদ শেষ হয় তখন গ্রেফতারের সুযোগ সৃষ্টি হয়।

ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু কে নিয়ে আলোচনা হচ্ছে সর্বত্র । কিন্তু একেতো সে রানিং প্রেসিডেন্ট পাশাপাশি তার দেশ আইসিসির সদস্য নয়। বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু যদি আইসিসির সদস্য ভুক্ত কোনো দেশে ভ্রমণে যান তবে সে গ্রেফতার হতে পারে। নিজ দেশে নেতানিয়াহুর গ্রেফতার হওয়ার চান্স নেই। আইসিসি ২০২১ সালে ফিলিস্তিনের কিছু অংশে ( গাজা, ইস্ট জেরুজালেম) সংগঠিত মানবতা বিরোধী অপরাধের বিচার করবে বলে একটি আইন প্রণয়ন করে। ইসরায়েলের সবচেয়ে বড়ো মিত্র যুক্তরাষ্ট্র ! এসব গ্রেফতারের ক্ষেত্রে অনেক সময় রাজনৈতিক ও বৈশ্বিক প্রভাব থাকে। যুক্তরাষ্ট্রের মতো প্রভাবশালী মিত্র থাকতে নেতানিয়াহুর কোনো চিন্তা নেই।

সমসাময়িক সময়ে মানবতা বিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত হওয়ার আ্‌শঙ্কা রয়েছে বাংলাদেশের সাবেক ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। ইন্টেরিম সরকারের প্রধান ড. ইউনূসের আমন্ত্রণে আইসিসির একজন গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা গত নভেম্বর বাংলাদেশে এসেছেন। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আইসিসিতে অভিযোগ করতে চায় বলে জানায় সরকার। বাংলাদেশ যেহেতু আইসিসির সদস্য তাই কাজটি তুলনামুলক ভাবে সহজ ছিলো। কিন্তু শেখ হাসিনা যে দেশে(ভারত) রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়েছেন তারা আইসিসির সদস্য নয়। তাই বাংলাদেশ সরকার অভিযোগ করার পর তা প্রমাণিত হলেও শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করতে ভারত কে চাপ দিতে পারবে না আইসিসি।

ইন্টারপোলের মাধ্যমেও পারবে না কারণ রাজনৈতিক নেতাদের অপরাধের বিষয়ে তেমন হস্তক্ষেপ করতে পারে না ইন্টারপোল। তাছাড়া ভারতের সদিচ্ছার প্রয়োজন আছে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশে গঠিত দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালের চীফ প্রসিকিউটর কে নিয়ে বিপাকে পড়তে যাচ্ছে সরকার। বর্তমান চীফ প্রসিকিউটরের রাজনীতির সাথে সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। তাই শেখ হাসিনার বিচার প্রক্রিয়া প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে । সরকারের পক্ষ থেকে জনতা কে খুশি করার জন্য শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দ্রুত রায় ও সাজা শোনালেও বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠবেই। সবশেষ ভারতের সাথে বন্দিবিনিময় চুক্তির মাধ্যমে শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর চেষ্টা করে তেমন লাভ হবে না। ভারত বিচার প্রক্রিয়ার নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে সাফ না করে দিতে পারে । শেখ হাসিনাকে তাই দেশে ফেরত এনে বিচারের মুখোমুখি করা যে এই মূহুর্তে সম্ভব হচ্ছে না তা সহজেই অনুমেয়।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই মার্চ, ২০২৫ সকাল ১১:৪৬
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আজকের ডায়েরী- ১৪৯

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৬ শে মার্চ, ২০২৫ দুপুর ২:২৯



আজ ২৫ রোজা।
এই তো সেদিন রোজা শুরু হলো। দেখতে দেখতে ২৪ টা রোজা শেষ হয়ে গেলো। সময় কত দ্রুত চলে যায়! আগামী বছর কি রমজান... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবগুণ্ঠন (পর্ব ২)

লিখেছেন পদাতিক চৌধুরি, ২৬ শে মার্চ, ২০২৫ দুপুর ২:৩৯



অবগুণ্ঠন (পর্ব ২)

ওসির নির্দেশ মতো ডিউটি অফিসার রাঘবেন্দ্র যাদব লাশ পরিদর্শনের সব ব্যবস্থা করে দিলেন। গাড়ির ড্রাইভার সহ তিনজন কনস্টেবল যথাস্থানে তৈরি ছিলেন। বেশি সময় অপেক্ষা করতে হয়নি ওনাদের।খানিক বাদেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগে বিচার , সংস্কার তারপরেই নির্বাচন

লিখেছেন মেঠোপথ২৩, ২৬ শে মার্চ, ২০২৫ বিকাল ৩:২২



জুলাই মাসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন যখন এক ঝাক তরুনদের রক্তের উপড় দাঁড়িয়ে স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে একের পর এ জ্বালাময়ী কর্মসুচী দিচ্ছিল , তখন বিএনপির... ...বাকিটুকু পড়ুন

It is difficult to hide ল্যাঞ্জা

লিখেছেন অধীতি, ২৬ শে মার্চ, ২০২৫ বিকাল ৩:৪১

এক গর্দভ ইউটিউবার ৭১কে ২৪এর থেকে বড় বলতে গিয়ে আমাদের শিখায় যে ৭১ বড় কারণ সেটা ভারত পাকিস্তানের মধ্যে হয়ে ছিল। আর আপামর জনসাধারণ সেটায় অংশগ্রহণ করেনি। এই হলো যুক্তি... ...বাকিটুকু পড়ুন

তথ্য এবং গুজব....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ২৬ শে মার্চ, ২০২৫ বিকাল ৪:১৫

তথ্য এবং গুজব....

তথ্য নাগরিকের অন্যতম মৌলিক স্বীকৃত অধিকার। মানবাধিকারও বটে। যোগাযোগের অন্যতম প্রধান উপকরণ তথ্য মানুষের নিত্য সঙ্গি।

তথ্যের (Misinformation) ভুল, ত্রুটিপূর্ণ, বিভ্রান্তিকর বা মিথ্যা তথ্য সমাজে ছড়িয়ে পড়ে,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×