ওয়েস্টার্ন সিনেমার প্রতি আমার বিশেষ একটু দুর্বলতা আছে। এমনিতে এখন সিনেমা দেখার সুযোগ-সময় কম হয়, কিন্তু কোরবানীর ঈদের আগে আর পরে দীর্ঘদিন ছুটি, পরিবারের অনুপস্থিতি, অসুস্থতা ইত্যাদি কারণে বেশ অনেকগুলো সিনেমা দেখার সুযোগ পেয়েছি। যা দেখেছি তার প্রায় সবই ওয়েস্টার্ন সিনেমা। সিনেমা যা দেখা হয় - আইএমডিবি-তে একটা লিস্টে যোগ করে রাখি, আর সুযোগ মতো নিজের ওয়েবসাইটে সম্প্রতি কি সিনেমা দেখলাম নামের একটা পোস্টে সংক্ষেপে লিখে রাখি। এই পোস্টটা মূলত সেই সব সংক্ষিপ্ত বর্ণনার সংকলন।
Red River (1988)
একই নামে আরেকটি সিনেমা আছে, সেটা ১৯৪৮ সালের এবং গ্রেট জন ওয়েইন অভিনীত। এই সিনেমাটা নাকি সেই সিনেমারই রিমেক। জন ওয়েইনের সিনেমাটা দেখি নাই - তবে ধারণা করি সেই সিনেমাটাও এই সিনেমার মত গ্রেট সিনেমা হবে।
টম ডানসন নামের এক র্যাঞ্চার আর তার পালকপুত্র ম্যাট গার্থ বিশাল এক পাল গরুর ক্যাটল ড্রাইভ শুরু করে। এই যাত্রা কতটা সংবেদনশীল এবং ঝুঁকিপূর্ণ তার বিভিন্ন চিত্র ফুটে উঠেছে এই সিনেমায়। কাউবয় লাইফ নিয়ে এই ধরণের সিনেমা কমই হয়।
এই সিনেমা দেখার সময় আরেকটি সিনেমার কথা বারবার মনে পড়ছিল - দ্য কালপিপার ক্যাটল কোং - সেটিও ক্যাটল ড্রাইভ নিয়ে সিনেমা। ওয়েস্টার্ন বই এবং সিনেমা নিয়ে আপনার বিশেষ ভক্তি-ভালোবাসা থাকলে এই সিনেমাগুলো আপনার জন্য মাস্ট সি।
রেটিং: ৫/৫
Rooster Cogburn (1975)
ট্রু গ্রিট যেই মার্শাল রুস্টার কগবার্নকে নিয়ে নির্মিত, সেই রুস্টার কগবার্নই এই সিনেমার হিরো। অভিনয় করেছেন জন ওয়েইন। সাথে আছে একজন ইন্ডিয়ান বালক এবং বয়স্ক একজন সিস্টার। এই অভিযানে একদল ডাকাতের কাছ থেকে নাইট্রোগ্লিসারিন বিস্ফোরক উদ্ধার করতে হয়।
কমেডি ঘরানার এই সিনেমা অন্যান্য ওয়েস্টার্নের তুলনায় একটু আলাদা, এ্যাডভেঞ্চার বেশি। এমনকি খরস্রোতা নদীতে নৌকাভ্রমণও আছে।
রুস্টার কগবার্ন এবং ট্রু গ্রিট বিষয়ে আলাদা একটি পোস্ট আছে, আগ্রহীরা দেখতে পারেন।
রেটিং: ৪/৫
True Grit (1969)
অরিজিনাল ট্রু গ্রিট, অভিনয় করেছেন দ্য গ্রেট জন ওয়েইন। যদি রিমেক দেখে থাকেন, তাহলে কাহিনী মোটামুটি একই, নির্মানে কিছু পার্থক্য আছে৷ রুস্টার কগবার্ন এবং ট্রু গ্রিট সংক্রান্ত লিখায় একটু বিস্তারিত লিখেছি।
রেটিং: ৫/৫
True Grit (2010)
অসাধারণ ওয়েস্টার্ন। রিমেক, কিন্তু প্রথমটার চেয়েও ভালো। পরিচালনায় কোয়েন ব্রাদার্স, রুস্টার কগবার্ন চরিত্রে জেফ ব্রিজেস।
রেটিং: ৫/৫
The Shadow Riders (1982)
দুই ভাই - সিভিল ওয়ারের দুইজন দুই পক্ষে যুদ্ধ করেছে। যুদ্ধ শেষে ফিরে দেখে পরিবারের মেয়েদের সহ খাদ্যভান্ডার লুট করে নিয়ে গেছে পরাজয় মেনে নিতে না পারা এক মেজর ও তার দল। দুই ভাই মিলে উদ্ধার করতে যায়।
সুন্দর টাইম পাস টিভি মুভি। আমি দেখেছি অবশ্য ক্যাথেরিন রস এর কারণে। বুচ ক্যাসেডি এন্ড দ্য সানড্যান্স কিড সিনেমার অসাধারণ সুন্দরী সেই নারী আরকি। অবশ্য দুই ভাই চরিত্রের টম সেলেক আর স্যাম ইলিয়ট থাকায় সিদ্ধান্ত নেয়া আরও সহজ হয়েছে৷ টম সেলেক এর ওয়েস্টার্ন সিনেমাগুলো ভালো লাগে।
রেটিং: ৪/৫
Two Rode Together (1961)
এই সিনেমাটার কাহিনী একটু ব্যতিক্রম।ইন্ডিয়ানরা হামলা চালিয়ে সাদা চামড়ার যে সব বাচ্চা ছেলে-মেয়েদের নিয়ে যায় তাদের কয়েকজনকে উদ্ধার করার জন্য টেক্সাস মার্শাল ম্যাককেবকে নিয়োগ দেয় আর্মি, সাথে থাকবে তার বন্ধু জিম গ্যারি।
ঘটনাপ্রবাহের তুলনায় সাদা চামড়ার লোকদের নিকৃষ্ট ভূমিকা বোঝার জন্য এই কমেডি ধাঁচের সিনেমাটা দেখা যায়। মার্শালের চরিত্রে জেমস স্টুয়ার্ট অভিনয় করেছেন।
রেটিং: ৩.৫/৫
Minnesota Clay (1964)
স্প্যাগেটি ওয়েস্টার্ন। সার্জিও করবুচ্চির পরিচালনা।
জেল থেকে পালিয়ে মিনিসোটা ক্লে নিজেকে শাস্তি থেকে বাঁচার জন্য তার সাক্ষীর সামনে উপস্থিত হয়, অথচ সাক্ষী আর তার দল তখন পুরো শহরকে কব্জা করে রেখেছে। শহরের বাহিরের অংশ দখল নিয়ে রেখেছে এক দস্যুদল।
সিনেমার কাহিনী বাংলা সিনেমার মত। নষ্ট করার মতো পর্যাপ্ত সময় থাকলে দেখতে পারেন।
রেটিং: ২/৫
Troublemakers (1994)
দুই ভাই। একজন ফাস্টেস্ট শ্যুটার, অন্যজন বিশাল শরীর নিয়ে খালি হাতেই কুপোকাত করে ফেলে। স্টোন নামের এক আউটল-কে ধরে চার হাজার ডলার কামাতে চায়।
কমেডি ওয়েস্টার্ন। ইতালির সিনেমা। অভিনয় করেছে টেরেন্স হিল এবং বাড স্পেন্সার। পারিবারিক সিনেমা। হালকা বিনোদনের জন্য উপযুক্ত। হেরা-ফেরি টাইপের হিন্দি সিনেমাগুলো আর ট্রাবলমেকারস একই মডেলে নির্মিত।
রেটিং: ৩/৫
The Train Robbers (1973)
জন ওয়েইনের ওয়েস্টার্ন কাম এ্যাডভেঞ্চার সিনেমা। এক বিধবা নারী তার ট্রেইন রবার স্বামীর লুকিয়ে রাখা সম্পদ উদ্ধারের জন্য ভাড়া করে লেনকে। লেন তার দলবল নিয়ে এগোয়ে, পিছু নেয় ট্রেইন রবারদের বিশাল একটা দল।
বেশ চমৎকার সিনেমা। শেষে একটা টুইস্ট সিনেমার দর্শককে বিভ্রান্ত করে দেয়। রেকমেন্ডেড।
রেটিং: ৪/৫
The Last Outlaw (1993)
কর্নেল গ্রাফ যুদ্ধের পর একটি বিশ্বস্ত আউট-ল দল গঠন করে ব্যাংক লুট আর হতাযজ্ঞ চালায়। কিন্তু ঘটনাচক্রে দলেরই এক সদস্যের গুলিতে আহত হয়ে পসি দলের সাথে যোগ দেয় গ্রাফ। লুটের টাকা চাই না তার, বিশ্বাসঘাতকতার শাস্তি দিতে চায় সে।
গ্রাফ চরিত্রে অভিনয় করেছে মিকি রুর্ক। দারুণ অভিনয়। কিন্তু প্রোটাগনিস্ট চরিত্রটা আকর্ষণীয় ছিল না। সিনেমাটা ভালো লাগবে। রেকমেন্ডেড।
রেটিং: ৪/৫
Skin Game (1971)
সাদা চামড়ার কুইন্সি তার কৃষ্ণাঙ্গ দাস জেসনকে নতুন নতুন শহরে নিয়ে যায়, তারপর নিলামে বিক্রি করে দেয়। রাতে জেসন পালিয়ে আসে, তারপর দুজনেই নতুন শহরের দিকে যাত্রা শুরু করে। একদিন আরেক কৃষ্ণাঙ্গ দাসীকে কিনে নেয়, কিন্তু ঘটনাচক্রে জেসন সত্যিই দাস হিসেবে বিক্রি হয়ে যায়। কুইন্সি কি তাকে উদ্ধার করবে?
এই হলো স্কিন গেম সিনেমার গল্প। কমেডি ওয়েস্টার্ন কিন্তু গল্পটা চমৎকার। কৃষ্ণাঙ্গদের উপর শ্বেতাঙ্গদের বর্বরতার সামান্য একটু চিত্র পাওয়া যাবে এই সিনেমায়। রেকমেন্ডেড।
রেটিং: ৩/৫
Last of the Dogmen (1995)
ঘটনাটা বর্তমান সময়ের। দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় কয়েকজন অপরাধীর পিছু নেয় একজন বাউন্টি হান্টার। খুঁজেও পায়, কিন্তু কে যেন আগেই তাদেরকে মেরে লাশ গোপন করে ফেলে। ঘাঁটতে গিয়ে খোঁজ মেলে বহু বছর আগে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া একদল ইন্ডিয়ানের।
সুনির্মিত আজগুবি কাহিনীর সিনেমা। ঘুরে ফিরে সেই আমেরিকানদের মহত্ত্ব প্রকাশের চেষ্টা। টাইম পাসের জন্য বা বাচ্চাদের নিয়ে দেখার জন্য চলনসই। নট রেকমেন্ডেড।
রেটিং: ২/৫
The Legend of Molly Johnson (2021)
অস্ট্রেলিয়ান ওয়েস্টার্ন সিনেমা। পরিচালক, চিত্রনাট্যকার এবং প্রধান চরিত্র একই - একজন নারী। সিনেমাটাও কতকটা নারীবাদী, তবে বিরক্তিকর নয়।
সন্তান সম্ভবা একজন সাহসী নারী তিন সন্তানকে নিয়ে বাস করেন লোকালয় থেকে বেশ দূরে। একদিন তার ঘরে উপস্থিত হয় জেল পলাতক এক দাগী আসামী যে কিনা আদিবাসী। ওদিকে নতুন শহরে পশ্চিমা আইন বাস্তবায়নের জন্য এসেছে সাদা চামড়ার লোক নেট।
সিনেমার কাহিনী খুবই দারুণ। মলি চরিত্রে অভিনয় দুর্দান্ত। অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসীদের তৎকালীন অবস্থা বোঝার জন্য বেশ ভালো সিনেমা।
রেটিং: ৪/৫