somewhere in... blog

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

ফকির ইলিয়াস
আলোর আয়না এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্য নয়।লেখা অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - baul98@aol.com

ব্লগের কবিতা : প্রবাহ ঝলকের নির্বাচিত সতেরো / ১ম পর্ব

১০ ই মে, ২০০৯ রাত ৯:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সাম হ্যোয়ার ইন ব্লগে যেদিন থেকে প্রথম লেখা শুরু করি , সেদিন থেকেই কবিতা ছিল এখানে আমার অন্যতম পাঠ্য বিষয়। অনেকের কবিতাই এখানে পড়েছি। ভালো লেগেছে। মন্তব্য করেছি। ভালো না লাগার হলে, নীরব থেকেছি। কবিতা সব সময়ই আমার কাছে আরাধ্য বিষয়। অনুধাবন-অনুরণন এর মূর্ছনা।
এই লেখায় আমি সাম হ্যোয়ার ইন ব্লগের সতেরো জন কবির কবিতা নিয়ে কিছু আলোচনা করতে চাই। সংক্ষিপ্ত পরিসরে হলেও জানাতে
চাই আমার দৃষ্টির আলোতে প্রবাহ ঝলকের কথা ।এই লেখাটি ধারাবাহিকের ১ম পর্ব। কয়েকটি পর্বে তা শেষ করার আশা রাখছি।
যাদের কবিতা নিয়ে আলোচনা করছি, এরা কেউ লিখেন স্বনামে। কেউ ছদ্মনামে। কেউ কেউ পাবলিশড পোয়েট । সবাইকে যে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি তাও নয়। লেখার দায় থেকেই লেখা।
আমি জানি কোন সমালোচনা করার কাজটি খুবই কঠিন। আছে শত্রু সৃষ্টির
ভয় ও । তারপরও বলতে হয়। মনের কথা জানাতে হয়।
আমি এটাও জানি সকল অগ্রজ কবি , অন্য কবিকে সহজে স্বীকৃতি দিতে
চান না। সেই কাজটি আমার ধাতে নাই।
আমার কবিতা বিষয়ক প্রবন্ধগ্রন্থ '' কবিতার বিভাসূত্র'' ( বইমেলা ২০০৯,
ভাষাচিত্র / ঢাকা) -

তে আমি এই প্রজন্মের অপেক্ষাকৃত তরুণ কবিদেরকেই আলোচনায় এনেছি, সেই দায়িত্ববোধ থেকেই। তাদের কবিতা চয়ন করেছি , উদ্বৃতি হিসেবে।

নাজনীন খলিল দীর্ঘদিন থেকে লিখছেন। তাঁর কাব্যগ্রন্থ আছে। এই কবির
কবিতায় সমাজ নির্মাণের যে প্রত্যয় লক্ষ্য করি , তা যে কোনো মানবমনকে
নাড়া দেয় খুব সহজে।
যেভাবে সন্ধ্যারতিতে গীর্জার ঘন্টাগুলো বেজে ওঠে
তেমনি আমার ভেতরেও বেজে ওঠে এক সতর্ক নিনাদ
আড়মোড়া ভাঙ্গে অগ্নিমান ক্রোধের দানব
তোমার উদগ্র লুব্ধতাটুকু নিমেষেই ভস্ম করে দিতে পারে;
কঠিন নিগড়ে বন্দী করে রাখি।

( যেভাবে ঘন্টাগুলো বাজে / নাজনীন খলিল )
এক নীরব শক্তি আমাদেরকে যোগান দেয় যে আমিষ , তা কবিতা ছাড়া
আর কি হতে পারে !
শহীদুল ইসলাম মুকুলের বই বেরিয়েছে ২০০৯ এর বইমেলায়। মুকুল
এই ব্লগেরই কবি। তিনি ''জালছেঁড়া নদী '' গ্রন্থটির মধ্য দিয়ে জানান
দিয়েছেন ব্লগই হতে পারে একজন কবির অন্যতম লেখামিডিয়া।
মুকুলের কবিতায় একটি ঋজুতা লক্ষ্যনীয়। তিনি বার বার ফিরেন নিজের কাছে। প্রেমে - দ্রোহে - মিলনে - বেদনায়।
একটি চুম্বনের জন্য অবলিলায়
শত মাইল পাড়ি দিয়েছি গত শীতে;
বিনিময়ে পেয়েছি ঠোঁট ফাটার যন্ত্রণা থেকে মুক্তি।

এখন তোমার আমার ব্যবধান হাজার আলোকবর্ষ।
তাই এই শীতে আমার আবার ঠোঁট ফেটেছে।

( আগামী শীতে / শহীদুল ইসলাম মুকুল )
হাঁ কবিতা ফেরায়। আমরা ঘরে ফিরি প্রতিদিন একেকটা কবিতার টানে।

নির্ঝর নৈ:শব্দ্য - এটা একজন কবির নিকনাম। তার আড়ালে লুকিয়ে আছে একটি শক্তিশালী সত্তা । এই কবির চিরায়ত বিচরণ আমাকে নদীর
বাঁকের মতোই মুগ্ধ করে।
পড়ুন তার কটি পংক্তি ....

২৮০৩০৯

এবং অনতিদূরে কোথাও তখনও বেহাগ বাজে
রাত ভেঙে জেগে উঠে যেমন দেহের ভাঙন
বিবাগীভাঙন জানে বাঁশিটার পরিণত নাম
নামের রূপের ভিতর যেনো বা অচিন দালান
দালানের ভাঁজে ভাঁজে লোহার হাড়েরা জাগে
জেগে জেগে ভিজে যায় বয়েসী মাঘে
এইশীত কোনোদিন জমেছিলো শিরার ভিতর

(আমাকে ডেকে নেয় দূরতম মাঠ -নির্ঝর নৈ:শব্দ্য )
কবি কি শুধু বিবাগীভাঙন ই দেখেন ? যে অচিন দালান , নিজের মানবদেহটা বহন করেন তিনি প্রতিদিন- তার মাঝেও জন্ম নেয় বার বার
বয়েসী মাঘ। বসন্ত আসে - বর্ষা যায়। কবির নির্মাণস্তম্ভ হয়ে উঠে গোটা
মানব সমাজের চাওয়া পাওয়ার লেখপত্র।

কবিতায় সৃজনের ভাঙনকে আমি সব সময়ই স্বাগত জানাই । যারা কবিতাকে ভাঙচুরের মাঠে দাঁড় করাতে পারেন , তাদের কৃতিত্বকে আমি
দেখি আকাশে জেগে থাকা অষ্টাদশী চাঁদের মতোই।
শূন্য আরণ্যক - নিকনামে যে কবি প্রতিকাব্য এর পসরা সাজিয়েছেন , আমার কাছে তা বেশ পরিশুদ্ধ নিরীক্ষণ ই মনে হয়েছে।
''কাব্য - প্রতিকাব্য '' - শব্দগুলো শুনলেই ঘুরে দাঁড়াতে চায় মন । এই যে
দৃষ্টি আকর্ষণের ক্ষমতা সেটাই একজন কবিকে এগিয়ে নেয় । নিতে পারে।

ঝাপসা করিডোরে দাড়িয়ে আমি
উপরে যাবো
অনেক উপরে

যান্ত্রিক খাচার দরজা খোলে ;অস্ফুট আয় আয়
টইটুম্বুর অন্ধকার
দোটানা
কিন্তু আমাকে যে যেতেই হবে

পায়ে পায়ে ঢুকে পড়ি
পিছনে নরোম জিব চাটে কেউ
এরপর অন্ধকার হাত বুলায় আমার শরীরে
খাপছাড়া ভয়টা শেকলছিড়ে
পিঠ ভেদ করে হৃদপিন্ডের আকার মাপে
ধুকপুক

একটা লাল বোতাম স্পষ্ট হয়
গোল আলোর বৃত্ত
যান্ত্রিক খাচা নিচে নামে
নামতেই থাকে

উন্মত্তের মতো সাদা কালো নীল সব বোতাম চাপি

বোবা লিফটটা আমাকে নিয়ে নেমে যায়

অস্তিত্বের গহীন কদাকার অন্ধকারে
.......... ( প্রতিকাব্য : লিফটের লাল বোতাম / শূন্য আরণ্যক )
আঁধার হচ্ছে সাধনার অন্যতম কোটর। যেখানে সত্তা শুধুই কিছু দ্যুতির
দেখা পায়। কবি সেই দ্যুতিতেই খুঁজেন উজ্জ্বলতার বিবিধ মুখ ।
........................... ( ক্রমশ : )

ছবি - রবার্টো এরকলিনো

সর্বশেষ এডিট : ১০ ই মে, ২০০৯ রাত ৯:৪৩
১৭টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মোদির সাথে ডঃ ইউনূসের সাক্ষাৎ এবং.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৬ ই এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ৭:৫০

মোদির সাথে ডঃ ইউনূসের সাক্ষাৎ এবং.....

'সাইড লাইনে সাক্ষাৎ" দেখে যারা উল্লাসে উচ্ছ্বসিত, আনন্দে উদ্ববেলিত....কেউ কেউ আরো কয়েক ধাপ এগিয়ে গলাবাজি করছেন- ভারত ভুল বুঝতে পেরেছে, ডক্টর ইউনুস স্যারের কাছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনূস বিদেশে দেশকে করছেন অপমান-অপদস্থ

লিখেছেন sabbir2cool, ০৬ ই এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ১০:৪৬


দুর্নীতির কারণে তার যাওয়ার কথা ছিল জেলে, গেছেন তিনি বঙ্গভবনে প্রধান উপদেষ্টার শপথ নিতে। এটা খোদ মুহাম্মদ ইউনূসের স্বীকারোক্তি ছিল। তার দেশশাসনের আট মাসে বিদেশে যখন গেছেন তিনি, তখন স্বীকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এখানে আর নিরাপত্তা কই!=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৩:১৩


কোন সে উন্নয়নের পথে হাঁটছি বলো
এই গিঞ্জি শহর কি বাসের অযোগ্য নয়?
শূন্যে ভাসমান রাস্তা-নিচে রাজপথ
তবু কি থেমে আছে যানজট কিংবা দুর্ঘটনা?

দৌঁড়ের জীবন-
টেক্কা দিতে গিয়ে ওরা কেড়ে নেয় রোজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই শহর আমার নয়

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৬ ই এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৫:০২




এই শহর আমার নয়
ধুলিমলিন, পোড়া ধোঁয়ায় ঘেরা
ধূসর এক স্বপ্নহীন চেহারা।
এই শহর, আমার নয়।

ঘোলাটে চোখে জমে হাহাকার,
চেনা মুখেও অচেনার ছাপ।
পথে পথে স্বপ্নরা পোড়ে,
আলোর ছায়ায় খেলে আঁধার।

এই শহর... ...বাকিটুকু পড়ুন

টিউবওয়েলটির গল্প

লিখেছেন নাহল তরকারি, ০৬ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৯:০৪



এটা একটি টিউবওয়েল।

২০০৯ সালে, যখন আমি নানী বাড়ি থেকে লেখাপড়া করতাম, তখন প্রতিদিন এই টিউবওয়েল দিয়েই গোসল করতাম। স্কুল শেষে ক্লান্ত, ঘামাক্ত শরীর নিয়ে যখন ঠান্ডা পানির ঝাপটায় নিজেকে স্নান... ...বাকিটুকু পড়ুন

×