আমরা প্রায়শই একটা কথা শুনতে পাই- ‘পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি’ আসলে সৌভাগ্য আর সাফল্য যেটাই বলি না কেন, পরিশ্রমের সাথে সাথে জানতে হয় সফলতার কিছু কৌশল। যা অনুসরণে নিশ্চিতভাবে পৌঁছে যেতে পারেন সাফল্যের স্বর্ণশিখরে।
জ্ঞানী ব্যক্তিবর্গের মতে, অধ্যাবসায়কে সুহৃদ, অভিজ্ঞতাকে বিজ্ঞ মন্ত্রনাদাতা, আত্মবিশ্বাস আর সীমাহীন স্বপ্ন যদি পথচলার সাথী হয় তাহলে সাফল্য সুনশ্চিত। তবে সাফল্য লাভের জন্য প্রয়োজন সঠিক প্রচেষ্টা। মানুষের সঠিক প্রচেষ্টা আর কিছু সাধারণ কৌশল এনে দিতে পারে সফলতা।
০১. সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য
আমরা বেশির ভাগ মানুষই জানি না যে, আসলে আমরা কী চাই। বা কোন চাওয়া নিয়ে অনেক ক্ষেত্রে সন্তুষ্টও অর্জন করতে পারি না। কোন কাজের লক্ষ্য হতে হবে আপনার একান্ত কাম্য বা গভীর আগ্রহের বস্তু। লক্ষ্য হচ্ছে সাফল্যের সিঁড়িতে পৌঁছতে সহায়তা করবে। তাই আপনার লক্ষ্যকে মনের মাঝে প্রতিষ্ঠিত করুন।
০২. স্বপ্ন দেখুন
বিজ্ঞানী আইনস্টাইন বলেছেন, ‘জ্ঞানের চেয়ে কল্পনার জোর অনেক বেশি।’ তাই আপনার লক্ষ্যকে স্বপ্নে পরিণত করুন। অর্থ্যাৎ আপনি যা হতে চান তার ছবি যদি স্পস্টভাবে দেখেন তাহলে তার বাস্তবায়ন সহজ হয়। আপনার সমস্ত মনোযোগ থাকবে ছবিটার দিকে। দিনে রাতে যখনই সময় পাবেন তখনই আপনার স্বপ্নের কথা ভাবুন। মনের আঙ্গিনায় স্বপ্নটাকে একেবারে স্পষ্ট করে ফেলুন। যাতে স্বপ্নের পথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে আপনি বাস্তবেও নিজেকে স্বার্থক হিসেবে দেখতে পান। যতো বাঁধাই আসুক, আপনি পৌঁছে যাবেন স্বপ্নলোকের সেই রাজপ্রাসাদে।
০৩. আত্মবিশ্বাস
সফলতার যদি কোনো অন্তরায় থাকে তাহলে তা হচ্ছে আত্মবিশ্বাসের অভাব। কেউ যদি ভাবে, আমি পারবো না’ ব্যস! নিশ্চিতভাবে সে ব্যর্থ। কারণ সে চেষ্টা করে না বা চেষ্টা করার আগেই আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলে। বিশ্বাসের মাত্রা হতে হয় কুব দৃঢ়। যদি মনে বিশ্বাস থাকে অটুট লক্ষ্য যতোই কঠিন হোক না কেন বিজয় নিশ্চিত। কখনোই বিশ্বাস হারাবেন না। তাহলে আত্মবিশ্বাস নড়বড়ে হয়ে যাবে। ফলে উৎসাহ উদ্দীপনা কমে যাবে। কাজেই বিশ্বাস ধরে রাখুন। নিজের মাঝে নিজেই প্রতিষ্ঠিত করুন যে- ‘আমি পারবোই।’
০৪. সুনিশ্চিত পরিকল্পনা
সফলতা অর্জনের জন্য চাই সুচিন্তিত ও সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা। যাকে আমরা অন্য কথায় নকঁশা বা মানচিত্রও বলতে পারি। এটি ছাড়া আপনি সফল হতে পারবেন না। আপনার অবস্থান ও আপনার কাঙিক্ষত গোলের অবস্থানের দূরত্বটা মাথায় রাখুন। এর মাঝে কিছু বাঁধা আসতে পারে। বাঁধাগুলোকে চিহ্নিত করুন। বাঁধাগুলো দূর করার উপায় বের করুন। ধরুন, আপনি প্রকৌশলী হতে চান। আপনার পরিকল্পনা হতে হবে প্রকৌশলী হওয়ার জন্য যা যা প্রয়োজন সেভাবে প্রস্তুতি নেওয়া, প্রকৌশলী হতে ঠিক কতটা সময় লাগবে তা একটি বড় বিষয়, মনে করুন, আপনি একজন প্রকৌশলী হতে পাঁচ বচর সময় লাগবে, পুরে সময়টাকে সঠিকভাবে কাজে লাগান। এক্ষেত্রে সময়কে ভাগ ভাগ করে নিতে পারেন এবং সে অনুযায়ী এগুতে পারবেন।
০৫. সক্রিয় কর্মতৎপরতা
দক্ষতা বর্তমান কালে সফলতার অন্যতম নিয়ামক। দক্ষতা ও কর্মতৎপরতার মাঝে সামান্য পার্থক্য আছে। কর্মতৎপরতা হচ্ছে কাজটি সঠিকভাবে করে ফেলা, আর দক্ষতা হলো নিপুণভাবে কাজ করা। মোট কথা, সফল হতে চাইলে দুটোর’ই প্রয়োজন আছে। অর্থাৎ সকফল হতে আপনাকে পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজে তৎপর হতে হবে।
০৬. সময়ের সঠিক ব্যবহার
অনেক ক্ষেত্রে আমরা আজকের কাজ কালকের জন্য ফেলে রাখি। আমাদের টনক না নড়া পর্যন্ত এই কাজটি আমরা বারবার করি। কিন্তু সময় তো আর বসে থাকে না। আমাদের খেয়াল হতে অনেক সময়ের অবমূল্যায়নের ফলে জীবনে নেমে আসে হতামা। আর জীবন সম্পর্কে অনীহা। আপনাকে মনে রাখতে হবে সফলতা সঠিক ব্যবহার করা প্রয়োজন। কারণ সাফল্যের জন্য আপনাকে শিখতে হয় অনেক কিছু। সব কাজ সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে হলে সময়কে ভাগ করে নিন।
০৭. ইতিবাচক মনোভাব
আপনার লক্ষ্যের প্রতি থাকা চাই আপনার ইতিবাচক মনোভাব। এই মনোভাব আপনাকে সাফল্যের দিকে টানবে। যাদের কোন কাজে মন নেই বা নেতিবাচক মনোভাব আছে, তারা সফলতার সুখ দেখতে পান না। ইতিবাচক মনোভাব হচ্ছে আশা, সৃষ্টিশীলতা আর প্রাপ্তির সীমাহীন সম্ভাবনা। যারা নেতিবাচক চিন্তা করেন, তারা তাদের মনোভাব পরিবর্তন করুন। কোনো কাজকে পজেটিভ ভাবুন। একান্ত নিজের করে নিন, যদি দ্রুত পজেটিভ না হতে পারেন, তবে আস্তে আস্তে ইতিবাচক মনোভাব অর্জন করুন।
০৮. মানুষের সাথে যোগাযোগ
বর্তমান যোগাযোগের গুরুত্ব অনেক। আর বিজ্ঞানের কল্যাণে মানুষের সাথে মানুষের যোগাযোগের খুব একটা ঝামেলা পোহাতে হয় না। তাই মানুষের সম্পর্ক একটা বড় বিষয়। মানুষ কখনোই একা চলতে পারে না। মানুষের বেঁচে থাকা, মানুষের চলাফেরা, কর্ম, সফলতা- সব ক্ষেত্রেই দেখা যায় কোন না কোন মানুষ কিছুটা হলেও প্রভাবিত করছে। অর্থ্যাৎ মানুষের সফলতার পেছনে কোনোভাবে মানুষ প্রভাবিত করে। তাই প্রয়োজন সম্পর্ক। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, অন্যের সাথে ইতিবাচক বা হ্যাঁ বোধক আলোচনা, কথা বার্তায় সহজ সরল ভাষা ব্যবহার, অন্যের ভালো কাজের স্বীকৃতি বা প্রশংসা, কথায় ও কাজে মিল রাখা, মানুষের সাতে মেশা এবং তাদের জানা। মানুষের সঠিক মূল্যায়ন ইত্যাদি বিষয় চর্চার মাধ্যমে আপনার যোগাযোগ দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে।
০৯. ধৈর্য্য ও মানসিক প্রশান্তি
যদি সফল হতে চান তাহলে আপনাকে অবশ্যই ধৈর্যশীল হতে হবে এবং কাজে মানসিক প্রশান্তি বজায় রাখতে হবে। ধৈর্য্যশীলতা আপনাকে নতুন কাজের আগ্রহ জন্ম দিবে এবং প্রশান্তি বজায় থাকলে আপনি কাজটিকে আপনার এক ঘেঁয়ে মনে হবে না। অনেক ক্ষেত্রে ব্যর্থতা আসতেই পারে, হাল ছাড়বেন না। ধৈর্য্য নিয়ে চেষ্টা করে যান। মনোবল নিয়ে কাজে নামুন। আমরা যদি মহাজ্ঞানীদের কথা ভাবি, নিউটনের কথাই ধরুন, যার গবেষনার সব কাগজ পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছিল। নিউটন হাল ছাড়েনি। এডিসন অসংখ্য চেস্টার পর ইলেকট্রিক বাল্ব আবিস্কার করতে পেরেছিলেন। ধৈর্য্যরে বলেই তা সম্ভব হয়েছে। মানসিক প্রশান্তি শুধু সাফল্য লাবের জন্যই নয় বরং সবক্ষেত্রেই প্রয়োজন। মানুষের মনের সুপ্ত শক্তিকে প্রকামের জন্য প্রয়োজন হয় এ প্রশান্তির। মোট কথা, এটি হচ্ছে সাফল্যের অন্যতম পূর্বশর্ত। কাজেই মনকে প্রশান্ত রাখুন। মানসিক প্রশান্তি অর্জনের একটি অন্যতম উপায় হলো মেডিটেশন। তাই মেডিটেশন করুন দেখবেন মনকে কিছুটা হলেও শান্তি দিতে পারছেন।
১০. মেধা যাচাই
ধরুন আপনি লক্ষ্যে পৌঁছে গেছেন। ধরেই নিন আপনি সফল। এরপর কি করা উচিত? আপনি কি বসে থাকবেন? তাহলে আপনি বুল করবেন। কারণ সাফল্যের শেষ নেই। সাফল্যের একটা সিঁড়ি অতিক্রম করার পর আপনি আরেকটা সিঁড়িতে পা দেবেন। কারণ আপনার মেধার কোনো কমতি নেই। লক্ষ্য অর্জনে মানুষের ক্ষমতার কোনো শেষ নেই। তাই নিজের মেধা যাচাই করুন। ধরা যাক আপনি ডাক্তার হতে চান। আপনার লক্ষ্য দেশের মানুষের সেবা করা। দেশের মানুষের সেবার মধ্য দিয়ে আপনি আনাকে সফল মানুষ হিসেবে দেখতে চান। আপনার সর্বোচ্চ মনোযোগ, সর্বোচ্চ মেধা দিয়ে আপনি মানুষের সেবার মাধ্যমে নিজেকে একজন সত্যিকার সফল মানুষ ভাবতে পারেন। আপনার সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যকে, আপনার স্বপ্নকে আত্মবিশ্বাসের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত করে সুনিশ্চিত পরিকল্পনা, কর্মতৎপরতা ও দক্ষতা রেখে সময়ের সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে নিজের মেধাকে মূল্যায়ন করে একজন সফল ও স্বার্থক হোন। কাজের মাঝে ধৈর্য রাখুন, মানসিক প্রশান্তি রাখুন, দেখবেন সাফল্য সুনিশ্চিত, আপনার ইতিবাচক মনোবাব ও মানুষের সাথে সুম্পর্ক আপনাকে নিয়ে যাবে সফলতার স্বর্ণশিখরে।
লক্ষ্য করুন
০ কোনো কাজে একবার ব্যর্থ হলে ভেঙে পড়লে চলবে না, পুনরায় চেস্টা করুন।
০ সব সময় ইতবাচক মানসিকতার অনুশীলন করে তাদের সাহচর্য বজায় রাখুন।
০ সাফল্যকে একবার করায়ত্ব করলেই দায়িত্ব শেষ নয়, কারণ সাফল্যের শেষ নেই।
০ সময়ের কাজ সময়ে শেষ করুন।
০ কোন কাজ আগামীর জন্য ফেলে রাখবেন না।