..........................................
..........................................
এখন মধ্যরাত্রি পার হয়ে গেছে, হয়তো দু'টো বাজে - আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছি - এখান থেকে পূর্ণ আকাশ দেখা যায় না, আধখানা সপ্তর্ষি অনন্ত প্রশ্নের মতো আমার মুখের দিকে চেয়ে আছে। প্রশ্ন, প্রশ্ন, প্রশ্ন আজ এই প্রশ্ন কত যুগ পার হয়ে আবার কেন মনে এলো? কেন আমার জীবনে এমন একটা ঘটনা ঘটল যার কোন প্রয়োজন ছিল না? আবার দেখছি এর আরম্ভও নেই, শেষও নেই।
আকাশের তারাগুলি উজ্জল, কত মানুষের কত যন্ত্রনার সাক্ষী ওরা। আমার সমস্ত মন ঐ আকাশটা টানছে - আমি যেন এখানে নেই, এখানে নেই অথচ আমি তো এখানেই। এখান থেকে কি কোথাও যেতে পারি - এইতো আমার পরিচিত সংসার। শোবার ঘরে আমার স্বামী নিশ্চিন্তে ঘুমোচ্ছেন। কি নিঃসংশয় আমার সম্বন্ধে, আমাকে উনি ভালোমতো চেনেন না, অথচ কী গভীর ভালোবাসেন, কী বিশ্বাস আমার উপরে! আমি ওর সব। ওর পৃথিবীটা ঘুরছে আমাকে কেন্দ্র করে, কিন্তু উনি যে আমার সব নয় একথা নিশ্চয় উনি কোন একরকম করে জানেন, তবুও তাতে ওর কোন ক্ষোভ নেই। ক্ষোভ নেই আমারও। আমার জীবন নানাদিক থেকে কানায় কানায় পূর্ণ। সংসার কে যা দেবার ছিল, মনে হয়েছিলো তা দিতে পেরেছি, ভালোবাসার যে মহিমা, মনে হয়েছিলো, তাও জানি শ্রদ্ধা ও পূজার সঙ্গে মিশে তার অলৌকিক উর্ধ্বগামী নিবেদন আমার গুরুর প্রতি, আমাকে কৃতার্থ করেছে।
তবু কাল থেকে আমার জীবনের আস্বাদ কি করে এমন বদলে গেলো? কী দারুন অতৃপ্তি, এক ধূ ধূ সাহারার বালির আঁচলের মতো আমার শস্যশ্যামল সুন্দর পৃথিবীর উপর বিছিয়ে গেল! আমি জানি ওর নিচে সব আছে, ঠিক যেমনটি ছিল তেমনি। এখনও ওর অবচেতনে আমি সত্য - আর উপরে মা-বাবার কোলের কাছে ঘুমিয়ে আছে আমার নাতি, কাল সকালে সে যখন নেমে আসবে, তখন তার নরম ছোট হাত আমাকে তেমনি করে জড়িয়ে ধরবে - আমার পৃথিবী তেমনি আছে কোমল সজীব সবুজ। তবুও এর উপর গলিত লাভা গড়িয়ে আসে কেন, আমার মুখে যে গরম বাতাসের তাপ লাগে। না, না, লাভা নয়, গলিত স্বর্ণও হতে পারে - এ তো ফিরিয়ে দেবার নয়, এতে যে আনন্দ আছে এর মূল্য আছে। আমি জানি, এ ছাই হয়ে যাবে না, কারণ, 'ছাই হয়ে গিয়ে, তবু বাকি যাহা রহিবে, এই সেই অবশিষ্ট।
********************************************************************
ন হন্যতে - মৈত্রেয়ী দেবী
*********************************************************************
ভালোবাসা এমন কেন?
ভালোবাসা কি কষ্টের মাঝেই পূর্নতা পায়?
না প্রাপ্তিতে?