আমরা যারা ৮০'র দশকের শিশু তারাতো অসহায়,গুহা মানবের সামিল,বিকৃত ইতিহাস আর ইতিহাস না জানানোর এক লুকোচুরি খেলায় আমাদের সেই জানার প্রেরনাও শুকিয়ে কাঠ।তবুও পারিবারিক পরিমন্ডল অনেককেই জানায় অনেক কথা,জানা হয় ইতিহাস,কিন্তু নির্মম সত্য সেই শিশু বা কিশোরের খেলার সাথীদের কাছে সে গল্পবাজ,যদিও বন্ধুর কথা শুনে তখন বিশ্বাস যোগ্য মনে হলেও চারপাশের দেয়াল তাদের দেখতে শেখায় না।
মহাত্মা গান্ধী খুন হয়েছেন, বঙ্গবন্ধুও....আমি ওনাদের তুলনা করছি না, যেমন আমি তুলনা করি না রবি আর নজরুল কে।স্ব স্ব ক্ষেত্রে ওনারা উজ্জ্বল।
দুঃখিত আমি এখানে বঙ্গবন্ধু বা মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কথা বলতে আসিনি,
আমি এখানে এসেছি পুরানো স্মৃতিচারণমূলক একটা পোস্ট দিতে।
ব্লগেতো অনেক মুসলমান ভাই,ধর্ম রক্ষায় শহীদের সাথী ভাইয়েরা।
আপনাদের কি মনে পড়ে সেই ঘটনাটা,(ধন্যবাদ একুশে টিভির রিপোর্টারকে)একুশে টিভিতে প্রচার করা সেই কলঙ্কিত এক দৃশ্য।
এক বৃদ্ধকে এক লোক লাথি মারতে মারতে সরিয়ে দিচ্ছে,সবাই দেখছে সে দৃশ্য।বৃদ্ধ বয়সের ভারে ভারাক্রান্ত আর যে লাথি মারছে সে সবল সুগঠিত।দৃশ্যটা দেখে কার কি মনে হয়েছে আমি জানি না,আমার কিন্তু আমার বাবার কথা মনে হয়েছে।এটাকে দুর্বলের উপর সবলের অত্যাচার বা মানবতার চরম এক লঙ্ঘন বলে মনে হয়েছে,দৃশ্যটা দেখে আমি খুব কাঁদছি..... বৃদ্ধটা যদি স্বাভাবিক এক বৃদ্ধ হত তবে আমার কান্না মনে হয় একই থাকতো কিন্তু যখন জানলাম বৃদ্ধটা একজন মুক্তিযোদ্ধা (অন্য সাধারণ মুক্তিযোদ্ধাদের মত অসহায়) এবং যে লাথির পর লাথি মারছে সে আর কেউ না এক প্রতিষ্ঠিত ইসলামী রাজনৈতিক দল যারা মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে পাকিস্তান কায়েমে জান বাজি রেখেছিল।যারা আমাদের অসহায় মা বোনদের পাকিস্তানীদের হাতেই শুধু তুলে দেয় নি, নিজেরাও করেছে মা বোনের অসম্মান,১৪ই ডিসেম্বর দেশের কৃতি সন্তান বুদ্ধিজীবিদের হত্যা করে দেশকে চিরতরে করে রেখেছে পঙ্গু।সেই সব আত্মস্বীকৃত রাজাকারদের গড়া দলের এক গর্বিত সদস্য,যে স্বাধীন দেশে জন সম্মূখে একজন মুক্তিযোদ্ধাকে লাথি মেরে অপমানিত করতে কুন্ঠিত না,তার ভেতর দেখা যায় নি বিন্দু মাত্র লজ্জা বোধ।কেন দেখা যাবে, যাওয়াটাই যে অস্বাভাবিক,ওদের সেদিনের সেই ঘটনা ঘটাবার সাহসতো আমরাই দেই তাই না, বীর উত্তম সেক্টর কমান্ডর যেভাবে এই সব নরপশুদের মদদ দিয়ে আসেছেন,এখনও ওনার দল তাদের অবাদে জাতীয় পতাকা নিয়ে ঘুড়তে সুযোগ করে দেয়,তাতে ঐ জামায়াতের করা মুক্তিযোদ্ধাদের দেয়া সেই সংবর্ধনাতে এসে ঐ বোকা মুক্তিযোদ্ধার সত্য ভাষণের পর ঐ নরপুশু যে শুধু লাথির পর লাথিই মেরেছে আমি তাতেই অবাক,তাকে ওখানেই নির্মমভাবে কতল করলেও অবাক হবার কিছু ছিল না। রাজাকারেরা সব সময়ই সবল তারা চতুর আর মুক্তিযোদ্ধারা স্বাধীনতা প্রিয় মানুষ আমরা বোকা,আমাদের স্বপ্ন শুধু দেশ নিয়ে,নিজেকে উৎসর্গ করায়,আর রাজাকারেরা স্বাস্থ্যবান,সমৃদ্ধিশালী।তাই সেই দিনের সেই লাথির দৃশ্য আমাকে আরো কুকড়ে দিয়েছিল সেদিন,বেসিনে যেয়ে এক গাল বমি করেছি,ঘৃনায় রিরি করে অভিশম্পাত করেছি সেদিন।
এখন আমি আর বমি করি না,এখন আমি আর কাঁদি না,সব কান্না আজ শুকিয়ে গেছে,তবুও পুরানো ক্ষতের মত সেই সব ঘা এখনও আমাকে রক্তাক্ত করে।আমি অবাক হয়ে লক্ষ্য করি শুকিয়ে যাওয়া চোখে বর্ষণ ধারা।
অমি পিয়াল ভাইকে মাইনাস,আবারও কাঁদাবার জন্য।আবারও মনে করিয়ে দেবার জন্য আমরা কতটা অসহায়।সেই সব স্বাধীনতা বিরোধীদের কাছে।
