দিনটি ছিল একুশে জুলাই শনিবার, আমার অফিস অফ ডে। তার উপর পহেলা রমজান। সেহেরী খেয়ে এক আয়েশী ঘুম শেষে যখন উঠি তখন বেলা এগারটা। দেখি আমার সন্তান সম্ভবা স্ত্রী খানিকটা অস্বস্তি নিয়ে বসে আছে। জিজ্ঞেস করতেই ডাক্তারের কাছে যাওয়ার মত খারাপ তার লাগছে না বলেই জানালো। তারপরও সবার পিড়াপিড়িতে সে রাজি হল ডাক্তারের কাছে যেতে। কিন্তু তার অভ্যাসমত একঘন্টার গোসল সেরে যখন বের হল তখন দুপুর একটা। মেটারনিটিতে যখন আমি আমার স্ত্রীকে নিয়ে পৌছলাম তখন দুপুর দুটো। বিকেল পাচঁটায় ডাক্তার অবস্থা আসঙ্কাজনক বলে মলিন মুখে আমার স্ত্রীর আলট্রাসনোগ্রাফী রিপোর্ট একঘন্টার মধ্যে হাজির করানোর নির্দেশ দিলেন । আমি আর আমার স্ত্রী সম্ভাব্য জায়গায় গিয়ে আলট্রাসনোগ্রাফী করে একঘন্টার মধ্যে রিপোর্ট দেওয়ার কথা বলতেই আলট্রাসনোগ্রাফী করার ডাক্তার ইফতারের পর অর্থাৎ সন্ধ্যা সাতটার পর পাওয়া যাবে জানিয়ে দিল বেশ কয়েকটি ডায়াগনসিস সেন্টার কর্তৃপক্ষ। আমরা উম্মাদের মত একের পর এক ডায়াগনসিস সেন্টারে গিয়ে খোঁজ নিতে লাগলাম। অবশেষে আল্লাহর অশেষ রহমতে একটি ডায়াগনসিস সেন্টার অবস্থার গুরুত্ব দেখে রাজি হল এক ঘন্টার মধ্যে আলট্রাসনোগ্রাফী রিপোর্ট দিতে। ডাক্তারকে বাসা থেকে ফোন করে আনা হবে। তখন সন্ধ্যা ছয়টা। প্রতিটি মিনিটকে মনে হচ্ছে বছর। ডাক্তার পনেরো মিনিটেই হাজির হলেন এবং ত্রিশ মিনিটেই রিপোর্ট আমাদের হাতে। কিন্তু তখনো জানিনা আমার স্ত্রী সন্তানের কপালে কি ঘটতে চলেছে। রিপোর্ট নিয়ে মেটারনিটিতে যখন পৌছি ইফতারের সময় হয়ে গেল। ডাক্তার ইফতারের ব্রেক এ আছেন। আমার স্ত্রী বারবার আমাকে বাইরে গিয়ে ইফতার সেরে আসার তাগাদা দিচ্ছে। তখন কি বাইরে গিয়ে ইফতার সেরে আসার মনমানসিকতা আছে ? পানি আর কেক দিয়ে ইফতার সারলাম। নার্সকে অবস্থার অবনতির কথা জানিয়ে ডাক্তারকে কল দিতে বললাম। তিন চার জন ডাক্তার আমার স্ত্রীকে চেক করলেন এবং রিপোর্ট দেখলেন। সবশেষে ডাক্তারদের রুমে আমাকে ডেকে পাঠালেন। জানালেন আমার স্ত্রীকে এক্ষুনি অপারেশন করে বাচ্চাকে বের করে সাথে সাথে আইসিইউতে না রাখলে বাচ্চা বাচানো কঠিন হবে আর এটা শুধু সিএমসি হাসপাতালেই সম্ভব। আমি আর আমার স্ত্রী ছুটলাম। সিএনজি নিয়ে চলছি আর ফোনে আমার ভাই বোন, কাছের আত্মীয়দের দ্রুত সিএমসি হাসপাতালে আসতে বলছি কিন্তু তখনো আমি জানিনা ডাক্তার আমার স্ত্রীকে কি বলেছে আর আমার স্ত্রী জানেনা ডাক্তার আমাকে কি বলেছে । দুজনই দুজনকে সাহস দিচ্ছিলাম। তারপর সময় কিভাবে পীড়ন দিয়েছে তার কোন ভাষা নেই তবে লেবার রূম থেকে আমার ছোট বোনের ফোন কলে ”ভাইয়া তোমার কন্যাসন্তানের জন্ম হয়েছে। মা মেয়ে দুজনই ভালো আছে”-শোনার পর স্বস্তি আসলো। না,অপারেশন লাগেনি, আমার বাচ্চাকে আইসিইউতে রাখার প্রয়োজনও হয়নি। আল্লাহর রহমতে সবকিছু স্বাভাবিকভাবেই হয়েছে। মোবাইলের রিসিভড কলের সূত্র ধরে তখন সময় রাত দশটা ছাপ্পান্ন। তার মিনিট পাচঁ আগে হিসেবে আমার প্রথম সন্তানের জন্ম রাত দশটা পঞ্চাশ মিনিটে। ভোরেই আমার স্ত্রী আর সদ্যপ্রসূত সন্তানকে নিয়ে বাসায় আমার উৎকন্ঠিত মা-বাবার কাছে ফিরে আসি। পরিবারের নতুন সদস্যকে নিয়ে পুরো পরিবারে খুশির বাড়াবাড়ি চলছেতো চলছেই... ... ...
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জুলাই, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:৫৮