তোকে বলতে ভুলে যাইনি বন্ধু আমার দেশের কথা। তুই জানতে চেয়েছিলি, আমি চুপ করে ছিলাম। ভাবখানা এমন যেন শুনিনি বা শুনলেও বলব বলব করে বলা হয়নি। আসলে তা না। আমি খুব বিপদে পড়ে গিয়েছিলাম। ভাবছিলাম কি বলব? কি বললে সত্যিটা বলা হবে ইত্যাদি ইত্যাদি.........
মানুষ খুব বিপদে আছে এখানে। আছে মানে এখন এই মূহুর্তে না সবসময়ই ছিল। এখানে কখনোই মানুষ স্বাধীন না। চরম মাত্রার পরাধীন। এক পরিবর্তনশীল পরাধীনতা। ধোকায় ধোকায় কাটিয়েছে আমার দাদা, বাবা। এখন কাটাচ্ছি আমি সামনে আমার ছেলেও একিভাবেই দিন কাটাবে।
আমি খুবই আশ্চার্য হই এই আমরা 'ফকিন্নির জাত' বাঙলাদেশীরা নাকি অনেক ধনী ছিলাম। আমাদের ধনের লোভে সাত সমুদ্র তের নদী পার হয়ে এসে ব্রিটিশরা সব নিয়ে গেল। 'নিয়ে গেল' ঠিক না, এখনও নিচ্ছে। আরও নিবে। তবে আমাদেরকে জানানো, বুঝানো হচ্ছে আমরা স্বাধীন, মুক্ত। আমাদের সিদ্ধান্ত নাকি আমরাই নিতে পারি।
তুই আশ্চার্য হবি বন্ধু শুনে, এটা সেই দেশ যেখানে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে শত্রু গন্য করা হয়। প্রতিদিন দেশের কোথাও না কোথাও প্রতিপক্ষকে খুন, মামলা, অত্যাচার, হুমকি-ধামকি চলে। দেশের মিডিয়া, বুদ্ধিজীবি, উচ্চশিক্ষিত মানুষজন সবাই প্রতিনিয়ত ঘৃণা ছড়িয়ে যাচ্ছে পারস্পরিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে। কিন্তু মুখে বলে জাতীয় ঐক্যের কথা। আবার জাতীয় ঐক্য মানে মনে করে 'সমমনা' রাজনৈতিক পক্ষ সমূহ। হাস্যকর না?
এসকল মানুষজন আবার খুবই দেশপ্রেমিক এবং ধর্মপরায়ন ভাব করে। কিন্তু 'স্বদেশী' প্রতিপক্ষকে (শত্রু) মোকাবেলায় যে কোন বিদশীয়, বিধর্মীয় সাহায্যকে আন্তরিক অভিবাদন জানায়। ভিনদেশী কেউ যখন (প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে কেরাণী পর্যন্ত) এ দেশে আসে তখন রাজনৈতিক দলসমূহের মধ্যে প্রতিযোগীতা শুরু হয় কে আগে উনার পদচুম্বন করবেন। উনার সাথে ছবি তুলতে পেরে পুলকিত হন। উনার পরামর্শে ইহারা ধন্যবাদীত হন...
তুমি হয়তো জানো বন্ধু, আমরা স্বাধীন। অনেক কষ্টে স্বাধীন হয়েছি। কিন্তু যা জানোনা তা হচ্ছে, আমরা কখনোই স্বাধীন নই, ব্যক্তি পর্যায় থেকে রাষ্ট্রীয় পর্যায় কোথাও স্বাধীনতার কোন চর্চা এদেশে সম্ভব নয়। দেশীয় বিদেশীয় সবধরনের স্বার্থকেন্দ্রিক তৎপরতা আমাদেরকে গোলামী শিখায়। যখন বিদেশী কোন কর্তাব্যক্তি ভদ্রতার খাতিরে আমাদেরকে ভালো বলে আমাদের রাষ্ট্রীয় প্রচার মাধ্যম থেকে বেসরকারী সকলে কি যে গদগদ হয় তা তুমি জানো না। কিন্তু যখন হুমকি ধামকি দেয়, অপমান করে, ক্ষতি করে তখন তাদের মেরুদন্ডের ব্যাথা জেগে উঠে। চোরের মতো মুখ লুকায়।
পরমতসহিষ্নু আচরণ এদেশে অগ্রহণযোগ্য। প্রতিটি রাজনৈতিক দল, তাদের কর্মী-সমর্থক সমমাত্রার প্রতিহিংসাপরায়ণ। হিংসাত্মক-ঘৃণাত্মক-উস্কানীমূলক আচরণ প্রশংসিত এখানে। যে যত শক্ত ভাবে প্রতিপক্ষকে ধোলাই করতে পারে সে তত বাহবা পায়। এমনকি প্রতিপক্ষকে খুন করতে উৎসাহ দেয়া হয় প্রতক্ষ্য ভাবে, খুন করলে সাপোর্ট ও সহায়তা দেয় (রাজনৈতিক নেতা-কর্মী, বুদ্ধিজীবি, পুলিশ, মিডিয় এমনকি সাধারণ সমর্থক পর্যন্ত)। কেউ একথা এদেশে বলতে শেখেনি যে আমার দল এ কাজটি ভুল করেছে বরং প্রতিনিয়ত অন্ধ সমর্থন দিয়ে একটি সম্মিলিত ভুলের দিকে সবাই মিলে এগিয়ে যায় সোৎসাহে। হাসি আসছে না বন্ধু?
আমি জানি না বন্ধু আমার এ চিঠি তুমি বুঝতে পারবে কি না? তবে তুমি যদি পারো এদেশ সম্পর্কে কোন আগ্রহ না দেখানোই ভালো হবে। নিরাপদ দুরত্বে থাকো তুমি। কারণ এদেশে প্রথমেই একজন মানুষকে বিচার করা হয় সে কোন রাজনৈতিকি মতাদর্শ অনুসারী সে হিসেবে। এরপর তুমি যত ভালো কথাই বলনা কেন প্রতিপক্ষ কোনদিনই তা শুনবেনা। বরং তোমাকে হেয় করার চেষ্টা করা হবে, ক্ষতি করার চেষ্টা করা হবে, অথবা অন্তুত তুমি যাতে কোন কিছুতে ভালো না করো সে চেষ্টা করা হবে। এখানো ভালো বলতে শুধু তাই বুঝানো হয় যা আমার মতামতের পক্ষে যায়, এর বাইরে ভালো বলতে আর কিছু নেই, থাকতে পারে না। ভালো থেকো বন্ধু। খুব ভালো।
১. ০২ রা অক্টোবর, ২০০৯ রাত ১০:১৩ ০
সোন্দর হইছে গো...