এককিলো একটা রাস্তা। আলোকিত থাকতেও পারে, আবার নাও পারে। রিক্সা থাকলে আছে, না থাকলে নাই। পায়ে হেঁটে কিংবা ঘুরে ঘুরে ডি'বিল্ডিং এর সামনে নেমে পড়া। অথবা এ'বিল্ডিং। সামনে লাইট থাকার কথা। আচ্ছা, ধরে নিলাম নেই। প্রায় অন্ধকার সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় উঠে...কখনো তিনতলা, তারও আগে চারতলা। গমগম করছে মানুষ। একদিকে কবিতা, অন্যপাশে নাচ। নাটকের ওরা ওই কোণে। গানের রুমে থই থই সুর-একই লাইন বারবার শুনে বিরক্ত হবার কথা থাকলেও হাসিমুখে সেখানে বসতি। গম্ভীর কিছু মানুষ। ফিসফাস শুনে গগণবিদারী ধমক। গলার কাছে কথাটা এসে আটকে যায়-'আপনি আমাত্তে বেশি বুঝেন?' বেশি বুঝা লোকগুলোর চোখের ধমকে গলাটা শুকিয়ে ওঠে। 'ভাই, একটা বিড়ি ব্রেক প্লিজ'। ওই কোন থেকে আরেকজন বলে ওঠে, 'ওই, ফার্স্ট বুক'।
টং দোকানের বোকা মামা হিসাব রাখতেও পারে, আবার নাও পারে। 'ওই মামা, মাথা গুইনা চা দেও আর বড় চুল মাইনাস কইরা বিড়ি দেও'। মামা লালচে হলুদ দাঁত বের করে হাসে। তার সামনে বসা লোকগুলা মানুষনা, একেকজন মিনিমাম দুই টাকার নোট। দোয়েল পাখির ছবিওলা। 'দেরি করেন, কাপ শট'। 'শট' কাপের প্রত্যাবর্তনের আশায় ঘাসের উপর বসে পড়ে সবাই। এককাপ চায়ের দাম চল্লিশ মিনিট। গিটারওয়ালা গম্ভীর লোকটা বিড়ি ফুঁকতে ফুঁকতে কাউকে কিছু না বলে হাঁটা দেয়। হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা দেখিনি, দেখেছি ক্যাম্পাসের গিটারওয়ালা। তার পেছন পেছন আবার দোতলা...তিনতলা...চারতলা। সাড়ে দশ বেজে যায়।
গোলচত্ত্বরে এসে ডানে মোড় নিতেও পারি, আবার নাও পারি। ভিসি বাংলোর সামনে এসে শটাশট সবার জীপার খুলে যায়। ধরিত্রি নির্দ্বিধায় সিক্ত হয়। আবছা আলোয় চকচক করে রূপালি জলপ্রপাত। 'কাহা' নামের লোকটা হাসাতে জানে বটে। পেটে হাত দিয়ে কালো পথের উপর হেসে গড়াগড়ি দেয় কেউ কেউ। সদ্য ছ্যাকা খাওয়া মাথায় চুল কম চিকনা লোকটা উদ্দাম নৃত্য শুরু করে-শাবল ড্যান্স। নাচের সাথে বেমানান গান ধরে সে 'আমার মন্দ স্বভাব, জেনেও তুমি-কেন চাইলে আমারে'।
গেটে এসে যারা সাহসী, তারা আবার বসে। সবাই বসে। সবাই সাহসী। চায়ের দাম বেড়ে হয় একঘন্টা। পকেট হাতড়ে হাতড়ে শেষ সম্বল টাকাগুলো জড়ো করে সবাই। 'মামা, এইটা রাখো, বাকীগুলা কালকে দিব।' এই 'কালকে দেবার' জের চলতে থাকে মাসের পর মাস।
তারপর একদিন শেষ হয় সব আয়োজন। মিনি অডিটরিয়ামে হাততালির শব্দে যবনিকাপাত ঘটে সব ছন্দের। বিল্ডিং এর ফ্লোরগুলো হন্টেড বাড়ির বারান্দার মতো দাঁত বের করে হাসতে থাকে। খালি বিল্ডিংগুলো ঘুরে এসে- টং এর খালি বেঞ্চির উপর বসে হাতের কড় গুণে হিসেব কষে বোকা মানুষটা। আর মাত্র কয়েকমাস পরেই ১৯ নভেম্বর।
তবুও-
নিজের আঙ্গুলগুলো যোজন যোজন লম্বা মনে হয় তার তখন।
ছবিসূত্রঃ আন্তর্জাল